শুক্রবার | ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১১:১৯
Logo
এই মুহূর্তে ::
হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (তৃতীয় পর্ব) : অভিজিৎ রায় নানা পরিচয়ে গৌরী আইয়ুব : গোলাম মুরশিদ হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (দ্বিতীয় পর্ব) : অভিজিৎ রায় কেন বারবার মণিপুরে আগুন জ্বলে আর রক্ত ঝড়ে : তপন মল্লিক চৌধুরী শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (শেষ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (প্রথম পর্ব) : অভিজিৎ রায় শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (ষষ্ঠ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (শেষ পর্ব) : বিজয়া দেব শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (পঞ্চম পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ? : দিলীপ মজুমদার শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (চতুর্থ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (শেষ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার শতবর্ষে সঙ্গীতের ‘জাদুকর’ সলিল চৌধুরী : সন্দীপন বিশ্বাস সাজানো বাগান, প্রায় পঞ্চাশ : অমর মিত্র শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (তৃতীয় পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (একাদশ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার খাদ্যদ্রব্যের লাগামছাড়া দামে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের : তপন মল্লিক চৌধুরী মিয়ানমারের সীমান্ত ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রতিবেশী দেশগুলোর উদ্যোগ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (দ্বিতীয় পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (দশম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার বুদ্ধদেব গুহ-র ছোটগল্প ‘পহেলি পেয়ার’ ‘দক্ষিণী’ সংবর্ধনা জানাল সাইকেলদাদা ক্যানসারজয়ীকে : দিলীপ মজুমদার শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (প্রথম পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (নবম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত-র ছোটগল্প ‘তোমার নাম’ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (অষ্টম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত-র ছোটগল্প ‘হাওয়া-বদল’ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (সপ্তম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার প্রবোধিনী একাদশী ও হলদিয়ায় ইসকন মন্দির : রিঙ্কি সামন্ত সেনিয়া-মাইহার ঘরানার শুদ্ধতম প্রতিনিধি অন্নপূর্ণা খাঁ : আবদুশ শাকুর
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই দীপাবলি এবং কালীপুজোর আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

রেখা দাঁ ও বিজ্ঞান আন্দোলন : দীপাঞ্জন দে

দীপাঞ্জন দে / ১১৩০ জন পড়েছেন
আপডেট সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

নীরবে নিভৃতে জীবনভর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত থেকে সমাজ চেতনা, বিজ্ঞান চেতনার প্রসারে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া একজন কর্মী ছিলেন রেখা দাঁ। খুব বেশি চর্চার আলোকে না এলেও জীবনভর তিনি যে সকল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, লেখালেখি, সংগঠন করে গিয়েছেন এবং সেই সকল কাজকর্মের ফলে সমাজ যেভাবে ক্রমান্বয়ে উপকৃত হয়েছে, সেই দলিল আজ রীতিমত চর্চার দাবি রাখে। রেখা দাঁয়ের মতো নেপথ্যকর্মীর রেখে যাওয়া মশাল ধারণ করে বর্তমান প্রজন্ম ও পরবর্তী প্রজন্মের সমাজকর্মী, বিজ্ঞানকর্মীরা কতদূর বয়ে নিয়ে যেতে পারেন এবং কীভাবে পারেন, সেটিই হবে দেখার। রেখা দাঁ তাঁর একাত্তর বছরের জীবনকালে (১৯৫৩-২০২৪) যে ধরণের বহুবিধ কাজকর্মে শরিক হয়েছিলেন, হিতবাদী চিন্তা-ভাবনা, পরিপূর্ণ জীবনবোধ না থাকলে সেগুলি সম্ভব হতো না।

রেখা দাঁ (পাল) ১৯৫৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙা পৌর এলাকার খাঁটুরা বাজার সংলগ্ন পালপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। যদিও রেখা দাঁয়ের নথিপত্র ও শংসাপত্রে তাঁর জন্মতারিখ ভুলবশত কোনও কারণে ১৮ মার্চ রয়েছে। তাঁর বাবা হরিসাধন পাল এবং মা স্নেহলতা পাল। তাঁরা চার ভাই ও তিন বোন ছিলেন। সাত বছর বয়সে তিনি পিতাকে হারান। তাঁর মা স্নেহলতা পাল স্বামীর অকালপ্রয়াণের পর প্রবল আর্থিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে সংসার চালান। রেখা দাঁয়ের বড়োদাদা নিমাইচন্দ্র পাল (প্রয়াত) সেই বিপদের দিনে তাঁদের পরিবারের হাল ধরেন। যদিও পিতা হরিসাধন পাল উত্তরাধিকার সূত্রে গোবরডাঙা রেলস্টেশন সংলগ্ন অঞ্চলে যথেষ্ট ভূসম্পত্তি (বাড়ি, বাগান, পুকুর, দোকান) পেয়েছিলেন। কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে সেই সম্পত্তি বাজারমূল্যের থেকে অনেক কম দামে তাঁদের পরিবার বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিল। রেখা দাঁ পারিপার্শ্বিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে পারিবারিক সহযোগিতায় উচ্চশিক্ষা লাভ করেছিলেন। তাঁর মায়ের পরিবারের কথা এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। বরানগরের বর্ধিষ্ণু সংস্কৃতিমনস্ক পরিবার ছিল তাঁদের। রেখা দাঁয়ের দাদু ছিলেন ডা. হরিসাধন রক্ষিত। তিনি ছিলেন সেই সময়ের একজন পাশ করা সরকারি চিকিৎসক। রেখা দাঁ-র বড়োমামা পরেশ রক্ষিতও ছিলেন একজন বিশিষ্টজন, তিনি রসায়ন শাস্ত্রে এম.এসসি. পাস করে বেঙ্গল কেমিক্যালে কেমিস্ট হিসাবে সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন।

গোবরডাঙাতেই রেখা দাঁয়ের বিদ্যালয়শিক্ষা সম্পন্ন হয়েছিল। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষার সূচনা হয় খাঁটুরা বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাথমিক বিভাগে। স্কুলের দিদিমণিরা তাঁকে বিশেষ স্নেহ করতেন। বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূলতাকে জয় করে স্কুল জীবনের পাঠ তিনি সুসম্পন্ন করেন। পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য বিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই তিনি গৃহশিক্ষিকা হিসেবে শিক্ষার্থীদের পড়াতেন। খাঁটুরা বালিকা বিদ্যালয়ের দিদিমণি কল্যাণী দাশগুপ্ত (প্রয়াত), দেবী পিপলাই (প্রয়াত) প্রমুখরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের ছাত্রীর গুণগান করে গেছেন। তাঁদের কাছে রেখা দাঁ ছিলেন তাঁদের বিদ্যালয়ের একজন গৌরবোজ্জ্বল ছাত্রী। বিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই বিশিষ্ট বিজ্ঞান-প্রচারক মণি দাশগুপ্তর সান্নিধ্য তিনি লাভ করেছিলেন। মণি দাশগুপ্তের ব্যতিক্রমী চিন্তাভাবনা, বিজ্ঞানমনস্কতা, আদর্শবোধ দ্বারা রাখা দাঁ বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে মণি দাশগুপ্তের নেতৃত্বে ১৯৭৩ সালে গোবরডাঙা রেনেসাঁস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হলে রেখা দাঁ-ও ওতপ্রোতভাবে সেই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন। খাঁটুরা বালিকা বিদ্যালয় থেকে ১৯৭০ সালে তিনি উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। বিদ্যালয়ের গণ্ডি পার করে ১৯৭০ সালে রেখা দাঁ হাবড়া শ্রীচৈতন্য কলেজে বি.এসসি. (বায়ো, পাস) কোর্সে ভর্তি হন। ১৯৭৩ সালে ফাইনাল পরীক্ষায় ডিস্টিংশন লাভ করেন। ভালো ফল করার জন্য তিনি বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজে নৃতত্ত্ববিদ্যায় এম.এসসি. কোর্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। ১৯৭৬ সালে তিনি এম.এসসি. পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। সেই বছরই তিনি ‘খাঁটুরা প্রীতিলতা শিক্ষা নিকেতন’ বালিকা বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষিকা হিসেবে নিযুক্ত হন। বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির তৎকালীন সম্পাদক অমরজ্যোতি ভট্টাচার্য এবং ভবানীপ্রসাদ ঘোষ বিজ্ঞান শিক্ষিকা হিসেবে বিদ্যালয়ে তাঁর নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন। ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ এই বিদ্যালয় থেকেই সহ-শিক্ষিকা হিসেবে রেখা দাঁ অবসর গ্রহণ করেন।

গোবরডাঙা রেনেসাঁস ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যুক্ত থাকার সূত্র ধরেই সেই সময় থেকে রেখা দাঁ বিজ্ঞান ক্লাব আন্দোলনের সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে যুক্ত হয়ে যান। বিজ্ঞান আন্দোলন করতে গিয়েই ভবিষ্যৎ জীবনসঙ্গী দীপককুমার দাঁ-র সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। গোবরডাঙা রেনেসাঁস ইনস্টিটিউট পরিচালিত গ্রীষ্মকালীন বিজ্ঞান শিবিরে রেখা দাঁ শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিতেন। ব্যাঙের ব্যবচ্ছেদ থেকে শুরু করে মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার, হারবেরিয়াম শীট তৈরি, লিফ জু তৈরি, সোলার কুকারে রন্ধন পদ্ধতি, পারিপার্শ্বিক ঔষধি গাছ চেনানো, জীববৈচিত্র্য নথিবদ্ধকরণ প্রভৃতি শেখানোর মধ্যে দিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের পছন্দের প্রশিক্ষক হয়ে উঠেছিলেন। ১৯৭৮ সালে গোবরডাঙা রেনেসাঁস ইনস্টিটিউট থেকে রেখা দাঁ পাঁচ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে দিল্লিতে যান জওহরলাল নেহেরুর জন্মদিনে সারা ভারত শিশু বিজ্ঞান প্রদর্শনীতে যোগদান করতে। ২০০৪ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য থেকে শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় শিশু বিজ্ঞান কংগ্রেসে অংশগ্রহণ করেন। হাতে-কলমে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান শিক্ষা দেওয়ার বিষয়ে তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল। সায়েন্স হবি সেন্টার পরিচালনায় তাঁর বিশেষ দক্ষতা ছিল, যেখানে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে ‘লো কস্ট নো কস্ট’ বিজ্ঞান মডেল তৈরি করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। প্রতিবছর ২৩ থেকে ২৬ জানুয়ারি গোবরডাঙা রেনেসাঁস ইনস্টিটিউট পরিচালিত কৃষি, পুষ্প বিজ্ঞানমেলাতে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতেন। গোবরডাঙা রেলস্টেশন সংলগ্ন ব্লু স্টার ক্লাবের মাঠে মেলাটি অনুষ্ঠিত হতো। গোবরডাঙা বইমেলার সঙ্গেও তিনি ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলেন।

খাঁটুরা প্রীতিলতা বালিকা বিদ্যালয়ের দিদিমণি কল্যাণী দাশগুপ্তের প্রেরণায় এবং গোবরডাঙা রেনেসাঁস ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা মণি দাশগুপ্তের তত্ত্বাবধানে রেখা দাঁ বিবিধ বিষয় নিয়ে লেখালেখি শুরু করেন। ‘জ্ঞান ও বিজ্ঞান’, ‘জ্ঞান বিচিত্রা’, ‘কিশোর জ্ঞানবিজ্ঞান’, ‘বিজ্ঞানমেলা’, ‘এযুগের কিশোর বিজ্ঞানী’, ‘বিজ্ঞান অন্বেষক’, ‘এবং কি কে ও কেন’, ‘গণবিজ্ঞান চেতনা’, দৈনিক ‘কালান্তর’-এর ‘প্রকৃতি ও মানুষ’ পাতায়, ‘গ্রামবাংলা পত্রিকা’, ‘কুশদহ বার্তা’, ‘গোবরডাঙা’ প্রভৃতি পত্রিকায় তাঁর বহু লেখা প্রকাশ পায়। একসময় বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত মাসিক ‘বিজ্ঞান সাময়িকী’ এবং ‘অণু’ পত্রিকাতেও তিনি নিয়মিত লিখেছেন। রেখা দাঁ-কে বৃহত্তর গোবরডাঙা অঞ্চলের প্রথম মহিলা বিজ্ঞান লেখিকা বলে অভিহিত করলে বোধ হয় অত্যুক্তি হবে না। অসংখ্য পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রবন্ধ মুদ্রিত হয়েছে। তাঁর রচিত প্রবন্ধগুলি ছিল স্বকীয়তায় ভরা। যথেষ্ট পরিশ্রম করে যথাযথ তথ্য সংগ্রহ করে তিনি প্রবন্ধগুলি তৈরি করতেন। রেখা দাঁ-র লেখা প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থের নাম ‘উইপোকা’। এটি প্রকাশ পায় ২০০৬ সালে। বইটির প্রকাশক ছিল জ্ঞানবিচিত্রা। উল্লেখ্য, জ্ঞানবিচিত্রা প্রকাশনীর কর্ণধার দেবানন্দ দাম বিশেষ উৎসাহ নিয়ে বইটি প্রকাশ করেছিলেন। বিস্তৃতপ্রায় বাঙালি বিজ্ঞানীদের নিয়ে রেখা দাঁ রচিত একটি গ্রন্থ হলো ‘বিজ্ঞান সাধনায় বাঙালি ও অন্যান্য’। গ্রন্থটি ২০১৭ সালে জ্ঞানবিচিত্রা প্রকাশনী থেকে প্রকাশ পায়। অধ্যাপক সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় ‘বিজ্ঞান সাধনায় বাঙালি ও অন্যান্য’-র পুস্তক পরিচয় করতে গিয়ে রেখা দাঁ সম্পর্কে লিখেছেন, “আত্মবিস্মৃত সম্প্রদায়কে নিজেদের বিজ্ঞানসাধনা সম্বন্ধে জানানোর জন্য সাধুবাদ পাবেন তিনি”। (গ্রন্থ সমালোচনা: বইপত্র, দৈনিক ‘কালান্তর’, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮)।

এই অনলস নেপথ্যকর্মী রেখা দাঁ বিগত ৫ জুলাই, ২০২৪ (শুক্রবার) দুপুর ২টো ২৫ মিনিটে নিজগৃহে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জ্ঞান বিচিত্রা ও বুক ওয়ার্ল্ড পরিবার (আগরতলা) রেখা দাঁ-র প্রয়াণে ৫ জুলাই, ২০২৪ প্রেস রিলিজ করে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে। ‘বিজ্ঞান অন্বেষক’ পত্রিকা ও কাঁচরাপাড়া বিজ্ঞান দরবারের পক্ষ থেকেও রেখা দাঁ-র প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়। ৮ জুলাই, ২০২৪ তাদের ওয়েবসাইটে ‘বিজ্ঞান সংবাদ’ বিভাগে ‘না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন শিক্ষিকা রেখা দাঁ’ শিরোনামে সংবাদটি পরিবেশিত হয়। তাঁর স্মৃতিতে গোবরডাঙা রেনেসাঁস ইনস্টিটিউটে ২৮ জুলাই, ২০২৪ একটি স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেদিনের স্মরণসভায় বহু সমাজকর্মী, লেখক, বিজ্ঞান ও পরিবেশকর্মী একই ছাদের তলায় একত্রিত হয়েছিলেন। গণবিজ্ঞানকর্মী রেখা দাঁ সম্পর্কে তাঁরা স্মৃতিচারণ করেন এবং তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। রেখা দাঁ-র ইচ্ছানুযায়ী তিনি প্রয়াত হলে তাঁর পরিবারের সম্মতিতে চক্ষুদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। রেখা দাঁ ও তাঁর পরিবার সামাজিক কুসংস্কারে বিশ্বাসী না হওয়ায় তাঁর দুই সন্তান সায়ন্তনী দে (দাঁ) ও অভিষেক দাঁ মায়ের ইচ্ছানুযায়ী মৃত্যু পরবর্তী কোনও আচারানুষ্ঠান, শ্রাদ্ধ ক্রিয়াদি পালন করেননি।

২০১৩ সালে সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল রেখা দাঁ-কে ‘গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য’ বিজ্ঞান লেখক স্মারক সম্মানে ভূষিত করে। ২০১৩ সালেই বিদ্যালয় শিক্ষকতার পেশা থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। আর ২০১৫ সাল থেকে তিনি জটিল স্নায়বিক রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে একাধিক জায়গায় তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলেও তাঁকে পুরোপুরি সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনা আর সম্ভব হয় না। শেষে পরিবারের তত্ত্বাবধানে বাড়িতে রেখেই তাঁর সেবাসুশ্রূষা চলছিল।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালে দীপককুমার দাঁ ও তাঁর সহধর্মিনী রেখা দাঁ নিজেদের সঞ্চিত-উপার্জিত অর্থ ব্যয় করে মুক্ত সারস্বত জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হিসেবে ‘গোবরডাঙা গবেষণা পরিষৎ’ প্রতিষ্ঠা করেন। এক দশক অতিক্রান্ত এই প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে সমগ্র বাংলার গবেষক, পণ্ডিতবর্গ, পরিবেশ-বিজ্ঞানকর্মীদের মধ্যে এবং সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেশ সুনাম অর্জন করেছে। বর্তমানে এর ত্রিতল ভবনে পরিবেশ, বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন, সমাজবিজ্ঞানের বহুবিধ বিষয়ে বাংলা গ্রন্থাদি ও পত্র-পত্রিকার বিপুল সংগ্রহ গড়ে উঠেছে। গবেষকেরা তাদের গবেষণার কাজে এখানে নিয়মিত আসেন। রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় নামাঙ্কিত সভাকক্ষে নিয়মিত আলোচনাসভা, গ্রন্থপ্রকাশ পত্রিকাপ্রকাশ, পরিবেশ-বিজ্ঞান বিষয়ক সাংগঠনিক সভা-সমিতির আয়োজন করা হয়ে থাকে। প্রশান্তির বিষয় এই যে, তাঁদের স্বপ্নেগড়া প্রতিষ্ঠান গোবরডাঙা গবেষণা পরিষদের এহেন ব্যাপ্তি রেখা দাঁ চাক্ষুষ করে যেতে পেরেছেন। গোবরডাঙা গবেষণা পরিষৎ-এর বিস্তার, ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়েই রেখা দাঁ চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

লেখক: পরিবেশকর্মীসম্পাদক, ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা’।


আপনার মতামত লিখুন :

2 responses to “রেখা দাঁ ও বিজ্ঞান আন্দোলন : দীপাঞ্জন দে”

  1. Biswarup Mukherjee says:

    Khub bhalo laaglo lekhati pore

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন