বৃহস্পতিবার | ১৭ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১লা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৬:৫৩
Logo
এই মুহূর্তে ::
তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর রেল প্রকল্পের কাজ ভাবাদিঘিতে ফের জোর করে বন্ধ করা হলো : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর — অনেক বিদ্যাসাগর মাঝে তিনি একক : প্রলয় চক্রবর্তী আমেরিকা-ইসরায়েল সম্পর্কের শেকড় অনুবাদ ফাতিন ইশরাক নিয়ম নীতি আচারে লক্ষ্মী পূজার তোড়জোড় : রিঙ্কি সামন্ত আমার প্রথম বই — ঘুণপোকা : শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-এর ছোটগল্প ‘কে জাগ রে’ জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন একটি বিপ্রলম্ভের কবিতা : প্রসেনজিৎ দাস আন্দোলন ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিযুক্ত মধ্যস্থতার প্রয়োজন নেই : তপন মল্লিক চৌধুরী রেখা দাঁ ও বিজ্ঞান আন্দোলন : দীপাঞ্জন দে বাংলা উপন্যাসে নিম্নবর্গ : মিল্টন বিশ্বাস বদলে যাওয়ার অসুখ : বিষ্ণু সরকার বিবেকের মুখ : পার্থ রায় কল্লোলের কাল : তপন মল্লিক চৌধুরী দশমীর বিকেল, জলঙ্গী নদীতীরে মেলবন্ধনের আনন্দমুখর ছবি : অমৃতাভ দে উৎসবে ফেরাই জীবন…. : অশোক মজুমদার দ্বিশতবর্ষে পদার্পণ করলো বাঁকুড়ার অযোধ্যার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজো : কমল ব্যানার্জী একটি গ্রামের বাড়ির পুজো… : বিজয় চৌধুরী আয় রে ছুটে আয় পুজোর গন্ধ এসেছে… : লুৎফর রহমান রিটন ময়নাপুর দেওয়ান বাড়ীর পুজো : কমল ব্যানার্জি মা দুর্গার মহাস্নান পর্ব : রিঙ্কি সামন্ত কোষ্টিয়া গ্রামের শীট বাড়ির দুর্গাপুজো : কমল ব্যানার্জী অয়দিপাউস : রিমি মুৎসুদ্দি পোড়খাওয়া সাধারণ মানুষের জীবনকথা : হরিশংকর জলদাস সাজসজ্জার পুজো : নন্দিনী অধিকারী আঠেরো শতকে কলকাতার ভেড়া যেত অস্ট্রেলিয়ায় : অসিত দাস জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (অষ্টম পর্ব) : বিজয়া দেব হরিয়ানায় হ্যাট্রিক করলেও উপত্যকার মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে : তপন মল্লিক চৌধুরী চাপড়া বাঙ্গালঝি মহাবিদ্যালয়ে গান্ধী জয়ন্তী : দীপাঞ্জন দে পটের পাড়ায় মাজরামুড়ায় : রঞ্জন সেন একটি ড্যান্স হাঙ্গামা : শৈলেন সরকার
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই মহাঅষ্টমীর আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

নিয়ম নীতি আচারে লক্ষ্মী পূজার তোড়জোড় : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ৯৪ জন পড়েছেন
আপডেট মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৪

আশ্বিন মাসের দেবীপক্ষের শেষ দিন কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা। কোজাগরী শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত বাংলা অর্থ হলো ‘কে জাগে’। প্রচলিত বিশ্বাস, কোজাগরী পূর্ণিমা তিথিতে দেবী লক্ষ্মীর মর্ত্যে আসেন তার ভক্তদের সম্পদ, সৌভাগ্য প্রদান করতে। এই তিথিতে যারা রাত জেগে দেবীর আরাধনা করেন, তাঁরাই দেবী লক্ষ্মীর আশীর্বাদ পান।

মহিমা ও অভ্যুদয়ের প্রতীক রূপে ইনি পূজিতা।সৌভাগ্য দেবীরূপে বিশ্বকে স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে লক্ষ্য করেন বলেই তিনি লক্ষ্মী।সোনার মতো গায়ের রং আর হাতে ধানের শিষ ও ঝাঁপি। দেবীগণের মধ্যে তিনি হলেন মহতী তাই তার নাম মহালক্ষী। ইনি স্বত্ত্বগুনময়ী। এই মহালক্ষীর আবার দুই রূপ। ভূদেবী ও শ্রীদেবী। ভূদেবী হলেন অপরম প্রকৃতি এবং শ্রীদেবী হলেন পরম প্রকৃতি। দুই একত্রে মহালক্ষ্মী।

লক্ষ্মী শব্দটি প্রথম পাওয়া যায় ঋকবেদে। এখানে তিনি সুন্দর পবিত্র ও সততার প্রতীক। তিনি পদ্মস্থিতা, হিরন্যবর্ণম, অলংকারাবৃতা, সবর্ণা। তিনি বরাভয়দায়িনী। ধরিত্রী দেবী বসুন্ধরার সঙ্গে লক্ষ্মী দেবীর এক সুন্দর সাযুজ্য দেখেছেন প্রাচীন শাস্ত্রকারেরা। তাই শস্য লক্ষ্মীর রূপে লক্ষী বন্দনার মূল সার্থকতা। ধানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন স্বয়ং লক্ষী। তাকে জগতে প্রাণরক্ষাকারিনী হিসেবে পূজা করা হয়। তার কাছে আমরা অর্থ ও ধন সম্পদ কামনা করে থাকি। মনে রাখা দরকার শুধুমাত্র অর্থই সম্পদ নয়, চরিত্রবল হলো মানুষের মহাসম্পদ। চরিত্রধন বিনা সম্পদ ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। যার টাকা পয়সা নেই সে যেমন লক্ষীহীন, আর যার চরিত্র ধন নেই সে একেবারে লক্ষীছাড়া।

বিষ্ণুপুরানে দেখা যায় যে লক্ষী ও অলক্ষী দুই বোন। তারা হলেন ভৃগুর কন্যা। লক্ষী সৌন্দর্য ও সৌভাগ্যের প্রতিক আর অলক্ষী যাবতীয় অশুভ ও দুর্ভাগ্যের প্রতিক। লক্ষ্মীকে শক্তির অংশ বলা হয় কোথাও তিনি দ্বিভূজা, কোথাও চতুর্ভুজা আবার কোথাও তিনি অষ্টভূজা।লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা।

যজুর্বেদে লক্ষ্মীকে বলা হয়েছে মাহি ভূমি দেবী ধাত্রী ও জনযাত্রী। লক্ষ্মীর যেমন বহু নাম আছে তেমনি বহুরূপও রয়েছে। ক্ষীরের সমুদ্র থেকে উদ্ভূত হয়েছিলেন বলে তিনি ক্ষীরোদতনয়া, ধনের অধিষ্ঠাত্রী বলে তিনি ধনদা, পদ্মফুলে তার বাস তিনি পদ্মালয়া, বিষ্ণু স্ত্রী বলে তিনি বিষ্ণুপ্রিয়া।তিনি বিষ্ণুর শক্তিরও উৎস। মহাবিশ্বের সৃষ্টি, সুরক্ষা এবং রূপান্তর করতে বিষ্ণুকে সহায়তা করেন। যখন বিষ্ণু অবতার হিসেবে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন, তখন লক্ষ্মী তার সাথে সঙ্গী হিসেবে আসেন।যেমন রাম ও কৃষ্ণ রূপে অবতার গ্রহণ করলে, লক্ষ্মী সীতা,রাধা রূপে তাঁদের সঙ্গিনী হন। লক্ষ্মীর আটটি বিশিষ্ট প্রকাশ অষ্টলক্ষ্মী, যা সম্পদের আটটি উৎসের প্রতীক।

২০২৪ এর কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর তিথি — ১৬ অক্টোবর, বুধবার পড়েছে। পূর্ণিমা তিথি ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টা ২৩ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডে পড়ছে। তিথি থাকবে ১৭ অক্টোবর সন্ধ্যা ৫টা ১৭ মিনিট ৩৬ সেকেন্ড পর্যন্ত।

গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে, বুধবার সন্ধে ৭টা ৪২ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে পূর্ণিমা তিথি আরম্ভ। পরদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা ১৭ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডে পূর্ণিমা তিথি শেষ। যাঁরা গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে লক্ষ্মীদেবীর আরাধনা করবেন, তাঁরা এই সময়েই পুজো করতে পারবেন।

আবার বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে, বুধবার রাত ৮টা ৪১ মিনিটে কোজাগরী পূর্ণিমা তিথি শুরু। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টে ৫৬ মিনিটে পূর্ণিমা তিথি শেষ।

তিথি অনুযায়ী, কোজাগরী পূর্ণিমায় চাঁদ উঠবে সন্ধ্যা ৫টা ৫ মিনিটে। ওই দিন চন্দ্র মীন ও রোহিণী নক্ষত্রে থাকবে। এ বছর কোজাগরী পূর্ণিমার দিনে রবি যোগ তৈরি হচ্ছে। এটি সকাল ৬:২৩ থেকে গঠিত হচ্ছে, যা সন্ধ্যা ৭:১৮ পর্যন্ত চলবে।

দেবী লক্ষ্মী অল্পেই সন্তুষ্টা। লক্ষ্মী পূজা করার কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলা উচিত যা লক্ষ্মী পাঁচালী বা শাস্ত্রে বলা আছে। দেবীর মূর্তি স্থাপন করা ছাড়াও সরা বা ঘট বা ঝাঁপিতে পূজা করা যায়। পূজার স্থানটি খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধূপ ধুনা জ্বালিয়ে মাকে আহ্বান করতে হয়। লক্ষ্মী পূজার অন্যতম অংশ হলো আলপনা। লক্ষ্মী ব্রতে লক্ষ্মীর পায়ের ছাপ আঁকা হয়, ঘরের দিক করে কারণ মা লক্ষ্মী ঘরে আসবেন এই প্রত্যাশায়। ব্রতী লক্ষ্মীর পা আঁকার সময় ব্রতী বলে : —

আঁকিলাম আলপনা, দূরে ফেলি আবর্জনা।

শুভ শুদ্ধ মন নিয়ে করি তব আরাধনা।

তোমার আশিশে মা যে, সুখে থাকে জনগণ।

একটু ধান আর মাটি ছড়িয়ে তেল-সিঁদুর দিয়ে স্বস্তিকচিহ্ন এঁকে লক্ষ্মীর ঘট স্থাপন করতে হয়। ঘটে বিজোড় সংখ্যার আমপাতা রেখে তাতে একটি কলা বা হরীতকী, দূর্বা, একটি ফুল রাখতে হবে। লাল গোলাপ ও লাল পদ্ম মায়ের প্রিয় ফুল।

লক্ষ্মী পুজোয় ধান ছাড়াও টাকার কয়েন, পান, কড়ি, হলুদ, ঘট, একসরা চাল, আতপ চাল, দই, মধু, ঘি, চিনি, চন্দ্রমালা, পূর্ণপাত্র ও হরিতকী প্রয়োজন হয়। শুদ্ধ মনে শুদ্ধ দেহে নারায়নকে স্মরণ করে, তামার পাত্রে সূর্য দেবতাকে জলঅর্পণ করে পুজো শুরু করা হয়। লক্ষ্মীর পাঁচালী থেকে দেখে মন্ত্র পড়ে পুরোহিত ছাড়াই পুজো করা যায় ঘরেতে। যারা মন্ত্র পড়তে পারবেন না, তাঁরা এক মনে ভক্তি সহকারে মাকে স্মরণ করবেন।

তিন বার পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র বলে অঞ্জলি দিতে হবে। মন্ত্রটি হল —

নমস্তে সর্বদেবানাং বরদাসি হরিপ্রিয়ে।

যা গতিস্তং প্রপন্নানাং সা মে ভূয়াত্বদর্চবাৎ।।

লক্ষ্মী পুজোর দিন লাল, গোলাপি, হলুদ ও কমলা রঙের পোশাক পরার পরামর্শ দেন জ্যোতিষীরা। সাদা ও কালো পোশাক পরতে বারণ করেন।

লক্ষ্মী পুজোর দিন কাঁসার থালায় নৈবেদ্য সাজানোর পাশাপাশি কলাপাতাতে ভোগ ও ফল প্রসাদ নিবেদন করা হয়।

দেবী আরাধনায় কাঁসর ঘন্টা বাজাতে নেই,মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে পূজা করা হয়। কেবলমাত্র শাঁখ বাঁজাবেন।পুজোর সময় অন্যমনস্ক হতে নেই এবং কথা বলা বারণ। লক্ষীর ঘটে তুলসী পাতা দেবেন না ও লোহার বাসন ব্যবহার করবেন না।

কোজাগরি পূর্ণিমায় চিঁড়ে, সাদা বাতাসা, নারকেল ও দুধ চাঁদের আলোয় বসে খাওয়ার রীতি আছে। এই উৎসবকে, তাই ‘ধবল উৎসব’ও বলা হয়। শুদ্ধ মনে, নির্মল অন্তঃকরণে এই উৎসবের আনন্দের সাথে সাথে জীবনের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন যিনি তিনি পূর্ণতা লাভ করেন। সকল দেশেই নানা ভাবে নানা রূপে লক্ষ্মীর পূজা হয়। ভারতে বাঙ্গালীর সঙ্গে মাড়োয়ারি সিন্ধি গুজরাটি প্রভৃতি সম্প্রদায়ের মানুষ লক্ষ্মী পূজা করেন।

উপনিষদে বলা হয়েছে “উত্তিষ্ঠত জাগ্রত প্রাপ্য বরান্ নিবোধত” অর্থাৎ ওঠো, জাগো, আর লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত থেমো না। অনেকেই ওঠেন কিন্তু জাগেন না। ওঠা হল শারীরিক ক্রিয়া আর জাগার মধ্যে মানসিক ও বৌদ্ধিক জাগরণ বোঝায়। শরৎ পূর্ণিমা হল জাগরণের উৎসব, বৈভবের উৎসব, আনন্দ ও উল্লাসের উৎসব।

লক্ষ্মী পূজার উৎসবের মধ্যে নিহিত সুন্দর ভাবটুকু যদি আমরা বুঝতে পারে তবেই আমাদের জীবন আনন্দময়, লক্ষ্মীময় হয়ে উঠবে।।

মা লক্ষ্মীর ধ্যানমন্ত্র —

‘ওঁপাশাক্ষমালিকাম্ভোজ-সৃণিভির্ষাম্য-সৌম্যয়োঃ

পদ্মাসনাস্থাং ধ্যায়েচ্চ শ্রিয়ং ত্রৈলোক্যমাতরম্

গৌরবর্ণাংসুরুপাঞ্চসর্বলঙ্কার-ভূষিতাম্

রৌক্মপদ্ম-ব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন