বৃহস্পতিবার | ৬ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৯:৫৬
Logo
এই মুহূর্তে ::
মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কমছে, সঙ্কটে সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুল : তপন মল্লিক চৌধুরী ফল্গু নদীর তীরে একটি ছোট শহর এই বুদ্ধগয়া : বিজয় চৌধুরী শাহিস্নান নয়, আদতে কথাটি ছিল সহিস্নান : অসিত দাস মৈত্রেয়ী ব্যানার্জি-র ভূতের গল্পো ‘হোমস্টে’ রহস্য ঘেরা বলিউডের নক্ষত্রপতন : রিঙ্কি সামন্ত বাঁকুড়ার দু-দিন ব্যাপী দেশীয় বীজ মেলায় দেশজ বীজের অভূতপূর্ব সম্ভার পেজফোর-এর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ২০২৫ এত গুণী একজন মানুষ কত আটপৌরে : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী সরস্বতীর উৎস সন্ধানে : অসিত দাস ‘সব মরণ নয় সমান’ সৃজনশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে যথোচিত মর্যাদায় স্মরণ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সিপিএম-এর রাজ্য সম্মেলন, তরুণ প্রজন্মের অন্তর্ভূক্তি নিয়ে খামতি রয়েছে দলে : তপন মল্লিক চৌধুরী প্রথম পাঠ — মার্কসবাদের বিশ্বভ্রমণ : সন্দীপন চক্রবর্তী বঙ্গবিভূষণ কাশীকান্ত মৈত্র স্মারকগ্রন্থ : ড. দীপাঞ্জন দে ‘খানাকুল বাঁচাও’ দাবিতে সরব খানাকুল-সহ গোটা আরামবাগের মানুষ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় হরি হরের কথা এবং বীরভূমের রায়পুরে বুড়োনাথের বিয়ে : রিঙ্কি সামন্ত ত্র্যম্বকেশ্বর দর্শনে মোক্ষলাভ : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী কুম্ভমেলায় ধর্মীয় অভিজ্ঞতার থেকে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বেশি : তপন মল্লিক চৌধুরী রাজ্যে পেঁয়াজের উৎপাদন ৭ লক্ষ টন ছাড়াবে, কমবে অন্য রাজ্যের উপর নির্ভরতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ‘হিড়িক’ শব্দটির ব্যুৎপত্তি অধরা, আমার আলোকপাত : অসিত দাস বিজয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-র ছোটগল্প ‘শিকড়ের টান’ বাংলাভাষার নেচিতে ‘ময়ান’ ও ‘শাহিস্নান’-এর হিড়িক : অসিত দাস একটু একটু করে মারা যাচ্ছে বাংলা ভাষা : দিলীপ মজুমদার রাজ্যে এই প্রথম হিমঘরগুলিতে প্রান্তিক চাষিরা ৩০ শতাংশ আলু রাখতে পারবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সামরিক জান্তার চার বছর — মিয়ানমার পরিস্থিতি : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ১৯ ফেব্রুয়ারি ও স্বামীজির স্মৃতিবিজড়িত আলমবাজার মঠ (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত চাষিদের বাঁচাতে রাজ্যের সরাসরি ফসল কেনার দাওয়াই গ্রামীণ অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (সপ্তম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার মোদীর মিডিয়া ব্যস্ত কুম্ভের মৃত্যুমিছিল ঢাকতে : তপন মল্লিক চৌধুরী রেডিওকে আরো শ্রুতিমধুর করে তুলেছিলো আমিন সায়ানী : রিঙ্কি সামন্ত
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বসন্ত পঞ্চমী ও সরস্বতী পুজোর  আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

শাহিস্নান নয়, আদতে কথাটি ছিল সহিস্নান : অসিত দাস

অসিত দাস / ৬৮ জন পড়েছেন
আপডেট বুধবার, ৫ মার্চ, ২০২৫

কেন পুরোপুরি হিন্দু একটি অনুষ্ঠানের নামে শাহিকাবাবের মত শাহি শব্দটি জুড়ে গেল? এটা নিয়ে অনেকদিন ধরেই ভাবছি। মুঘল আমলেই যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা আগেই অনুমান করেছিলাম। কারণ মুঘল বাদশাহদের আমলে, বিশেষ করে আকবরের আমলে এই পুণ্যস্নান বা সঙ্গমে অবগাহন ধূমধাম করে অনুষ্ঠিত হত। সেই সময় থেকেই কুম্ভমেলার এই পুণ্যস্নান শাহিস্নান বলে পরিচিত হয়।

এবারে সশরীরে প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভে গিয় সরেজমিনে মুঘল পৃষ্ঠপোষকতার প্রমাণ খুঁজেছি। মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে (১৫৮৩ সালে) প্রয়াগের ত্রিবেণী সঙ্গমের কাছে যমুনার তীরে নির্মিত এলাহাবাদ ফোর্টটিও দেখেছি। কেল্লার মধ্যে অবস্থিত সরস্বতী কূপ ছাড়া কুম্ভমেলার সঙ্গে আকবরের সরাসরি কোনও যোগ পাইনি। তবে আকবরের নামে এই বদনামও আছে যে ১৫৮৩ সালে এই এলাহাবাদ ফোর্ট নির্মাণের উদ্দেশ্যই ছিল কুম্ভমেলায় স্নান করতে যাওয়া পুণ্যার্থীদের কাছ থেকে তীর্থকর সংগ্রহ করা। যদিও আকবরের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ খণ্ডন করেছেন কোনও কোনও ঐতিহাসিক। কারণ তার কয়েক বছর আগেই তিনি জিজিয়া করের অবলুপ্তি ঘটান। বাবা আকবরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে পুত্র জাহাঙ্গীর এই কেল্লায় আশ্রয় নেন কিছু কালের জন্যে। এখানেই রাজসভা বসাতেন তিনি। তখন তিনিই নাকি কুম্ভযাত্রীদের কাছে জবরদস্তি করে তীর্থকর সংগ্রহ করতেন। আকবর-জাহাঙ্গীরের সময় থেকে সঙ্গমে পুণ্যস্নানের নামই হয়ে যায় শাহিস্নান।

শাহিস্নান বা অধুনাকথিত অমৃতস্নানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা প্রচলিত বিশ্বাস। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে সূর্য ও বৃহস্পতির অবস্থান অনুসারে শাহিস্নানের দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়। এই দুই গ্রহের শুভ প্রভাবে জাতক রাজভাগ্য, সুখ ও সম্পদ লাভ করে থাকে। সেই কারণে আদতে এই সঙ্গম-অবগাহনকে সহিস্নান বলা হতে থাকে। নাগা সন্ন্যাসীদের সনাতনী হিন্দু ধর্মের রক্ষাকর্তা বলে মনে করা হয়। শাহিস্নান তথা সহিস্নানে নাগা সন্ন্যাসীরা হাতি-ঘোড়ার পিঠে চেপে বা রথে চড়ে আসেন। প্রচলিত বিশ্বাস রাজকীয়ভঙ্গিতে রাজানুগ্রহে তাঁরা স্নান করতে আসেন বলেও এই স্নানকে শাহিস্নান বলা হয়, যদিও আমার গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, কথাটি আদতে ছিল সহিস্নান।

কুম্ভমেলায় শাহিস্নান তথা সহিস্নান সবার আগে করে থাকেন নাগা সন্ন্যাসীরা। তারপর স্নান সারে সন্ত সমাজ। এরপর গৃহস্থরা স্নান করতে পারেন। প্রচলিত ধারণা হল, প্রাচীনকালে হিন্দুধর্মের ওপর যখনই আঘাত এসেছে, তখনই ধর্মরক্ষা করতে এগিয়ে এসেছে নাগা সাধুরা। প্রসঙ্গত এর সঙ্গে নাগাল্যান্ডের কোনও সম্পর্ক নেই। নগ্ন থেকে অপভ্রংশে নাগা। মুঘল আমলে অস্ত্র হাতে তাঁরা অসহায় পুণ্যার্থীদের রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছিলেন। মুঘল সেনার সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ করেছিলেন তাঁরা। তাই নাগা সাধুদের সনাতনী হিন্দু ধর্মের রক্ষাকর্তা বলে মনে করা হয়। এই কারণে শাহিস্নান তথা সহিস্নানের প্রথম অধিকারী হলেন তাঁরা। এ ভাবে তাঁদের অবদানকে ও আত্মবলিদানকে সম্মান জানানো হয়।

কুম্ভমেলা ব্যতীত অন্য সময় এই নাগা সাধুরা হিমালয়ের গুহায় বসবাস করেন। শুধুমাত্র কুম্ভমেলায় এঁরা হাজারে হাজারে নেমে আসেন। গায়ে ছাইভস্ম মাখা, মাথায় জটাজূট,, হাতে ত্রিশূলধারী এই সন্ন্যাসীরা চিরকালই সাধারণ মানুষের কাছে রহস্যময় এক সম্প্রদায়। শাহিস্নান তথ সহিস্নানের আগে এঁরা মন্ত্রোচ্চারণ করেন, শঙ্খধ্বনি দেন এবং প্রদীপ জ্বালান। পূর্ণকুম্ভ বা মহাকুম্ভের সময় বিশেষ তিথিতে যে স্নান করা হয় তাকে সহিস্নান তথা শাহিস্নান বলা হয়ে থাকে। কিন্তু এবারকার প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভে এটির নামকরণ করা হয়ে অমৃতস্নান। এর কারণ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে জুনা আখাড়ার পীঠাধীশ্বর আচার্য স্বামী অবধেশানন্দ গিরি জানিয়েছেন, বৃষ রাশিতে বৃহস্পতি উপস্থিত, অন্য দিকে মকর রাশিতে সূর্য ও চন্দ্র একসঙ্গে ভ্রমণ করছিল, ফলত ১২ বছর পর মকর রাশিতে সূর্য ও চন্দ্রের সংযোগ অমৃতযোগ তৈরি করে। এ কারণে এই স্নানকে অমৃতস্নান নাম দেওয়া হয়। মকর সংক্রান্তির সেই স্নান অমৃতসমান ফলপ্রদ।

আমজনতার মনে প্রশ্ন জাগবেই শাহিস্নান নামটি আদতে কি ছিল? পুণ্যস্নান বা ব্রহ্মমুহূর্তের স্নান বা সঙ্গম স্নান বা ওই জাতীয় কোনও নাম কি আগে ছিল শাহিস্নানের?

অনেক চিন্তার পর মনে হল, সঠিক তিথি নক্ষত্র মেনে, সঠিক মুহূর্তে তথা ব্রহ্মমুহূর্তের স্নানকেই বলা হত সহিস্নান। সহি কথাটি হিন্দি বা উর্দুতে এসেছে আরবি সহীহ শব্দ থেকে। উত্তরভারতীয় সাধুসন্তরা কুম্ভস্নানকে বরাবর সহিস্নানই বলতেন। হিন্দিতে সহি বাত, সহি দিশা, সহি সময়, সহি তরিকা শব্দবন্ধ বা লব্জগুলি কয়েকশো বছর ধরে খুবই চলে। তেমনই একটি শব্দবন্ধ ছিল সহিস্নান। সঠিক দিনে, সঠিক তিথি নক্ষত্র দেখে, ব্রহ্মমুহূর্তে স্নানকেই বলা হত সহিস্নান। মুঘল আমলে বাদশাহদের জবরদস্তিতে পুণ্যার্থীদের শাহিস্নান বলতে বাধ্য করা হয়। সেই থেকেই চলছিল শাহিস্নান কথাটি। এবারেই অমৃতস্নান, রাজকীয় স্নান কথাগুলি শোনা যাচ্ছে প্রথম। মনে হয় সনাতনীপন্থীরা হিন্দু-অনুষ্ঠানে মুসলিম সংযোগ চাইছেন না বলেই রাজকীয় স্নান, অমৃতস্নান কথাগুলি আমদানি করা হচ্ছে শাহিস্নানের জায়গায়।

সূত্র : নামধামের উৎসকথা, লেখক অসিত দাস, অভিযান পাবলিশার্স


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন