দক্ষিণবঙ্গে সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত এলাকা। আসন্ন বাঙালির বড় উৎসব। এই উৎসবে আলোর রোশনাইয়ে যাতে কোথাও ঘাটতি দেখা না যায়, এজন্য রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তরের তৎপরতা তুঙ্গে। হুগলি, হাওড়া, বর্ধমান ও বাঁকুড়ার বেশ কিছু জায়গায় বন্যার জলের তলায় চলে যায়। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আসন্ন দুর্গা পূজা উপলক্ষে আলোর রোশনাইয়ে ভরিয়ে দিতে দপ্তরের তৎপরতা তুঙ্গে।
প্রসঙ্গত, এই শরতে প্রস্তুতি মণ্ডপে মণ্ডপে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোচ্ছেন বাঁকুড়া, বর্ধমান, হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর, আমতা ও হুগলির প্রান্তিক আরামবাগ, তারকেশ্বর পুর এলাকার এবং সিঙ্গুর, হরিপাল, ধনিয়াখালির গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দারা। এগোচ্ছে পুজো কমিটিগুলি। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার বিদ্যুৎ পর্ষদের কর্মীদের মধ্যেও সাজ সাজ রব পড়ে গিয়েছে। সারা বছর পরিষেবার যতই ত্রুটি বা স্থানীয় এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকুক না কেন পুজোর ক’টা দিন বিদ্যুৎ পরিষেবা দানের ক্ষেত্রে সত্যিই আন্তরিক বিদ্যুৎ পর্ষদের কর্মকর্তারা। অন্তত কোমর বেঁধে পুজোর মাসখানেক আগে থেকে লাইন মেরামতের কাজে নেমে সে কথা প্রমাণ করতে তাঁরা সচেষ্ট। পুজোর সময় এলাকায় পর্যাপ্ত আলোর বন্দোবস্ত তথা ২৪ ঘণ্টাই যাতে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকে তা নিশ্চিত করতে এখন ব্যস্ত বিদ্যুৎ পর্ষদের কর্মীরা।
এদিকে আরামবাগ বিদ্যুৎ পরিষেবার মান নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট এখানে স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুজোতেও বিদ্যুৎ বিভ্রাট চলতে থাকলে এলাকাবাসীদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে। এ বিষয়ে আরামবাগ পুরসভার চেয়ারম্যান সমীর ভাণ্ডারি জানান, পুজোয় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার জন্য রাজ্য বিদ্যুৎ পর্যদের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। কেবল শুধু আরামবাগই নয়, তারকেশ্বর, সিঙ্গুর কিংবা ধনিয়াখালিতেও বিদ্যুৎ পরিষেবার হাল খুব খারাপ। ফলে অনেক জায়গাতেই পুজোর সময় জোগানের থেকে বিদ্যুৎ চাহিদার অনেক বেড়ে যায়। এতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবার সম্ভাবনা থাকে। এই প্রবণতা পুজোর দিনগুলিতে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের আশংকা থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অপরদিকে এবার পুজোয় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ মিলবে কিংবা লোডশেডিং হবে না এমন নিশ্চয়তা বিদ্যুৎ পর্যদের কর্মকর্তারা এখনও দিতে না পারলেও তাঁরা পুজোর প্রস্তুতির কাজ শুরু করে দিয়েছেন জোরকদমে। রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের এক পদস্থ আধিকারিক জানালেন, প্রতিটি সাবস্টেশনে যন্ত্রাংশ মেরামতি, ট্রান্সফর্মার সারানো, বৈদ্যুতিক লাইনের ওপর থেকে গাছের ডাল সরানোর কাজ চলছে জোরকদমে। চেকিং চলছে লাইনেও। জামপার, ফিউজ থেকে শুরু করে নানান যন্ত্রাংশের পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে জোরকদমে। প্রতি বছরই পুজোর আগে এই ধরনের কাজ চলে। তিনি বলেন, আমরা এই কাজকে প্রি-পুজো মেন্টেনেন্স বলে থাকি। এই কাজ চলার সময় কোনও কোনও জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখতে হয়। এই সংযোগ বন্ধ সকাল ৯টা থেকে সর্বাধিক বিকেল ৩টে পর্যন্ত করা যায়। এ ব্যাপারে আরামবাগ ৪০০ কেভি সাবস্টেশনের অ্যাসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ওই সময় সেই সংশ্লিষ্ট এলাকার জন্য অন্য লাইন মারফৎ বিদ্যুৎ কানেকশন বজায় রাখা হয়। তাই লাইন মেরামতের সময়েও যাতে বিদ্যুৎ সংযোগের বিঘ্ন না ঘটে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা হয়।
তিনি বলেন, প্রি-পুজো মেন্টেনেন্সের কাজ মহালয়ার আগে শেষ হয়ে যায়। তিনি আশা প্রকাশ করেন, মহালয়ার পর থেকেই বিদ্যুৎ পরিষেবার মান আরও ভালো হচ্ছে। জেলা বিদ্যুৎ পর্ষদের জনৈক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার জানান, কোলাঘাট ও ব্যান্ডেল তাপবিদ্যুৎ বিদ্যুৎ উৎপাদনে উন্নতিতে এখন আরামবাগ, তারকেশ্বর, খানাকুল, গোঘাট প্রভৃতি জায়গায় লোডশেডিং খুবই কম হচ্ছে। কিছুদিন আগেও দিনে দু-তিন ঘন্টা লোডশেডিং রুটিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এখন কিন্তু সেই পরিস্থিতি একেবারেই নেই। কিন্তু পুজোর সময় এই রকম স্বাভাবিক পরিষেবা মিলবে একথা এখনই বলা যাচ্ছে না। পুজোর সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেমন থাকে বা প্রয়োজনীয় বাড়তি বিদ্যুতের কতটা পাওয়া যাবে এবং সর্বোপরি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হওয়া না হওয়ার ওপর সব কিছু নির্ভর করছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, সামান্য বজ্রপাতে কিংবা বৃষ্টিতে গ্রামীণ এলাকার বিদ্যুৎ পরিষেবার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়। সন্ধ্যের দিকে একটু ঝড়-বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের ঘটনা জেলার গ্রামীণ এলাকায় খুবই সাধারণ ব্যাপার। আর সন্ধ্যের দিকে সেই যে কারেন্ট চলে যায় সেদিন রাতে বেশিরভাগ সময়েই আর আসে না। কারেন্ট আসতে আসতে পরের দিন সকাল ১০-১১টা গড়িয়ে যায়। কারণ প্রত্যন্ত গ্রামে পৌঁছে ছেঁড়া তার জুড়ে পরিষেবা স্বাভাবিক করার কাজ সময়সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। এতসব সত্ত্বেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে শেষ পর্যন্ত পুজোর কটা দিন পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার জন্য বিদ্যুৎ পর্ষদ প্রয়োজনীয় কর্মসূচী নেবে বলেই দপ্তরের আধিকারিকরা আশা করছেন।
অপরদিকে রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ সূত্রে জানানো হয়েছে, পুজোর কটা দিন ২৪ ঘণ্টাই তাদের অফিসে কর্মীরা থাকবেন। বেশিরভাগ কর্মীদেরই পুজোর সময় ছুটি বাতিল করা হচ্ছে। তা সত্বেও যদি কোনও এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যাঘাত ঘটে অবিলম্বে স্থানীয় সাপ্লাই অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। ওই অফিসে পুজোর কটা দিন সব সময়ের জন্য কর্মী মোতায়েন থাকবে। সব মিলিয়ে পুজোর কটা দিন বিদ্যুৎ পরিষেবা সচল থাকবে বলে পর্ষদের পদস্থ অফিসাররা মনে করছেন।