শুক্রবার | ৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ভোর ৫:১৪
Logo
এই মুহূর্তে ::
মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কমছে, সঙ্কটে সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুল : তপন মল্লিক চৌধুরী ফল্গু নদীর তীরে একটি ছোট শহর এই বুদ্ধগয়া : বিজয় চৌধুরী শাহিস্নান নয়, আদতে কথাটি ছিল সহিস্নান : অসিত দাস মৈত্রেয়ী ব্যানার্জি-র ভূতের গল্পো ‘হোমস্টে’ রহস্য ঘেরা বলিউডের নক্ষত্রপতন : রিঙ্কি সামন্ত বাঁকুড়ার দু-দিন ব্যাপী দেশীয় বীজ মেলায় দেশজ বীজের অভূতপূর্ব সম্ভার পেজফোর-এর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ২০২৫ এত গুণী একজন মানুষ কত আটপৌরে : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী সরস্বতীর উৎস সন্ধানে : অসিত দাস ‘সব মরণ নয় সমান’ সৃজনশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে যথোচিত মর্যাদায় স্মরণ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সিপিএম-এর রাজ্য সম্মেলন, তরুণ প্রজন্মের অন্তর্ভূক্তি নিয়ে খামতি রয়েছে দলে : তপন মল্লিক চৌধুরী প্রথম পাঠ — মার্কসবাদের বিশ্বভ্রমণ : সন্দীপন চক্রবর্তী বঙ্গবিভূষণ কাশীকান্ত মৈত্র স্মারকগ্রন্থ : ড. দীপাঞ্জন দে ‘খানাকুল বাঁচাও’ দাবিতে সরব খানাকুল-সহ গোটা আরামবাগের মানুষ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় হরি হরের কথা এবং বীরভূমের রায়পুরে বুড়োনাথের বিয়ে : রিঙ্কি সামন্ত ত্র্যম্বকেশ্বর দর্শনে মোক্ষলাভ : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী কুম্ভমেলায় ধর্মীয় অভিজ্ঞতার থেকে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বেশি : তপন মল্লিক চৌধুরী রাজ্যে পেঁয়াজের উৎপাদন ৭ লক্ষ টন ছাড়াবে, কমবে অন্য রাজ্যের উপর নির্ভরতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ‘হিড়িক’ শব্দটির ব্যুৎপত্তি অধরা, আমার আলোকপাত : অসিত দাস বিজয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-র ছোটগল্প ‘শিকড়ের টান’ বাংলাভাষার নেচিতে ‘ময়ান’ ও ‘শাহিস্নান’-এর হিড়িক : অসিত দাস একটু একটু করে মারা যাচ্ছে বাংলা ভাষা : দিলীপ মজুমদার রাজ্যে এই প্রথম হিমঘরগুলিতে প্রান্তিক চাষিরা ৩০ শতাংশ আলু রাখতে পারবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সামরিক জান্তার চার বছর — মিয়ানমার পরিস্থিতি : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ১৯ ফেব্রুয়ারি ও স্বামীজির স্মৃতিবিজড়িত আলমবাজার মঠ (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত চাষিদের বাঁচাতে রাজ্যের সরাসরি ফসল কেনার দাওয়াই গ্রামীণ অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (সপ্তম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার মোদীর মিডিয়া ব্যস্ত কুম্ভের মৃত্যুমিছিল ঢাকতে : তপন মল্লিক চৌধুরী রেডিওকে আরো শ্রুতিমধুর করে তুলেছিলো আমিন সায়ানী : রিঙ্কি সামন্ত
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বসন্ত পঞ্চমী ও সরস্বতী পুজোর  আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

শস্যদেবীর উপাসনা ও বাঙালির ঘরে পৌষ সংক্রান্তি : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ৬১৩ জন পড়েছেন
আপডেট শুক্রবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৪

পৌষ আর অগ্রহায়ণ গ্রাম বাংলার আঙ্গিনা পরিপূর্ণ থাকে নবজাত শস্যের আঘ্রাণে। শীতের কুয়াশায় আচ্ছাদিত সকাল-সন্ধে, ঢেঁকি ছাঁটা চাল আর নতুন গুড়ের গন্ধ জানান দেয় পিঠে-পুলি-পায়েসের বার্তা। কৃষকের মন আনন্দে ভরপুর কারণ নতুন ফসল এনে দেবে সমৃদ্ধি। বাংলির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হলো পৌষ পার্বণ বা পৌষ সংক্রান্তি, যা পৌষ মাসের শেষ দিনে পালিত হয়। মকর সংক্রান্তিতে পুণ্যস্নানের অনুষঙ্গ বাদ দিলে, সংক্রান্তি উপলক্ষে গ্রাম বাংলার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে এক এক রকম উৎসব দেখা যায়।

সংক্রান্তির আগের দিন ভোর থেকে শুরু হয় ঢেঁকিতে চালকোটার পালা। চাল ধুতে গ্রামাঞ্চলে ব্যবহার করা হয় ধুচুনি। ধূচুনি সরু করে কাটা বাঁশের তৈরী সছিদ্র পাত্র। চাল দিয়ে জল দিয়ে ধুলে এই ছিদ্র দিয়ে জল বেরিয়ে যায় অনেকটা আমাদের আধুনিক রান্নাঘরে স্টিলের ঝুড়ির মতো।

একসময় ঢেঁকিতে চাল ছাটার জন্য মহিলাদের লাইন পড়ে যেত। একে বলা হয় ‘চাউনি’। তবে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে আজ সর্বত্র। ঢেঁকিতে চাল কোটার দিনও প্রায় শেষ, এখন মেশিনে ভাঙ্গা চালই সহজলভ্য। সংক্রান্তির আগের দিন গেরস্থের বাড়ির উঠোন পরিষ্কার করে নিকিয়ে কুলো, লক্ষ্মীর পা, প্যাঁচা, ধানের ছড়ার আলপনা দেওয়া হয়।

সংক্রান্তির দিন সকাল থেকেই স্নান করে ব্রতী উনুনে মাটির পাত্রে প্রথম পিঠে তৈরি করে দেবতাদের উদ্দেশ্যে নিবেদন করে। নতুন মাটির সরাতে আসকে পিঠে বা সরা পিঠে বানাতেই হয়।

তারপর সারাদিন চলে নানাধরনের পিঠে, পাটিসাপটা, সরুচাকলি, পায়েসের আয়োজন। সঙ্গে থাকে খেজুর গুড় আর পাটালি। এছাড়াও তৈরি করা হয় নানা ধরনের রান্না, সারাবছর জমিতে চাষের জন্য ব্যস্ত থাকা মানুষগুলোকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানোর একটি রীতি আছে।

সংক্রান্তির দিন সন্ধ্যে বেলায় দু-তিনটি ধানের শিষ বিনুনি করে বা শীষের বদলে দু-তিনটি খড় একত্রে লম্বা করে দড়ি পাকিয়ে গেরস্থের ঘরের বিভিন্ন ধরনের জিনিস যেমন রান্নাঘরে চালের হাঁড়িতে, ঠাকুর ঘরে লক্ষ্মীপ্রতিমা বা পটে, আলমারিতে বা টাকা রাখা জায়গাতে, সাইকেল, মোটরবাইক, ধানের গোলা, ঢেঁকি, বাক্স-পেঁটরা-তোরঙ্গ,এমনকি হেঁসেলের বিভিন্ন জিনিসপত্রে বেঁধে বা উপরে রেখে দিতে হয়। এই পর্যায়টিকে বলা হয় বাউনি। ধানের শীষের দড়ির সঙ্গে মুলোফুল, সরষেফুল, গাঁদাফুল এমনকি আমপাতাও ইত্যাদি বেঁধে দেওয়া হয়। এগুলি বাঁধার সময় আওড়ানো হয় প্রচলিত ছড়া।

‘আউনি বাউনি চাউনি/তিন দিন কোথাও না যেও/ ঘরে বসে পিঠে-ভাত খেও।’

পৌষ মাস হলো গৃহী মানুষদের কাছে লক্ষ্মীমাস। মা লক্ষ্মীকে ঘরে ধরে রাখতে চান মানুষ। তাই এইভাবেই চলে নানান আয়োজন। আউনি কথার অর্থ মা লক্ষ্মীর আগমন, বাউনি অর্থাৎ লক্ষ্মীর বন্ধন বা স্থিতি আর চাউনি হল মায়ের কাছে বর প্রার্থনা। দেবী পৌষ মাসে আরাধিত হন বলে তার নাম ‘পৌষ লক্ষী’।

গ্রামবাংলার অনেক জায়গায় নতুন একটি থালায় চাল, মিষ্টি, পান, সুপারি ও সিঁদুর কৌটা দিয়ে তুলসী তলায় রেখে পৌষ আগলানোর রীতিও দেখা যায়। এর উদ্দেশ্য মা লক্ষ্মীকে ধরে রাখা। পরের দিন কোন ব্রাহ্মণকে থালার সামগ্রী দিয়ে দিতে হয়। আদিবাসী সমাজের কাছে এই উৎসব বয়ে নিয়ে আসে আনন্দের আমেজ।সকলে নতুন পোশাক পড়েন, মেয়েরা মাথায় ফুল দিয়ে সাজে।এক সপ্তাহ ধরে চলে ধামসা মাদল বাজিয়ে নাচ গান, সঙ্গে চলে নানা রকমের খেলা ও প্রতিযোগিতা। উৎসব উপলক্ষে এরা থাকে খুশির মেজাজে, কোন কাজকর্ম করেনা। বিভিন্ন অঞ্চলে মাদলের দ্রিমি দ্রিমি শব্দ মাতিয়ে রাখে বাতাস।তবে অধুনা হাওয়া মাদলের শব্দ ফিকে করে চলে মাইক ও ডিজের ব্যবহার।

এ মাসের আরেকটি ব্রতের নাম শাম্বদশমী ব্রত। শ্রীকৃষ্ণের পুত্র শাম্ব পৌষ মাসের দশমীর দিন কোনারকের সূর্য মন্দির এসে কুষ্ঠ রোগ থেকে মুক্ত হয়েছিলেন বলে এই দিনটিতে শাম্বব্রত পালন করা হয়। যেসব মায়ের সন্তান দুরারোগ্য চর্মরোগে আক্রান্ত তাদের মায়েরা পৌষ মাসে দশমীর দিন তাঁদের সন্তানদের চর্মরোগ থেকে মুক্তির আশায় কোনারকের সূর্য মন্দিরের উপস্থিত হয়ে এই ব্রত পালন করেন।

পূর্ব বর্ধমান জেলার সাঁওতালদের মধ্যে পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে পুরুষ নারীদের জন্য নানা খেলার আয়োজন করা হয়। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তির ছোঁড়া। মাঠের মাঝখানে একটি কলা গাছ পোঁতা থাকে এবং গাছের গায়ে পৌষ সংক্রান্তির প্রতীক স্বরূপ

একটি আস্কে পিঠে আটকে দেওয়া হয়। প্রায় ৩০ ফুট দুরত্ব থেকে একসঙ্গে প্রত্যেক পুরুষ নিজের ধনুক থেকে তীর ছোঁড়ে।প্রত্যেকের তীর বিভিন্ন রঙের সুতো দিয়ে জড়ানো থাকে যাতে আলাদা করে বুঝতে পারা যায়। যাঁর তির কলা গাছে বিদ্ধ হবে সেই হবে জয়ী। জয়ী পুরুষকে বাকি সবাই মাথায় তুলে মঞ্চে এনে তাকে নগদ টাকা, নতুন বস্ত্র, নানাবিধ পুরস্কার দিয়ে সম্মান জানানো হয়।

সংক্রান্তি উপলক্ষে মেদিনীপুরের ধেড়ুয়া, শালবনি, গোয়ালডাঙা সমেত জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকায় মোরগ লড়াই হয়।

দক্ষিণ ২৪ পরগনায় পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে যে উৎসবটি পালিত হয় তাকে বলা হয় আখ্যান উৎসব। সংক্রান্তির দিন শুরু করে পয়লা মাঘ রাত্রিবেলা ধর্মঠাকুর, বারাঠাকুর, দক্ষিণরায়ের পূজো করা হয় চিনি, বাতাসা, গাঁজা, মদ ইত্যাদি নৈবেদ্য দিয়ে।

পৌষ সংক্রান্তি মূলতঃ একটি শস্যোৎসব। কৃষিজীবী মানুষ বিশ্বাস করেন ‘আউনি বাউনি’-র মধ্যে বিরাজ করেন শস্যেরদেবী। তাই তাঁরা পাকা ধানের শীষ নানা সামগ্রী দিয়ে বেঁধে তাঁকে সারা বছর সংরক্ষণ করে।

এমনিতেই পৌষ সংক্রান্তির দিন শীত পড়ে জব্বর তার সঙ্গে বাঙালি ভোজনরসিক। শরীরকে উষ্ণ রাখে এবং বেশ শক্তি জোগায় এমনই সব খাবার তৈরী করা হয় এইসময়। নালে ঝোলে বাঙ্গালীর অন্দরমহলে চলে পিঠে পুলির উৎসব। মন আনন্দে ভরপুর হয়ে পালন করে নানান ব্রত উৎসব। যদিও এই ব্রত গুলি অধিকাংশই সম্পদের দেবী লক্ষ্মীর আহবানে উৎসর্গীকৃত তবু কখনো কখনো এদের ভিন্ন নামেও পরিচিত করানো হয়। আজও ব্রত উৎসবগুলি অমলিন বাংলার ঘরে ঘরে।।


আপনার মতামত লিখুন :

4 responses to “শস্যদেবীর উপাসনা ও বাঙালির ঘরে পৌষ সংক্রান্তি : রিঙ্কি সামন্ত”

  1. তপন says:

    বেশ হয়েছে। ছোটবেলার অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল।

  2. Snigdha Chakraborty says:

    খুব ভালো লাগলো পড়ে। পড়তে পড়তে সেই উৎসবের মধ্যেই পৌঁছে গিয়েছিলাম যেনো!

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন