মঙ্গলবার | ২৪শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৩:০০
Logo
এই মুহূর্তে ::
বন্যায় পুনর্জীবন বেহুলার : রিঙ্কি সামন্ত গরানহাটা কি ছিল ভেড়ার হাট : অসিত দাস ডিভিসি-র ছাড়া জলে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ নাজেহাল, দায় কার : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সুধীর চক্রবর্তী মুক্তধারা ভাষণমালা : দীপাঞ্জন দে বোর্হেসের গোলকধাঁধা : অশ্রুকুমার সিকদার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলের দুর্গোৎসব : রিঙ্কি সামন্ত মর্ত্যে দুর্গাপূজার সেকাল ও একাল : অসিত দাস বই-বাই : নবনীতা দেব সেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছোটগল্প ‘প্রবাসী’ ম্যান মেড নয় ডিভিসি-র পরিকল্পনা আর রূপায়নে গলদ : তপন মল্লিক চৌধুরী রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে রাখাইনে সেইফ জোন তৈরি করা আবশ্যক : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ফলের নামটি পাকা কলা : রিঙ্কি সামন্ত বই-বাই : নবনীতা দেব সেন হেমচন্দ্র বাগচীর ১২০তম জন্মবর্ষ : দীপাঞ্জন দে নিম্ন চাপের অতিবৃষ্টি ও ডিভিসির ছাড়া জলে প্লাবিত আরামবাগ : দেবাশিস শেঠ আরামবাগে ভয়াবহ বন্যা, দুর্যোগের পদধ্বনি, ক্ষোভ জনমানসে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন মেয়েদের ক্ষমতায়নের পক্ষেও আওয়াজ তুলেছে : তপন মল্লিক চৌধুরী কবি দেবদাস আচার্য-র কবিতাজগৎ — বহমান পৃথিবীর জীবনপ্রবাহ, চেতনাপ্রবাহ : অমৃতাভ দে মনসার নাম কেন ঢেলাফেলা : অসিত দাস ভোও.. ও ..ও.. কাট্টা…! ভো… কাট্টা…! : বিজয় চৌধুরী দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা : সন্দীপন বিশ্বাস নারীবেশী পুরুষ অভিনেতা শঙ্করকে সামাজিক ট্যাবুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয় না : বিশ্বেন্দু নন্দ সাসারামের রোহতাসগড়, বৃহতের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ : নন্দিনী অধিকারী জমিদার রবীন্দ্রনাথ : আহমাদ ইশতিয়াক আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের আবেদন মুখ্যমন্ত্রীর, এবারও অধরা রইলো আলোচনা : সুমিত ভট্টাচার্য জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (ষষ্ঠ পর্ব) : বিজয়া দেব চাষির দুঃখের ঘরে সাপের বাসা, আজও রেহাই নেই ছোবলের হাত থেকে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সল্টলেক তথা লবণহ্রদই কি কুচিনান : অসিত দাস পদ্মা বা পার্শ্বপরিবর্তনী একাদশী ব্রতকথা : রিঙ্কি সামন্ত জয়া মিত্র-র ছোটগল্প ‘ছক ভাঙার ছক’
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ কৌশিকী অমাবস্যার-র আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

ডিভিসি-র ছাড়া জলে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ নাজেহাল, দায় কার : মোহন গঙ্গোপাধ্যায়

মোহন গঙ্গোপাধ্যায় / ৩৮ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সাম্প্রতিক অতি গভীর নিম্নচাপে দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়াতে ভয়াবহ বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি র জন্য দায়ী কে? এ নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিরোধী দলের মত প্রার্থক্য প্রকাশ্যে এসেছে। সেইসঙ্গে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ পরিস্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে তারা কোনো মতেই দায়ী নয়। কারণ ডিভিসির চিফ ইঞ্জিনিয়ার রাজ্য সরকারকে চিঠিতে লিখেছেন, তাদের এক প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বৈঠক করে নবান্নকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে জল ছাড়ার কথা। অথচ রাজ্য সরকার অস্বীকার করছে। এদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিষ্কার জানিয়েছেন এই ভয়াবহ বন্যার জন্য দায়ি ডিভিসি কতৃপক্ষ। ডিভিসির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখব না। কাট আপ করব। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দূ অধিকারী চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাট আপ করে দেখাক। চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলছি,কাট আপ করলে দক্ষিণ বঙ্গের আটটি জেলা অন্ধকারে থাকবে।যখন শাসক ও বিরোধী দলের সঙ্গে কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়েছে, দেখা যাচ্ছে অসংখ্য বন্যা দুর্গত মানুষ না খেতে পেয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন। এদের দেখার তখন কেউ নেই। কেউ গৃহহীন, আবার কেউ খোলা আকাশের নিচে না খেতে পেয়ে এক মুঠো খাবারের আশায় দিন গুনছেন। এ কোন রাজ্যে বাস করছে মানুষ? যেখানে ত্রাণ নিয়ে দলাদলি, কোথাওবা নেতাদের মধ্যে ত্রাণের সামগ্ৰী নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ। এই অবস্থা যখন চলছে, সে সময় মুখ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ডিভিসি।

আসলে গোড়ায় গলদ। ডিভিসি প্রতিষ্ঠার পর যে কাজগুলো কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের করা উচিত ছিল, তার আজ পর্যন্ত সঠিক ভাবে হয়নি। পরিষ্কার করে বললে যেটা দাঁড়ায়, তা হল সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া। কী সেই ব্যবস্থা? প্রথমত: ডিভিসির নাব্যতা বজায় রাখতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা চালু রাখা। দ্বিতীয়ত: দামোদর ও তার শাখা নদীগুলোর সংস্কার করা। যাতে জল ছাড়লে ধারণ ক্ষমতা বজায় থাকে। দুটোর কোনটাই হয়নি। রাজ্য সরকারের যে কাজ করা দরকার তারা তা করেনি। আবার কেন্দ্র সরকারও নীরব থেকেছে। দীর্ঘদিন ধরে একে অপরের দোষ চাপিয়ে দেওয়া শুরু হয়েছে। মাঝ থেকে মরছে দক্ষিণবঙ্গের অসংখ্য খেটে খাওয়া মানুষ।

প্রসঙ্গত, ডিভিসির প্রতিষ্ঠার গোড়ায় যদি ফিরে যাই, তাহলে কি দেখব? কেন এর সৃষ্টি? জনগণের উপকারের জন্য? নাকি রাজনৈতিক দলাদলিতে একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপানো? তাহলে দায়টা কার? বিষয়টি পরিষ্কার করে দেখলে পাব দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (সংক্ষেপে ডিভিসি) স্বাধীন ভারতের প্রথম বহুমুখী নদী উপত্যকা প্রকল্প। ১৯৪৮ সালের ৭ জুলাই ভারতীয় গণপরিষদের একটি আইন বলে (Act No. XIV of 1948) এই কর্পোরেশন স্থাপিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি ভ্যালি অথরিটির আদলে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন গড়ে ওঠে। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু, পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডা. বিধানচন্দ্র রায় ও বিহারের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শ্রীকৃষ্ণ সিনহার ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই প্রকল্প গড়ে উঠেছিল।প্রথম দিকে ডিভিসির মূল উদ্দেশ্য ছিল বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ, পরিবেশ সংরক্ষণ, বনসৃজন এবং ডিভিসি প্রকল্পের আওতাধীন অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের আর্থ-সামাজিক উন্নতি। বিগত কয়েক দশকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ডিভিসিতে অত্যধিক গুরুত্ব পেলেও, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচব্যবস্থায় এই সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথাও অনস্বীকার্য।

১৯৫৩ সালে প্রকল্পের অধীনে তিলাইয়াতে দামোদর নদের উপনদী বরাকর নদের উপর একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ১৯৫৫ সালে কোনারে দামোদরের অপর উপনদী কোনার নদ-এর উপর দ্বিতীয় বাঁধটি নির্মিত হয়। ১৯৫৭ সালে মাইথনে বরাকর নদের উপর এবং ১৯৫৯ সালে পাঞ্চেতে দামোদর নদের উপর আরও দুটি বাঁধ নির্মিত হয়। শেষোক্ত দুটি বাঁধই দুই নদীর মিলনস্থল থেকে মোটামুটি আট কিলোমিটার উজানে নির্মিত হয়েছিল। এই চারটি বাঁধই ডিভিসির নিয়ন্ত্রণাধীন প্রধান বাঁধ। ১৯৫৫ সালে দুর্গাপুরে দামোদর নদের উপর নির্মিত হয় দুর্গাপুর বাঁধ। এই বাঁধ থেকে নদীর দুই ধারে অবস্থিত অন্যান্য খাল ও নদীগুলিতে জল সরবরাহ করা হয়ে থাকে।বাঁধ থেকে নদীর দুই ধারে অবস্থিত অন্যান্য খাল ও নদীগুলিতে জল সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ১৯৭৮ সালে বিহার সরকার (তখনও ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠিত হয়নি) ডিভিসির নিয়ন্ত্রণের বাইরে তেনুঘাটে একটি বাঁধ নির্মাণ করেছিলেন। তিলাইয়া, মাইথন ও পাঞ্চেতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে। মাইথন ভারতের প্রথম ভূগর্ভস্থ জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র।এছাড়া বোকারো, চন্দ্রপুরা, দুর্গাপুর ও মেজিয়ায় ডিভিসির তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে। উচ্চ দামোদর উপত্যকায় অবস্থিত ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ, কোডারমা, গিরিডি, ছাতরা, ধানবাদ ও বোকারো জেলার সম্পূর্ণাংশ ও পালামৌ, রাঁচি, লোহারদাগা ও দুমকা জেলার কিয়দংশ এবং নিম্ন দামোদর উপত্যকায় অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান ও হুগলি জেলার সম্পূর্ণাংশ ও পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও হাওড়া জেলার কিয়দংশ ডিভিসি প্রকল্পের আওতাধীন।

এই সমগ্র অঞ্চলের আয়তন ২৪,২৩৫ বর্গকিলোমিটার। সাঁওতাল, বেদিয়া, ওঁরাও সম্প্রদায়ের আদিবাসী অধ্যুষিত ছোটনাগপুর অধিত্যকায় দামোদর বছরের পর বছর তার ভয়াল মূর্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, ধ্বংস করেছে জনপদ, বিনষ্ট হয়েছে শস্য সম্পদ। পরিস্থিতি সামাল দিতে আশীর্বাদ হয়ে এল বিজ্ঞান। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ১৯৪৮-এর ৭ জুলাই গঠিত হয় দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন বা ডিভিসি। বোকারোর ইস্পাত, চিত্তরঞ্জনের লোকোমোটিভ, ধানবাদের কয়লায় সে পরিকল্পিত ভাবে বেঁধে ফেলল ৪৯২ কিমি দীর্ঘ দামাল নদ দামোদরকে। কোথাও বা বাঁধ দিয়ে জলাধার হল, সেই জল গেল কৃষিক্ষেত্রে। আবার কোথাও বা জল বিদ্যুৎ তৈরি করে কলকারখানার যন্ত্র চালাল। এই পরিকল্পনায় চারটি বাঁধ পড়েছে, তিলাইয়া ও মাইথনে বরাকর নদে, কোনারে কোনার নদে ও পাঞ্চেতে মূল দামোদর নদে। এ ছাড়া তাপবিদ্যুৎ তৈরি হচ্ছে বোকারো, চন্দ্রপুরা, দুর্গাপুর ও মেজিয়ায়। আর জল বিদ্যুৎ হচ্ছে মাইথন, তিলাইয়া ও পাঞ্চেতে। এই সবক’টি জায়গাই পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। শুধু বাঁধগুলিই নয়, এগুলিকে ঘিরে রয়েছে নানা দর্শনীয় স্থান। সব মিলিয়ে পর্যটকদের আছে এই জায়গাগুলির মূল্যই আলাদা। মাইথন প্রকল্পের সঙ্গেই রয়েছে ডিয়ার পার্ক, বার্ড স্যাংচুয়ারি। সেখান থেকে বাস পথে হ্যাংলা পাহাড়ে কল্যাণেশ্বরী মাতার মন্দির।

উল্লেখ্য, ফের এবছর ভয়াবহ বন্যার কবলে নিম্ন দামোদর এলাকা। ১৯৭৮ এবং ২০০০ সালের বন্যাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে এর তীব্রতা। তীব্র প্রশ্নের মুখে পড়েছে ডিভিসি-র বাঁধগুলির কার্যকারীতা এবং পরিচালনা। ঝাড়খণ্ডের জলে ডুবল বাংলা। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী এ অভিযোগ তুলে ঝাড়খন্ড সীমান্তে মালবাহী পণ্য এ রাজ্যে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিল। যদিও পরে তা প্রত্যাহার হয়েছে। তিনি আরও দুটো প্রশ্ন তুলেছেন, এক) ডিভিসির জলাধারগুলোতে ড্রেজিং করছে না কেন কেন্দ্র সরকার? দুই) জল ছাড়ছে ডিভিসি। এই অবস্থায়, বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ‘ডিভিসি-র ছাড়া জলে বন্যা হলো’ — এটা লজে পরিণত হয়ে গেছে যেমন, তেমনি সম্ভবতঃ সামনের দিনে আরেকটি লজ তৈরি হতে চলেছে, ‘ঝাড়খণ্ডের জলে বন্যা বাংলায়’। মুশকিল হলো, এই কথাটা বলা আর ‘সূর্যের তাপে খরা বাংলায়’ বলার মধ্যে কোনো তফাত নেই। এই ধরনের কথা, সমস্যাটি ঠিক কী, তা গুলিয়ে দেয়। সমস্যাটির সমাধান করার উদ্যোগ নিতে বাধা দেয়। এবং একইসাথে ভেতরে ভেতরে, এটা কোনো সমস্যা না, এই বোধও তৈরি করে। যার অবশ্যম্ভাবী ফল নিষ্ক্রিয়তা। আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছি, সমস্যাটি ঠিক কী, তা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তুলে ধরার। এবং তা এখনও পর্যন্ত দামোদরের বন্যা নিয়ে যা যা গবেষণা হয়েছে, সেগুলোর ওপর দাঁড়িয়ে কথা বলা দরকার। তার মধ্যেই থাকবে, কী করা যায়, কতটা করা যায়, সেসবও। আমরা অবশ্যই বাস্তবের মাটিতে দাঁড়ানোর পক্ষপাতী।

সমস্যাটিকে বর্তমানের নিরিখে বোঝার পক্ষপাতী। এবং আমরা প্রশ্ন তীক্ষ্ণতর এবং সূক্ষতর করার পক্ষপাতী, যাতে ফারাকটিকে চেনা যায়। মোটা দাগের কোনো মতামতের তুলনায় সূক্ষতর প্রশ্নের মধ্যেই সমস্যাটি এবং তার মোকাবিলার ভবিষ্যৎ নিহিত বলে আমরা মনে করি। তাই পাঠকরাও যদি পারেন, সাহায্য করুন, সূক্ষতর প্রশ্ন করে। বা তার উত্তর দিয়ে। একইসাথে আমরা মনে করি, যারা বছর বছর নিম্ন দামোদরের বন্যায় আক্রান্ত হন, তাদের সক্রিয় হস্তক্ষেপ ছাড়া সমস্যাটির সমাধান কোনোভাবেই সম্ভব না। আর সেই হস্তক্ষেপের পূর্বশর্ত, সমস্যাটি সম্বন্ধে সম্যক ধারণা গড়ে তোলা। সমস্যাটির সম্যক ধারণা তৈরি করতে গেলে তাতে আক্রান্তদের অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়। বৈজ্ঞানিক গবেষণালদ্ধ জ্ঞানের ওপর দাঁড়ানো ব্যতিরেকে কোনোভাবেই সমস্যাটি সম্পর্কে সম্যক ধারনা করা যাবে না। আর তা নাহলে প্রায় ফি বছর বন্যায় দক্ষিণবঙ্গের অসংখ্য মানুষকে নাস্তানাবুদ হতে হবে রাজনৈতিক দলাদলির যাঁতাকলে পড়ে।

এবার আসা যাক দক্ষিণবঙ্গের বন্যার কথায়। এ যেন আশঙ্কাই সত্যি হল। ডিভিসির একাধিক জলাধার থেকে রেকর্ড পরিমাণ জল ছাড়ার ফলে বানভাসি হল দক্ষিণবঙ্গ। আশঙ্কা করা হচ্ছিল, শক্তিশালী নিম্নচাপের কারনে ঝাড়খন্ডে যে পরিমাণে বৃষ্টি হয়েছে, তাতে জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়বে। দেখা গেল, ডিভিসির মাইথন ও পাঞ্চেত বাঁধ থেকে বিপুল পরিমাণে জল ছাড়ার ফলে বন্যার কবলে পড়েছে। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির ফলে নদী-নালা-খাল বিল এমনিতেই ভরে ছিল। তার সঙ্গে ডিভিসির ছাড়া জল যুক্ত হওয়ায় পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। মাইথন ও পাঞ্চেত বাঁধ মিলিয়ে মোট ৮০ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হচ্ছিল। পড়ে তা বেড়ে হয় আড়াই লক্ষ কিউসেক। সেই জল আসে দুর্গাপুর ব্যারেজে। ফলে সেখান থেকে ২ লক্ষ ৭৪ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়। রাতে অবশ্য মাইথন পাঞ্চেত থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে ২ লক্ষ হাজার কিউসেক করা হয়। সূত্রের খবর, ২০০৯ সালের পর কখনও এত বেশি জল ডিভিসি ছাড়েনি। সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইঞার অভিযোগ, রাজ্য সরকারকে আগাম না জানিয়ে ডিভিসি প্রচুর জল ছেড়ে দেওয়ায় বানভাসি হয়েছে বহু এলাকা। ২ লক্ষ ৫৭ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়েছে। মাইথন ও পাঞ্চেতের ছাড়া জল বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, হাওড়া জেলার বিস্তীর্ণ অংশ প্লাবিত করেছে। গালুডির ছাড়া জলে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর। বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুরে কংসাবতীর বাঁধ থেকে ৪০ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়েছে। তবে ডিভিসি কর্তৃপক্ষের দাবি, দামোদর অববাহিকা অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ার জন্যই তাঁদের এত জল ছাড়তে হয়েছে।

রাজ্য সরকার আরও জানিয়েছে, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, দুই ২৪ পরগনা, পশ্চিম বর্ধমান জেলাও বন্যার কবলে পড়েছে। রূপনারায়ণ, দ্বারকেশর, শিলাবতী, কেলেঘাই, কপালেশ্বরী, দুর্বাচটি সহ অন্যান্য নদীর জলস্তর বিপদসীমার কাছাকাছি চলে এসেছে। যে কোনও সময় আরও বিপত্তি ঘটতে পারে। বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে বেশ কয়েক জন মারা গিয়েছে বলে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে। পূর্ব বর্ধমানে দেওয়াল চাপা পড়ে একজন ও হুগলিতে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে একজন মারা গিয়েছেন। চলতি বন্যা পরিস্থিতিতে মোট চারজন মারা গেলেন। বীরভূমে আরও একজন এর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন বলে এর স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। কৃষিজমি জলের তলায় চলে যাওয়ার পাশাপাশি বহু মাটির বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। অজস্র রাস্তা, সেতু জলমগ্ন। মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান পরামর্শদাতা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে জানিয়েছেন, ১০টি জেলায় বন্যা মোকাবিলার দায়িত্ব দিয়ে বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান সচিবকে পাঠানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন। জেলাশাসকদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্যদুর্গত এলাকা থেকে মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে আনার ব্যবস্থা করছে প্রশাসন। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ১৭টি টিমকে বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়েছে। ১৮০টি আশ্রয় শিবিরে এখনও পর্যন্ত ৭,৯৫২ জন দুর্গত মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। প্রায় দু’লক্ষ ত্রিপল সহ অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রীর জেলায় পাঠানো হয়েছে। নবান্নে কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুমের পাশাপাশি প্রতি জেলায় একটি করে কন্ট্রোল রুম চালু হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, অতি গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে টানা কয়েকদিন। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডিভিসির তরফে আচমকা ছাড়া জল। গত সোমবার ও মঙ্গলবার দু’দিনে ডিভিসি মোট আড়াই লক্ষ কিউসেক জল ছেড়ে দিয়েছে। এই দুই উপর্যুপরি কারণে দক্ষিণবঙ্গের নয়টি জেলার বিস্তীর্ণ অংশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সব মিলিয়ে পুজোর মুখে বানভাসি দক্ষিণবঙ্গ। শোনা যাচ্ছে। ১৯৭৮ এবং ২০০০ সালের দুর্যোগের পদধ্বনি। দুর্যোগের কারণে ইতিমধ্যে একাধিক মৃত্যুর খবরও পাওয়া গিয়েছে। একই সঙ্গে মিলেছে ব্যাপক মাত্রায় বৈষয়িক ক্ষয়ক্ষতিরও দুঃসংবাদ। অতিবৃষ্টির ফলে বিঘার পর বিঘা কৃষিজমি জলে তলিয়ে গিয়েছে। এর ফলে প্রচণ্ড ক্ষতি হয়েছে আমন ধান, লঙ্কা, উচ্ছে, বেগুন, পটোল, ওল-সহ বহু প্রকার সব্জি এবং কলা, ফুল প্রভৃতি চাষের। সাধারণভাবে বিশ্বকর্মা পুজো দিয়েই বঙ্গদেশে শারদোৎসবের ঢাকে কাঠি পড়ে। গত মঙ্গলবার রাজ্যজুড়ে বিশ্বকর্মা পূজো অনুষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ বন্যার ক্ষয়ক্ষতিকে সঙ্গী করেই শুরু হল এবার শারদোৎসবে পদার্পণ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রচুর বাড়িঘর এবং রাস্তাঘাটের। তলিয়ে গিয়েছে বহু গ্রাম এবং কিছু শহরের নিচু এলাকা। একদিকে ঘরে জল ঢুকে গিয়েছে, অন্যদিকে সৃষ্টি হয়েছে পানীয় জলের সঙ্কট। বহু বাড়িতে রান্না করার পরিস্থিতি নেই। জল ঢুকে গিয়েছে কিছু স্কুল বাড়িতেও। ফলে হাজার হাজার দুর্গত মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে। যাওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে কিছু এলাকায়।

সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য সকলকে আশ্বস্ত করেছেন। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তাঁর প্রশাসন সবরকম ব্যবস্থা নিচ্ছে। সরকার দুর্গতদেরই পাশে রয়েছে। জেলা প্রশাসনগুলিকে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। বন্যা পরিস্থিতি সবচেয়ে উদ্বেগজনক দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া ও হুগলি জেলায়। ওই জেলাগুলিতে ব্যাপক জল জমতে শুরু করেছে। গত শনিবার থেকেই, মূলত টানা ভারী বৃষ্টির কারণে। সোমবার সন্ধ্যার পর নিম্নচাপটি ঝাড়খণ্ডের উপর সরে গেলেও বাংলার পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে ওইসময় দিনভর মারাত্মক বৃষ্টি হয়। অজয়, দামোদর, কংসাবতী, কেলেঘাই, দ্বারকেশ্বরী, গন্ধেশ্বরী, দ্বারকা ও কুয়ো নদী ফুঁসতে থাকে। এর মধ্যেই আবহাওয়া দপ্তর জানিয়ে দেয় যে, ঝাড়খণ্ডের দামোদর অববাহিকা ও সংলগ্ন অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত চলবে আরও কিছু সময়। দক্ষিণবঙ্গের জন্য উদ্বেগ বাড়িয়েছে এই পূর্বাভাসই। কারণ, ডিভিসির অন্তর্ভুক্ত মাইথন এবং পাঞ্চেত বাঁধ থেকে জল ছাড়ার হার ক্রমে বাড়ানো হায়েছে। সেই জল দুর্গাপুর ব্যারেজে এসে জমা হওয়ায় সোম ও মঙ্গলবার বিপুল পরিমাণে জল ছাড়া হয়েছিল। ঝাড়খণ্ডে দামোদর অববাহিকায় আরও বেশি বৃষ্টি হলে ডিভিসি জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়াতে বাধ্য হবে বলেই আশঙ্কা প্রশাসনের। সেক্ষেত্রে ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান, হুগলি ও হাওড়া জেলার নিম্ন দামোদর অববাহিকা এলাকা আরও প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে। এছাড়া, কংসাবতী নদীর উপর মুকুটমণিপুর জলাধার থেকেও বিপজ্জনক হারে জল ছাড়া হচ্ছে। সেচদপ্তর বলছে, মাইথন, পাঞ্চেত, মুকুটমণিপুর, ম্যাসাঞ্জোর, তেনুঘাট ও চান্ডিল বাঁধের জলস্তর সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতার কাছাকাছি চলে এসেছে।এরকম পরিস্থিতিতে চলছে রাজনৈতিক দলাদলির কাদা ছোড়াছুড়ি। এরই মাঝে পড়ে সাধারণ মানুষের একটাই প্রশ্ন দায় কার?


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন