সোমবার | ১২ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | রাত ১১:১৯
Logo
এই মুহূর্তে ::
কন্নড় মেল্ল থেকেই সিন্ধুসভ্যতার ভূখণ্ডের প্রাচীন নাম মেলুহা : অসিত দাস রবীন্দ্রনাথের চার্লি — প্রতীচীর তীর্থ হতে (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (তৃতীয় পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস লোকভুবন থেকে রাজনীতিভুবন : পুরুষোত্তম সিংহ চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (দ্বিতীয় পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস রবীন্দ্রনাথের চার্লি — প্রতীচীর তীর্থ হতে (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত রবীন্দ্রনাথের ইরান যাত্রা : অভিজিৎ ব্যানার্জি ঠাকুরকে ঠাকুর না বানিয়ে আসুন একটু চেনার চেষ্টা করি : দিলীপ মজুমদার যুদ্ধ দারিদ্র কিংবা বেকারত্বের বিরুদ্ধে নয় তাই অশ্লীল উন্মত্ত উল্লাস : তপন মল্লিক চৌধুরী রবীন্দ্রনাথ, পঁচিশে বৈশাখ ও জয়ঢাক : অসিত দাস রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীজী ও শান্তিনিকেতন : প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বাঙালী রবীন্দ্রনাথ : সৈয়দ মুজতবা আলী অনেক দূর পর্যন্ত ভেবেছিলেন আমাদের ঠাকুর : দিলীপ মজুমদার রবীন্দ্রনাথের প্রথম ইংরেজি জীবনী : সুব্রত কুমার দাস চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (প্রথম পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস শুক্লাম্বর দিঘী, বিশ্বাস করে দিঘীর কাছে কিছু চাইলে পাওয়া যায় : মুন দাশ মোহিনী একাদশীর ব্রতকথা ও মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত নিজের আংশিক বর্ণান্ধতা নিয়ে কবিগুরুর স্বীকারোক্তি : অসিত দাস ঝকঝকে ও মজবুত দাঁতের জন্য ভিটামিন : ডাঃ পিয়ালী চ্যাটার্জী (ব্যানার্জী) সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে দেখা : লুৎফর রহমান রিটন সংস্কৃতি জগতের এক নক্ষত্রের নাম বসন্ত চৌধুরী : রিঙ্কি সামন্ত আংশিক বর্ণান্ধতাজনিত হীনম্মন্যতাই রবীন্দ্রনাথের স্কুল ছাড়ার কারণ : অসিত দাস পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ কি অবশ্যম্ভাবী : তপন মল্লিক চৌধুরী সাত্যকি হালদার-এর ছোটগল্প ‘ডেলিভারি বয়’ নব নব রূপে এস প্রাণে : মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য ভারতের সংবিধান লেখার সেই ঝর্না কলমটা… : দিলীপ মজুমদার গীতা রাজনৈতিক অস্ত্র নয়, ভারতাত্মার মর্মকথা : সন্দীপন বিশ্বাস সিন্ধুসভ্যতা ও সুমেরীয় সভ্যতায় কস্তুরীর ভূমিকা : অসিত দাস রবি ঠাকুর ও তাঁর জ্যোতিদাদা : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী তরল সোনা খ্যাত আগর-আতর অগুরু : রিঙ্কি সামন্ত
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা (গুরু পূর্ণিমা) আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

পেলে বলেছিলেন রেফারি পেনাল্টিটা না দিলেও চলতো

পেজ ফোর নিউজ, বিশেষ প্রতিবেদন / ২৬৩ জন পড়েছেন
আপডেট সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

১৯৭৭ সাল। সেই বছরের মোহনবাগান টিমটার দিকে দেখুন। সুব্রত, প্রসূন, প্রদীপ চৌধুরি, হাবিব, আকবর, বিদেশ, সুভাষ এরা সবাই ছিলেন। সেই বছর ইস্টবেঙ্গল থেকে দলে এলেন গৌতম সরকার, শ্যাম থাপা, সুধীর কর্মকার। এরিয়ান্স থেকে মানস ভট্টাচার্য এবং শিবাজি ব্যানার্জি। সব তারাই যেন মোহনবাগানের আকাশে। আর বাকিরা ফ্যাকাসে। তবু এই টিম নিয়েও কলকাতা লিগের বড় ম্যাচে অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে গেল মোহনবাগান। ৯ই জুলাই, ১৯৭৭। মিহির বসুর ভলি আর সমরেশ চৌধুরীর ফ্রি-কিক্‌ রক্তাক্ত করেছিল মোহনবাগান সমর্থকদের হৃদয়। পুরো ম্যাচটাই খেলেছিল মোহনবাগান। গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল অগুন্তি। কিন্তু হাবিব, আকবর, শ্যাম থাপারা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন নি। উল্টোদিকে দিকে ইস্টবেঙ্গল গোলপোস্টের নিচে নিজেকে দক্ষতার শীর্ষে তুলে ধরেছিলেন ভাস্কর গাঙ্গুলি। প্রিয় দলের জয় দেখতে এসেও ব্যর্থ মনোরথে ফিরতে হয়েছিল মোহনবাগান সমর্থকদের। লিগে ইস্টবেঙ্গলের কাছে হারার পর মতি নন্দী মোহনবাগান সমর্থকদের তুলনা করেছিলেন মস্কো থেকে প্রত্যাবর্তনকারী নেপোলিয়ানের লাঞ্ছিত বাহিনীর সাথে। যারা খেলার শেষে ফিরছিল ছিন্নভিন্ন হৃদয় নিয়ে। “মোহনবাগান জিতবে ধরে নিয়েই ওরা এসেছিলেন জয় দেখতে। ওরা ফিরে চলে যাচ্ছে বিমূঢ় ২-০ পরাজয়ের বোঝা কাঁধে”। খেলার সাথে সংগতিপূর্ণ ছিল না ঐ ফলাফল।

এই পরাজয়ের প্রতিক্রিয়া হল তীব্র। মোহনবাগান জনতা খেলোয়াড়দের মাঠে প্র্যাকটিস করতে দেয়নি বেশ কিছুদিন। ফুটবলার, কোচরা তাঁবুর মধ্যে দরজা, জানালা বন্ধ করে ওয়ার্ম আপ করে চলে যেতেন। একদিন ময়দানের বটতলায় সুরজিতের সাথে দেখা হয়েছিলো শ্যাম থাপার। শ্যাম বললেন, ‘খুব কষ্টে আছি। প্র্যাকটিসও করতে দিচ্ছেনা। লেকিন আপোস তো আনা হি হ্যায়’। ফিরে আসতে হবে। এসেছিলেনও শ্যাম। সেবারই আই এফ এ শিল্ডের ফাইনালে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে একটি অসাধারণ গোল করে। বাবলুদার একটা পুরানো মোটর সাইকেল ছিল। প্রসূন আর বাবলুদা সেটা চড়ে বেরোতেন। প্রসূনের মাথায় থাকতো সবুজ ক্যাপ। বাবলুদারটা মেরুন। শিল্ড ফাইনালের কথা কয়েকদিন পরে বলা যাবে। আজ অন্য প্রসঙ্গ।

এই অবস্থার থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কিছু করা দরকার বুঝতে পারছিলেন ধীরেন দে। সেই সময় নিউইয়র্ক কসমস এশিয়া সফরে বেরিয়েছে। ধীরেন দে ঠিক করলেন পেলে সমেত নিউইয়র্ক কসমসকে কলকাতায় আনবেন। প্রায় তিন বছর পেলে খেলছেন কসমস ক্লাবে। কিন্তু আনবো বললেই কি আনা যায়? সেপ্টেম্বরে জাপান এবং চিন সফরে যাবে কসমস। ফেরার আগে কলকাতায় আসতে তাঁরা সম্মত হল। কিন্তু দাবী করল বিরাট পরিমাণ অর্থ।তখন মোহনবাগানের ঐতিহ্য, স্বাধীনতা আন্দোলনে ১৯১১ এর জয়ের ভুমিকা নিয়ে আবার চিঠি লেখ হল। মহাত্মা গান্ধীর দেশের লোকেরা পেলের খেলা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে জানতে পেরে পেলে নিউইয়র্ক কসমসকে রাজি করাল সফরসূচিতে ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করতে। অনেক কম অর্থেই খেলতে আসতে রাজী হল তাঁরা ।

চারিদিকে শোরগোল পড়ে গেল। পেপারে লেখালেখি হতে লাগলো রোজ। পেলেকে নিয়ে নানা নিবন্ধ। জল্পনা শুরু হল খেলার দিন বৃষ্টি হবে কি না। চিন সফরে একটি ম্যাচ ১-১ গোলে ড্র করে এবং পরের ম্যাচটিতে পেনাল্টি নষ্ট করে ১-২ গোলে হেরে ব্যাংকক থেকে কলকাতার দিকে রওনা হল কসমস দল। ২২ শে সেপ্টেম্বর পেলে নামলেন দমদম বিমানবন্দরে। সেদিন দমদম বিমানবন্দরে হাজির ছিলেন অসংখ্য ফুটবল অনুরাগী। বিমানবন্দর থেকে পেলে এসে উঠলেন গ্র্যান্ড হোটেলে। কসমসের আর এক বিখ্যাত খেলোয়াড় বেকেনবাউয়ার যদিও আসেননি দলের সাথে।

এদিকে খেলার দিন এগিয়ে আসার সাথে সাথে টিকিটের হাহাকার শুরু হল। টিকিট চাই, একটা টিকিট।৬০ টাকার টিকিট তখন লোকে ৬০০ টাকা দিয়েও কিনতে রাজি। সকলেই চায় মাঠে থেকে এই ঘটনার সাক্ষী থাকতে। চৌরঙ্গী চত্বরে ঢেলে বিক্রি হতে লাগল পেলের ছবি আঁকা জার্সি, টুপি। দূরদর্শন তখন সবে এসেছে। সিদ্ধান্ত হল খেলা দূরদর্শনে সরাসরি দেখানো হবে। এক লহমায় টিভির চাহিদা গেল বেড়ে। টিভি কিনতে গিয়ে ব্যর্থ মনোরথে ফিরতে হয়েছে অনেকেকে।খুব কম বাড়িতেই টিভি সেই সময়। যাঁদের বাড়িতে টিভি নেই, মাঠে যাওয়ার সুযোগ নেই তাঁরা ভিড় জমালেন সেইসব পাড়া প্রতিবেশীদের বাড়িতে যাঁদের টিভি আছে।বেলা তিনটে বাজার মিনিট পাঁচেক আগে ইডেন থেকে লাইভ দেখানো শুরু হল। রেডিওতে সম্প্রচার শুরু হল তিনটে কুড়ি নাগাদ।

 

খেলার দিন দুপুর থেকেই রাজপথ জনমানবশূন্য। ভিড় কেবল ইডেনের সামনে।জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে ইডেন। সকলের মনেই দুশ্চিন্তা পেলে খেলবেন তো? আগের দু’দিন বৃষ্টিতে মাঠের অবস্থা ভালো নয়। পেলের পা দুটো নাকি বিমা করানো আছে। বিমা কোম্পানির লোকেরা পেলেকে মাঠে নামতে দেবে?

সমস্ত জল্পনা খন্ডন করে পেলে মাঠে নামলেন। ড্রেসিংরুম থেকে তাঁকে মাঠের দিকে এগিয়ে দিলেন চুনী গোস্বামী।

মোহনবাগানও তৈরি। হাবিব সবাইকে উদ্বুদ্ধ করছেন। পিকের ভোকাল টনিক তো আছেই। পেলের সঙ্গে গ্রুপ ছবি তুলতে যখন সবাই যখন ব্যস্ত, তখন হাবিব সহ-খেলোয়াড়দের বলছেন, পেলে খেল্বে, আমরাও খেলব। ছবি তোলার জন্য এতো উৎসাহ কেন?

খেলা শুরু হল ঠিক বিকেল ৩-৩০ মিনিটে। কানায় কানায় পূর্ণ ইডেনে তখন ৮০,০০০ দর্শক। খেলার শুরু থেকে প্রাধান্য থাকল মোহনবাগানের। প্রথম কয়েক মিনিট পেলের কাছে বল আসেনি। কিন্তু আট মিনিট নাগাদ একটি অসাধারণ শট নিলেন তিনি। বারের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায় সেই শট। তবে মোহনবাগানও পিছিয়ে ছিল না। প্রসুন ব্যানার্জির একবার ভাসিয়ে দিয়েছিলেন বল। সেই বল বুক দিয়ে নামিয়ে নিয়েছিলেন শ্যাম থাপা। শ্যামের সামনে তখন অসহায় গোলকিপার এরল ইয়াসিন। কিন্তু শ্যাম থাপা বল নিজের দখলে রাখতে না পেরে সেই সুবর্ণ সুযোগটি নষ্ট করেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সুব্রত ভট্টাচার্য অনেকটা ওভারল্যাপ করে বিদেশের উদ্দ্বেশ্যে বল রাখেন, কিন্তু সেই বল বিপদমুক্ত করেন কসমসের ডিফেন্ডাররা। ভাগ্যও কিছুটা বিরূপ ছিল মোহনবাগানের প্রতি। হাবিব সামনে একা গোলকিপারকে পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন।

খেলার ১৭ মিনিটের সময় গ্যালারিকে স্তব্ধ করে এগিয়ে গেলো কসমস। এই গোলের পিছনে মূল কারিগর কিন্তু পেলেই। কিনালিয়া আর পেলের যৌথ আক্রমণে দিশা হারাল বাগান ডিফেন্স। পেলে বল বাড়ালেন আলবার্তো কার্লোসকে। গোল করতে যার কোন ভুলচুক হল না। ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালেও তিনি ব্রাজিলের হয়ে এরকম একটি গোল করেছিলেন। সেই অগ্রগমণ যদিও স্থায়ী হয়নি। দুমিনিটের মধ্যে মোহনবাগান গোল শোধ করে দেয়।সেই বড়ে মিয়াঁ। হাবিবের অদম্য মনোভাব খেলায় সমতা এনে দিল। হাবিব ডিফেন্স চেরা পাস বাড়ালেন ভাই আকবরকে লক্ষ্য করে। কসমসের ডিফেন্ডার মরিয়াভাবে ট্যাকেল করলো আকবরকে। কিন্তু তাঁর আগেই আকবর বল ঠেলে দিয়েছেন শ্যামকে। ছিটকে আসা বল শ্যাম থাপার পায়ে, গোলকিপার এরিল ইয়াসিন এগিয়ে এসেছেন।তাঁর নাগাল এড়িয়ে শ্যাম বল ঠেলে দিলেন গোলের মধ্যে। খেলার ফলাফল দাঁড়াল ১-১।

ওইদিন মোহনবাগান মাঝমাঠে অসাধারন খেলেছিলেন গৌতম সরকার। পেলেকে অকেজো করার দায়িত্ব তার অপরেই ন্যস্ত করেছিলেন পি কে ব্যানার্জি। সে দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেছিলেন গৌতম। তবে এর মধ্যেও খেলার চব্বিশ মিনিট নাগাদ পেলে বল নিয়ে ঢুকে পড়লেন মোহনবাগান বক্সে। নিজের জীবনকে বাজি রেখে পেলের পায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে সে বল তুলে নিলেন শিবাজি ব্যানার্জি। অসাধারন খেলোয়াড়ি মনোভাবের পরিচয় দিলেন পেলেও। শিবাজির যাতে আঘাত না লাগে তার জন্য লাফ দিয়ে এড়িয়ে গেলেন সংঘর্ষ।

মিনিট দশেক পর আকবর পেনাল্টি সীমানার বাইরে থেকে যে শট নেন কসমসের গোলকিপার সেটি ধরে রাখতে পারেননি। বল তাঁর হাত থেকে ছিটকে যেতেই হাবিব ছুটে এসে সেটি গোলে ঠেলে দিতেই মোহনবাগান ২-১ গোলে এগিয়ে যায়। কিছু সময় পরেই অবশ্য কসমসের সামনে সুযোগ এসেছিল খেলায় সমতা আনার। বক্সের কিছুটা বাইরে থেকে ফ্রি কিক পেল কসমস। শট নিতে এলেন ফুটবল সম্রাট। সেদিন বাড়ি থেকে মাঠের উদ্দেশ্যে আসছিলেন শিবাজি ব্যানার্জি, তাঁর বাবা অতীতের আর এক দিকপাল গোলকিপার সুবোধ ব্যানার্জি বলেছিলেন, ‘যদি পেলে ফ্রি-কিক্ মারতে যান, তাহলে বলের জন্য এগোবি না। বলকে তোর কাছে আসতে দিবি’। ঠিক তাই করলেন শিবাজি। পেলের অনবদ্য ফ্রিকিক যখন ‘ডিপ’ করে গোলে ঢুকছে তখন শূন্যে শরীর ছুঁড়ে দিয়ে তা বারের ওপর দিয়ে তুলে দিলেন তিনি। প্রথমার্ধের একদম শেষ দিকে শিবাজি ব্যানার্জি আর একটি শট দারুনভাবে প্রতিহত করেন। দ্বিতীয়ার্ধে মোহনবাগান দলে কিছু পরিবর্তন করে। বিশ্বজিত দাস, কম্পটন দত্ত, দিলীপ সরকার, সুভাষ ভৌমিক, এবং মানস ভট্টাচার্য মাঠে আসেন যথাক্রমে শিবাজি ব্যানার্জি, গৌতম সরকার, দিলীপ পালিত, আকবর ও শ্যাম থাপার জায়গায়।

দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণ প্রতি-আক্রমণে খেলা চলছিল। একটা সময় মোহনবাগান কিছুটা রক্ষনাত্মক হয়ে যায়। কসমস চেপে ধরে মোহনবাগানকে। কিনালিয়া যে বল টনি ফিল্ডের দিকে ক্রস করেছিলেন তা অল্পের জন্য বেরিয়ে যায়। পেলে ২০ গজ দূরত্ব থেকে যে ফ্রি-কিক নিয়েছিলেন তাও অল্পের জন্য বাইরে চলে যায়। এবার জেগে ওঠে মোহনবাগান। সুভাষ ভৌমিক আর হাবিবের যুগ্ম প্রচেষ্টায় আক্রমন উঠে আসে কয়েকটি।

খেলায় বিজয়লক্ষ্মী যখন প্রায় মোহনবাগানের দিকে ঢলে পড়েছে সেই সময় স্কুলিয়নকে সুধীর কর্মকারের একটি নিরীহ ট্যাকেলে পেনাল্টির বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিলেন রেফারি লক্ষ্মীনারায়ণ ঘোষ। কিনালিয়া সেই পেনাল্টি থেকে গোল করলেন। খেলা শেষ হল ২-২।

সেদিন খেলার শেষে পেলে জার্সি নাম্বার উল্লেখ করে বলেছিলেন গৌতম সরকার, সুব্রত ভট্টাচার্য, হাবিব , শিবাজি ভালো খেলেছে। পেনাল্টিটি না দিলেও চলতো বলে মনে করেছিলেন তিনি। কিন্তু খেলায় রেফারির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সেটাও মনে করিয়ে দেন। সেদিন রাত্রে গ্র্যান্ড হোটেল মোহনবাগান ক্লাবের পক্ষ থেকে পার্টি দেওয়া হয় নিউইয়র্ক কসমসকে অভিনন্দন জানিয়ে। ক্লাবসচিব ধীরেন দে পেলের মাথায় সোনার মুকুট পড়িয়ে দিলেন। একে একে উপস্থিত হল মোহনবাগানের খেলোয়াড়রাও। পেলে তাঁদের জড়িয়ে ধরলেন।

মোহনবাগান : শিবাজি ব্যানার্জি (বিশ্বজিৎ দাস), সুধীর কর্মকার, সুব্রত ভট্টাচার্য, প্রদীপ চৌধুরী, দিলীপ পালিত(দিলীপ সরকার), গৌতম সরকার (কম্পটন দত্ত),ও প্রসূন ব্যানার্জি, আকবর (সুভাষ ভৌমিক), শ্যাম থাপা (মানস ভট্টাচার্য), হাবিব ও বিদেশ বসু।

নিউইয়র্ক কসমস : এরল ইয়াসিন, মোরাইস, ফরমোস, কার্লোস আলবার্তো, রিল্ডো, টেরি গারবেট (ক্যানটিলো), দিমিত্রেভিক, স্কুলিয়ন, জর্জিও কিনালিয়া, পেলে, টনি ফিল্ড।

রেফারিঃ লক্ষ্মীনারায়ণ ঘোষ।

২৪শে সেপ্টেম্বর ১৯৭৭, ইডেন উদ্যানে মোহনবাগান মুখোমুখি হয়েছিলো নিউইয়র্ক কসমসের। এই প্রসঙ্গে আজকের এই লেখা।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন