শনিবার | ৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | সকাল ৭:৪৪
Logo
এই মুহূর্তে ::
নেহরুর অনুপস্থিতিতে প্যাটেল, শ্যামাপ্রসাদও ৩৭০ অনুমোদন করেছিলেন : তপন মল্লিক চৌধুরী সিঁদুরের ইতিকথা আর কোন এক গাঁয়ের বধূর দারুণ মর্মব্যথা : দিলীপ মজুমদার সাহিত্যিকদের সংস্কার বা বাতিক : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষে শ্রীপাণ্ডবা বা নির্জলা একাদশীর মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত দশহরার ব্যুৎপত্তি ও মনসাপূজা : অসিত দাস মেনকার জামাই ও জামাইষষ্ঠী : শৌনক ঠাকুর বিদেশী সাহিত্যিকদের সংস্কার ও বাতিক : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ভক্তের ভগবান যখন জামাই (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-এর ছোটগল্প ‘সময়ের প্ল্যাকটফর্ম’ গুহাচিত্র থেকে গ্রাফিটি : রঞ্জন সেন জামিষষ্ঠী বা জাময়ষষ্ঠী থেকেই জামাইষষ্ঠী : অসিত দাস কার্বাইডে পাকানো আম দিয়ে জামাইষষ্ঠীতে জামাই খাতির নয়, হতে পারে ক্যান্সার : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ভক্তের ভগবান যখন জামাই (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত কাশ্মীর নিয়ে বিজেপির নেহরুকে দোষারোপ ধোপে টেকেনা : তপন মল্লিক চৌধুরী রবীন্দ্র নাটকের দুই ট্র্যাজিক রাজা : শৌনক দত্ত কবির মৃত্যু : দিলীপ মজুমদার শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণের সপ্তসঙ্গিনী : স্বামী তেজসানন্দ মহারাজ দীঘায় জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাস্টার স্ট্রোক : সন্দীপন বিশ্বাস সিঁদুরে মেঘের গর্জন : অসিত দাস শতবর্ষে অন্য বিনোদিনী — তৃপ্তি মিত্র : শৌনক দত্ত আমার প্রথম অভিনয় দেখে সত্যেন বসুই বলেছিলেন— তোর হবে : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ইন্দ্রজিৎ আমাকে ক্লান্ত করে কেবলই ক্লান্ত : তপন মল্লিক চৌধুরী মনোজ বসু-র ছোটগল্প ‘বাঁশের কেল্লা’ গ্রেস কটেজ বুলেটিন প্রকাশ : দীপাঞ্জন দে অথ ওয়াইন কথা : রিঙ্কি সামন্ত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের চিকিৎসাবিভ্রাট : অসিত দাস বাংলা ইসলামি গান ও কাজী নজরুল ইসলাম : আবু বকর সিদ্দিকি পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের অনবদ্য সৃষ্টি ‘কবর’ কবিতার শতবর্ষ পূর্তি : মনোজিৎকুমার দাস কঠোর শাস্তি হতে চলেছে নেহা সিং রাঠোরের : দিলীপ মজুমদার রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন : শান্তা দেবী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা (গুরু পূর্ণিমা) আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

নেহরুর অনুপস্থিতিতে প্যাটেল, শ্যামাপ্রসাদও ৩৭০ অনুমোদন করেছিলেন : তপন মল্লিক চৌধুরী

তপন মল্লিক চৌধুরী / ৪৩ জন পড়েছেন
আপডেট শুক্রবার, ৬ জুন, ২০২৫

আরএসএস এবং বিজেপির ইতিহাস অনুসারে জওহরলাল নেহরুই ভারতের উপর ৩৭০ ধারা চাপিয়ে দিয়েছিলেন আর ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার প্যাটেল তাঁর বিরোধিতা করেছিলেন। মোদী-শাহেরা তাই জওহরলাল নেহরুকে কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা প্রদানকারী “৩৭০ ধারার একমাত্র স্থপতি” হিসেবে দোষারোপ করে চলেছেন। কিন্ত ঘটনা হল ৩৭০ ধারা প্রবর্তনের সময় প্যাটেল ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন এবং আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। তিনি ৩৭০-এর বিরোধিতা করেছিলেন এমন কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। মোদী-শাহেরা গুলিয়ে দিতে চান যে ৩৭০ ধারা জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভাকে বৈদেশিক, প্রতিরক্ষা এবং যোগাযোগ বিষয় ছাড়া সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিয়েছিল এবং তা সংবিধান পরিষদে চূড়ান্ত হয়েছিল। বিধানসভার সদস্য শেখ আবদুল্লাহ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সর্দার প্যাটেল খসড়াটি তত্ত্বাবধান করছিলেন। টানা পাঁচ মাস আলোচনার পর ৩৭০ ধারার রূপরেখা চূড়ান্ত হলে এনজি আয়েঙ্গার (১৯৩৭-১৯৪৩ জম্মু ও কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী) সর্দার প্যাটেলকে চিঠিতে লেখেন, “আপনি জওহরলাল নেহরুকে সরাসরি জানান যে এই সমস্ত বিধান আপনার কাছে সম্মত… আপনি সম্মত হওয়ার পরেই নেহেরু শেখ আবদুল্লাহকে একটি চিঠি দেবেন যে আপনি এগিয়ে যেতে পারেন”। আয়েঙ্গারের চিঠির ভাষাতেই স্পষ্ট যে ৩৭০ ধারার বিধানগুলির প্রতি প্যাটেলের কেন্দ্রীয় ভূমিকা ছিল।

আরএসএস এবং বিজেপি বিশিষ্ট রাম মাধব ঘোষণা করেছিলেন, “নেহরুর একটি ঐতিহাসিক ভুল অবশেষে সংশোধন করা হয়েছে”। আরএসএস আরও দাবি করে যে ৩৭০ ধারা অপসারণ হল শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মতো ‘শহীদ’-এর স্বপ্নের বাস্তবায়ন, যিনি কাশ্মীরকে ভারতের সঙ্গে সম্পূর্ণ একীভূত করার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। কিন্তু স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার প্যাটেলের সরকারি নথি অনুসন্ধান করলে দেখা যায় যে সর্দার প্যাটেল সংবিধানে ৩৭০ ধারা সন্নিবেশিত করার সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় ছিলেন। কেবল তাই নয় নেহরু সেই সময় সরকারি সফরে আমেরিকায় থাকায় সর্দার প্যাটেল সংবিধান পরিষদে ৩৭০ ধারা গ্রহণে সহায়তা করেছিলেন। প্যাটেলের একান্ত সচিব (১৯৪৬-৫০) এবং বিশ্বস্ত উপদেষ্টা বিদ্যা শঙ্কর, প্যাটেলের চিঠিপত্র দুটি বিশাল খণ্ডে সংকলন ও সম্পাদনা করেছিলেন যা প্যাটেলের চিন্তা ও কাজের ঐতিহাসিক তথ্য হিসাবে বিবেচিত হয়, বিদ্যা শঙ্কর জম্মু ও কাশ্মীর সম্পর্কিত চিঠিপত্রের ভূমিকায় ৩৭০ ধারা পাস করার জন্য প্যাটেলের প্রশংসা করে লেখেন, “জম্মু ও কাশ্মীরের ক্ষেত্রে সর্দারের উল্লেখযোগ্য সাফল্যগুলির মধ্যে একটি ছিল ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ সংযোজন, গোপালস্বামী আয়াঙ্গার, শেখ আবদুল্লাহ এবং তার মন্ত্রিসভার সঙ্গে পরামর্শ করে এবং পণ্ডিত নেহরুর অনুমোদনে এই বিষয়টি পরিচালনা করেছিলেন। যদিও নেহরু আমেরিকায় ছিলেন, খসড়া সূত্রের জন্য তার অনুমোদন আগেই নেওয়া হয়েছিল।…”

ধারা ৩৭০ (মূলত ৩০৬ক) ১৯৪৯ সালের ১৭ অক্টোবর গণপরিষদ বা Constituent Assembly-এর সভাপতি ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদের সভাপতিত্বে আলোচনার জন্য আসে। গণপরিষদে গোপালস্বামী আয়াঙ্গার প্রস্তাবিত ধারাটি পড়ে প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সেই প্রস্তাবীর উপর বিতর্কের সময় শুধুমাত্র একজন সদস্য মাওলানা হাসরত মোহানি, বরোদা রাজ্যের শাসকের প্রতি বৈষম্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন: বরোদা রাজ্যের প্রশাসন অন্যান্য অনেক ভারতীয় প্রদেশের প্রশাসনের চেয়ে ভালো। এটা নিন্দনীয় যে আপনি বরোদার মহারাজাকে তার রাজত্ব বোম্বেতে একীভূত করতে বাধ্য করছেন এবং নিজেকে পেনশন দিচ্ছেন। ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ হস্তক্ষেপ করে বলেন, “মাওলানা, আমরা এখানে বরোদার মহারাজা নিয়ে উদ্বিগ্ন নই”। বিজেপি-আরএসএস ভারতের ইতিহাস বিকৃত করার যৌথ উদ্যোগ নিয়েছে তারা কি কখনও বলবে যে, গণপরিষদে ৩৭০ ধারা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে মাত্র আধ দিনেরও কম সময় লেগেছিল এবং ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ এবং গোপালস্বামী আয়াঙ্গার ছাড়াও পণ্ডিত ঠাকুরদাস ভার্গব, আর কে সিদ্ধওয়া, পণ্ডিত হিরদয়নাথ কুঞ্জুরু, কে সান্থানম এবং মহাবীর ত্যাগী, প্রবীণ হিন্দু নেতারা আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন; এঁরা কেউই ৩৭০ অনুমোদনের বিরোধিতা করেননি। উল্লেখযোগ্যভাবে, সদস্যদের অনেকেই হিন্দু জাতীয়তাবাদী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হল, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ও গণপরিষদের একজন সদস্য ছিলেন, তিনি ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর ৩৭০ ধারা অক্ষত রেখে সংবিধানে স্বাক্ষর করেছিলেন। তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার বিরুদ্ধে সামান্য অস্বস্তি প্রকাশ করাও উপযুক্ত মনে করেননি। ১৯৪৯ সালের ২১শে নভেম্বর খসড়া সংবিধান নিয়ে আলোচনার সময় গণপরিষদের আরেক সদস্য, হিন্দু জাতীয়তাবাদী যশপত রায় কাপুর বলেছিলেন: “আমি চাই কাশ্মীরকেও অন্যান্য রাজ্যের মতো একই স্তরে আনা হোক” কিন্তু শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ও নিশ্চুপ ছিলেন।

আরএসএস-বিজেপি জোট জম্মু-কাশ্মীর প্রসঙ্গে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর ভূমিকা নিয়ে অনেক কথা বললেও কিন্তু আজ একথা বলে না যে, তিনিও সেদিন ৩৭০ ধারা সমর্থন করেছিলেন। তবু ১৯৪৯ সালে গৃহীত সংবিধানে ৩৭০ ধারা জায়গা পেয়েছিল এবং কার্যকরী হয়েছিল ১৯৫০ সালের ১৫ আগস্ট। এই ধারারই অন্তর্ভুক্ত ৩৫-এ ধারা অনুসারে জমি কেনাবেচা, চাকরি ছাড়াও আরও কয়েকটি বিষয়ে জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দাদের রক্ষাকবচ দেওয়া হয়েছিল। তবে ৩৭০ ধারা অনুযায়ী প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক বিষয় ও যোগাযোগ এই তিনটি ক্ষেত্রকে ভারত সরকারের আওতায় রাখা হয়েছিল। জম্মু-কাশ্মীরের সংবিধান রচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সাংবিধানিক সভাকে। সেই সভার অনুমোদন ছাড়া ভারত সরকারের কোনো আইন এখানে প্রযোজ্য হওয়ার কথা ছিলনা। কথা ছিল জনপ্রতিনিধিদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার। কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরের জনমতকে কি কোনো মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল? কার্যত না। ১৯৫০ সালে সংবিধান কার্যকরী হওয়ার পরেও ভারত সরকার গণভোটের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু সেটাও কখনওকার্যকরী হয়নি। অথচ জুনাগড়, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ এমনকি সিলেটেও সেই একই প্রশ্নে গণভোট হয়েছিল। যদিও তার প্রেক্ষাপট ছিল আলাদা। কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরে নির্বাচিত সরকারকে বার বার ফেলে দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়েছে, এক-দু বছর নয়, স্বাধীনতার পর জম্মু-কাশ্মীর সব মিলিয়ে প্রায় তেরো বছর রাষ্ট্রপতি শাসনাধীন থেকেছে, সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন (আফস্পা) জারি করে সেখানকার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আসলে ভারত, পাকিস্তান, রাষ্ট্রসংঘ কেউই জম্মু-কাশ্মীর সমস্যার স্থায়ী সমাধান চায়নি বরং  এই রাজ্যকে একটি স্থায়ী  অশান্তির অঞ্চল বা যুদ্ধক্ষেত্র বানিয়ে রাখতে চেয়েছে।  আর সেনাদের দাপটে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র থেকে ব্রাত্য থেকেছেন সেখানকার সাধারণ মানুষ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন