সোমবার | ৯ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | রাত ৩:৩১
Logo
এই মুহূর্তে ::
মেসোপটেমিয়ার সুমেরীয় ভাষায় সিন্ধুসভ্যতার মেলুহার ভাষার প্রভাব : অসিত দাস বঙ্গতনয়াদের সাইক্লিস্ট হওয়ার ইতিহাস : রিঙ্কি সামন্ত নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘ঝড়ের পরে’ ভালো থাকার পাসওয়ার্ড (শেষ পর্ব) : বিদিশা বসু গাছে গাছে সিঁদুর ফলে : দিলীপ মজুমদার ভালো থাকার পাসওয়ার্ড : বিদিশা বসু সলিমুল্লাহ খানের — ঠাকুরের মাৎস্যন্যায় : ভাষা-শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতা : মিল্টন বিশ্বাস নেহরুর অনুপস্থিতিতে প্যাটেল, শ্যামাপ্রসাদও ৩৭০ অনুমোদন করেছিলেন : তপন মল্লিক চৌধুরী সিঁদুরের ইতিকথা আর কোন এক গাঁয়ের বধূর দারুণ মর্মব্যথা : দিলীপ মজুমদার সাহিত্যিকদের সংস্কার বা বাতিক : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষে শ্রীপাণ্ডবা বা নির্জলা একাদশীর মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত দশহরার ব্যুৎপত্তি ও মনসাপূজা : অসিত দাস মেনকার জামাই ও জামাইষষ্ঠী : শৌনক ঠাকুর বিদেশী সাহিত্যিকদের সংস্কার ও বাতিক : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ভক্তের ভগবান যখন জামাই (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-এর ছোটগল্প ‘সময়ের প্ল্যাকটফর্ম’ গুহাচিত্র থেকে গ্রাফিটি : রঞ্জন সেন জামিষষ্ঠী বা জাময়ষষ্ঠী থেকেই জামাইষষ্ঠী : অসিত দাস কার্বাইডে পাকানো আম দিয়ে জামাইষষ্ঠীতে জামাই খাতির নয়, হতে পারে ক্যান্সার : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ভক্তের ভগবান যখন জামাই (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত কাশ্মীর নিয়ে বিজেপির নেহরুকে দোষারোপ ধোপে টেকেনা : তপন মল্লিক চৌধুরী রবীন্দ্র নাটকের দুই ট্র্যাজিক রাজা : শৌনক দত্ত কবির মৃত্যু : দিলীপ মজুমদার শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণের সপ্তসঙ্গিনী : স্বামী তেজসানন্দ মহারাজ দীঘায় জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাস্টার স্ট্রোক : সন্দীপন বিশ্বাস সিঁদুরে মেঘের গর্জন : অসিত দাস শতবর্ষে অন্য বিনোদিনী — তৃপ্তি মিত্র : শৌনক দত্ত আমার প্রথম অভিনয় দেখে সত্যেন বসুই বলেছিলেন— তোর হবে : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ইন্দ্রজিৎ আমাকে ক্লান্ত করে কেবলই ক্লান্ত : তপন মল্লিক চৌধুরী মনোজ বসু-র ছোটগল্প ‘বাঁশের কেল্লা’
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা (গুরু পূর্ণিমা) আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

ভালো থাকার পাসওয়ার্ড (শেষ পর্ব) : বিদিশা বসু

বিদিশা বসু / ৩৬ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ৮ জুন, ২০২৫

পশ্চিম সিকিমের এই হিলে ভার্সে স্যানচুয়ারি প্রায় ১০,০০০ ফুট উপরে সিঙ্গালিলা শৃঙ্গের অংশ বিশেষ এবং এই জায়গা ভ্যালি অফ রডোডেনড্রন নামেও পরিচিত। নানা রকমের রডোডেনড্রন বা গুরাস ফুলের বাহার নিয়ে এই অঞ্চল সেজে ওঠে মার্চের শেষ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। আমরা যেহেতু মে মাসের মাঝামাঝি গেছিলাম, প্রথম থেকেই জানতাম যে ঐ ফুলের সম্ভারের দেখা মিলবে না। আর প্রায় বর্ষাকাল দোরগোড়ায় আগত, তাই কাঞ্চনজঙ্ঘা বা তার সংলগ্ন কোন পর্বতশৃঙ্গ স্পষ্ট নাও দেখা যেতে পারে।

ট্রেন থেকে নামার পরেই বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিলো। তাই দীর্ঘ ৬-৭ ঘন্টার পথ পেরিয়ে হিলে ফরেস্টের মধ্যে যখন আমরা প্রবেশ করলাম, বেশ মেঘের মাঝে পাহাড়ের উঁকিঝুঁকি অনুভব হচ্ছিল। আমাদের ফরেস্ট এর মধ্যেই থাকার ব্যবস্থা। এবার ক্যাম্পের নিয়ম মত নীচের যে ঘর আছে সেখানে ছোটরা এবং অধিকাংশ পুরুষদের থাকার ব্যবস্থা। তার এক ধাপ উপরের দিকে আমাদের মহিলাদের এবং সিনিয়র পুরুষের থাকার জন্য তিনটি ঘর বরাদ্দ। এখানে থাকার আরেকটা মজা হলো, এ কয়দিন বাইরের পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন। মোবাইলের সিগন্যাল না থাকায় কোন সোস্যাল মিডিয়া বা ফোনালাপ বর্জিত স্থান। বৃষ্টি পড়ার জন্য ঘরগুলো একটু স্যাঁতস্যাঁতে এবং মেঝে বেশ ঠান্ডা ছিল। আমরা পাঁচ জন মহিলা এক ঘরে থাকবো ঠিক হলো, যাদের বাচ্চারা এই ক্যাম্পে উপস্থিত। মুহূর্তের মধ্যে আমাদের পাঁচ জনের মধ্যে একটা নিবিড় বন্ধুত্ব তৈরি হলো। আমাদের ঘরে পর্যাপ্ত পরিমাণ কম্বল ছিল, কিন্তু শোয়ার জন্য একটাই খাট। তাই ঠিক হলো আমরা তিনজন এক খাটে আর বাকি যে দুজনের স্লিপিং ব্যাগ সাথে আছে, তারা মেঝেতে বিছানা করে শোবে। আমাদের মধ্যে এ ব্যাপারে বোঝাপড়ার কোন পার্থক্য হলো না৷ এই একই চিত্র বাকি ঘরগুলোতেও। তবে প্রতিটা কটেজে টয়লেট দুটো করে, তা সবাইকে ভাগ করে ব্যবহার করতে হবে।

এরপর আমরা বাইরে এসে দুপুরের খাবার আগে খেয়ে তারপর ক্যাম্পের ব্যানারের সামনে একত্রিত হলাম। সেখানে নিয়মাবলী সম্পর্কে সবাইকে জানানো-সহ প্রতিটা গ্রুপের লিডারদের সাথে পরিচয় করানো হল এবং পরবর্তী দিনগুলোর কর্মসূচী সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করানো হলো। সেদিন পথের ধকল মেটাতে এবং যার যার ঘরে গুছিয়ে নিয়ে দুপুরে একটু বিশ্রাম নেওয়া হলো। এ সময়েই আমাদের পাঁচজনের গল্প জমে উঠলো আরও। দুপুর পেরোতেই বৃষ্টি শুরু, তবু তার মাঝে কচি কাঁচা-সহ কয়েকজন ক্যাম্পাররা আসপাশ ঘুরে দেখে একজায়গায় জড়ো হলো। বিকেলে সেই মেঘলা আকাশের নীচে ঠান্ডার শিরশিরে অনুভূতি বাড়তে লাগলো৷ তাই সান্ধ্যকালীন চা আর গরম গরম আলুর চপ আরও জমিয়ে দিলো। এরপর এক ঘরে সবাই মিলে বেশ জায়গা করে নিয়ে বসা হলো, সেই সাথে চললো নিজ নিজ পরিচয় জ্ঞাপন এবং নিজেদের সম্পর্কে জানাজানি। যেকোনো পাহাড়ি জায়গায় রাত নামে তাড়াতাড়ি… তাই ৮.৩০ মধ্যে রাতের ডিনারের ব্যবস্থা এখানে। খাবার পরে আবার সেই দুপুরের মত যে যার প্লেট নিয়ে লাইন নিয়ে জলের কলের সামনে দাঁড়ানো, যার যার বাসন সে ধুঁয়ে নিজের নিজের ঘরে চলে গেল। এখানে জঙ্গলের মধ্যে মোবাইলের কোন সিগন্যাল নেই। তাই জঙ্গলের নীরবতা আর নানা রকম কীটপতঙ্গের আওয়াজ আমাদের সঙ্গী। তার মাঝে আমাদের পাঁচজন বান্ধবীর ধীরে ধীরে গল্প আর হাসির আওয়াজ যেন চারপাশের নির্জনতায় একরাশ সুখের আমেজ।

পরের দিন সকাল পাঁচটায় ক্যাম্পের প্রধান প্রবীরদার হুইসেলের আওয়াজে ঘুম ভাঙলো। সকালের প্রয়োজনীয় শৌচকার্য-সহ যাবতীয় দরকারী কাজ অনেকে আরও সকালে উঠে করে ফেলে বেরোনোর জন্য প্রস্তুত। সেই সাথে তাদের প্রাতঃকালের চা সেবনও হয়ে গেছে। আমার মত গুটিকয়েক লোক যারা ঘুম থেকে দেরি করে ওঠা লোকজন, তারা ঐ হুইসেল শুনে তাড়াতাড়ি ঘুম চোখেই ক্যাম্পের ব্যানারের সামনে চলে গেলাম। দ্বিতীয় দিনে আমাদের প্রোগ্রাম সম্পর্কে বললেন প্রবীরবাবু — আজই আমরা হিলে বার্সে ট্রেকে যাবো, কারণ সকালে আবহাওয়া একটু ভালো। সকাল ৭/৭.৩০ টার মধ্যে আমরা বেরিয়ে পড়লে বৃষ্টির মুখোমুখি হতে হবে না। তাই ৭ টার মধ্যে ব্রেকফাস্ট করে সবাই যেন প্রস্তুত থাকি। যাদের ইচ্ছে তারা এই মাঝের এক ঘন্টা স্থানীয় গ্রাম বা উপরের পাহাড়ি ক্ষেত দেখতে যেতে পারে। ছোট-বড় দুটো গ্রুপে ভাগ হয়ে সকালের একটা পর্ব ক্যাম্পিং করে এলো সবাই। আমরা বাকিরা এ সময়ে সকালের দাঁত ব্রাশ সহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে জামা কাপড় বদলে ছোট ব্যাগ রেডি করে প্রাতরাশের জায়গায় গেলাম। বাকিরাও তাদের ছোট হাইকিং সেরে এসে খাবার খেয়ে লাইন দিয়ে দাঁড়ালো। তারপর সেদিনের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে সবাই রওনা দিলাম।

আমাদের সামনে একজন গাইড দাদা আর তার পিছনে ছোট ক্যাম্পাররা এগোতে লাগলো। বার্সে স্যানচুয়ারিতে ঢোকার গেটের মুখে বাঁশ বা মোটা গাছের ডাল লাঠির মত পড়ে ছিল, সেগুলো আমরা তুলে নিয়ে চলার পথের ট্রেকিং এর সঙ্গী হাতিয়ার করে নিলাম। মেঘে ঘেরা ঘন জঙ্গলের দুপাশে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি সরু রাস্তা। পথের দুপাশে কত নাম না জানা আগাছা, ফার্ণ, পরজীবি সব ঘিরে আছে। বড় বড় গাছের আড়ালে মাকড়সার জাল বা ছত্রাকের দলের দেখা মিললো অনেক। বড় গাছের মধ্যে রডোডেনড্রন গাছের নতুন পাতা বা কোন কোন গাছে কয়েকটা ফুল চোখে এলো। গাছের ঝরা পাতারা মাটিতে পড়ে বৃষ্টির জলে ভিজে রাস্তাটা আরও বেশি জংগলের আদিমতার আস্বাদন দিচ্ছিলো। মাঝে মাঝে পাহাড়ি ঝোড়ার জল রাস্তার এ পাশ থেকে অন্য পাশে চলে যাচ্ছে। সেই সাথে বৃষ্টির জলে রাস্তা কাদা মাখা পিচ্ছিল হওয়ায় আমরা সাবধানে পেরিয়ে গেলাম প্রায় ২ কিমি৷ পথে চরাই উতরাই মাঝেমধ্যেই৷ সেইটুকু রাস্তা যেতে যেতেই আমরা প্রায় অনেকে ক্লান্ত হয়ে রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম।

কিন্তু বাচ্চাদের এনার্জির শেষ নেই। ওরা লাগাতার হেঁটে এগিয়ে যেতে লাগলো। আমরা কয়েকজনও ওদের সাথে সাথে উপর নীচ করতে করতে হাঁফাতে হাঁফাতে প্রায় ৫ কিমি দূরের বার্সে স্যানচুয়ারিতে পৌঁছালাম। ওখানে আসেপাশে বেশ কয়েকটি গাছে নানা প্রজাতির রডোডেনড্রন ফুল নজরে এলো। বার্সে যাওয়ার পথে অন্য কোন টুরিস্ট নজরেও এলো না, কারণ এ সময়ে ফুল ঝরে যায় বলে আর টুরিস্টরা আসে না। তাই ফাঁকা সে জায়গায় শুধু আমরা এই ৩৫ জনের কোলাহলে মুখরিত হলো চারপাশ। মেঘলা আকাশ থাকায় ওখানের সান সেট পয়েন্ট থেকে পাহাড়ের দেখা মিললো না৷ আমরা সবাই ঐ রেস্ট হাউসের বারান্দায় বসে চা বিস্কুট খেতে খেতে গল্প করে কাটালাম। তারপর আবহাওয়া খারাপ হতে শুরু করায় আমরা আবার ফেরার পথ ধরলাম। এই পাঁচ কিমি পথ প্রায় ২ ঘন্টা ধরে হেঁটে পৌঁছে ছিলাম। তারপর গল্প বিশ্রাম করে আবার ফিরতে ফিরতে প্রায় সবার দুপুর ২/২.৩০ টে বেজে গেলো। এই পুরো ট্রেকিং পথে আমাদের খুদে সদস্য ঋভুকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। একটু পথ চলেই কোন চড়াই দেখলেই মাথা নীচু করে প্রায় হাঁটু মুড়ে বসে বলতে থেকেছে অনর্গল যে, আমার ভালো লাগছে না….

যাই হোক, সবাই ক্লান্ত শরীরে ফিরে এসে তাড়াতাড়ি দুপুরের ঘরোয়া খাবার খেয়ে বিছানাকে সঙ্গী করে নিলো। কম বেশি সবাই সেদিন ক্লান্ত, সেই সাথে অবিরাম বৃষ্টিতে সন্ধ্যার পরিবেশ নিঝুম হয়ে ছিলো। সেদিন বাকিরাও তাড়াতাড়ি খেয়ে নিয়ে রাতে ঘুমের দেশে চলে গেলো।

পরের দিন সকালে উঠে লুচি তরকারি খেয়ে স্থানীয় গ্রামের পথ ধরে উপরে উঠতে লাগলাম আমরা কজন। আবার পক্ষী বিশারদ বা ফটোগ্রাফার বন্ধুরা পাখির ছবি তোলার জন্য কোনো কোনো জায়গায় ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে পাখিদের বাসা বানানো সহ পাখির বাচ্চাদের পরিবারের জীবনকে ক্যামেরা বন্দী করতে লাগলো। রাস্তার দুপাশে রাসবেরি ফল এত হয়েছে যে আমরা পথ চলতে চলতে মুখে দিয়ে এগোতে লাগলাম। কিছুটা উপরে উঠে চোখ জুড়িয়ে গেল সবুজে ঘেরা স্থানীয় সবজি বাগান দেখে। সামনে পাইন সারির মধ্যে গ্রামের বাড়িগুলো নজরে এলো। ধীরে ধীরে মেঘের আড়ালে সেই অপূর্ব শোভা লুকিয়ে গেলো। আর অন্য দিকে ছোট্ট ক্যাম্পাররা গাছের ডালপালা ফুল সংগ্রহ করে তাদের আঁকার খাতায় রঙ পেনসিল নিয়ে ফুল পাতা গাছের ছবি আঁকতে ব্যস্ত। তারপর চারপাশ থেকে সবাই একজায়গায় হলাম। হিলে ফরেস্ট গেস্ট হাউসের সামনের ফাঁকা জায়গায় জিপলাইন এবং রাপেলিং-এর ব্যবস্থা করা হলো একটু উঁচু টিলাতে। বাচ্চারা সব লাইন দিয়ে পর পর টিলা থেকে নীচের রাস্তায় জিপলাইন করে নামার সময়ে ভীষণ আনন্দ পেলো। আমাদের সেই ক্ষুদে সদস্য ঋভুও এই প্রকৃতির মাঝে সবার সাথে মিশে চিৎকার করে বলতে থাকলো — আমার খুব ভালো লাগছে।

এরপর আমরা বড়রাও একে একে জিপ লাইনে অংশগ্রহণ করে ছোটদের মত মজা উপভোগ করলাম। যে কোন ট্রেকিং বা মাউন্টেইনিং-এর একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো রাপেলিং। তাই ছোট সদস্যদের সেই পাঠ হাতেকলমে শেখানোর উপরে জোর দেওয়া হয়। ওরা ঐ উপর থেকে কোমরে দড়ি বেঁধে পাহাড়ের খাঁজে পা রেখে বুঝে বুঝে নীচে নামার কৌশল আয়ত্ত করার চেষ্টা করলো। হয়ত অনেকেই তাতে পাহাড়ের খাঁজে পড়ে গিয়ে ভয় পেয়েছে, কিন্তু ওদের লিডারদের সহায়তায় এবং সাহস জোগানোর কারণে আবার উঠে দাঁড়িয়ে চেষ্টা করে সেই কঠিন কাজও সম্পন্ন করে সব বাচ্চারা। বিকেলে হঠাৎ শুনলাম আমাদের থাকার জায়গার কিছুটা উপরের সিঁড়িতে উঠলেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মাউন্ট পান্ডিম। ত্রিভুজাকার সেই বরফাবৃত শৃঙ্গের শোভা বিকেলের আলোতে অন্য এক রূপ নিয়েছিলো। কিন্তু সে শোভাও বেশিক্ষণের ছিল না৷ কালো মেঘের আড়ালে সামনের পাহাড় গুলো হারিয়ে গেল।

এরপর সেদিন রাতে বৃষ্টি শুরু হলো অঝোরে। আমরা ৩৫ জন এক ছোট ঘরে উপরে নীচে পাশাপাশি মিলেমিশে বসে আমাদের ক্যাম্পের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে সামিল হলাম। বাচ্চাদের কবিতা গান-সহ বড়দের নানা রকম সাংস্কৃতিক গুণাবলি সামনে এলো। গল্পের আসরের মত অনেকেই ভ্রমণ, ট্রেকিং সংক্রান্ত গল্পের ঝুলি খুলে দিয়ে সন্ধ্যাটিকে আরো জমাটি করে দিলো। সিকিম থেকে শিলিগুড়ি যাওয়ার রাস্তায় কাজ হওয়ার দরুণ সারাদিন রাস্তা বন্ধ থাকবে। তাই আমাদের দার্জিলিং ঘুরে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে যেতে হবে৷ এর জন্য বাড়তি অনেকটা সময় লাগবে। প্রায় ১০-১১ ঘন্টা লাগবে আমাদের পৌঁছাতে, তাই পরের দিন অনেকটা সকালে রওনা দেওয়ার কথা বলা হলো আমাদের। এই কারণে ঐ রাতটাই ছিল আমাদের সবার একসাথে হয়ে গল্প করার শেষ সময়। বৃষ্টির মাঝে আমাদের মনও ভারাক্রান্ত হলো এই সফর শেষ হওয়ার কথা ভেবে। কিন্তু বাড়ি তো ফিরতে হবেই!! তাই রাতের সুস্বাদু বিরিয়ানি চেটেপুটে খেয়ে সবাই তাড়াতাড়ি ঘরে গিয়ে আবার সব ব্যাগ পত্তর গোছানোর কাজে ব্যস্ত হলাম। পরের দিন সকাল পাঁচটায় উঠে সবাই প্রস্তুত হয়ে লাগেজ নিয়ে সাতটার মধ্যে গাড়ির সামনে উপস্থিত হতে হবে, তাই সেই রাতে আমরা পাঁচজন বান্ধবী গল্পের পরিমাণ কম করে ঘুমিয়ে পড়লাম।

পরের দিন সবাই সময় মত রেডি হয়ে যার যার গাড়িতে উঠে ফেরার পথে পা বাড়ালাম। এবার বাড়তি পাওনা হিসেবে গাড়িতে বসে দার্জিলিং এর রূপ দেখতে পেলাম। টয়ট্রেন আর আমাদের গাড়ির মুখোমুখি যাওয়াও এক নস্টালজিক মুহূর্তকে উপহার দিলো। এরপর রাত আটটার দার্জিলিং মেল ধরতে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে প্ল্যাটফর্মে পৌঁছে একজায়গায় জড়ো হয়ে শেষ মুহূর্তের গল্পে মত্ত হলো সবাই। ট্রেন এলে যে যার মত তিনটে কামরায় ভাগ হয়ে গেলাম। তবু রাতের খাবার দেওয়ার বাহানায় বা শুভ রাত্রি বলতে মাঝে মধ্যে ছোট বড় সবাই এর ওর জায়গায় এসে একটু কথা বলে যাওয়া হলো। আসলে কেউ এই সময়টাকে শেষ হতে দিতে চাইছিলো না। তবু ট্রেন তার গন্তব্যে ভোর পাঁচটায় পৌঁছে গেল। আমরাও সবাই আলাদা হয়ে যে যার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। কিন্তু সবার মন জুড়ে রইলো এই চারদিনের মধুর স্মৃতি। শেষ হয়েও শেষ হলো না যেন এ যাত্রা। আমরা আবার একসাথে কোথাও যাবো… এই প্রতিশ্রুতি মনের মধ্যে সবার রইলো। অসম বয়সী লিঙ্গ বর্ণ ভেদে কয়েকজন মানুষের এই ক্যাম্পিং আমাকে এক নতুন অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ করলো। যত প্রতিকূলতা থাকুক, প্রকৃতির মাঝে সময় পরিস্থিতির সাথে আমরা ঠিক মানিয়ে নিতে পারি, যদি সঠিক পথের দিশা থাকে এবং সহযোগী বন্ধুরা সাহায্য করে। এই নতুন অভিজ্ঞতা জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে, এর জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই Climbers circle ক্লাবকে এবং আমার সহযাত্রী সকলকে। (সমাপ্ত)

কভারের ছবি মাউন্ট পান্ডিম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন