পশ্চিমবঙ্গের গর্ব। দেশের অহংকার। অনলস প্রয়াস ও সদিচ্ছা আজ তাকে নিয়ে গেছে সাফল্যের শীর্ষ শিখরে। ক্যানসার গবেষণায় একের পর এক সাফল্য। লক্ষ্য একটাই বিশ্ব থেকে ক্যানসারকে নির্মূল করা। নিজে শিখতে চায়, সব সময় পজিটিভ চিন্তা ভাবনা, ধৈর্য্য তার একমাত্র পুঁজি এবং অন্যের সফলতায় নিজেকে খুঁজে পায়। উদ্দেশ্য একটাই বিশ্বে দাগ কেটে যাওয়া। এই সবুজ তরুণকে ঘিরে হুগলির আরামবাগে জনমানসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। যাকে ঘিরে এই উন্মাদনা, তিনি হলেন রূপায়ণ কুণ্ডু।
প্রসঙ্গত, রূপায়ণের একের পর এক ক্যানসার নিয়ে গবেষণা ও জনমানসে সচেতন গড়ে তোলা তাক লাগিয়েছে গোটা বিশ্বকে। এ রাজ্যের প্রান্তিক গ্ৰাম থেকে উঠে আসা রূপায়ণের নাম সকলের মুখে মুখে। জেদ আর অধ্যবসায়, সেই সঙ্গে শিক্ষা ও খেলাধুলায় সকলের নজর কেড়েছে। ক্লাসে কখনও দ্বিতীয় হয়নি। মাধ্যমিকে এ রাজ্যে প্রথম স্থানাধিকারী। শিক্ষার প্রতি অনুরাগ ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা তাকে পেয়ে বসেছে। সে দেখেছে মুমূর্ষু রোগীর কান্না, দেখেছে নিকট আত্মীয়ের ক্যান্সারে হাঁটুর উপর থেকে বাদ দেওয়ার যন্ত্রণা। তাই সে মনে মনে ঠিক করে ফেলেছিল বিশ্ব থেকে ক্যানসারকে নির্মূল করতে হবে। এজন্য ক্যানসার গবেষণা তার ব্রত হয়ে যায়। কলকাতা নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে ডাক্তারি পাশ করার পর পাড়ি দেন বিদেশে। উদ্দেশ্য ক্যানসার নিয়ে গবেষণা। এই গবেষণায় একের পর এক সাফল্য।
রূপায়ণ কুণ্ডু জানান, ক্যানসার গবেষণায় সাফল্যের পিছনে যাঁরা ছিলেন এঁদের মধ্যে ডা. শৌনক মজুমদার। প্যানক্রিয়াস বা অগ্নাশয়ের ক্যানসার গবেষণায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য মানবকল্যাণে সহায়তা করবে। পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকে ইউনোথেরাপি নিয়ে গবেষণায় আর এক সাফল্য সমগ্র বিশ্বে দাগ কেটেছে। যা ওঙ্কোলজি কোষ স্তরে যুগান্তকারী আবিষ্কার হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। বর্তমানে এই চিকিৎসার সমাধানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে বলা যেতে পারে। এর পিছনে ডা. লুসি কেনেডির অবদান অনস্বীকার্য। কারণ এঁর সাহায্যে ইউনোথেরাপির কৌশল ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে কাজ করেছি। রূপায়ণ আরও জানান, তরুণদের মধ্যে ক্যানসারের ক্রমবর্ধমান হার বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণায় যুগান্তকারী সাফল্য এনে দিয়েছে। সাফল্যের পিছনে ডা. অলোক খোরানা নাম করতেই হয়।
উল্লেখ্য, রূপায়ণ Sigma xi, the scientific research honor society-র সদস্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। গর্বের বিষয় যেখানে ২০০-র বেশি নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী যুক্ত আছেন।
প্রসঙ্গত, ডা. রূপায়ণের গলি থেকে রাজপথে উত্তরণ। সমাজকে উন্নততর সমাজে রূপায়িত করার লক্ষ্যে বাবা-মা-মাসিমা নবজাত সন্তানের নাম রাখেন রূপায়ণ। গ্রামের ছটপটে আমুদে, ডাকাবুকো, প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরপুর, মিশুকে, শৃঙ্খলা-পরায়ণ, সহপাঠীদের কাছে নির্ভরযোগ্য, বিশ্বস্ত ও সৎ। রূপায়ণ বয়সের তুলনায় বড়দের সঙ্গেও খেলাতে সমান দক্ষ। তৃতীয় শ্রেনী থেকেই পাবলিক বাসে নিজেই দূরবর্তী বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ সমাপ্ত করেন। পরে দূরবর্তী প্রত্যন্ত গ্রামীন বিদ্যালয় “ডিহিবাগনান কে. বি. রায়, উচ্চ বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেনীতে ভর্তি হয়। গতিশীল চরিত্রের অধিকারী রূপায়ণ কুন্ডু আন্তঃবিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্তরের ফুটবল, অ্যাথলেটিক্স, ব্যাডমিন্টন খেলায় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও পরিচালনায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। বহুবার দলনায়ক হিসাবে আন্তঃবিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ছাত্র রূপায়ণ। উল্লেখ করতেই হয় বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত তার দিদি এই বিদ্যালয়ের ছাত্রী অলিভিয়া কুন্ডু মাধ্যমিকে রাজ্যে মেয়েদের মধ্যে দ্বিতীয় ও হুগলী জেলায় প্রথম হয়। আর ২০১৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যে প্রথম স্থানাধিকারী রূপায়ণ।
সরকারের শিক্ষা দপ্তরের পরিচালনায় কলকাতাস্থিত ঐতিহাসিক টাউন হলে সংবর্ধনা সভায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রূপায়ণকে তার পরবর্তী পড়াশোনার জন্য সর্বপ্রকার সাহায্যের প্রস্তাব দেন। রূপায়ণ নিজের জন্য কিছু না চেয়ে বিদ্যালয়ের ক্রীড়া কার্যক্রমের মাধ্যমে উন্নততর সমাজগঠনের লক্ষ্যে মিনি ইনডোর স্টেডিয়াম তৈরী করে দিতে বলেন। সরকার তার ইচ্ছা পূরণ করে। যা গত ২০২৪ সালের ১২ জানুয়ারি বিদ্যালয়ের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে সুদূর ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক ও হায়ো (বিশ্বব্যাঙ্ক ২) U.S.A. থেকে রূপায়ণ কুন্ডু ভার্চুয়ালী উদ্বোধন করেন। ২০১৫-তে দ্বাদশ শ্রেনীতে মর্যাদাপূর্ন জাতীয় ফেলোসিপ প্রোগ্রাম ‘KVPY’-এ নির্বাচিত হয় রূপায়ণ। ২০১৫ তে কলকাতাস্থিত ‘NRS’ মেডিকেল কলেজে MBBS পাঠক্রমে ভর্তি হয়। ২০২১ তে “Mayo Clinic” রচেস্টার USA তে (World Rank 1) স্কলারশিপ-সহ তার অত্যন্ত পছন্দের বিষয় ক্যানসার গবেষনার অংশ হিসাবে প্যানক্রিয়াস ক্যানসার নিয়ে গবেষনা করেন। ভারত তথা বিশ্ব থেকে ক্যানসার নিরাময়ের মূলমন্ত্র নিয়ে ২০১১ সাল থেকে আজও কাজ করে যাচ্ছেন। এখনও ডা. রূপায়ণ বিশ্বে ক্যানসার প্রতিরোধ, নিরাময় ও গবেষনার জন্য ক্লিভল্যান্ডে (USA) “Velosano Bike Race to care Cancer” প্রজেক্টের অংশীদার। যেটি USA-র “TV 20 News”-এ ধারাবাহিক প্রচারিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে রূপায়ণের সাফল্য এবং গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার নিচ্ছে পত্রপত্রিকাগুলি। যা আমাদের দেশের গর্ব।
প্রসঙ্গত, প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দাদের চিকিৎসা পরিষেবা দুরূহ হওয়ার জন্য এবং তাদের কষ্ট দেখে রূপায়ণের মনে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন গভীরভাবে প্রথিত হয়। গ্রামের প্রথম ডাক্তার রূপায়ণ MBBS-এ ভর্তি হন মাত্র ১৬ বছর বয়সে। এ রাজ্যের মাধ্যমিক পরীক্ষায় ১০ লক্ষাধিক পরীক্ষাত্রীর মধ্যে প্রথম হওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপাল পুরস্কৃত করেন। বিভিন্ন সংগঠন থেকেও গোল্ড মেডেল, সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ডাক্তারিতে ভর্তি হওয়ার রাস্তা তত সহজ ছিলো না রূপায়ণের পক্ষে। প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা বাস-ট্রেন জার্নি করে ট্রেনিং নিতে যেতেন উইকেন্ড এ কলকাতায়। ৯২% স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা করতেন। অনেক সময় অপচয় না করে ট্রেনের মধ্যেও পড়াশোনা করতেন। শুধু পড়াশোনা নয়, খেলাধুলাতেও তীব্র আগ্রহী রূপায়ণ স্কুলের ক্রিকেট ও ফুটবল টীমের ক্যাপ্টেন ছিলেন। এমনকি ব্যাডমিন্টন এ জেলাস্তরে কম্পিটিশন করেছে। খেলার প্রতি অনুরাগ এতটাই ছিল যে, মাধ্যমিকে এ রাজ্যে প্রথম হওয়ার পর যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিজ্ঞেস করেছিলেন কি চাই? তিনি নিজের জন্য কিছু না চেয়ে, স্কুলের জন্য স্পোর্টস কমপ্লেক্স গড়ে দিতে বলেন। যাতে ছাত্রছাত্রীরা রোদ, ঝড় বৃষ্টি নির্বিশেষে খেলাধুলো করতে পারে। মুখ্যমন্ত্রীর উপহারকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রূপায়ণের নামে সেটার নামকরণ করেন “রূপায়ণ স্পোর্টস কমপ্লেক্স”।
রূপায়ণ NRS মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাস করে Mayo Clinic, যেটা বিশ্বের ১ নম্বর হাসপাতালে স্টুডেন্ট হিসেবে যান এবং পরবর্তীকালে সেখানে ডাক্তার শৌনক মজুমদার-এর গাইডেন্স-এ প্যানক্রিয়েটিক ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা করেন। এখন রূপায়ণ Cleveland Clinic এর MD জেনারেল মেডিসিনের এর দ্বিতীয় বর্ষের রেসিডেন্ট, যেটা বিশ্বের দ্বিতীয় নম্বর হাসপাতাল। এই সবুজ তরুণকে ঘিরে হুগলির আরামবাগে জনমানসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
রূপায়ণের একের পর এক ক্যানসার নিয়ে গবেষণা ও জনমানসে সচেতন গড়ে তোলা তাক লাগিয়েছে গোটা বিশ্বকে। এ রাজ্যের প্রান্তিক গ্ৰাম থেকে উঠে আসা রূপায়ণের নাম সকলের মুখে মুখে। রূপায়ণ কুণ্ডু জানান, ক্যানসার গবেষণায় সাফল্যের পিছনে ছিলেন এঁদের মধ্যে ডা. শৌনক মজুমদার। পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকে ইউনোথেরাপি নিয়ে গবেষণায় সাফল্য সমগ্র বিশ্বে দাগ কেটেছে। যা ওঙ্কোলজি কোষ স্তরে যুগান্তকারী আবিষ্কার হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। বর্তমানে এই চিকিৎসার সমাধানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে বলা যেতে পারে। এর পিছনে ডা. লুসি কেনেডির অবদান অনস্বীকার্য। কারণ এঁর সাহায্যে ইউনোথেরাপির কৌশল ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে কাজ করেছি। রূপায়ণ আরও জানান, তরুণদের মধ্যে ক্যানসারের ক্রমবর্ধমান হার নিয়ে গবেষণায় সাফল্য এনে দিয়েছে।