স্বাধীনতার মুক্ত পরিসরে এপার বাংলা যেভাবে সাতিত্যচর্চায় অগ্রসর হয়েছিল, ওপার বাংলা সেভাবে না পারাই স্বাভাবিক। যেখানে স্বাধীনতার নামে নতুন করে পরাধীনতার নাগপাশ এঁটে বসে মাতৃভাষাই রুদ্ধ হয়ে পড়ে, সেখানে সেই ভাষায় সাহিত্যের আকাশ হাতছানি না দেওয়াই দস্তুর। এজন্য এপার বাংলার সাহিত্য যেখানে দ্বিখণ্ডিত স্বাধীনতার তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্যেও আপন করে যাপন করার অবকাশে সক্রিয় হয়ে উঠেছে, সেখানে ওপার বাংলাকে স্বাধীনতা লাভের বছর না শেষ হতেই ভাষা আন্দোলনে সামিল হতে হয়েছে। ভাষার অভাবই সাহিত্যের পথকে রুদ্ধ করে তোলে। অন্যদিকে আবার সেই ভাষার অধিকারে সাহিত্যই হয়ে ওঠে সরব সহচর। সেদিক থেকে ওপার বাংলায় ভাষা আন্দোলনে কবিতা-গান ও নাটকের সরব উপস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। অন্যদিকে সেখানে ঔপন্যাসিক বিস্তৃতির বড় অভাব অপ্রত্যাশিত নয়। অনিশ্চিয়তার মধ্যে গভীর আত্মপ্রত্যয়ের অভাব অত্যন্ত স্বাভাবিক। উপন্যাসের আধারে সেই গভীর বিশ্বাসী সত্তা অনস্বীকার্য। পূর্ব বাংলার বিপর্যস্ত পরিসরে তার প্রকাশের আকাশ তখনও ঘন অন্ধকারে নিমজ্জিত। সেই মেঘের ঘনঘটায় যখন মেঘ থেকে বৃষ্টি হওয়ার উপক্রম হয়েছে, তখনই তাতে প্রত্যয়ী আকাশের আলো নানাভাবে প্রকাশের হাতছানিতে আন্তরিক হয়ে উঠেছে। এজন্য পূর্ব বাংলা পূর্ব পাকিস্তানে যত মিলিয়ে গেছে, ততই সে-দেশে বাংলা উপন্যাসের ধারা গতি লাভ করেছে। সেক্ষেত্রে উপন্যাসের মাধ্যমে ঘোর অমানিশা কেটে সোনালি সকালের প্রত্যাশা স্বাভাবিক ভাবেই উঠে এসেছে। দেশের অস্থিরতার মধ্যেও সংবেদনশীল ঔপন্যাসিক মানসেও পবিত্র অসন্তোষের ছায়ার আধারে সুদৃঢ প্রত্যয় জেগে ওঠে যা সময়ের অনুবাদেই আবদ্ধ থাকে না, ভবিষ্যতের রূপালি পথের দিশাতেও প্রকাশমুখর মনে হয়। সেদিক থেকে ষাটের দশকে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের দমনপীড়নের পরাকাষ্ঠায় জনজীবনের তীব্র অসন্তোষের মধ্যে সেই বিশ্বাস প্রকৃতির সজীবতায় উপন্যাসের আয়োজন স্বাভাবিক হয়ে আসে।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট রচনার সঙ্গে সেই সব উপন্যাসের আবেদন নানাভাবেই প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। সেই উপন্যাসগুলির মধ্য পূর্ব বাংলার বাঙালিমানসের স্বাদ ও স্বপ্নে অভিনব মাত্রা লাভ করে। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ওপার বাংলা যখন স্বাধীন বাংলাদেশে আত্মপ্রকাশ করে, তখন তার আত্মবিশ্বাসী মনের চলনে সেই মুক্তিযুদ্ধই হয়ে ওঠে উপন্যাসের বিষয়-আশয়। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের আলোয় সে-দেশের প্রত্যয়ী চেতনায় জাতিগত মুক্তির আত্মগৌরবের ইতিহাসও নানাভাবে বিস্তার লাভ করে। সেদিক থেকে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের প্রাক্পর্বে সেই বিশ্বাসের ক্ষেত্রপ্রস্তুতে যে নবদিগন্তের সূচনা হয়েছিল, তা সে দেশের বাংলা উপন্যাসের প্রত্যয়ী মনোভাবেই প্রতীয়মান। তার পূর্বের উপন্যাসের মধ্যে সমাজমানসের বহুমাত্রিক চেতনার বিস্তার উঠে এলেও সেসবের মধ্যে সময়ের ক্ষরণের সঙ্গে সে দেশের চলমান জনজীবনের নিবিড় সংযোগের কোনো প্রয়াস নেই বললেই চলে। অন্যদিকে সেখানে বরং বাংলা উপন্যাসে প্রচলিত ধারায় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিবর্তনে সমীক্ষার অবকাশ আবেদনক্ষম হয়ে উঠেছে। তার সঙ্গে এপার বাংলার উপন্যাসের যোগও অবিচ্ছিন্ন অবিরল। সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দুই দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তো একই ধারায় প্রভাবিত হয়েছিল। সেখানে দেশজ চেতনার পরিসরে ভিন্ন হওয়ার অবকাশ তখনও অধরা মাধুরী। সেদিক থেকে নতুন করে স্বাধীনতা আন্দোলনের পথেই ওপার বাংলার উপন্যাসের শিল্পরূপ নিবিড়তা লাভ করেছে। আর সেই ধারায় আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘চিলেকোঠার সেপাই’ (১৯৮৬) অনন্য শিল্পসুষমায় অভিনব আয়োজন। এজন্য পূর্ববর্তী উপন্যাসের ধারায় তার অভাবের প্রতি দৃষ্টিপাত করা প্রয়োজন।
ওপার বাংলায় উপন্যাসের ধারায় প্রথমেই যাঁর কথা বিশেষভাবে স্মরণীয়, তিনি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ (১৯২২-১৯৭১)। তাঁর ‘লালসালু’ (১৯৪৮) ওপার বাংলার স্বাধীনতোত্তর কালের উপন্যাসে প্রথম সোনালি ফসল। যে ধর্মীয় ভেদাভেদে দ্বিখণ্ডিত স্বাধীনতা মিলেছিল, সেই ধর্মীয় প্রতাপ ও প্রভাব গ্রামবাংলার সমাজজীবনকে কীভাবে গ্রাস করে চলে, তার নিবিড় আন্তরিক পরিচয়ে উপন্যাসটির বনেদিয়ানা উপচীয়মান। সেদিক থেকে স্বাভাবিক ভাবেই ওপার বাংলার ধর্মীয় প্রতিকূলতায় তার প্রভাব বিস্তার হয়নি। অথচ এপার বাংলায় উপন্যাসটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। যেখানে শিক্ষার আলো প্রবেশ করে না, সেখানে ধর্মান্ধতা আলো লাভ করে। গ্রামবাংলার সমাজজীবনে তার ভয়নঙ্কর প্রভাব এবং প্রতাপ। জনকল্যাণের নামে সেই ধর্মীয় প্রভাব জনগণের শোষণ ও শাসনের হাতিয়ার হয়ে ওঠে। সেখানে ইহলোকিক বাস্তবতার চেয়ে পারলৌকিক অলীক চেতনাকে সক্রিয় করে বাংলার বৃহত্তর গ্রামীণ জীবনে দীনহীন মানুষের মধ্যে ধর্মীয় আনুগত্য স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। সেই আনুগত্যে ওপার বাংলার মুসলমান সমাজের অধঃপতনের মূলে সেই ধর্মীয় শিকারের করুণ পরিণতিকে দরদি কথাশিল্পী সৈয়দ ওয়াল্লীওল্লাহ সমাজবিজ্ঞানীর অন্বেষায় ও দক্ষ শিল্পীমনীষায় ‘লালসালু’কে তীব্র আবেদনক্ষম করে তুলেছেন। পিতৃপরিচয়হীন ভাগ্যান্বেষী এক ইসলামীয় শিক্ষায় দীক্ষিত ও প্রশিক্ষিত এবং অভিনয়পটু সুচতুর যুবক মজিদের অজপাড়া-গাঁ মহব্বতনগরে ধর্মীয় আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে মুসলিম সমাজের শাসন-শোষণের স্বরূপ তুলে ধরার ক্ষেত্রে ঔপন্যাসিকের লক্ষ্যাভিমুখী চলনে স্বাভাবিক ভাবেই মুখোশ খুলে মুখ দেখানোর সদিচ্ছা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সেখানে বাংলার গ্রামেগঞ্জে মসজিদ-মাজারের মাধ্যমে প্রান্তিক মুসলিম সমাজের মানুষের জীবন ও যাপনের উপর ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষের প্রতিনিধি হিসাবে মুজিদের ভূমিকা সুদীর্ঘ কাল ধরে অশিক্ষা ও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ঘনায়মান অন্ধকারে আলো জ্বেলে দেয়। সেই আলোতে ওপার বাংলার সমাজজীবনে সাড়া না ফেললেও তার উপন্যাসের ধারার মাইলফলক হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহের পরবর্তীতে লেখা আরও দুটি উপন্যাস ‘চাঁদের অমাবস্যা’(১৯৬৪) ও ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ (১৯৬৮)-র মধ্যে পাশ্চাত্য প্রভাব ও অস্তিত্ববাদী দর্শনের প্রভাব বর্তমান।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কর্মসূত্রে ১৯৬১-এর এপ্রিলে তিনি ফ্রান্সে গিয়ে সেখানেই থেকে যান। সেখানে ব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্ক বিষয়ে তাঁর ধারণা নতুন মাত্রা লাভ করে। দেশের দরিদ্র ও অধঃপতিত মুসলমান সমাজের প্রতি দরদ থাকলেও তাঁর মধ্যে বিশ্বনাগরিক চেতনা বিস্তার আন্তরিক হয়ে ওঠে। উপন্যাসদুটিতে চেতনাপ্রবাহরীতি বর্তমান। সেখানে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও ‘চাঁদের অমাবস্যা’র কোবান নদীর ধারে চাঁদপারা গ্রামের যুবক আরেফ আলীর কষ্ট করে আধুনিক শিক্ষায় আই এ পাশ করে গ্রামের স্কুলের শিক্ষক হয়ে স্বগ্রামেই থিতু হয়েছে। ঘটনাচক্রে একটি বাঁশঝাড়ে যুবতী নারীর মৃতদেহ দেখে ফেলে আরেফ আলী। সেখানে ব্যক্তিমানসের চেতনাপ্রবাহের মাধ্যমে যেভাবে উপন্যাসটি উপস্থাপিত হয়েছে, তার সঙ্গে ধর্মীয় যোগ নেই বললেই চলে। ব্যক্তি ও সমাজের বহুমুখী দ্বান্দিক চেতনাই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে ‘কাঁদো নদী কাদো’তেও ধর্মীয় যোগ অত্যন্ত ক্ষীণ। আখ্যানের কেন্দ্রীয় চরিত্র মুহাম্মদ মুস্তাফা ভীতু, স্পর্শকাতর এবং ধর্মভীরু। ধর্মীয় আধারে ব্যক্তিমানসের সঙ্গে সমাজমানসের অস্তিত্ব-সংকটকে ঔপন্যাসিক চেতনা প্রবাহ রীতিতে নিবিড় করে তুলেছেন। প্রসঙ্গত স্মরণীয়, যে-সময় পর্বে পূর্ব বাংলা পূর্ব পাকিস্তানে আত্মগোপন করায় বাঙালির অস্তিত্ব বিপন্নতাবোধে পীড়িত মনে হয়েছে, সময়ের দর্পণে বাংলা উপন্যাসের ধারাতেও সংকট উত্তরণের প্রয়াস আন্তরিক হয়ে উঠেছে, সেই পরিসরেই সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ফ্রান্সে প্রবাসী। সেদিক থেকে তাঁর প্রথম উপন্যাসের মধ্যে যে দেশজ চেতনার প্রতিফলন সূচিত হয়েছিল, তা অচিরেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার আধার হয়ে ওঠে। এরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার ধারা অন্য অনেকের উপন্যাসেও প্রতীয়মান। রাজিয়া খানের ‘বটতলার উপন্যাস’ (১৯৫৯), ‘অনুকল্প’ (১৯৫৯), সৈয়দ শামসুল হকের (১৯৩৫) ‘দেয়ালের দেশ’ (১৯৫৯), ‘এক মহিলার ছবি’ (১৯৫৯), ‘অনুপম দিন’ (১৯৬২), ‘সীমানা ছাড়িয়ে’ (১৯৬৪), আলাউদ্দিন আল আজাদের (১৯৩২-) ‘শীতের শেষ রাত বসন্তের প্রথম দিন’ (১৯৬০), ‘তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’ (১৯৬২), জহির রায়হানের (১৯৩৩-১৯৭২)‘শেষ বিকেলের মেয়ে’ (১৩৬৭) ও ‘হাজার বছর ধরে’ (১৯৬৪) প্রভৃতি উপন্যাসে তার পরিচয় বিদ্যমান। অন্যদিকে সে দেশের মূলধারার উপন্যাসে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহের প্রথম উপন্যাসটি যেভাবে দেশজ চেতনার ছায়ায় কায়া বিস্তার করে তার বনেদিয়ানার সূচনা করেছিল, স্বাভাবিভাবেই তা তাঁর উপন্যাসক্ষেত্রেই ব্যাহত হয়। অন্যদিকে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহের উপন্যাসের সমাজবীক্ষা ও শিল্পরূপের প্রভাব সুদূর প্রসারী। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে তাঁরই সুযোগ্য উত্তরসূরী মনে করা হয়। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহের ইংরেজিতে লেখা উপন্যাস ‘The Ugly Asian’-এর আধুনিক ও পরিণত প্রকাশরূপ ‘চিলেকোঠার সেপাই’ বলে কথাসাহিত্যিক সাধন চট্টোপাধ্যায় মনে করেন।
ওপার বাংলার অস্থির পরিসরই তার উপন্যাসের জোয়ারের অন্তরায়। সেদিক থেকে প্রাথমিক পর্বে বাংলা উপন্যাসের প্রচলিত ধারাই সক্রিয়তা লাভ করে। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহের মতো আরেক জন প্রবাসী ঔপন্যাসিক শামসুদ্দীন আবুল কালাম (১৯২৬-১৯৯৭)। দেশে আয়ুব খানের আমলে তিনি ইটালি প্রবাসী (১৯৫৯-১৯৯৭) হয়েছিলেন। বিদেশে গেলেও স্বদেশঅন্তপ্রাণ ঔপন্যাসিকের লেখনীতে গ্রামবাংলার জনজীবন মূর্ত হয়ে ওঠে। অবশ্য তার পূর্বেই তাঁর ঔপন্যাসিক প্রতিভার পরিচয় ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর ‘আলমনগরের উপকথা’ (১৯৫৪), ‘কাশবনের কন্যা’ (১৯৫৫), ‘কাঞ্চনমালা’ (১৯৫৬) এবং কিশোর উপন্যাস ‘সবাই যাকে করল হেলা’ (১৯৬১) প্রভৃতি তার পরিচয়বাহী। শামসুদ্দীন আবুল কালামের সে-সব উপন্যাসে উনিশ শতকীয় রোমান্সচেতনার ছায়া নিবিড়তা লাভ করে। এমনকি, তাঁর উপন্যাসের ভাষাতেও সাধু গদ্যের চলনও লক্ষণীয়। তাঁর একদা জনপ্রিয় উপন্যাস ‘কাশবনের কন্যা’ (রচনাকাল ১৯৪৮) সাধু ভাষায় লেখা।
প্রতিটি উপন্যাসে ওপার বাংলার গ্রামীণ মুসলমান সমাজের কথা নানা ভাবে উঠে এসেছে। কোথাও লোকজীবন ও লোককাহিনীর আধারে (‘আলমনগরের ইতিকথা’), কোথাও নদীকেন্দ্রিক জীবনধারায় (‘কাশবনের কন্যা’), কোথাও বেদেজীবনকে উপজীব্য করে (‘কাঞ্চনমালা’), আবার কোথাও কিশোর মনস্তত্ব অবলম্বনে গ্রামবাংলার মুসলিম সমাজের পরিচয় নিবিড়তা লাভ করেছে। সেদিক থেকে শামসুদ্দীন আবুল কালাম ছিলেন বাংলা উপন্যাসের প্রচলিত ধারার উত্তরসূরী। সেখানে সমাজজীবনের রূপান্তরের ইতিহাস যেভাবে চিত্রিত হয়েছে, তার শিল্পরূপের উত্তরণ সেভাবে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেনি। যে-কারণে ওপার বাংলার মূলধারার ঔপন্যাসিক হিসাবে তিনি প্রভাব বিস্তার করতে অসফল হয়েছেন। সেদিক থেকে আবু ইসহাকের (১৯২৬-২০০৩) ‘সূর্য-দীঘল বাড়ী’ (১৯৫৫) সে দেশের উপন্যাসের ধারায় মাইলফলক হিসাবে প্রশংসিত হয়ে থাকে। ‘লালসালু’ থেকে ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’র ব্যবধান সাত বছর। এই সাত বছরে ওপার বাংলার উপন্যাস শুধু বিষয়ভাবনাতেই নয়, শিল্পরূপের পরিচয়েও আন্তরিক হয়ে উঠেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভাষা আন্দোলনের প্রভাবে সে-দেশের উপন্যাসে স্বদেশচেতনার আধারে গ্রামবাংলার আকাঁড়া জনজীবনের কথা নানাভাবে উঠে এসেছে। সেই ধারায় ‘সূর্য-দীঘল বাড়ী’ আগমন আবির্ভাব হয়ে ওঠে। তার প্রায় সমকালে প্রকাশিত হয়েছে সরদার জয়েনউদ্দীনের (১৯২৩-১৯৮৬) ‘আদিগন্ত’ (১৯৫৬), আবুল ফজলের (১৯০৩-১৯৮৩) ‘রাঙাপ্রভাত’ (১৯৫৭) প্রভৃতি। কিন্তু আবু ইশাকের উপন্যাসটির বিষয়-আঙ্গিকে অনন্য আবেদন বর্তমান।
লেখক : প্রফেসর, বাংলা বিভাগ, সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়, পুরুলিয়া-৭২৩১০৪।