রবিবার | ১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৫:৫৮
Logo
এই মুহূর্তে ::
চর্যাপদে সমাজচিত্র : নুরুল আমিন রোকন বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (শেষ পর্ব) : আবদুশ শাকুর ‘প্রাগৈতিহাসিক’-এর অনন্য লেখক মানিক : ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (একাদশ পর্ব) : আবদুশ শাকুর ভেটকি থেকে ইলিশ, চুনোপুঁটি থেকে রাঘব বোয়াল, হুগলির মাছের মেলায় শুধুই মাছ : রিঙ্কি সামন্ত দিল্লি বিধানসভায় কি বিজেপির হারের পুনরাবৃত্তি ঘটবে : তপন মল্লিক চৌধুরী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রাখাইন — বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (দশম পর্ব) : আবদুশ শাকুর রামলোচন ঠাকুর ও তৎকালীন বঙ্গসংস্কৃতি : অসিত দাস দধি সংক্রান্তি ব্রত : রিঙ্কি সামন্ত বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (নবম পর্ব) : আবদুশ শাকুর সপ্তাহে একদিন উপবাস করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো : অনুপম পাল অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত’র ভাষা : ড. হান্স্ হার্ডার সবগুলো গল্পেই বিজয়ার নিজস্ব সিগনেচার স্টাইলের ছাপ রয়েছে : ড. শ্যামলী কর ভাওয়াল কচুর কচকচানি : রিঙ্কি সামন্ত বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (অষ্টম পর্ব) : আবদুশ শাকুর রামলোচন ঠাকুরের উইল ও দ্বারকানাথের ধনপ্রাপ্তি : অসিত দাস বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (সপ্তম পর্ব) : আবদুশ শাকুর যে শিক্ষকের অভাবে ‘বিবেক’ জাগ্রত হয় না : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ভিয়েতনামের গল্প (সপ্তম পর্ব) : বিজয়া দেব বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (ষষ্ঠ পর্ব) : আবদুশ শাকুর দিল্লি বিধানসভা ভোটেই নিশ্চিত হচ্ছে বিজেপি বিরোধি জোটের ভাঙন : তপন মল্লিক চৌধুরী দ্বারকানাথ ঠাকুরের গানের চর্চা : অসিত দাস মমতা বললেন, এইচএমপি ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে দুষ্টচক্র হু জানাল চিন্তা নেই : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (পঞ্চম পর্ব) : আবদুশ শাকুর পৌষ পুত্রদা একাদশী : রিঙ্কি সামন্ত বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (চতুর্থ পর্ব) : আবদুশ শাকুর জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির দুর্গাপূজায় কবিগান ও যাত্রার আসর : অসিত দাস সসীমকুমার বাড়ৈ-এর ছোটগল্প ‘ঋতুমতী হওয়ার প্রার্থনা’ সামাজিক মনস্তত্ত্বের প্রতিফলনে সিনেমা : সায়র ব্যানার্জী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই পৌষ পার্বণ ও মকর সংক্রান্তির শুভেচ্ছা আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

নন্দিনী অধিকারী-র অনুগল্প ‘মরু-তারা’

নন্দিনী অধিকারী / ৩৯২ জন পড়েছেন
আপডেট বুধবার, ১৪ জুন, ২০২৩

“অরে হিলো রে হিলোড়িয়া,

হিলো হিলো রে।

অরে দুধ বাতাসা

পিলো পিলো রে…

মা’সার গলায় এই হালাড়ীয়ো গীত (ঘুম পাড়ানী গান) শুনতে শুনতে খোলা আকাশের নীচে প্রতিদিন ঘুমিয়ে পড়ে জীবনরাম। যতক্ষণ না তার ঘুম আসে ততক্ষণ মরুভূমির নির্মল নীল আকাশে বালকের স্বপ্নবিলাসী চোখদুটি তারা চিনে বেড়ায়। সারা আকাশ ভরা ছড়িয়ে থাকা গ্রহতারা। কি সুন্দর নাম তাদের!

বুধ, শুক্র, মঙ্গল, শনি, বৃহস্পতি এই নামগুলোর সঙ্গে তো বড় চেনাজানা। এছাড়াও আছে বরুণ, অরুণ, কৃত্তিকা ভরণী, কালপুরুষ, লুব্ধক, অরুন্ধতী, মরীচী, অত্রি, অঙ্গিরা পুলস্ত্য, ভামহ, ক্রতু, বশিষ্ঠ, … মাত্র কিছু দেখা যায়। কিছুর নাম মুখস্থ করেছে জীবনরাম। আর বাকি সে জানেই না। মাস্টারজী বলেছেন, “আরো কত লক্ষকোটি এমন আলোর বিন্দু ছড়িয়ে আছে আকাশে। সবের পরিচয় এখনো বিজ্ঞানীরাও পান নি”।

একবার মাস্টারজী কোথা থেকে টেলিস্কোপ বলে এক যন্তর এনে দেখিয়েছিল তাদেরকে রাতের আকাশ। তিনরাত জীবনরাম ঘুমোতে পারেনি। তারপর থেকেই তার মাথায় তারা চেনার ভূত চেপেছে। তারার পথ ধরে সে যে অনেক দূর যেতে চায়! কে বলে দেবে সেই পথ, কে চিনিয়ে দেবে তাকে আকাশের উজ্জ্বলতম গ্রহনক্ষত্রগুলিকে?

মাস্টারজীর কাছেও তো সব প্রশ্নের উত্তর মেলে না। তিনি বলেছেন, “তুই যদি পরীক্ষায় জলপাণি পাস, অনেক অনেক পঢ়াই করিস, তবে একদিন হয়তো নাসায় পৌঁছতে পারবি। তোর অনেক প্রশ্নের উত্তর পাবি সেখানে।”

—নাসা কোথায় মাস্টারজী?

—সে যে বহুদূর… আমেরিকায়!

—অনেকদূর?

কেমন করে পৌঁছবে সেখানে জীবনরাম?

জীবনরামের দৌড় তো ঐ রেত কা টীলোঁ! নির্জন সেই টিলার আশেপাশে বাস করে কত জংলী জানোয়ার! বালির মধ্যে ডিম পেড়ে রাখে পিঠে কাঁটাওয়ালা ছিপকলি। বালির পাহাড়ের পিছনে লুকিয়ে থাকে শেয়াল। তার শিকারী চোখ ঠিক খুঁজে পায় সোনালী বালির রঙে রঙ মেলানো বেড়াল বাচ্চা।

কখনো আকাশের দিকে মুখ করে উটেরা চলে সার বেঁধে। তাদের পিঠে যত মাল বোঝাই করা। সাদা আঙরাখা, ধোতি আর পাগড়ি পরা মানুষগুলো অদ্ভুত উঁচু সুরে গান গাইতে গাইতে উটের পিঠে চড়ে শহরে যায়! বালিতে রয়ে যায় উটের ক্ষীরের পদচিহ্ন। জীবনরাম ভাবে, তাদের সঙ্গে চলে যেতে পারলে বেশ হত। ওরা কতদূর যায়! কিছু একটা সন্ধান তো দিতে পারত! ঐ রেত কা টিলোঁর পরে কোন দুনিয়া আছে? সেকথা তো জানা নেই জীবনরামের।

তার বাপু ভুরারামের কেবলমাত্র অক্ষর পরিচয়টুকু আছে। সহজ সরল মানুষটি নিজের ভের-বকরীদের সন্তানসম চেনে, জানে। এছাড়া আর বিশেষ কিছু জানে না। মা’সা ইস্কুলের দরজায় কখনো পৌঁছয় নি। চাঁদতারাদের খবর তারা কি করে দেবে?

আগামীকাল তার পরীক্ষার ফল বেরোবে। তার দশবী (দশম শ্রেণী) পরীক্ষার ফল। “হে বাওজী, আশা পুরোম্হোর”… ঈশ্বরের স্মরণ নিতে নিতে অবোধ বালক ঘুমিয়ে পড়ল ছাদে রাখা খাটিয়ায়। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পর ভুরারাম আর তার স্ত্রীর চোখের পাতাও ভারি হয়ে এল। রাজস্থানের তপ্ত বালু ধীরে ধীরে শীতল হল। মরুভূমির অমলিন আকাশে তখন অগুনতি তারা হিরের কুঁচির মত ঝিকমিক করছে।

বিহানবেলায় ঘুম ভাঙল জীবনরামের। প্রতিদিনের মত তার বাপু ভুরারাম আঙন ঝাড়ু দিচ্ছে। বালি ওঠাচ্ছে তাগাড়ী তাগাড়ী। জীবনরামের চুলে-শরীরেও সূক্ষ্ম বালুকণা। রাতে আঁধি এসেছিল কি? মা হাঁক পাড়ে, “আ, ছোড়া! নাস্তা তো করলে”।

তাড়াতাড়ি পালোতরার সামান্য জলে মুখ হাত ধুয়ে নিল জীবনরাম। মা খেতে দিল বাজরে কা রোটী, গুড় আর গেলাস ভরে ছাঁচ। ভুরারাম আর বেটা জীবনরাম যাবে ভের-বকরী চড়াতে। বহুদূর রেত পার করে সবুজের সন্ধানে। তাদের চারার যোগান দিতে। মা প্রেমাবাঈ যাবে দুক্রোশ, তিনক্রোশ দূরে জলের খোঁজে। সখিদের সঙ্গে, মাথায় কলসী নিয়ে। পায়ে মোজরী মশমশিয়ে। ফেরার পথে বাসেডোও দেবীর থানে ছেলের জন্যে মাথা ঠেকিয়ে আসবে…

এমন সময় হঠাৎ আলোর ঝলকানি ভুরারামের ভাঙা ঘরে। পাথরের দেওয়ালের বাইরে এসে দাঁড়ায় সারি সারি গাড়ি। অপরিচিত কিছু লোক সদলবলে ঢুকে পড়ে তার ঘরে। সঙ্গে সঙ্গে গোটা গাঁও যেন ভেঙে পড়ে তার আঙিনায়। সঙ্গে গুরুজীও আসে। জীবনরামকে সবাই দেখতে চায়, কথা বলতে চায় তার সঙ্গে। সে নাকি এক্কেবারে প্রথম হয়েছে রাজস্থান বোর্ডের দশম শ্রেণীর পরীক্ষায়। লাজুক জীবনরামের ছবি ওঠে খচাখচ। প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করা হয় তাকে। সে প্রশ্নের সব উত্তর যে তার জানা নেই!” বড় হয়ে তুমি কি করবে? এবার তুমি কি পড়বে?”

দরিদ্র, ভীরু ছেলেটি যেন আরো ভীরুতার আবরণে ঢেকে  যায়। ঘোমটার আড়ালে তার মা প্রেমা লাজুক হাসে। বাপু ভুরারাম বাক্যহারা, অপ্রতিভ। চোখে তাদের আনন্দধারা আর খুশির লহর।

জীবনরাম হতবাক হয়। তবে এ সাফল্যে সেতো কই তেমনটা খুশি হতে পারে না! তার মনের মধ্যে যে হাজারো প্রশ্ন মাথা কুটে মরে। তার মাথায় যে লক্ষকোটি তারার আলোক বিন্দুর ঝিকিমিকি। সেই তারাদের পথ কে চেনাবে তাকে? কে জানাবে বৃহস্পতি, শুক্র, শনি, মঙ্গল, বুধের খোঁজ? চাঁদ-সূর্যের রহস্য। কে করে দেবে তাকে ছায়াপথের সন্ধান? কিচ্ছু জানা নেই তার, কিচ্ছু না।


আপনার মতামত লিখুন :

4 responses to “নন্দিনী অধিকারী-র অনুগল্প ‘মরু-তারা’”

  1. ফুলকি গাঙ্গুলি says:

    আগে ও পড়ে ছিলাম। তখন যে ভালো লাগা ছিল এখনও সে এক ই মুগ্ধতা! জীবনরামের মনে যে হাজার প্রশ্নের লুকোচুরি,তার সমাধান কি হলো? সেই প্রশ্নের ঝিকমিকি আমারও মনের মাঝারে!!

  2. Nandini Adhikari says:

    জীবনরাম তার স্বপ্নের পথের প্রথম হার্ডেলটি টপকেছে।এরপরে তার চেষ্টা আর সুযোগ। হাল ছাড়লে মোটেই চলবে না।

  3. Jaya Dey says:

    অসম্ভব সুন্দর। পারিভাষিক শব্দগুলোর ব্যবহার অপূর্ব এক মাত্রা দিয়েছে গল্পের আবহ চিত্রণে। রাতের আকাশই হোক কি বালির দেশের সূক্ষ্মতিসূক্ষ্ম বর্ণনা এত মনোমুগ্ধকর যে জীবনরামের সাথে রুক্ষ্ম মরুভূমির এক দিনযাপন করে এলাম…!!
    দূর্দান্ত…!!!!

  4. Sankar chakraborty says:

    আজকের তথাকথিত মেধা-ব্যবস্থার বিপ্রতীপে কোথায় একটা অনুসন্ধিৎসা আর খোঁজ মাথা তুলে দাঁড়াল!
    একটা দূরবীন দাও স্বপ্নে আমার আকাশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন