‘ভাষা দিয়ে সম্প্রীতি গড়বো’— এই আঙ্গিকে আয়োজিত ৪০তম নদিয়া বইমেলার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো— ‘নদিয়া বইমেলা স্মরণিকা’। ফি-বছর নদিয়া জেলা বইমেলাকে কেন্দ্র করে একটি স্মরণিকা প্রকাশিত হয়। বহু পাঠক বইমেলা স্মরণিকা সংগ্রহ করে সেখানে মুদ্রিত লেখাগুলি পাঠের জন্য মুখিয়ে থাকেন। ৪০তম নদিয়া বইমেলা স্মরণিকার ক্ষেত্রেও একই আভাস মিলেছে। স্মরণিকার প্রস্তুতি-পর্যায় থেকেই একাধিক পাঠক স্মরণিকা উপসমিতির সদস্যদের কাছে নিজেদের আগ্রহের কথা নির্দ্বিধায় জানিয়ে রেখেছেন। ‘নদিয়া বইমেলা স্মরণিকা’ সংগ্রহের জন্য এই আগ্রহ যেন ক্রমবর্ধমান। একশো আটষট্টি বৎসরোত্তীর্ণ গ্রন্থাগার কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে আয়োজিত ৪০তম নদিয়া বইমেলা ১৮ থেকে ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগেরবার অর্থাৎ ৩৯তম নদিয়া বইমেলাও কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে আয়োজিত হয়েছিল এবং মেলার শেষ দিন (২২ ডিসেম্বর, ২০২৩) বইমেলা স্মরণিকাটি প্রকাশ পেয়েছিল। গতবারের স্মরণিকার সীমিত সংখ্যার কারণে সেটি সকল আগ্রহীর কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়নি। এই বছর আশা করা যাচ্ছে যে সেই সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করা সম্ভব হবে।
বিগত বছরের ন্যায় এবছরও বইমেলার শেষ দিন অর্থাৎ ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ কাজী নজরুল ইসলাম নামাঙ্কিত বইমেলার মূলমঞ্চ থেকে ‘৪০তম নদিয়া বইমেলা স্মরণিকা’ প্রকাশ পায়। ২৪ ডিসেম্বর বিকেলে স্মরণিকা প্রকাশের সময় বইমেলা কমিটির সদস্যবৃন্দ এবং বিশিষ্ট অতিথিরা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক (নদিয়া) ড. প্রবোধ মাহাত এবং স্থানীয় গ্রন্থাগার কৃত্যকের সদস্যবৃন্দ। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও জৈব প্রযুক্তি বিভাগের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের হাত দিয়ে ৪০তম নদিয়া বইমেলা স্মরণিকাটি প্রকাশ পায়। তাঁর সঙ্গে এদিন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ৪০তম নদিয়া বইমেলা সমন্বয় উপসমিতির সভাপতি শিবনাথ চৌধুরী, কার্যকরী সভাপতি সুব্রত ঘোষ, নাকাশিপাড়ার বিধায়ক কল্লোল খাঁ, করিমপুরের বিধায়ক বিমলেন্দু সিংহরায়, বিশিষ্ট কবি রামকৃষ্ণ দে প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। পত্রিকা প্রকাশ অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন ঘূর্ণি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাজেন্দ্রপ্রসাদ বিশ্বাস। এদিন স্মরণিকা প্রকাশের সময় স্মরণিকা-উপসমিতির পক্ষ থেকে সম্পাদক এবং উপসমিতির সদস্যবৃন্দরা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
একাধিক গুরুত্বপূর্ণ লেখার সমাহারে এবারের স্মরণিকাটি বিশিষ্ট হয়ে থাকবে। ‘উজ্জ্বল উদ্ধার’ পর্বে সাহিত্যিক সুধীর চক্রবর্তীর ‘বই’ শীর্ষক লেখাটি এ বছরের স্মরণিকার অন্যতম সম্পদ। পাশাপাশি যে সকল গুণী লেখক ও কবিদের লেখায় এবারের বইমেলা স্মরণিকা সমৃদ্ধ হয়েছে, সেই তালিকাটি হলো— পার্শ্বনাথ রায়চৌধুরীর ‘বইমেলা’, শিবনাথ চৌধুরীর ‘বর্তমান দুর্বৃত্তায়ন রোধের একমাত্র পথই হলো যোগব্যায়াম অভ্যাস’, সাগরময় অধিকারীর ‘উপহার’, রতনকুমার নাথের ‘এক খাঁটি বাঙালির কথা’, ডা: সতীনাথ ভট্টাচার্যের ‘কৃষ্ণনগরে নজরুল’, সুব্রত ঘোষের ‘স্মরণে বিপ্লবী বসন্তকুমার বিশ্বাস’, প্রতুলচন্দ্র দত্তের ‘বাংলার লৌকিক সংস্কৃতি লোকাচার ও লৌকিক দেবদেবী’, সঞ্জিত দত্তের ‘শতবর্ষে কৃষ্ণকলি নারায়ণ সান্যাল’, ড. সুজিতকুমার বিশ্বাসের ‘নদিয়া জেলার জনপদভিত্তিক পীরের থান— মানিকতলা: আজও সময়ের নিরিখে প্রাসঙ্গিক’, বিশ্ববন্ধু সরকারের ‘বাঘাযতীন: উপেক্ষিত নায়ক’, মমতা বিশ্বাসের ‘মাতৃভাষা দিবস’, কমলকুমার মণ্ডলের ‘প্রাঞ্জল ভাবনা’, ড. জিষ্ণু সারের ‘প্রিয় রবিঠাকুর’। এর পাশাপাশি যে ছটি কবিতা এবারের স্মরণিকায় মুদ্রিত হয়েছে, সেগুলি হলো— রামকৃষ্ণ দে-র ‘স্বদেশ’, রামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘ফেরার পালা’, গোবিন্দ বিশ্বাসের ‘গোপনীয়তা’, রাধেশ্যাম পালের ‘জীবন’, রবীন্দ্রকুমার হালদারের ‘বেঁচে থাক বইমেলা’, এবং রোশনী হালসানার ‘আত্মোপলব্ধি’। এছাড়া এই স্মরণিকায় নদিয়া বইমেলা সম্পর্কিত আরো কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য, যেমন প্রথম বর্ষ থেকে চল্লিশতম বর্ষ পর্যন্ত জেলা বইমেলার স্থান তারিখ ও উদ্বোধকের নাম এতে সারণিবদ্ধ করা হয়েছে। আর ৪০তম নদিয়া বইমেলায় আগত ৮৫টি প্রকাশনা সংস্থার তালিকাও (স্টল নম্বর-সহ) স্মরণিকায় মুদ্রিত হয়েছে।
৪০তম নদিয়া বইমেলা স্মরণিকা-উপসমিতির সভাপতি সম্পদনারায়ণ ধর, সম্পাদক দীপাঞ্জন দে, আর স্মরণিকা-উপসমিতির সদস্যবৃন্দ হলেন যথাক্রমে সুজন গুপ্ত, শিল্পী বিশ্বাস সেনগুপ্ত, দেবাশিষ মণ্ডল, সঞ্জিত দত্ত, মহাদেব গায়েন, অপূর্ব কুণ্ডু, স্বপন বিশ্বাস এবং তপনকুমার ঘোষ। স্মরণিকার প্রকাশক নদিয়া বইমেলা কমিটি ২০২৪-২৫-এর পক্ষে ড. প্রবোধ মাহাত, জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক ও সচিব, নদিয়া বইমেলা কমিটি। স্মরণিকার প্রচ্ছদ পরিকল্পনা ও রূপায়ণে ছিলেন অঙ্কন বন্দ্যোপাধ্যায় ও দীপাঞ্জন দে। প্রচ্ছদ ভাবনাতে রয়েছে ভাষা দিয়ে সম্প্রীতি গড়ার আঙ্গিক। দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রচ্ছদে রয়েছে এবছরের বইমেলা প্রাঙ্গণের খণ্ডচিত্র। আর চতুর্থ প্রচ্ছদে ৪০তম নদিয়া বইমেলা উদ্বোধন অনুষ্ঠান এবং কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরির চিত্র মুদ্রিত হয়েছে।
নদিয়া জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক এবং স্থানীয় গ্রন্থাগার কৃত্যকের সকল সদস্যসহ ৪০তম নদিয়া বইমেলা স্মরণিকা প্রকাশে সহযোগিতা করার জন্য সকল লেখক, গ্রন্থাগারকর্মী, নদিয়া বইমেলা কমিটি এবং এই মুদ্রণের সঙ্গে জড়িত সকল মানুষদের স্মরণিকা উপসমিতির পক্ষ থেকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানানো হয়। ৪০তম নদিয়া বইমেলা বছরভর অপেক্ষমান সকল বইপ্রেমী, সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষদের কাছে নিশ্চয় ভালোলাগার পরিসর তৈরি করেছে। পাঠকের ঔৎসুক্য স্মরণিকা নির্মাণের প্রতিও দায়বদ্ধতাকে আরো নিবিড় করেছে।
লেখক : সম্পাদক, ৪০তম নদিয়া বইমেলা স্মরণিকা।