শুক্রবার | ২৪শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৮:৩৩
Logo
এই মুহূর্তে ::
বিদ্বজ্জনসমাজ ও জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির কবিয়ালের প্রেত : অসিত দাস ষষ্ঠীলা একাদশী বা ষটতিলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত একদা বিরুদ্ধরাই আজ নেতাজির স্তুতিগানে সরব : সন্দীপন বিশ্বাস জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পদবি ঠাকুর থেকে Tagore হওয়ার নেপথ্যকাহিনী : অসিত দাস সুভাষের সুবাসে এখনও ম ম করছে ডালহৌসি শহরের বাতাস — এ এক তীর্থক্ষেত্র : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী তারাভরা তারানাথ (১৮১২-১৮৮৫) : নন্দিনী অধিকারী ‘জাওয়ানি জানেমান হাসিনা দিলরুবা’র একাকিত্বের কাহিনী : রিঙ্কি সামন্ত জোটে ব্রাত্য কংগ্রেস কি দিল্লি ভোটের পর আরও গুরুত্ব হারাবে : তপন মল্লিক চৌধুরী খালাসিটোলা, রবীন্দ্রনাথ ও পঞ্চানন কুশারী : অসিত দাস পীযূষ পাঠ প্রস্তাব : ড. পুরুষোত্তম সিংহ চর্যাপদে সমাজচিত্র : নুরুল আমিন রোকন বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (শেষ পর্ব) : আবদুশ শাকুর ‘প্রাগৈতিহাসিক’-এর অনন্য লেখক মানিক : ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (একাদশ পর্ব) : আবদুশ শাকুর ভেটকি থেকে ইলিশ, চুনোপুঁটি থেকে রাঘব বোয়াল, হুগলির মাছের মেলায় শুধুই মাছ : রিঙ্কি সামন্ত দিল্লি বিধানসভায় কি বিজেপির হারের পুনরাবৃত্তি ঘটবে : তপন মল্লিক চৌধুরী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রাখাইন — বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (দশম পর্ব) : আবদুশ শাকুর রামলোচন ঠাকুর ও তৎকালীন বঙ্গসংস্কৃতি : অসিত দাস দধি সংক্রান্তি ব্রত : রিঙ্কি সামন্ত বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (নবম পর্ব) : আবদুশ শাকুর সপ্তাহে একদিন উপবাস করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো : অনুপম পাল অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত’র ভাষা : ড. হান্স্ হার্ডার সবগুলো গল্পেই বিজয়ার নিজস্ব সিগনেচার স্টাইলের ছাপ রয়েছে : ড. শ্যামলী কর ভাওয়াল কচুর কচকচানি : রিঙ্কি সামন্ত বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (অষ্টম পর্ব) : আবদুশ শাকুর রামলোচন ঠাকুরের উইল ও দ্বারকানাথের ধনপ্রাপ্তি : অসিত দাস বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (সপ্তম পর্ব) : আবদুশ শাকুর যে শিক্ষকের অভাবে ‘বিবেক’ জাগ্রত হয় না : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ভিয়েতনামের গল্প (সপ্তম পর্ব) : বিজয়া দেব
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই পৌষ পার্বণ ও মকর সংক্রান্তির শুভেচ্ছা আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

জগতের ধারণকারিনী মা জগদ্ধাত্রী : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ৫৩১ জন পড়েছেন
আপডেট মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০২২

জগতের জননী যিনি, তিনিই জগদ্ধাত্রী। সমগ্র বিশ্বচরাচরকে ধারণ করে বিরাজ করেন এই দেবী। জগদ্ধাত্রী রূপে দেবী ভাবনার সূচনা হয়েছে পৌরাণিককালেই যখন থেকে মানুষ ধরিত্রীকে বা ভূমিকে দেবীরূপে চিহ্নিত করেছেন। পুরানে আমরা পৃথিবী দেবী এবং দেবী বসুন্ধরার কথা পাই।

দেবী পাপের ভারে জর্জরিত হয়ে একটি গাভীর বেশ ধারণ করেছিলেন এবং সেই বেশ ধারণ করে ক্রন্দনরত অবস্থায় উপস্থিত হয়েছেন নারায়ণের কাছে। ধরণীর ভার ধারণ করতে স্বয়ং নারায়ণকে শ্রীকৃষ্ণ রূপে জন্মগ্রহণ করতে হয়েছিল। দেবী জগদ্ধাত্রী দেবী বসুন্ধরার পরিবর্তিত বা বিবর্তিত রূপ ।

কালিকাপুরানে দেখি মিথিলার রাজা জনককে দেবী বসুন্ধরা জগদ্ধাত্রী রূপে দেখা দিয়েছিলেন। জনক নন্দিনী সীতা লাঙ্গলের ফলাতে ধরিত্রী থেকে উঠে এসেছিলেন। আবার ধরিত্রীপুত্র নরকাসুরের ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই, ধরিত্রী দেবী বলেছিলেন “পুত্র, আমি তোমার জননী। আমার থেকেই তুমি জন্মগ্রহণ করেছো। আমি জগদ্ধাত্রী, তাই নদী, বৃক্ষ সবই আমার কাছ থেকে প্রাণ পেয়ে দেবিরূপ ধারণ করেছে। আমাদের পূজাপর্যায়ে তিন দেবী — দুর্গা, কালী ও জগদ্ধাত্রী ক্রমান্বয়ে পুজিতা হন।

দেবী দুর্গা অসুর ধ্বংস করে আমাদের আধ্যাত্মিক শত্রুকে বিনাশ করে, আমাদের নিরাপত্তা দান করেন। দেবী কালিকা আমাদের অন্তরের শত্রুকে নিধন করে আধ্যাত্ম পথে অগ্রসর করেন, তখন সেই হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত হন দেবী জগদ্ধাত্রী।

ভাগবত পুরাণ অনুসারে, “একবার দেবাসুর সংগ্রামে দেবগণ অসুরদের পরাস্ত করলেন। কিন্তু তারা বিস্মৃত হলেন যে নিজ শক্তিতে নয়, বরং ব্রহ্মের বলে বলীয়ান হয়েই তাদের এই বিজয়। ফলত তারা হয়ে উঠলেন অহংকার-প্রমত্ত। তখন দেবী লক্ষ্মী এক কুমারী বালিকার বেশ ধারণ করে তাদের সম্মুখে উপস্থিত হলেন। তিনি একটি তৃণখণ্ড দেবতাদের সম্মুখে পরীক্ষার নিমিত্ত রাখলেন। অগ্নি ও বায়ু তাদের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করেও সেই তৃণখণ্ডটিকে দগ্ধ বা বিধৌত করতে পারলেন না। তখন দেবগণ ইন্দ্রকে বালিকার পরিচয় জানবার নিমিত্ত প্রেরণ করলেন। ইন্দ্র অহংকার-প্রমত্ত হয়ে বালিকার কাছে আসেননি, এসেছিলেন জিজ্ঞাসু হয়ে। তাই ব্রহ্মরূপী দেবী মহালক্ষী তার সম্মুখ হতে তিরোহিত হলেন। বরং তার সম্মুখের আকাশে দিব্য স্ত্রীমূর্তিতে আবির্ভূত হলেন হৈমবতী রমা। রমা ব্রহ্মের স্বরূপ ব্যাখ্যা করে ইন্দ্রের জ্ঞানপিপাসা নিবৃত্ত করলেন। সেই দেবীকে পুরাণে জগদ্ধাত্রী নামে পরিচিতি লাভ করেন।”

এই দেবী রূপের মধ্যে নানান বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। দুর্গা পূজার শেষে কালীপুজোর পর প্যান্ডেলে দেবী জগদ্ধাত্রী বিরাট রূপে আবির্ভূত হন। দেবী সিংহের কাঁধে বসে আছেন। সর্বাঙ্গে নানা অলংকার ধারণ করেরয়েছেন। তাঁর চারটি হাত। কন্ঠে নাগরূপ যজ্ঞোপবীত। দেবী তার বাম হাত দুটিতে শঙ্খ ও শাঙ্গ ধনু এবং ডানহাত দুটিতে যথাক্রমে চক্র এবং পঞ্চবান ধারণ করেছেন। দেবী লাল বস্ত্র পরিহিতা এবং গায়ের রং প্রাতঃকালীন সূর্যের নেয় রক্তবর্না।

মা জগদ্ধাত্রী মহাশক্তির প্রতীক। তিনি শাশ্বত এবং অনির্বচনীয়। নারদাদি মুণিগণ দ্বারা তিনি নিত্য সেবিতা এবং বন্দিতা। দেবীর জগদ্ধাত্রী মধ্যে রয়েছে পালিনী শক্তির উৎকর্ষতা এজন্য ভগবান বিষ্ণুর অস্ত্রের ন্যায় শঙ্খ-চক্র-শাঙ্গ-ধনু রূপ অস্ত্রগুলি দেবী করে বিদ্যমান।

এদিক দিয়ে দেখলে বলা যায় দেবী হলেন বৈষ্ণবী শক্তি। তার কন্ঠে নাগযজ্ঞ উপবীত যা ব্রহ্ম শক্তিরূপী কুণ্ডলিনীর প্রতীক।

কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিকে বলা হয় ‘দুর্গা নবমী’।এই দিন জগদ্ধাত্রী দুর্গায় নমঃ — এই মন্ত্রে দেবী জগদ্ধাত্রীকে পূজা করা হয়। তবে দেবী জগদ্ধাত্রী পূজা দেবী দুর্গার মত তিন দিনব্যাপী হয় না। একদিনেই তিনটি তিথির পূজা সম্পন্ন হয়। সকালে দেবী স্বাত্ত্বিক রূপে, মধ্যাহ্নে রাজসিক রূপে আর সন্ধ্যায় তামসীরূপে দেবী পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

মা জগদ্ধাত্রী দুর্গারই অন্য এক রূপ দুর্গা। যখন দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করতে চেয়েছিলেন তখন মহিষাসুর নানা রূপ পাল্টে মায়ের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। হঠাৎ মহিষাসুর করীন্দ্র নামে এক মত্ত হাতির রূপ ধরে মাকে আক্রমণ করতে চায়। মা দুর্গা বীরক্রমে এই হস্তী রূপকে বধ করলেন তখন মহিষাসুর আবার নিজের রূপ ধারণ করলে মা তাকেও বধ করে সমরে জয়লাভ করলেন। দেখা যায় মা জগদ্ধাত্রী হলেন সিংহ বাহনা এবং সিংহের নিচে হাতিটি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এই হাতি হল চঞ্চল মনের প্রতীক। আর সিংহ হলো জীবেচ্ছা ভাবকে যে মানুষ অতিক্রম করতে গিয়ে বলদর্পে সাধনা করে — সেই বীর সাধকের প্রতীক। মন করীকে অর্থাৎ মত্ত মনকে যে বশ করতে পারে, তারই হৃদয়ে মা জগদ্ধাত্রী অধিষ্ঠিত হন।

বাংলায় জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনা কাল প্রায় অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি। জগদ্ধাত্রী পূজার উৎপত্তির ইতিহাসে রাজনৈতিক নাটকীয়তা বর্তমান। কিংবদন্তি অনুসারে নদীয়া রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় বাংলায় জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনা করেন। বাংলার নবাব আলিবর্দি খাঁর রাজত্বকালে তিনি নদীয়ার রাজার কাছে বারো লক্ষ টাকা নজরানা দাবি করেন। সেই নজরানা দিতে অপারগ হলে কৃষ্ণচন্দ্র রায়কে বন্দী করে মুর্শিদাবাদে নিয়ে যান। সেই সময়টা নাকি দুর্গোৎসবের কাছাকাছি সময় ছিল। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র নবাবের কারাগারেই সেবারের মত দুর্গাপূজা কাটান। যখন কারাগার থেকে মুক্তি পান, সেদিন ছিলো দুর্গাপূজার শেষের সময়। নৌকা করে কৃষ্ণনগর ফেরার পথে রাজা বুঝলেন, সেই দিনটি বিজয়া দশমী। দূর্গা পুজোয় উপস্থিত থাকতে না পারায় রাজা অত্যন্ত বিষণ্ণ হয়ে পড়েন।

এই সময় স্বয়ং দেবী নাকি তাঁকে কার্তিক মাসের নবমী তিথিতে জগদ্ধাত্রী পূজা সম্পন্ন করার নির্দেশ দান করেন। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র স্বপ্নে দেবীকে যে মূর্তিতে দর্শন করেন, সেই মূর্তিকেই প্রতিষ্ঠা করে তিনি জগদ্ধাত্রী পূজার আয়োজন সম্পন্ন করেন। বলা হয়ে থাকে এই পূজার মাধ্যমেই বাংলায় জগদ্ধাত্রী পূজার সুচনা হয়।

মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র জগদ্ধাত্রী পূজা সম্পন্ন করলে তার বন্ধু চন্দননগরে ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীও জগদ্ধাত্রী পূজা সম্পন্ন করেন। আজও আমরা দেখি নদীয়া আর চন্দননগরে অতি সমারোহে জগদ্ধাত্রী পূজা পালিত হয়।।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার: স্বামী বেদানন্দ, পূর্বা সেনগুপ্ত এবং উইকিপিডিয়া।।


আপনার মতামত লিখুন :

2 responses to “জগতের ধারণকারিনী মা জগদ্ধাত্রী : রিঙ্কি সামন্ত”

  1. Pallab dey says:

    অতুলনীয় লেখনী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন