মঙ্গলবার | ৪ঠা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৬:৩০
Logo
এই মুহূর্তে ::
মৈত্রেয়ী ব্যানার্জি-র ভূতের গল্পো ‘হোমস্টে’ রহস্য ঘেরা বলিউডের নক্ষত্রপতন : রিঙ্কি সামন্ত বাঁকুড়ার দু-দিন ব্যাপী দেশীয় বীজ মেলায় দেশজ বীজের অভূতপূর্ব সম্ভার পেজফোর-এর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ২০২৫ এত গুণী একজন মানুষ কত আটপৌরে : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী সরস্বতীর উৎস সন্ধানে : অসিত দাস ‘সব মরণ নয় সমান’ সৃজনশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে যথোচিত মর্যাদায় স্মরণ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সিপিএম-এর রাজ্য সম্মেলন, তরুণ প্রজন্মের অন্তর্ভূক্তি নিয়ে খামতি রয়েছে দলে : তপন মল্লিক চৌধুরী প্রথম পাঠ — মার্কসবাদের বিশ্বভ্রমণ : সন্দীপন চক্রবর্তী বঙ্গবিভূষণ কাশীকান্ত মৈত্র স্মারকগ্রন্থ : ড. দীপাঞ্জন দে ‘খানাকুল বাঁচাও’ দাবিতে সরব খানাকুল-সহ গোটা আরামবাগের মানুষ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় হরি হরের কথা এবং বীরভূমের রায়পুরে বুড়োনাথের বিয়ে : রিঙ্কি সামন্ত ত্র্যম্বকেশ্বর দর্শনে মোক্ষলাভ : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী কুম্ভমেলায় ধর্মীয় অভিজ্ঞতার থেকে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বেশি : তপন মল্লিক চৌধুরী রাজ্যে পেঁয়াজের উৎপাদন ৭ লক্ষ টন ছাড়াবে, কমবে অন্য রাজ্যের উপর নির্ভরতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ‘হিড়িক’ শব্দটির ব্যুৎপত্তি অধরা, আমার আলোকপাত : অসিত দাস বিজয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-র ছোটগল্প ‘শিকড়ের টান’ বাংলাভাষার নেচিতে ‘ময়ান’ ও ‘শাহিস্নান’-এর হিড়িক : অসিত দাস একটু একটু করে মারা যাচ্ছে বাংলা ভাষা : দিলীপ মজুমদার রাজ্যে এই প্রথম হিমঘরগুলিতে প্রান্তিক চাষিরা ৩০ শতাংশ আলু রাখতে পারবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সামরিক জান্তার চার বছর — মিয়ানমার পরিস্থিতি : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ১৯ ফেব্রুয়ারি ও স্বামীজির স্মৃতিবিজড়িত আলমবাজার মঠ (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত চাষিদের বাঁচাতে রাজ্যের সরাসরি ফসল কেনার দাওয়াই গ্রামীণ অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (সপ্তম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার মোদীর মিডিয়া ব্যস্ত কুম্ভের মৃত্যুমিছিল ঢাকতে : তপন মল্লিক চৌধুরী রেডিওকে আরো শ্রুতিমধুর করে তুলেছিলো আমিন সায়ানী : রিঙ্কি সামন্ত গোপাল ভাঁড়ের আসল বাড়ি চুঁচুড়ার সুগন্ধ্যায় : অসিত দাস প্রতুলদার মৃত্যু বাংলা গানের জগতে অপূরণীয় ক্ষতি — মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় : সুমিত ভট্টাচার্য মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র ও গোপাল ভাঁড়, মিথ এবং ডিকনস্ট্রাকশন : অসিত দাস
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বসন্ত পঞ্চমী ও সরস্বতী পুজোর  আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

জগতের ধারণকারিনী মা জগদ্ধাত্রী : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ৫৫১ জন পড়েছেন
আপডেট মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০২২

জগতের জননী যিনি, তিনিই জগদ্ধাত্রী। সমগ্র বিশ্বচরাচরকে ধারণ করে বিরাজ করেন এই দেবী। জগদ্ধাত্রী রূপে দেবী ভাবনার সূচনা হয়েছে পৌরাণিককালেই যখন থেকে মানুষ ধরিত্রীকে বা ভূমিকে দেবীরূপে চিহ্নিত করেছেন। পুরানে আমরা পৃথিবী দেবী এবং দেবী বসুন্ধরার কথা পাই।

দেবী পাপের ভারে জর্জরিত হয়ে একটি গাভীর বেশ ধারণ করেছিলেন এবং সেই বেশ ধারণ করে ক্রন্দনরত অবস্থায় উপস্থিত হয়েছেন নারায়ণের কাছে। ধরণীর ভার ধারণ করতে স্বয়ং নারায়ণকে শ্রীকৃষ্ণ রূপে জন্মগ্রহণ করতে হয়েছিল। দেবী জগদ্ধাত্রী দেবী বসুন্ধরার পরিবর্তিত বা বিবর্তিত রূপ ।

কালিকাপুরানে দেখি মিথিলার রাজা জনককে দেবী বসুন্ধরা জগদ্ধাত্রী রূপে দেখা দিয়েছিলেন। জনক নন্দিনী সীতা লাঙ্গলের ফলাতে ধরিত্রী থেকে উঠে এসেছিলেন। আবার ধরিত্রীপুত্র নরকাসুরের ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই, ধরিত্রী দেবী বলেছিলেন “পুত্র, আমি তোমার জননী। আমার থেকেই তুমি জন্মগ্রহণ করেছো। আমি জগদ্ধাত্রী, তাই নদী, বৃক্ষ সবই আমার কাছ থেকে প্রাণ পেয়ে দেবিরূপ ধারণ করেছে। আমাদের পূজাপর্যায়ে তিন দেবী — দুর্গা, কালী ও জগদ্ধাত্রী ক্রমান্বয়ে পুজিতা হন।

দেবী দুর্গা অসুর ধ্বংস করে আমাদের আধ্যাত্মিক শত্রুকে বিনাশ করে, আমাদের নিরাপত্তা দান করেন। দেবী কালিকা আমাদের অন্তরের শত্রুকে নিধন করে আধ্যাত্ম পথে অগ্রসর করেন, তখন সেই হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত হন দেবী জগদ্ধাত্রী।

ভাগবত পুরাণ অনুসারে, “একবার দেবাসুর সংগ্রামে দেবগণ অসুরদের পরাস্ত করলেন। কিন্তু তারা বিস্মৃত হলেন যে নিজ শক্তিতে নয়, বরং ব্রহ্মের বলে বলীয়ান হয়েই তাদের এই বিজয়। ফলত তারা হয়ে উঠলেন অহংকার-প্রমত্ত। তখন দেবী লক্ষ্মী এক কুমারী বালিকার বেশ ধারণ করে তাদের সম্মুখে উপস্থিত হলেন। তিনি একটি তৃণখণ্ড দেবতাদের সম্মুখে পরীক্ষার নিমিত্ত রাখলেন। অগ্নি ও বায়ু তাদের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করেও সেই তৃণখণ্ডটিকে দগ্ধ বা বিধৌত করতে পারলেন না। তখন দেবগণ ইন্দ্রকে বালিকার পরিচয় জানবার নিমিত্ত প্রেরণ করলেন। ইন্দ্র অহংকার-প্রমত্ত হয়ে বালিকার কাছে আসেননি, এসেছিলেন জিজ্ঞাসু হয়ে। তাই ব্রহ্মরূপী দেবী মহালক্ষী তার সম্মুখ হতে তিরোহিত হলেন। বরং তার সম্মুখের আকাশে দিব্য স্ত্রীমূর্তিতে আবির্ভূত হলেন হৈমবতী রমা। রমা ব্রহ্মের স্বরূপ ব্যাখ্যা করে ইন্দ্রের জ্ঞানপিপাসা নিবৃত্ত করলেন। সেই দেবীকে পুরাণে জগদ্ধাত্রী নামে পরিচিতি লাভ করেন।”

এই দেবী রূপের মধ্যে নানান বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। দুর্গা পূজার শেষে কালীপুজোর পর প্যান্ডেলে দেবী জগদ্ধাত্রী বিরাট রূপে আবির্ভূত হন। দেবী সিংহের কাঁধে বসে আছেন। সর্বাঙ্গে নানা অলংকার ধারণ করেরয়েছেন। তাঁর চারটি হাত। কন্ঠে নাগরূপ যজ্ঞোপবীত। দেবী তার বাম হাত দুটিতে শঙ্খ ও শাঙ্গ ধনু এবং ডানহাত দুটিতে যথাক্রমে চক্র এবং পঞ্চবান ধারণ করেছেন। দেবী লাল বস্ত্র পরিহিতা এবং গায়ের রং প্রাতঃকালীন সূর্যের নেয় রক্তবর্না।

মা জগদ্ধাত্রী মহাশক্তির প্রতীক। তিনি শাশ্বত এবং অনির্বচনীয়। নারদাদি মুণিগণ দ্বারা তিনি নিত্য সেবিতা এবং বন্দিতা। দেবীর জগদ্ধাত্রী মধ্যে রয়েছে পালিনী শক্তির উৎকর্ষতা এজন্য ভগবান বিষ্ণুর অস্ত্রের ন্যায় শঙ্খ-চক্র-শাঙ্গ-ধনু রূপ অস্ত্রগুলি দেবী করে বিদ্যমান।

এদিক দিয়ে দেখলে বলা যায় দেবী হলেন বৈষ্ণবী শক্তি। তার কন্ঠে নাগযজ্ঞ উপবীত যা ব্রহ্ম শক্তিরূপী কুণ্ডলিনীর প্রতীক।

কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিকে বলা হয় ‘দুর্গা নবমী’।এই দিন জগদ্ধাত্রী দুর্গায় নমঃ — এই মন্ত্রে দেবী জগদ্ধাত্রীকে পূজা করা হয়। তবে দেবী জগদ্ধাত্রী পূজা দেবী দুর্গার মত তিন দিনব্যাপী হয় না। একদিনেই তিনটি তিথির পূজা সম্পন্ন হয়। সকালে দেবী স্বাত্ত্বিক রূপে, মধ্যাহ্নে রাজসিক রূপে আর সন্ধ্যায় তামসীরূপে দেবী পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

মা জগদ্ধাত্রী দুর্গারই অন্য এক রূপ দুর্গা। যখন দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করতে চেয়েছিলেন তখন মহিষাসুর নানা রূপ পাল্টে মায়ের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। হঠাৎ মহিষাসুর করীন্দ্র নামে এক মত্ত হাতির রূপ ধরে মাকে আক্রমণ করতে চায়। মা দুর্গা বীরক্রমে এই হস্তী রূপকে বধ করলেন তখন মহিষাসুর আবার নিজের রূপ ধারণ করলে মা তাকেও বধ করে সমরে জয়লাভ করলেন। দেখা যায় মা জগদ্ধাত্রী হলেন সিংহ বাহনা এবং সিংহের নিচে হাতিটি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এই হাতি হল চঞ্চল মনের প্রতীক। আর সিংহ হলো জীবেচ্ছা ভাবকে যে মানুষ অতিক্রম করতে গিয়ে বলদর্পে সাধনা করে — সেই বীর সাধকের প্রতীক। মন করীকে অর্থাৎ মত্ত মনকে যে বশ করতে পারে, তারই হৃদয়ে মা জগদ্ধাত্রী অধিষ্ঠিত হন।

বাংলায় জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনা কাল প্রায় অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি। জগদ্ধাত্রী পূজার উৎপত্তির ইতিহাসে রাজনৈতিক নাটকীয়তা বর্তমান। কিংবদন্তি অনুসারে নদীয়া রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় বাংলায় জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনা করেন। বাংলার নবাব আলিবর্দি খাঁর রাজত্বকালে তিনি নদীয়ার রাজার কাছে বারো লক্ষ টাকা নজরানা দাবি করেন। সেই নজরানা দিতে অপারগ হলে কৃষ্ণচন্দ্র রায়কে বন্দী করে মুর্শিদাবাদে নিয়ে যান। সেই সময়টা নাকি দুর্গোৎসবের কাছাকাছি সময় ছিল। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র নবাবের কারাগারেই সেবারের মত দুর্গাপূজা কাটান। যখন কারাগার থেকে মুক্তি পান, সেদিন ছিলো দুর্গাপূজার শেষের সময়। নৌকা করে কৃষ্ণনগর ফেরার পথে রাজা বুঝলেন, সেই দিনটি বিজয়া দশমী। দূর্গা পুজোয় উপস্থিত থাকতে না পারায় রাজা অত্যন্ত বিষণ্ণ হয়ে পড়েন।

এই সময় স্বয়ং দেবী নাকি তাঁকে কার্তিক মাসের নবমী তিথিতে জগদ্ধাত্রী পূজা সম্পন্ন করার নির্দেশ দান করেন। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র স্বপ্নে দেবীকে যে মূর্তিতে দর্শন করেন, সেই মূর্তিকেই প্রতিষ্ঠা করে তিনি জগদ্ধাত্রী পূজার আয়োজন সম্পন্ন করেন। বলা হয়ে থাকে এই পূজার মাধ্যমেই বাংলায় জগদ্ধাত্রী পূজার সুচনা হয়।

মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র জগদ্ধাত্রী পূজা সম্পন্ন করলে তার বন্ধু চন্দননগরে ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীও জগদ্ধাত্রী পূজা সম্পন্ন করেন। আজও আমরা দেখি নদীয়া আর চন্দননগরে অতি সমারোহে জগদ্ধাত্রী পূজা পালিত হয়।।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার: স্বামী বেদানন্দ, পূর্বা সেনগুপ্ত এবং উইকিপিডিয়া।।


আপনার মতামত লিখুন :

2 responses to “জগতের ধারণকারিনী মা জগদ্ধাত্রী : রিঙ্কি সামন্ত”

  1. Pallab dey says:

    অতুলনীয় লেখনী

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন