বর্ষা এসে গেছে। এখনও ভাঙা হয়নি নদীর বোরো ধান চাষের বাঁধগুলি। বেশি বৃষ্টি হলেই নদীর দুকূল ছাপিয়ে ভাসাবে খানাকুল ও আরামবাগের বিস্তীর্ণ এলাকা।
উল্লেখ্য, গ্রীষ্মের শুরুতে — দেওয়া হয় বোরো বাঁধ। কারণ তখন — ডিভিসি জল ছাড়ে। ডিভিসির ছাড়া জল জমিয়েই চাষ করা হয় বোরো ধানের। কিন্তু বৃষ্টির শুরুতেই ওই বোরো বাঁধ ভেঙে দেওয়ার কথা। না হলে বর্ষার জল নদীর জলে মিশে তা দু’কূল ছাপিয়ে যাবে। প্লাবিত হবে দু’পাড়ের এলাকা। এ বার বর্ষা এসে গেলেও এখনও বোরো বাঁধ ভাঙা হয়নি। তাই আশঙ্কায় খানাকুলের পশ্চিমাঞ্চলের গ্রামগুলি। এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, বাঁকুড়ায় বেশি বৃষ্টি হলেই মুণ্ডেশ্বরী নদী ও দ্বারকেশ্বরের নদ ফুলে ওঠে। আর সেই জল এই বোরো বাঁধে আটকে গেলেই দু’কূল ভেসে যাবে। তাতে বাড়ি-ঘর ভাসবে। নষ্ট হবে খেতের ফসল। এই নিয়ে চিন্তায় এলাকার পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতের কুড়িটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ ।
প্রত্যেক বছর গরমের সময়ে খানাকুলে দ্বারকেশ্বর নদে ও মুণ্ডেশ্বরী নদীতে বোরো বাঁধ দেওয়া হয়। ডিভিসি এই সময় জল ছাড়ে। নদীগর্ভে বালি, শাল-বল্লা দিয়ে শক্ত বাঁধ দেওয়া হয় যাতে জল ধরে রাখা যায়। ওই জলেই এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের চাষিরা বোরো ধান চাষ করেন। খানাকুলের মুন্ডেশ্বরী নদী ও দ্বারকেশ্বর নদে এই জল আসে। বর্ষার আগেই ওই বাঁধ ভেঙে দেওয়া হয়। কিন্তু এ বার তা ভাঙা হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ব্লক প্রশাসনের বাঁধ ভাঙার কোনও উদ্যোগই নেই। খানাকুল ১ ব্লকের অধীনে পাঁচটি বাঁধ রয়েছে। পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মানুষ ওই জল দিয়ে বোরো ধান চাষ করেন। শুধু তাই নয় চাষ হয় সব্জিও। এলাকাবাসীর দাবি, নদীর জল বেড়ে গেলেই বিপদ হবে। জল ছাপিয়ে প্লাবিত হবে গ্রামগুলি। অতীতে এমন ঘটনা ঘটেছে বলেই তাঁরা আতঙ্কে রয়েছেন। চাষের ফসল নষ্ট হয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন চাষিরা। এ বারও যদি তেমন হয়, তবে ঘোষপুর গ্রাম পঞ্চায়েত, ঠাকুরানি চক, কিশোরপুর ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েত-সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এখানকার ময়াল, বন্দিপুর, ইছাপুর, গুজরাট, রঘুনাথপুর, তালিত, ঘাসুয়া, মহিসগোট, কিশোরপুর, ঘাসুয়া- সহ একাধিক গ্রাম ভেসে যাবে বলে আশঙ্কায় বাসিন্দারা। তাঁরা বোরো বাঁধ ভেঙে দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছেন। খানাকুল ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শম্পা মাইতি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে বিডিওর সঙ্গে আলোচনা করছি। যথাশীঘ্র বাঁধ ভেঙে দেওয়া হবে। এটা ঠিক যে সময় পার হয়ে গিয়েছে। আসলে ওখানে রথ হয়। আর এই রথ ওই বাঁধ দিয়েই আনা হয়। রথের পরেই এই বাঁধ ভাঙা হবে।’ খানাকুল ১ ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘আমরা খোঁজ নিচ্ছি। এরকম বেশ কয়েকটা বাঁধ আছে। আমরা খুব তাড়াতাড়ি বাঁধগুলি ভেঙে দেব।’