মঙ্গলবার | ১৪ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:৪৬
Logo
এই মুহূর্তে ::
বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (নবম পর্ব) : আবদুশ শাকুর সপ্তাহে একদিন উপবাস করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো : অনুপম পাল অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত’র ভাষা : ড. হান্স্ হার্ডার সবগুলো গল্পেই বিজয়ার নিজস্ব সিগনেচার স্টাইলের ছাপ রয়েছে : ড. শ্যামলী কর ভাওয়াল কচুর কচকচানি : রিঙ্কি সামন্ত বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (অষ্টম পর্ব) : আবদুশ শাকুর রামলোচন ঠাকুরের উইল ও দ্বারকানাথের ধনপ্রাপ্তি : অসিত দাস বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (সপ্তম পর্ব) : আবদুশ শাকুর যে শিক্ষকের অভাবে ‘বিবেক’ জাগ্রত হয় না : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ভিয়েতনামের গল্প (সপ্তম পর্ব) : বিজয়া দেব বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (ষষ্ঠ পর্ব) : আবদুশ শাকুর দিল্লি বিধানসভা ভোটেই নিশ্চিত হচ্ছে বিজেপি বিরোধি জোটের ভাঙন : তপন মল্লিক চৌধুরী দ্বারকানাথ ঠাকুরের গানের চর্চা : অসিত দাস মমতা বললেন, এইচএমপি ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে দুষ্টচক্র হু জানাল চিন্তা নেই : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (পঞ্চম পর্ব) : আবদুশ শাকুর পৌষ পুত্রদা একাদশী : রিঙ্কি সামন্ত বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (চতুর্থ পর্ব) : আবদুশ শাকুর জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির দুর্গাপূজায় কবিগান ও যাত্রার আসর : অসিত দাস সসীমকুমার বাড়ৈ-এর ছোটগল্প ‘ঋতুমতী হওয়ার প্রার্থনা’ সামাজিক মনস্তত্ত্বের প্রতিফলনে সিনেমা : সায়র ব্যানার্জী নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘সুও দুও ভাসে’ বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (তৃতীয় পর্ব) : আবদুশ শাকুর ভিয়েতনামের গল্প (ষষ্ঠ পর্ব) : বিজয়া দেব নীলমণি ঠাকুরের মেছুয়া-যাত্রা, একটি ঐতিহাসিক পুনর্নির্মাণ : অসিত দাস বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (দ্বিতীয় পর্ব) : আবদুশ শাকুর কাদের প্রশ্রয়ে বাংলাদেশের জঙ্গিরা বাংলার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলেছে : তপন মল্লিক চৌধুরী রবীন্দ্রসাহিত্যে কবিয়াল ও কবির লড়াই : অসিত দাস নকল দাঁতের আসল গল্প : রিঙ্কি সামন্ত বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (প্রথম পর্ব) : আবদুশ শাকুর মুর্শিদাবাদের কৃষি ঐতিহ্য : অনুপম পাল
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই পৌষ পার্বণ ও মকর সংক্রান্তির শুভেচ্ছা আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

শংকরের ‘চৌরঙ্গী’ : অভিজাত শ্রেণীর নরনারীর কেচ্ছাকাহিনীর দলিল মনোজিৎকুমার দাস

মনোজিৎকুমার দাস / ২৭৯ জন পড়েছেন
আপডেট সোমবার, ৫ জুলাই, ২০২১

কলকাতার প্রাণকেন্দ্র এসপ্ল্যানেড বা চৌরঙ্গী। আর শংকর এখানকার এক হোটেলকে কেন্দ্র করে রচনা করেছেন সুবৃহৎ উপন্যাস চৌরঙ্গী। চৌরঙ্গী উপন্যাসের স্রষ্টা শংকর, যার পুরোনাম মণিশংকর মুখোপাধ্যায়। কিন্তু চৌরঙ্গী, আশা-আকাঙ্ক্ষা ও কথামন্থন-সহ বহু জনপ্রিয় উপন্যাসের স্রষ্টা পশ্চিমবঙ্গের এই লেখক পাঠকমহলে কেবল শংকর নামেই পরিচিত। ১৯৩৩ সালের ৭ ডিসেম্বর যশোরের বনগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। আইনজীবী বাবা হরিপদ মুখোপাধ্যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগেই চলে যান কলকাতার ওপারে হাওড়ায়। সেখানেই শংকরের বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা ও সাহিত্য সাধনার শুরু। জীবনের শুরুতে কখনো ফেরিওয়ালা, টাইপরাইটার ক্লিনার, কখনো প্রাইভেট টিউশনি, কখনো শিক্ষকতা অথবা জুট ব্রোকারের কনিষ্ঠ কেরানিগিরি করেছেন। এক ইংরেজের অনুপ্রেরণায় শুরু করেন লেখালেখি। আগেই বলা হয়েছে ‘চৌরঙ্গী’ লেখক শংকরের জনপ্রিয় একটি উপন্যাস। এটি ১৯৬২ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। উপন্যাসটি এতটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করে যে ভারতীয় বিভিন্ন ভাষার পাশাপাশি বিদেশি বিভিন্ন ভাষায়ও তা অনূদিত হয়। উপন্যাসটির শতাধিক সংস্করণ চলছে। এ থেকেই পাঠকমহলে শংকরের জনপ্রিয়তার প্রমাণ মেলে। এ উপন্যাসের কতটি পুনঃমুদ্রণ যে হয়েছে তা শুনলে পাঠকরা সত্যিই অবাক হয়ে যাবেন। সত্যজিৎ রায় তাঁর কাহিনী অবলম্বনে নির্মাণ করেছেন জন অরণ্য ও সীমাবদ্ধ এর মতো চলচ্চিত্র। শংকরের বিখ্যাত উপন্যাস চৌরঙ্গী নিয়েও তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্র। স্টার থিয়েটারে চৌরঙ্গী থিয়েটার হিসাবে কত শত রজনী অভিনীত হয়েছে তা বলে শেষ করার নয়।

চৌরঙ্গীকে বাংলা সাহিত্যের একটি ধ্রুপদী উপন্যাস মনে করা হয়। অরুণাভ সিনহা উপন্যাসটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। সেটি ২০০৭ সালে ভোডাফোন ক্রসওয়ার্ড বুক প্রাইজ জয় করে। এছাড়া ২০১০ সালে উপন্যাসটি ইন্ডিপেনডেন্ট ফরেন ফিকশন প্রাইজও জয় করে।

চৌরঙ্গী চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন পিনাকি ভূষণ মুখোপাধ্যায়। ১৯৬৮ সালে মুক্তি পায় এই ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্র। স্বয়ং উত্তম কুমার অভিনয় করেছে এই চলচ্চিত্রে। চৌরঙ্গী উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র স্যাটা বোসের চরিত্রে অভিনয় করেন মহানায়ক। এছাড়াও চলচ্চিত্রের অন্যান্য মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন অঞ্জনা ভৌমিক, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।

‘চৌরঙ্গী’ উপন্যাসটি অনেকটা লেখকের নিজের জীবনের একটি অধ্যায়ের কাহিনী। লেখকের জীবন যে কম বৈচিত্র্যময় নয় তা তাঁর ভ্রমণ কাহিনীগুলো পড়লেই বোঝা যায়। সেই লেখক বালক বয়সে কলকাতায় হাইকোর্ট দেখতে এসে কলকাতাতেই থিতু হন, যার উল্লেখ আছে লেখকের ’কত অজানারে’ বইতে।

অল্প বয়সেই বাবার মৃত্যুর পর অন্ন সংস্থানের আশায় লেখককে পৃথিবীর পথে নেমে পড়তে হয়েছিল। তারপর তো কত কিছুই করেছেন ক্ষুধা মেটাতে; কখনও প্রাইভেট টিউশনি, কখনও পাটের দালালের কেরানী, কখনও কোর্টের ব্যারিস্টারের বাবুগীরি, নয়তো বা ক্লিনারের কাজ। কলকাতায় এসে সায়েব ব্যারিস্টারের কাছে চাকরি পেয়েছিলেন তিনি। আনন্দেই কাটছিলো দিনগুলো। হঠাৎই ছন্দপতন ঘটে গেলো। লেখকের আশ্রয়দাতা ব্যারিস্টার সায়েব মারা গেলেন। লেখক পড়লেন অকুলপাথারে। বিশাল কলকাতা-সমুদ্রে লেখক হাবুডুবু খেতে লাগলেন। একটা চাকরির জন্য তিনি দ্বারে দ্বারে ঘুরতে লাগলেন। শেষমেশ, জীবিকার তাগিদে সেলসম্যান হলেন, ঝুড়ি বিক্রি করা শুরু করলেন। অফিসে অফিসে গিয়ে ময়লা কাগজ ফেলার তারের ঝুড়ি বিক্রি। প্রতি ঝুড়ির দাম এক টাকা, আর তাতে তার কমিশন চার আনা।

“ … ঝুড়ি হাতে আপিসে আপিসে ঘুরেছি আর বাবুদের টেবিলের তলায় তাকিয়েছি। অনেকে সন্দিগ্ধভাবে জিজ্ঞেস করেছেন, ‘ওখানে কি দেখছো?’

বলেছি, ‘আজ্ঞে আপনার ছেঁড়া কাগজ ফেলবার ঝুড়িটা’।

সেটা জরাজীর্ণ দেখলে কি আনন্দই যে হয়েছে! বলেছি, ‘আপনার ঝুড়িটার আর কিছুই নেই। একটা নতুন নিন না, স্যর।’

বড়বাবু ঝুড়িটার দিকে দৃষ্টিপাত করে বলেছেন, ‘কন্ডিশন তো বেশ ভালোই রয়েছে। এখনও হেসে–খেলে বছরখানেক চলে যাবে।’

বড়বাবুর মুখের দিকে করুণভাবে তাকিয়ে থেকেছি। কিন্তু আমার মনের কথা তিনি বুঝতে পারেননি। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয়েছে, ‘ঝুড়িটার না হয় হেসে–খেলে আরও বছরখানেক চলে যাবে। কিন্তু আমার? আমার যে আর একদিনও চলতে চাইছে না।”

জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা এসে যাওয়ার মতো জীবন সংগ্রামে লেখক যখন ক্লান্ত, তখন হঠাৎ উদয় হলেন বায়রন সাহেব। একদিন ঝুড়ি বিক্রি করে ক্লান্ত হয়ে চৌরঙ্গীর কার্জন পার্কে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তিনি। হঠাৎ করেই লেখকের সাথে তাঁর অতি পরিচিত বায়রন সাহেবের সাক্ষাৎ। বায়রন সাহেবের অনুরোধে ‘শাজাহান’ হোটেলের ম্যানেজার লেখককে হোটেলে চাকরি দেন। নেহায়েত কপাল জোরে অবশেষে পেলেন অভিজাত হোটেল শাজাহানের রিসেপশনে চাকরি। তারপর কাউন্টারের এপাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন নানা দেশের, নানা রঙের মানুষদের; আরও একবার জানলেন কত অদ্ভুত হয় মানুষের জীবন। চৌরঙ্গী সেসব অসামান্য গল্পেরই বর্ণনা। চৌরঙ্গী হোটেল ম্যানেজার মার্কো পোলো সাহেবের গল্প, যিনি হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়ান তার প্রিয়জনকে; কেবলই তাকে আরেকবার হারিয়ে ফেলার জন্য, কিন্তু খুঁজে পান না। আছেন সহকর্মী অসাধারণ এক মানুষ সত্যসুন্দর বোস, যার নামও এখন বদলে গেছে মি. স্যাটা বোসে। তিনি যেন নেপথ্যের কোলাহলই কেবল, সবখানেই আছেন, আবার কোনোখানেই নেই।

চৌরঙ্গী গ্রিক ভাস্কর্যের মতো অপরূপ সৌন্দর্যের মানুষ ড. সাদারল্যান্ডেরও গল্প। জীবন সমুদ্রে পথ হারিয়ে অন্যদের পথ দেখিয়ে বেড়ানো এক দিকশূন্য নাবিক তিনি।

এক নম্বর স্যুইটে কোনো কোনো রাতে কালো চশমা চোখে এসে ওঠেন মধ্যবয়সী মিসেস পাকড়াশি, সমাজসেবী আর গুণী স্ত্রী হিসেবে যার জুড়ি মেলা ভার। তিনি আসার কিছুক্ষণ পর এসে হাজির হয় এক ইংরেজ যুবক, যার নাম রবার্টসন। দুই নাম্বার স্যুইটে স্থায়ীভাবে থাকেন করবী গুহ, যিনি প্রতি রাতে একবার মারা যান, আবার বেঁচে ওঠেন সকালে।

একদিন সুদূর স্পেন থেকে ধনী মাতালদের বিনোদন দিতে উড়ে আসে নর্তকী কনি, দ্য উইমেন। অর্থের জন্য আলো আঁধারিতে সর্বাঙ্গে বেলুন পরে তাকে ঘুরে বেড়াতে হয় সমাজের নামকরা মানুষদের সামনে। মদ্যপ মানুষের হাতের খোঁচায় একে একে কমে আসে তার শরীরের বাস, আর তা দেখে রাগে উন্মাদ হয়ে ওঠে কনির বামন সঙ্গী ল্যামব্রেটা। তার সাথে কনির সম্পর্ক কী তা কেউ জানে না। ওদিকে বেয়ারা গুড়বেড়িয়া স্বপ্ন দেখে সে বিয়ে করবে শাজাহানের দামি এক কেক দিয়ে। ব্যান্ড দলের সামান্য আয়ের প্রধান গোমেজ স্বপ্ন দেখে মোজার্ট, বিথোফেনদের মতো কেউ হওয়ার। ধুমকেতুর মতো এসে হাজির হন সুজাতাদি, বোসদাকে তিনি নতুন করে বাঁচতে বলেন। মুক্তির ডাক একদিন আসে বন্দিনী করবী গুহুর জীবনেও। কী হয় তাদের?

আছেন বুড়ো হবস, সরাবজি, রোজি, উইলিয়ম, লিজা সহ আরও অনেকে; প্রত্যেকে তাদের জীবনের নানা গল্প নিয়ে। চৌরঙ্গী উপন্যাস যেন বাস্তবের কলকাতার ব্যস্ত রাজপথ চৌরঙ্গীর মতোই এক জায়গা, যেখানে এসে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে মানুষের হাসি, কান্না, ভালোবাসা, পাওয়ার আনন্দ আর হারানোর বেদনার গল্প, মানুষের গল্প। যে গল্পের শেষ নেই।

বইটিকে শুধু উপন্যাস বললে ভুল হবে, গভীর জীবনবোধের আশ্চর্য দলিল এই বইটি। এতে বহু লাইন আছে যেগুলো পাঠককে গভীরভাবে ভাবাবে, কাঁদাবে, হাসাবে, জীবনকে নতুন করে চিনতে সেখাবে। যারা জীবন সংগ্রামে ক্লান্ত, তাদের নতুন আশার আলো দেখাবে চৌরঙ্গী। সত্যসুন্দর বোসের চোখ দিয়ে শংকর দেখেছেন চৌরঙ্গী হোটেলে আস্থানা গাড়া নরনারীর কত রকমের কেচ্ছা কাহিনী। ৮৭ বছর শংকরের মত বড়মাপের লেখক অ্যাকাডেমী পুরস্কার পেলেন এটা সুখের খবর।

মনোজিৎকুমার দাস, মাগুরা, বাংলাদেশ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন