মঙ্গলবার | ২২শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৪:১৪
Logo
এই মুহূর্তে ::
নববর্ষের সাদর সম্ভাষণ : শিবরাম চক্রবর্তী নববর্ষ গ্রাম থেকে নগরে : শিহাব শাহরিয়ার ফিরে আসছে কলের গান : ফজলুল কবির সিন্ধুসভ্যতার ফলকে খোদিত ইউনিকর্ন আসলে একশৃঙ্গ হরিণ : অসিত দাস একটু রসুন, রসুনের কথা শুনুন : রিঙ্কি সামন্ত ১২ বছর পর আরামবাগে শোলার মালা পরিয়ে বন্ধুত্বের সয়লা উৎসব জমজমাট : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কোনিয়াকদের সঙ্গে দু’দিন : নন্দিনী অধিকারী স্বচ্ছ মসলিনের অধরা ব্যুৎপত্তি : অসিত দাস বাড়বে গরম, চোখের নানান সমস্যা থেকে সাবধান : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী আঠালো মাটি ফুঁড়ে জন্মানো শৈশব : আনন্দগোপাল হালদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত ওয়াকফ হিংসার জের কি মুর্শিদাবাদেই থেমে গিয়েছে : তপন মল্লিক চৌধুরী এক বাগদি মেয়ের লড়াই : দিলীপ মজুমদার এই সেনসরশিপের পিছনে কি মতাদর্শ থাকতে পারে : কল্পনা পাণ্ডে শিব কম্যুনিস্ট, বিষ্ণু ক্যাপিটেলিস্ট : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ‘গায়ন’ থেকেই গাজন শব্দের সৃষ্টি : অসিত দাস কালাপুষ্প : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু হোক বাঙালি-অস্মিতার প্রচারযাত্রা : দিলীপ মজুমদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত পেজফোর-এর নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩২ প্রকাশিত হল সিন্ধিভাষায় দ্রাবিড় শব্দের ব্যবহার : অসিত দাস সিন্ধুসভ্যতার জীবজগতের গতিপ্রকৃতির মোটিফ : অসিত দাস হনুমান জয়ন্তীতে নিবেদন করুন ভগবানের প্রিয় নৈবেদ্য : রিঙ্কি সামন্ত গল্প লেখার গল্প : হাসান আজিজুল হক ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (শেষ পর্ব) : জমিল সৈয়দ চড়কপূজা কি আসলে ছিল চণ্ডকপূজা : অসিত দাস অরুণাচলের আপাতিনি : নন্দিনী অধিকারী ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (সপ্তম পর্ব) : জমিল সৈয়দ শাহরিয়ার কবিরকে মুক্তি দিন : লুৎফর রহমান রিটন ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (ষষ্ঠ পর্ব) : জমিল সৈয়দ
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এর আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

পলকে গোল, মোহনবাগানের জিৎ, ইডেনের বাদশা আকবর : অজয় বসু

অজয় বসু / ১৭৭ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

মোহনবাগান – ১ (আকবর) : ইস্টবেঙ্গল – ০

শুরুতেই সারা। খেলা আরম্ভের আধ মিনিটের মধ্যেই একটি গোল করে মোহনবাগান। গত ছ’বছরের লীগ চ্যাম্পিয়ন ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে এবারের লীগ জয়ের লক্ষ্যে প্রায় নিশ্চিতভাবে এগিয়ে গেছে। ওই একটি গোল সোনার দামে বিকোবার মতো দুর্লভ সামগ্রী। ওই গোলেই পালের হাওয়া উলটো দিকে বইতে শুরু করেছে। কলকাতা মাঠে ইস্টবেঙ্গলের সংশয়াতীত প্রাধান্য নষ্ট হয়েছে এবং গত ছ’টি মরশুমের আত্মবিস্মরণের কাল পেরিয়ে মোহনবাগান আবার নিজের প্রত্যয়ে নিজেকে ফিরে পেয়েছে। ছ’ বছরের গ্লানি ও হতাশার অন্ধকার ডিঙিয়ে আলোর রাজ্যে প্রবেশ করায় ওই গোল যে মোহনবাগানকে কতোখানি সহায়তা করেছে, তার পরিমাপ পাওয়া কঠিন। বলতে পারি, এক গোলেই মোহনবাগান কলকাতার ফুটবল মাঠে নিশ্চিত পুনরুভ্যুত্থানের পাথেয় সঞ্চয় করে নিতে পেরেছে।

আর গোলটিই বা কী অসাধারণ ! যেমন তার মহিমা, তেমনি বাহার। যেন কেতাবের পাতা থেকে তুলে এনে কলকাতার দর্শকদের দৃষ্টির সামনে সেটিকে ধরা হল। এ যেন স্বপ্নে দেখা কোনো ঝলমলে দৃষ্টান্ত। সে স্বপ্ন কদাচিৎই দেখা দেয়। খেলা আরম্ভের সঙ্গে সংঙ্গে সঙ্গে সেন্টার থেকে বল পেয়ে প্রসূন তা বাড়িয়ে দিলেন অরক্ষিত ও ছুটন্ত উলগার সামনে। উলগাও আর দেরি করেননি। চোখের পলকে ব্যাক সেন্টারে বল জুগিয়ে দিতেই আকবর উড়ন্ত চিলের মতো ছোঁ মেরে হেড করে বলটি পাঠিয়ে দিলেন জালের মধ্যে। সব মিলিয়ে ঘটনা ঘটে যেতে মাত্র সতেরো সেকেন্ড সময় নিয়েছিল। এই অবকাশে মোহনবাগানের চারজন ছাড়া আর কেউ বল স্পর্শ করতে পারেনি। ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়েরা তখনও যে যাঁর জায়গায় নিজেদের দাঁড় করাতে পারেননি। তার আগেই এই গোল। গোল! দু’ অক্ষরে সীমান্নিত এই শব্দটি ব্যাপ্তিতে যে কতোখানি তা নিশ্চয়ই বলে বোঝাবার তোয়াক্কা রাখে না।

এতো তাড়াতাড়ি যে এতো বড় একটি কান্ড ঘটে যাবে ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়রা তার ঠাওর পাননি। অনবধানতার দায় তাঁদের ছিল। তবু তাঁদের দোষ দেবো না; যেহেতু আগেই বলেছি, একেবারে নিখুঁত পদ্ধতি অনুসরণে মোহনবাগান পুরোপুরি কেতাবী ঢঙে এই গোল বানিয়েছে। কোনো কোনো সময়ে কোনো কোনো খেলোয়াড় অধিকতর প্রকরণ বিদ্যার প্রকাশকালে একেবারে নিখুঁতত্বে পৌঁছে যে যান তারই প্রমাণ এই গোলের নজির। তরুণ অনেক আগে গোল ছেড়ে বেরিয়ে উলগার সেন্টারটি রুখতে পারতেন অথবা শ্যামল তাৎক্ষণিক তৎপরতার টানে আকবরের গা ছুঁয়ে দাঁড়াতে পারতেন – এই সব কথা যদি বলা হয়, তাহলে সেগুলিকে আমি তর্ক ও গপ্পো বলেই উড়িয়ে দিতে দ্বিধা করবো না। আমার বিচারে সঠিকভাবে যে সব কাজ চোখের পলকে করা গেলে বিপক্ষের প্রতিরোধ ফালাফালা করে দেওয়া যায়, উলগা ও আকবর নিষ্ঠাভরে সেই সব কাজ করে বিপক্ষকে ঠকিয়ে দিয়েছিলেন। এমন গোল সচারচর দেখা যায় না- যা দেখে চোখের সুখ। মনের তৃপ্তি। খেলায় হারজিৎ আছে। হারে দুঃখ ও জিতে আনন্দ পাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু ফুটবল মাঠে সমঝদারদের, শত্রুমিত্রনির্বিশেষে সকল পক্ষকে যে- গোল আনন্দ দিতে পারে এই গোল তেমনই ঐশ্বর্য।

মিনিট ছয়েক পরে হাবিবের থেকে কাছ থেকে উলগা আবার একবার ফাঁকায় বল পেয়ে জোরালো সটে বার কাঁপিয়ে দিতেই ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণভাগে থরহরি কাঁপনও দেখা দিয়েছিল। কিন্তু অবস্থাটি সামলে নিতে ইস্টবেঙ্গল দেরি করেনি। গোলের চমক ও উলগার ওই সটের ‘শক’ মন থেকে ঝেড়ে ফেলে ইস্টবেঙ্গল যখন স্বমূর্তিতে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে ফিরে আসে, তখন যেন জুজুবুড়োর ভূতটি মোহনবাগানকেই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। তখন শুধু আত্মরক্ষণেরই তাগিদ। পালটা আক্রমণ গড়ার কথা বিস্মৃতপ্রায়। এই লগ্নের সুব্রতর (প্রথমার্ধে) এবং প্রদীপের (দ্বিতীয়ার্ধে) অনমনীয়তার কাছে ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণাত্মক প্রয়াসকে বারেবারে নতি স্বীকার করতে হয়। তাঁরা জনে জনে বহুজনের দায়িত্ব পালন করেছেন। সুব্রতর প্রয়াস ছিল সদার্থক। অনুপাতে অনুপাতে প্রদীপকে নঙার্থক মনোভাব আঁকড়ে ধরতে দেখা গেলেও, কাজের কাজ করে তুলতে তার ঠিকের কোনো ভুল হয়নি। তবু দ্বিতীয় পর্বের প্রথম কুড়ি মিনিটের মধ্যে কেষ্ট মিত্র দু দুবার গোল পরিশোধের অবাধ সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু কোনোটাই তিনি কাজে লাগাতে পারেননি। বেচারি কেষ্ট! খেটেখুটে, বুদ্ধি খাটিয়ে সারাক্ষণ তিনি তিন সহযোগী ফরোয়ার্ডকে টেক্কা দিলেও চরম পরীক্ষার লগ্নে পাশ নম্বর পেলেন না। অথচ ফরোয়ার্ড লাইনের বাকি কজনের, বিশেষতঃ সুরজিৎ ও শ্যাম থাপার অনুপাতে তার নামডাক কমই। গৌতম সাধ্যমতো চেষ্টা করেও তাঁর দলের ফরোয়ার্ড লাইনকে সচল করে তুলতে পারেননি। তাঁর পাশে প্রশান্তও ছিলেন মানানসই। কিন্তু সুধীর, সুরজিৎ ও শ্যাম থাপা যারা দলের পরম ভরসা হিসাবে তাঁরা কিন্তু শনিবার নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। (সুরজিতও গোল পরিশোধের একবার সুযোগ পেয়েছিলেন।) পক্ষান্তরে সমরেশ ও প্রসূন মধ্যে মধ্যে দপ করে জ্বলে উঠলেও অন্যান্য দিনের অনুপাতে বুঝি কিছুটা নিষ্প্রভ ছিলেন। আর আকবর কেমন খেলেছেন? তিনি তো এক মুহূর্তের চকিত সূক্ষ্ম কাজের অলংকরণে নিজেকে বাদশার সিংহাসনে চড়িয়েছেন।

কিন্তু কে ভাল খেললেন এবং কে পারলেন না, এসব কথা নিরর্থক। ভরা বর্ষায় ইডেনের অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ফুটবলের পক্ষে অনুপযুক্ত। চটচটে কাদায় সর্বাঙ্গ মাখামাখি করে নিঃশেষ হতে চেয়েও অনেকে আশানুরূপ খেলতে পারেন নি। পারা সম্ভব ছিল না বলেই। এই পঙ্ককুন্ডে তলিয়ে গিয়ে কেউ যদি আত্মবিলুপ্তি ঘোষণাও করে থাকেন তাহলেও তাকে দুষতে আমার বিবেকে বাধে। বরং বলতে পারি যে সত্তর মিনিট ধরে স্নায়ু ও বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে যোঝবার মতো ইস্পাত কঠিন মন ও শারীরিক সঙ্গতি যে তাঁরা যোগাড়ে আনতে পেরেছিলেন, তার জন্যেই তাঁদের সকলকে সাবাস জানাই।

এক গোলে এগিয়ে থাকার পর মোহনবাগান হঠাৎ নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে আত্মরক্ষণে পরিপাটি হতে চেয়েছিল। ফলে ইস্টবেঙ্গল উত্তরপর্বে জাঁকিয়ে খেলার বাড়তি সুবিধা পেয়ে ছোট ছোট পাসে ছক বাঁধা পথ পরিক্রমণে প্রয়াস পায় এবং সেই প্রয়াসের পরিণামে উত্তরপর্বের খেলায় তাঁদের প্রভাবও ছড়িয়ে দেয়। জানি না, এক গোলে আগুয়ান মোহনবাগান হঠাৎ ক্রীড়ারীতির রূপান্তর ঘটালো কেন? রীতি পরিবর্তনের ফলে মোহনবাগানের ওপর বিপক্ষের চাপ ফাঁসের মতো চেপে বসতে চলেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত যে মোহনবাগান এই চালেই বাজীমাৎ করতে পেরেছে সে ঘটনাও অস্বীকৃত থাকার নয়। কথায় বলে, তার সব ভালো যার শেষ ভালো। শেষ প্রহর কৃতিত্ব ও সাফল্যের সঙ্গে উৎরে যেতে পেরেছে বলেই মোহনবাগানের এই পরিকল্পনা হয়তো সাধুবাদ অর্জন করেছে। পরিকল্পনা যেমনই হোক না কেন, খেলায় যে জিৎ হয়েছে সেইটিইতো বড় কথা। এই জিতের মূল্য যে কী অসামান্য তা ক্রীড়ামোদী মাত্রেই অনুধাবন করতে পারেন।

যেমন আশা করা গিয়েছিল তাই ঘটেছে। শনিবারের ফুটবলের মান সার্বিক মূল্যায়নে কখনোই উচ্চস্তরে ওঠেনি। তবে তার জন্যে দায়ী খেলোয়াড়েরা নন। দায়-দায়িত্ব সবই ইডেনের পঙ্ককুন্ডের। বর্ষায় ক্রিকেট উদ্যানে জাত ফুটবলের ফসল ফলানো সত্যিই অসম্ভব। তবে ভালয় ভালয় খেলাটি শেষ হয়ে যাওয়াতে সারা কলকাতার নিশ্চয়ই ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়েছে। রেষারেষির খেলা, মর্যাদার লড়াই ঘিরে মহানগরীর অনেক দুশ্চিন্তা ছিল। সেই দুশ্চিন্তা নিরসনে সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষই যে নির্দ্বিধায় সহযোগিতা করেছেন তা মুক্তকন্ঠে স্বীকার করতে হবে। মাঠ ও তার বাইরে বোধকরি লক্ষাধিক জনসমাগম হয়েছিল। কিন্তু অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি বললেই চলে। দু-একটি ছোটখাটো ঘটনা ঘটলেও তার প্রভাব অন্যত্র ছড়াতে পারেনি।

মোহনবাগান : প্রশান্ত মিত্র, কম্পটন দত্ত, সুব্রত ভট্টাচার্য, প্রদীপ চৌধুরী, প্রদীপ চৌধুরী ও দিলীপ সরকার, সমরেশ চৌধুরী ও প্রসূন ব্যানার্জি; সুভাষ ভৌমিক (জহর দাস), আকবর ও হাবিব ও উলগানাথন।

ইস্টবেঙ্গল : তরুণ বসু, সুধীর কর্মকার, অশোক ব্যানার্জি, শ্যামল ঘোষ ও শ্যামল ব্যানার্জি, প্রশান্ত ব্যানার্জি ও গৌতম সরকার, সুরজিত সেনগুপ্ত, রণজিৎ মুখার্জি, শ্যাম থাপা ও কেষ্ট মিত্র।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন