এবার কলকাতা বইমেলায় নবজাতক প্রকাশনের স্টলে একটা বই চোখে পড়ল। ‘মার্কসবাদের বিশ্বভ্রমণ’। অদ্ভুত নাম। মার্কস একজন মানুষ, তিনি বিশ্বভ্রমণ করতে পারেন। কিন্তু মার্কসবাদ কিভাবে বিশ্বভ্রমণ করবে? ভেতরের পাতা উল্টে লেখকের ‘নিবেদন’ পড়ে ব্যাপারটা বোঝা গেল। মার্কসের মতবাদ কিভাবে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে, তার দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে চেয়েছেন লেখক।
সেই বক্তব্য স্পষ্ট করার জন্য প্রথম অধ্যায়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘কার্ল মার্কসের মৃত্যু ও মৃত্যুহীনতা’। মানুষ অমর নয়, তাই কালের নিয়মে একদিন মৃত্যু হয়েছে মার্কসের। কিন্তু মহাদেব যেমন পঞ্চশরকে দগ্ধ করে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, তেমনি মার্কসবাদও বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে।
পরবর্তী চারটি অধ্যায়ে লেখক মার্কবাদের বিশ্বব্যাপ্তির দলিল তুলে ধরেছেন। দ্বিতীয় অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সেইসব মানুষের কথা যাঁরা মার্কসবাদের চর্চা করেছেন এবং করে চলেছেন। তৃতীয় দেশে দেওয়া হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কমিউনিস্ট ও সমমনোভাবাপন্ন দল গঠনের কথা। চতুর্থ অধ্যায়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কমিউনিস্ট ও সমমনোভাবাপন্ন প্রশাসকের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেবার চেষ্টা করেছেন লেখক। পঞ্চম অধ্যায়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ১৯১৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত মার্কসবাদী চিন্তার প্রসার ও আন্দোলনের কালপঞ্জি দেওয়া হয়েছে।
শেষ অধ্যায়ে কার্ল মার্কস, ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস, ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন, জোসেফ স্তালিন, মাও-জে-দঙের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে। এলোমেলো উদ্ধৃতি নয়, উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে বিষয়ানুযায়ী। যেমন : দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ, ঐতিহাসিক বস্তুবাদ, প্রলেতারিয়েত, বুর্জোয়া, মজুরি-শ্রম-পুঁজি, সাম্যবাদ, ধর্ম, ভারতবর্ষ, পরিবার-বিবাহ-ব্যক্তিগত সম্পদ, রাষ্ট্র, শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি। উদ্ধৃতিগুলির উৎসও নির্দেশিত হয়েছে।
শুধু কমিউনিস্ট কর্মী নয়, ইতিহাসমনস্ক মানুষ ও সমাজবিজ্ঞানের ছাত্রদের কাছে এই বইটি খুব দরকারি যে হবে, তা বলা বাহুল্য।