শুক্রবার | ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১১:৩৯
Logo
এই মুহূর্তে ::
বাংলাভাষার নেচিতে ‘ময়ান’ ও ‘শাহিস্নান’-এর হিড়িক : অসিত দাস একটু একটু করে মারা যাচ্ছে বাংলা ভাষা : দিলীপ মজুমদার রাজ্যে এই প্রথম হিমঘরগুলিতে প্রান্তিক চাষিরা ৩০ শতাংশ আলু রাখতে পারবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সামরিক জান্তার চার বছর — মিয়ানমার পরিস্থিতি : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ১৯ ফেব্রুয়ারি ও স্বামীজির স্মৃতিবিজড়িত আলমবাজার মঠ (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত চাষিদের বাঁচাতে রাজ্যের সরাসরি ফসল কেনার দাওয়াই গ্রামীণ অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (সপ্তম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার মোদীর মিডিয়া ব্যস্ত কুম্ভের মৃত্যুমিছিল ঢাকতে : তপন মল্লিক চৌধুরী রেডিওকে আরো শ্রুতিমধুর করে তুলেছিলো আমিন সায়ানী : রিঙ্কি সামন্ত গোপাল ভাঁড়ের আসল বাড়ি চুঁচুড়ার সুগন্ধ্যায় : অসিত দাস প্রতুলদার মৃত্যু বাংলা গানের জগতে অপূরণীয় ক্ষতি — মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় : সুমিত ভট্টাচার্য মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র ও গোপাল ভাঁড়, মিথ এবং ডিকনস্ট্রাকশন : অসিত দাস মহাকুম্ভ ও কয়েকটি প্রশ্ন : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ভিয়েতনামের গল্প (শেষ পর্ব) : বিজয়া দেব কাশীকান্ত মৈত্রের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন : ড. দীপাঞ্জন দে অমৃতের সন্ধানে মাঘী পূর্ণিমায় শাহীস্নান : রিঙ্কি সামন্ত বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (ষষ্ঠ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের যোগ : অসিত দাস ‘হরিপদ একজন বেঁটে খাটো সাদামাটা লোক’-এর গল্প হলেও… সত্যি : রিঙ্কি সামন্ত রোহিঙ্গা সংকট — ফেলে আসা বছর ও আগামীদিনের প্রত্যাশা : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (পঞ্চম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার ‘রাঙা শুক্রবার অথবা কহরকন্ঠ কথা’ উপন্যাস বিষয়ে শতদল মিত্র যা বললেন রবীন্দ্রনাথের ধর্মীয় পরিচয় : গোলাম মুরশিদ কেজরিওয়াল হারলো প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অরাজকতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য : তপন মল্লিক চৌধুরী বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (চতুর্থ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার সাহেব লেখক দেড়শো বছর আগেই বলেছিলেন পঞ্চানন কুশারীর কবিয়াল হওয়ার সম্ভাবনার কথা : অসিত দাস বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (তৃতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার সর্বপাপবিনাশীনি জয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (দ্বিতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার বাজেটে সাধারণের জীবনমানের উন্নয়নের একটি কথাও নেই : তপন মল্লিক চৌধুরী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বসন্ত পঞ্চমী ও সরস্বতী পুজোর  আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

ইতিহাস ও সৌন্দর্যের খোঁজে গন্তব্য মান্ডু সঙ্গে বর্ষাকালীন দুর্গবিলাস (২য় পর্ব) : জমিল সৈয়দ

জমিল সৈয়দ / ৩২৮ জন পড়েছেন
আপডেট শনিবার, ১ জুন, ২০২৪

হিন্দোলা মহল, মাণ্ডু

বাড়িটি তৈরি হয়েছিল দোলনার মতো চেহারায়, তাই এর নাম হিন্দোলা মহল, কিন্তু বাড়িটিকে দেখে আমি তো ঠিক দোলনা বলে ঠাহর করতে পারলাম না !!! উপরের ছাদ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ফলে বাড়িটির চেহারা বোঝা একটু কঠিন।

কালের প্রহারে প্রাসাদের চেহারা নষ্ট হয়ে গেছে। পুরাতত্ত্ব দপ্তর নানারকম সংস্কার কার্য করে ৪০০ বছরেরও বেশি বয়সের বাড়িটির ‘পতন ও মুর্ছা’ আটকে রেখেছে ।

সুলতান গিয়াসউদ্দিন জাহাজমহলের পাশাপাশি হিন্দোলা মহলটি বানিয়েছিলেন। রাজপরিবার এবং সভাসদগণের জন্য একটি ব্যক্তিগত সভাকক্ষ হিসাবে প্রাসাদটি বানানো হয়েছিল।

২৭ মিটার দৈর্ঘ্য, ৮ মিটার প্রস্থ এবং ১১ মিটার উচ্চতায় দাঁড়িয়ে থাকা হিন্দোলা মহল, এখন যেখানে কোনও সভা-সমাবেশ হয় না এবং উপরের দোতলার অংশে বসে নারীরাও সেই আলোচনা শুনতে আসেন না।

পুরাতত্ত্ব দপ্তরের বোর্ড অনুযায়ী, ৭৭-ডিগ্রী কোণে হেলানো দেয়াল — স্থাপত্যের বিস্ময়কর দিক ছিলো এটিই। কক্ষের বিশাল খিলানযুক্ত ছাদটি অদৃশ্য হয়ে গেছে। ডানদিকে ইংরেজি টি (T) অক্ষরের মাথার মতো একটি অংশ দুইপাশে বেরিয়ে আছে।

দাই-কা-মহল (दाई का महल), মাণ্ডু

স্কুলের ইংরেজি টেক্সট্‌বুকে মেবার রাজ্যের ধাত্রী পান্নার গল্প পড়েছিলাম এবং অপটু হাতে একটা ছবি আঁকার চেষ্টা করতাম— ঘরের দরজা দিয়ে ছুরি হাতে ঢুকছেন বনবীর সিং। পান্না বাই একটা হাত উঁচু করে খাটের উপরে ঘুমন্ত নিজের সন্তান চন্দনকে দেখিয়ে দিচ্ছেন— ওই যে উদয় সিং!

কাকা বনবীর সেই শিশুকে বধ করে ফিরে যান, ভাবেন তিনি নিষ্কন্টক হলেন। কিন্তু ভাগ্যবান শিশু উদয়কে ফলের ঝুড়িতে ঢেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে কুম্ভলগড়।

এরকমই কোনও এক ধাত্রীর বাড়ি, মসজিদ ও সমাধির দেখা পেলাম মাণ্ডুতে। কিন্তু কে ছিলো ধাত্রী, কী তার নাম — কোথাও লেখা নেই। কেউ জানে না, ওই ধাত্রী কোন্‌ সুলতানকে মাতৃদুগ্ধ খাইয়ে বড় করেছিলেন।

ধাত্রী নির্বাচন করা হতো কোনও সন্তান-সহ মাতাকে। ফলে শিশু রাজপুত্রকে মাতৃদুগ্ধ দিয়ে পালন করার ভার থাকত ওই দাই মায়ের উপরে।

মাণ্ডুর এই রহস্যময় গম্বুজ কোনও এক অজ্ঞাতকুলশীল ধাত্রীকে আজও বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যেতে দেয়নি।

শুধু চারপাশে জঙ্গল ও বৃষ্টির জল লেগে কালো হয়ে যাওয়া দেওয়ালের ফাঁক থেকে দর্শকদের সামনে উঁকি মারে হারিয়ে যাওয়া মাণ্ডুর ইতিহাস।

দাইয়ের ছোট বোনের মহল (दाई के छोटी बहन का महल), মাণ্ডু

ধাত্রী বা দাইয়ের পরিচয় পাওয়া যায়নি, তাই তার বোনের পরিচয়ও সবার অজানা।

একই চত্বরে ছিলো বাড়ি ও এই সমাধিসৌধ। বাড়িটি একেবারেই ভগ্নদশায়, প্রায় সাফ হয়ে গেছে বলা যায়।

শুধু টিকে আছে বোনের এই অষ্টকোণাকৃতি সমাধিসৌধ।

ক্যারাভান, মাণ্ডু

ইন্দোর থেকে মাণ্ডু পৌঁছেছি দুপুর ১২টার পাঁচ-সাত মিনিট আগে। মধ্যপ্রদেশ সরকারের টুরিস্ট লজে বুকিং ছিলো। পৌঁছুতেই, কাউন্টারের লোকটি নিথর মুখে বললো, ২টোর সময় চেক ইন। … ব্যস, আর কোনও কথা নেই তার মুখে।

আমি বললাম, ঘর খালি থাকলে, এ্যালট করে দিন।

তার একটাই কথা, ২টোর সময় চেক ইন।

আমি খাজুরাহোতে পৌঁছেছিলাম সকাল সাড়ে ৮টায়। জব্বলপুরে পৌঁছেছিলাম সকাল ৮টায়। কিন্তু কোথাও ঘর পেতে অসুবিধে হয়নি। সরকারি টুরিস্ট লজের লোকেরা হাসিমুখেই অভ্যর্থনা জানিয়েছে।

আমি মাণ্ডুর লোকটিকে বললাম, আর্লি চেক-ইনের জন্য অতিরিক্ত রেন্ট দিতে আমার আপত্তি নেই।

সে ততোধিক কঠোর মুখে বললো, ২টোর সময় চেক ইন।

আমার ড্রাইভার মাণ্ডুর লোক, সে রোজই দু’বেলা এই টুরিস্ট লজে আসে। তার সঙ্গে প্রতিটি স্টাফের খুব চেনাজানা। সে আমাদের পক্ষ থেকে কাউন্টারে ফের অনুরোধ করলো, কিন্তু সেই পাথরমূর্তি অনড়।

ড্রাইভার আনন্দ বোর্সে আমাদেরকে বললো, চলুন পাশেই ক্যারাভান ও মুজিত খানের মসজিদ দেখিয়ে আনি। আধঘন্টার মধ্যে হয়ে যাবে, ততক্ষণে এই “বদ-তমিজ আদমি” চলে যাবে। অন্য লোক এসে গেলে কোনও অসুবিধা হবে না।

***

টুরিস্ট লজ থেকে ৫ মিনিটের দূরত্বে ‘ক্যারাভান’ ও তার ঠিক মুখোমুখি মুজিত খানের মসজিদ।

ক্যারাভান শব্দের আক্ষরিক অর্থ মরুযাত্রীদল। কিন্তু এখানে ক্যারাভান হলো সুবিশাল সরাইখানা।

মনে হলো, মাণ্ডুতে একসময় বিভিন্ন জায়গা থেকে বহু লোক আসত। কাজে অথবা ব্যবসার কারণে। তাদের থাকার জন্য সরাইখানা। মধ্যিখানে প্রশস্ত চত্বর (২২৫ ফিট x ২১৫ ফিট), চারপাশে বারান্দা-সহ অজস্র ঘর। কীরকম গমগম করতো এই শহর, কল্পনা করতেও বিস্ময় জাগে।

দিল্লি থেকে সম্রাট আকবর অন্তত ৪ বার এসেছেন মাণ্ডুতে।

১৬১৭ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট জাহাঙ্গীর মাণ্ডুতে ৭ মাস কাটিয়েছিলেন। সেবারে টমাস রো এসেছিলেন জাহাঙ্গীরের সঙ্গে। জাহাঙ্গির নিজের স্মৃতিকথায় লিখে গেছেন —

“আমি নূরজাহান বেগমের রাজপ্রাসাদের একটি বাড়িতে একটি সভা করি, বাড়িটি বড় বড় পুকুরের মাঝখানে অবস্থিত। বেগম ভোজসভা প্রস্তুত করেছিলেন। আমির ও সভাসদদেরকে সেই ভোজসভায় ডাকা হয়েছিল। অনুচরদেরকে আদেশ দিয়েছিলাম অতিথিরা যে যতো নেশাজাতীয় পানীয় চাইবে তাই যেন তাদেরকে দেওয়া হয়। অনেকেই পানীয় চেয়েছিলেন, এবং আমি নির্দেশ দিয়েছিলাম যে অতিথিরা যেন নিজেদের মনসব ও পদমর্যাদা অনুসারে আসন গ্রহণ করেন। প্রত্যেকের সামনে স্বাদ গ্রহণের জন্য সব ধরনের রোস্ট করা মাংস ও ফল রাখার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। এটি একটি বিস্ময়কর সমাবেশ ছিল. সন্ধ্যার শুরুতে পুকুর ও ভবনের চারপাশে লণ্ঠন এবং বাতি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং এমন আলোকসজ্জা করা হয়েছিল যা সম্ভবত আগে কোনও জায়গায় সাজানো হয়নি। জলের উপরে লণ্ঠন ও প্রদীপগুলির প্রতিফলন হচ্ছিল এবং দেখে মনে হচ্ছিল, পুকুরের পুরো জলতল যেন আগুনের সমতল ভূমি। এমন জমকালো আমোদ-প্রমোদে সবাই মত্ত ছিলো এবং মাতালরা বাড়াবাড়ি করে ফেলছিল।”

একবার শিকারীরা জাহাঙ্গীরকে খবর এনে দিল, মাণ্ডুর জঙ্গলে ৪টি বাঘ দেখা গেছে। জাহাঙ্গীর হাতির পিঠে চেপে চললেন শিকার করতে। অন্য একটা হাতিতে পত্নী নূরজাহান। নূরজাহান বললেন, “অনুমতি পেলে আমি শিকার করবো।”

জাহাঙ্গীর অনুমতি দিলেন। জাহাঙ্গীর তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন —

“নূরজাহান দুটি শটে দুটি বাঘকে গুলি করেন এবং চারটি শট দিয়ে অন্য দুটিকে ধরাশায়ী করে দিলেন। চোখের পলকে চারটি বাঘ শিকার করে ফেললেন। এখনও পর্যন্ত এমন শ্যুটিং কখনও দেখা যায়নি যে, একটি হাতির উপর হাওদার ভিতর থেকে ছয়টি গুলি করা হলো এবং একটিও ফস্‌কে গেল না, যাতে চারটি জানোয়ার লাফানো বা নড়াচড়া করার কোনও সুযোগ পায়। এই দুর্দান্ত শুটিংয়ের পুরস্কার হিসেবে আমি তাকে ১ লক্ষ টাকা মূল্যের এক জোড়া হীরার ব্রেসলেট দিলাম এবং ১০০০ স্বর্ণমুদ্রা বেগমের উপরে ছড়িয়ে দিয়েছিলাম।”

মাণ্ডু এখন এক পোড়ো শহর। পুরো শহর নির্জনতায় ঘেরা। চারদিকে ভাঙা বাড়িঘর, ভাঙা সমাধিসৌধ তার একমাত্র ঐশ্বর্য! মাণ্ডুতে স্থানীয় মানুষের বসবাসও খুব কম। রাস্তায় ভিড়, যানবাহনের চাপ একেবারেই নেই। এমন সুষুপ্ত শহর ভারতবর্ষে কোথাও থাকতে পারে, ভাবাই যায় না।

***

আধঘন্টার মধ্যেই ফিরে এলাম টুরিস্ট লজে। এবার দেখি কাউন্টারে অন্য লোক। সেই ভদ্রলোক হাসিমুখেই আমাদেরকে ঘরে এগিয়ে দিলেন।।

ড্রাইভার খুশি হয়ে বললো, বলেছিলাম না? … তাহলে বিকেলে ৪ টের সময় আসবো?

— না, না, ভয়ঙ্কর রোদ! বরং ৫টার সময় এসো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন