সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিল বাবু মান্না লেইতাও। সেটা সেই আমলের কথা, যখন গোয়া-র বাসিন্দাদের কারুরই কোনো গাড়ি ছিল না। ছাতাটাকে ছড়ির মতো করে ধরে শহরটাতে ঘুরে বেড়াতে দেখা যেত তাকে, আর সেই কালে তার পক্ষে সেটাই ছিল মানানসই। কিন্তু দশকের পর দশক গুজরে যাওয়ার পর, এখন, যখন গোয়াবাসীরা সাইকেল-যুগ পার করে এসে পা দিয়েছে গাড়ির জমানায়, যখন তারা গাড়ির মালিক হওয়ার মতো যথেষ্ট স্বচ্ছল, তাজ্জব ব্যাপার, এই যুগে এসে কিনা তাকে দেখা যাচ্ছে ভেসে বেড়াতে নেড়িকুত্তার মতো, ফুটপাতে, অলিতে গলিতে। ‘কে এই বেখাপ্পামতন লোকটা?’ — হঠাৎ কারুর মধ্যে এমতো হুশ না হওয়া অব্দি যেন তার হুশের কিনার ধরে চুপিচুপি চলেছে মানুষটা।
সত্যিই সে বেখাপ্পামতন। ঢাউস সাইজের মেছতাপড়া মুখ। চুলগুলা জলাজংলায় গজিয়ে ওঠা এক কিসিমের ঢেঁকিশাকের মতো, যাদের চোখা চোখা ডগাগুলা আস্তে আস্তে বেঁকে গিয়ে হয়ে যায় কুণ্ডলাকার। কান দুইটা যেন ইটালিক করে দিয়েছে মাথাটাকে আর সেই ইটালিক মাথার চুলগুলা সব মিনি-টেলিভিশন অ্যান্টেনার মতো খাড়া-খাড়া। ঠোঁট দুইটা দেখলেই মনে হয় লালসায় ভরা, আর তা বিশ্বাস যুগিয়েছে এই কেচ্ছাটায় যে — বিয়া না করলে কী হবে, তলে-তলে লোকটা কিন্তু ভীষণ কামুক। গোয়াবাসীরা মনে করত, বিয়া সে করে নাই কারণ বউ-বাচ্চা পালা তো খরচের কাম।
খুব বড়াই ছিল তার। সে মনে করত আপানা নামের ছোট্ট শহরটায় সে-ই সবচেয়ে ধনী আদমি। আজব তো! একজন ছাপোষা চাকুরে, যে কিনা কোনোদিন দান চালে নাই স্টক মার্কেটে, সে কেমন করে ধনী হতে পারে? তবে হ্যাঁ, পারে, তরিকা আছে দুইটা! এক, সরাসরি মহাজনি কারবার। আপানায় ছিল আরো অনেক ছা-পোষা চাকুরে, বিশেষ করে আফ্রিকানরা, মাসের তৃতীয় সপ্তাহের কাছাকাছি সময়ে যাদের দিন আর কিছুতেই চলত না! তা ছাড়া যাদের সত্যি-সত্যি খুব ঠেকা, তাদেরকে তো ব্যাংকঅলারা কখনোই ঋণ দেয় না, আর সেটাই ছিল সেই মোক্ষম জায়গা যেখানে গিয়ে ঢুকত এই মান্না বাবু। টাকা ধার দিত সে বড়জোর দুই সপ্তাহের জন্য। সুদের হার শতকে প্রায় চল্লিশ। বছরে না, দুই সপ্তাহেই চল্লিশ পারসেন্ট। এভাবেই মান্না লেইতাও প্রথমে মানি লেইতাও, পরে মানিম্যান বা মালদার হিসাবে পরিচিতি পেল।
মালপানি বানানোর আরেকটা তরিকা ছিল তার। তা হলো, একদম খরচ করত না সে। একদিন সন্ধ্যাবেলা শ্রীমতী কারমেন ডায়েস তাদের বাসার বাইরে একটা গোঙানির আওয়াজ শুনতে পেল। সে তার মরদ আর পোলাকে বলল, যাও দ্যাখো তো কী ব্যাপার! খোঁজ নিয়ে তারা দেখতে পেল, মালদারটা পড়ে আছে তাদের আঙিনার ভিতর, একটা নর্দমার মধ্যে, নিজের একটা পা ধরে নিয়ে ব্যথায় কোঁকাচ্ছে। পরে কাহিনী ছড়িয়ে পড়ল এভাবে — মালদারটা একটা ডবকা আফ্রিকান ছুকরির পিছনে ধাওয়া করতে গিয়ে নর্দমায় পড়ে পা ভেঙেছে। যা হোক ডায়েসরা শেষমেশ জানল যে হ্যাঁ সত্যিই পা-টা ভেঙেছে তার। তারা অবশ্য আগেই জানতে পারত যদি তাকে নিয়ে যাওয়া হতো ‘এ’ গ্রেডের হাসপাতালে। কিন্তু প্রচণ্ড ব্যথা সত্ত্বেও মালদারটা পীড়াপীড়ি করছিল ‘বি’ গ্রেডের জন্য, যেখানে মাগনা চিকিৎসা দেওয়া হয় গরিবদের! পায়ে প্লাস্টার করে দেওয়া হলো তার। বিছানায় পড়ে থাকল মালদার। থাক পড়ে!
মালদারটার একঘর আত্মীয় থাকত প্রতিবেশী দেশে। একমাত্র খোঁজ-জানা আত্মীয়বাড়ি। সেখানে নাকি যাতায়াত ছিল তার, এরকমটাই তো লিখেছে ডায়েস-রা! সেই আত্মীয়রা তো ঝড়ের বেগে এসে হাজির! মালদার তাদের সাথে দেখা করতে নারাজ। সে বলে, ”তারা তো এসেছে আশা ক’রে যে, আমি মরব। তারা তো আর কিছু চায় না, চায় আমার মালপানি কব্জা করতে। বেশ, আমিও দেব না, আর তাদেরকেও ফিরে যেতে হবে নগদ নারায়ণ ছাড়াই।” তারা অবশ্য খসাবার সবরকম কোশেশই করল, কিন্তু হাল ছেড়ে দিতে হলো শেষমেশ। মনে ঘেন্না নিয়ে যেতে হলো বাড়ি ফিরে। ফলে মালদারের দেখাশোনার ভার নিতে হলো ডায়েসদেরকেই। তারাও ভাবল, যেহেতু তারা তাকে পেয়েছে বলতে গেলে তাদেরই দরোজার সিঁড়িতে, তাই সে এখন পড়ে তাদেরই দায়িত্বের মধ্যে। তারাই যদি নারাজ হয়, তবে কে আর দেখবে এই গোঁয়ারগোবিন্দ বুড়া মানুষটাকে? এমনকী তার খানাও পাক হতো তাদেরই হাতে, কারণ আফ্রিকান খাবার আবার সে খেতে পারে না! বাপ-ব্যাটা মিলে রান্না করত পালা করে, কারণ সে-সময়টায় আবার শ্রীমতী ডায়েস প্ল্যান করে ফেলেছে, গোয়া যাবে সে বাবা-মাকে দেখতে, আর তা ছাড়া মালদারের পা সারতেও সময় লাগছিল বেশ। বলা বাহুল্য, মালদারটা ডায়েসদেরকে দিত না কিছুই, খালি সুযোগটুকু নিত গোয়ানিজদের সেই ঐতিহ্যবাহী মেহমানদারির। আরো একটা ব্যাপার, যেই সে বুঝল, নিয়মিত খানা সে পাবেই, নিশ্চিত, অমনি কী খাবে, কোনটা পাকাতে হবে, তা নিয়ে বাপ-ব্যাটার ওপর শুরু করে দিল খবরদারি।
যমের সাথে ঘষটাঘষটির সময় মালদারটা নিশ্চয়ই হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিল — আহা, একা মানুষ যে কতটা একলা! যা-ই হোক, হাসপাতাল ছাড়ার বেশিদিন পার হয়নি, সে তার একা-ফাঁকা বাড়িটা ছেড়ে দিয়ে উঠে পড়ল কোনো এক ফার্নান্দেজদের বাসায়। ফার্নান্দেজদের পরিবারে ছিল বাপ-মা আর তাদের তিন ছেলে। মালদারকে যে তারা আদৌ নেবে, এটাই ছিল এক তাজ্জব ব্যাপার। মা-টা ছিল একটা দিলে-সিল-মারা বেরহম গোছের মহিলা, স্বামীটা একটা বেহেড মাতাল, সে ছিল আবার একটা ছাপাই কাজের দোকানের মালিক। বড় পোলাটা তো আস্ত একটা লুচ্চা। দুই নম্বর যে পোলা, খুব গম্ভীর, কথা কয় কম, মনে হয়, কী জানি এক কঠিন প্রতিজ্ঞা নিয়ে বসে আছে। কী সে-প্রতিজ্ঞা, কেউই তা জানত না। তবে মনে হতো, আছে কিছু একটা গোপন উচ্চাকাঙ্ক্ষা। সবচেয়ে ছোট ছেলেটা ছিল দিলদরিয়া স্বভাবের। কিন্তু সাংঘাতিক লাজুক, মুখচোরা! কারো সাথে যে বাতচিত করবে, খোলস ভেঙে বেরিয়ে আসবে, এটা যেন কল্পনা করাও কঠিন।
আস্তে আস্তে একসময় দেখা গেল, এই আপানায় ছাপাই কাজের দোকান চালাচ্ছে শ্রীমতী ফার্নান্দেজ, আর বাবু ফার্নান্দেজ ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিক সেদিক, মদের খালি বোতলের মতো পরিত্যক্ত, বাতিল…। মহিলাটা ব্যবসায় গিয়ে ঢুকল এমন এক সময়ে যখন টাকার জন্য ফার্নান্দেজদের সম্পত্তির দখল নেওয়ার বন্দোবস্ত করে ফেলেছে মহাজনরা। কিছু ধারকর্জ সে শোধ করে দিল, আর ওয়াদা করল বাকিগুলাও শোধ করে দেবে সময়মতো। মহাজনরা কিছুটা তর সইতে রাজি হলো এই শর্তে যে, ব্যবসার ভার তুলে নিতে হবে তার নিজের হাতে। রাজি হয়ে গেল সে, যদিও ছাপাইয়ের কাজ জানত না কিছুই।
একদিন মালদার এসে হাজির হলো পোব্রাস ডি’মেলো-র বাসায়। আপানায় গোয়া-সম্প্রদায়ের মুরুব্বিমতো একজন হলেন এই ডি’মেলো বাবু। দেখে তো তিনি পড়ে গেলেন ধন্দে। কারণ, মিশুক হওয়া তো দূরে থাক, মালদার-টা তো সামাজিকও না।
মামুলি কথাবার্তা আর হালকা শরবতের খায়খাতিরপর্ব শেষে মালদার বলল, ”ডি’মেলো বাবু, পরামর্শ চাই আপনের।”
ডি’মেলো বাবু তো অবাক, তলে-তলে একটু খুশিও হলেন, বললেন, ”আলবৎ চাইবেন।”
মালদার একটা কাগজ তার হাতে দিয়ে বলল, “প্লিজ চিঠিডা পড়েন।”
বাবু ডি’মেলো পড়তে লাগলেন — ”শ্রীমতী ফার্নান্দেজ, আপনি আমার দরদি স্বভাবের বেইজ্জতি করিয়াছেন।”
এরপর রয়েছে কিছু কড়া-কড়া কথা।
”জুনে যখন আপনি আমার নিকট হইতে চার হাজার শিলিং কর্জ লইয়াছিলেন, তখন এই বলিয়া ওয়াদা করিয়াছিলেন যে, তিন মাসের মধ্যে সেই টাকা তো ফেরৎ দিবেনই, বাড়তি কিছু লেন্ডিং চার্জও দিবেন। কিন্তু আপনি কিছুই দেন নাই, এবং এক্ষণই এই মুহূর্তে আমি ফেরৎ চাই সব, আপনি…” এরপর আরো কিছু খাস্তা-খাস্তা কথা।
”দারুণ না?” মালদারটা বলল।
”দারুণ?” — জিজ্ঞাসুভাব ডি’মেলো বাবুর।
মালদার বলল, ”আপনের কি মনে হয় না যে এইডা একটা দারুণ চিঠি?”
ডি’মেলো বাবু কায়দাকৌশলের জন্য ছিলেন মশহুর। তাই সিধা জবাব না দিয়ে তিনি বললেন, ”আরেট্টু খোলাসা কইরা কন তো ঘটনাডা।”
”ম্যাডাম ফার্নান্দেজ তো খুবই মসিবতের মইদ্দে আছিলো স্বামীর ধারদেনা নিয়া। তো হ্যে আমারে খুব কইরা ধইরলো। দেনা মিটাইবার লাইগা হাওলাত চাইতেছিলো চাইর হাজার শিলিং। মায়া হইলো খুব, ট্যাকাটা দিলাম। হেরপর হের পোলার পেট্রোল কেনোনের টাইমে একবার জিম্মা হইছিলাম। হেরপর আরেক যাত্রায়, হেগো নয়শো শিলিংয়ের একটা বিল, হেইডাও পেমেন্ট কইরতে হইছিল আমারে।”
”আপনে একটা সার্ভিস চার্জের কথা কইছেন না, আপনের চিঠির মইদ্দে?” বললেন ডি’মেলো বাবু, ”হেইডা কীয়ের?”।
মালদার বলল, “সেভিং অ্যাকাউন্ট থেইকা ট্যাকা উঠাইতে হইছে, সুদ মাইর গেছে না আমার! হের তো উচিত আমারে পোষায়া দেওন, হেইডাই তো ন্যায্য, নাকি?”
“কয় ট্যাকা?” জিজ্ঞেস করলেন ডি’মেলো বাবু।
“আমি…উম্…উম্” করতে থাকল মালদার।
“কত?” ডি’মেলো বাবুর স্বর কিছুটা ধারালো, “কত, সার্ভিস চার্জ?”
“উম্…এক…দুই হাজার শিলিং।”
“বছরে?” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন ডি’মেলো বাবু।
“না, শোধ কইরতে হইব ট্যাকা ডিউ হওনের লগে লগেই।”
“তো হোন্তে চান, আমার কী মনে কয়?” বললেন ডি’মেলো বাবু, “আমার তো মনে কয় আপনে একটা ছোটলোক, এক্কেরে হাড্ডিকিপটা। যাউকগা, আপনে আমার পরামর্শ চাইছেন এই যে…এই চিঠিডার ব্যাপারে, তো পরামর্শ আমি আপনেরে দিমু। আপনের চিঠিডা তো খুব কড়া, দোষ নেওনের মতন চিঠি একখান। চিঠিডা যদি আপনে দেন, তাইলে ক’লাম ম্যাডাম আপনের নামে মামলা ঠুইকা দেওনের কামে লাগাইতে পারে এইডারে। আর আপনে না-কইলেন, আপনে হেরে ট্যাকা দিছেন, হেইডা তো মনে কয় আপনার লেখার মইদ্দে আসে নাইক্যা — ”
“আমি তো দিয়াই ফালাইছি চিঠিডা, আইজকা সক্কালেই।” বলল মালদার।
“তাইলে তো আমি কইমু মেহেরবানি কইরা চইলা যান আমার বাসা থেইকা।” বললেন ডি’মেলো বাবু।
রাতের খাবার খেতে মালদার বাড়ি ফিরল সময়মতোই। ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসল সে। আবহাওয়াটা সেখানে জমাট, আগে থেকেই ঠিক-করা। এক পর্যায়ে কোন্কানি ভাষায় সে বলে উঠল, “উডোই কোড্ডি,” মানে, “এদিকে দাও তরকারিটা”, তবে আক্ষরিক অর্থ ধরলে মানে হয়, “ছুড়ে দাও তরকারিটা”। আর মেজ ছেলেটা করল ঠিক তা-ই। তরকারির ডিশটা তুলে ছুড়ে মারল মালদারের দিকে।
“শালা বেজন্মা কোথাকার!” তার দিকে খেঁকিয়ে উঠল ছেলেটা। “থাকতেছ তো আমাগো লগে, নাকি? তোমার কয়টা ট্যাকাতেই কি পোষায়া গেল গা আমাগো হগল ঝক্কিঝামেলা? আর তুমি কিনা আমার মায়েরে দিছ বেইজ্জতি চিঠি, হিম্মৎ কত! এক্কেরে শিক্ষা দিয়া ছাড়মু তোমারে!” বলেই সে ধোলাই দেওয়া শুরু করে দিল বুড়াটাকে।
বড় আর ছোটটা মিলে টেনে সরিয়ে আনল মেজটাকে। সরিয়ে আনল বটে, তবে ততক্ষণে মালদারের ভালো পা-টাও ভাঙা সারা। বড় ছেলেটাকেই নিতে হলো তাকে গ্রেড ‘বি’ হাসপাতালে। হাজার হোক গাড়িটাতে তো মালদারেরই দেওয়া পেট্রোল।
মালদারটা বাতিল হয়ে পড়ে থাকল গ্রেড ‘বি’তে। সে খবর পাঠাল ডায়েসদেরকে। তারা এসে এবার দেখে গেল, কোনো রকম বিবেকের তাড়না ছাড়াই একটা বেয়াড়া বুড়া লোককে ফেলে রেখে যেতে পারে তারা! মালদারকে যখন ডিসচার্জ করা হলো চূড়ান্তভাবে, তখনও খরচের ব্যাপারে ফার্নোন্দেজদেরকে কোনো চাপ দিল না সে। কারণ, কাগজে-কলমে কিছুই ছিল না তার, অথচ ফার্নান্দেজদের তা ছিল। তা ছাড়া উকিল ধরতেও অনেক খরচ।
তবে, অভিজ্ঞতায় লাভই হয়েছে মান্না লেইতাও-য়ের, আচ্ছা সবক পেয়েছে সে। মানুষের উপর আর ইমান নাই তার, টাকার মতো অত নির্ভরযোগ্য নয় মানুষ। এখনো তাকে ঘুরে বেড়াতে দেখতে পাওয়া যাবে আপানার আনাচে-কানাচে ছেঁড়াখোড়া ময়লা পোশাকে, তার নিত্যসঙ্গী ছাতাটাসহ; আর ফার্নান্দেজদের সেই আয়বরকত-বাড়তে-থাকা ছাপাখানার পাশ দিয়ে যখন সে যায়, আপনমনে বিড়বিড় করে আর শক্তমুঠিতে চাপতে থাকে ছাতাটাকে, যেন ওটা একটা ব্যাংকরোল যা থেকে কিছুতেই আলাদা হতে চায় না সে।
পিটার নাজারেথ: কথাশিল্পী, নাট্যকার, সমালোচক। জন্ম ২৭ এপ্রিল, ১৯৪০, উগান্ডার এনটেব-এ, কোন্কানিভাষী ভারতীয় গোয়ানিজ খ্রিস্টানদের ছোট্ট গোষ্ঠীটিতে। ওই গোষ্ঠীরই সাহিত্য বিভিন্ন ভাষায় রূপায়িত করার মধ্য দিয়ে পিটার গড়ে তুলেছেন তাঁর বিশেষত্ব। শিক্ষা, উগান্ডার ম্যাকেরেরে এবং যুক্তরাজ্যের লন্ডন ও লিড্স্ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইস্ট আফ্রিকান লিটারেচার ব্যুরো থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সবগুলি উপন্যাস; সমালোচনাগ্রন্থও, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের লেখকদের ভূমিকা বিষয়ে।
১৯৭২-এ এশীয়দের তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল উগান্ডা থেকে। সে-সময় তিনি পাড়ি জমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে তিনি সম্পাদনা করেন বেশ কয়েকটি সংকলনগ্রন্থ, আফ্রিকান বিভিন্ন লেখকের লেখা নিয়ে। তা ছাড়া তাঁদের ওপর যে-সমস্ত লেখালিখি হয়েছে সেগুলি নিয়েও কয়েকটা সংকলন। শর্ট স্টোরি ইন্টারন্যাশনাল-সহ নানা জায়গায় প্রকাশিত হয়েছে তাঁর গল্প। তাঁর এই ‘মালদার’ গল্পটি ছাপা হয় এনগুগি ওয়া থিয়োঙ’ও সম্পাদিত জ্যুকায়, সত্তরের দশকে। জ্যুকা পূর্ব আফ্রিকান সৃজনশীল লেখালেখি বিষয়ক একটি পত্রিকা। এ ছাড়াও গল্পটি স্থান পেয়েছে ১৯৮৮-তে প্রকাশিত Valerie Kibera’s pick of the fruitful decade of the mid-1960s to mid-1970s নামের পূর্ব আফ্রিকান একটি গল্পসংকলনে।
পিটার নাজারেথ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংলিশ অ্যান্ড আফ্রিকান-আমেরিকান ওয়ার্ল্ড স্টাডিজ-এর অধ্যাপক। “এলভিস অ্যাজ অ্যান্থোলজি” নামের ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জনপ্রিয় কোর্স পড়ানোর সুবাদে তিনি মিডিয়ার ব্যাপক নজর কাড়তে সমর্থ হন। জনসংস্কৃতিতে এলভিস প্রিসলির ভূমিকার এক গভীর মিথোলজিক্যাল শিকড় খোঁজার প্রয়াস হিসাবে ডিজাইন করা হয়েছে কোর্সটি।