মঙ্গলবার | ১১ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ১১:৫০
Logo
এই মুহূর্তে ::
বোলপুর কি সত্যিই বলিপুর, না লাক্ষানগর বা জতুনগর : অসিত দাস রাখাইন পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের উপর প্রভাব : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন অসুখী রাজকন্যাদের লড়াইয়ের গল্প : রিঙ্কি সামন্ত বিশ্ব থেকে ক্যানসারকে নির্মূল করতে গবেষণায় একের পর এক সাফল্য রূপায়ণের : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কল্পনার ডানায় বাস্তবের রূপকথা : পুরুষোত্তম সিংহ হাইকোর্টের রায়ে ভাবাদিঘীতে তিন মাসের মধ্যে কাজ শুরুর নির্দেশ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কমছে, সঙ্কটে সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুল : তপন মল্লিক চৌধুরী ফল্গু নদীর তীরে একটি ছোট শহর এই বুদ্ধগয়া : বিজয় চৌধুরী শাহিস্নান নয়, আদতে কথাটি ছিল সহিস্নান : অসিত দাস মৈত্রেয়ী ব্যানার্জি-র ভূতের গল্পো ‘হোমস্টে’ রহস্য ঘেরা বলিউডের নক্ষত্রপতন : রিঙ্কি সামন্ত বাঁকুড়ার দু-দিন ব্যাপী দেশীয় বীজ মেলায় দেশজ বীজের অভূতপূর্ব সম্ভার পেজফোর-এর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ২০২৫ এত গুণী একজন মানুষ কত আটপৌরে : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী সরস্বতীর উৎস সন্ধানে : অসিত দাস ‘সব মরণ নয় সমান’ সৃজনশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে যথোচিত মর্যাদায় স্মরণ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সিপিএম-এর রাজ্য সম্মেলন, তরুণ প্রজন্মের অন্তর্ভূক্তি নিয়ে খামতি রয়েছে দলে : তপন মল্লিক চৌধুরী প্রথম পাঠ — মার্কসবাদের বিশ্বভ্রমণ : সন্দীপন চক্রবর্তী বঙ্গবিভূষণ কাশীকান্ত মৈত্র স্মারকগ্রন্থ : ড. দীপাঞ্জন দে ‘খানাকুল বাঁচাও’ দাবিতে সরব খানাকুল-সহ গোটা আরামবাগের মানুষ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় হরি হরের কথা এবং বীরভূমের রায়পুরে বুড়োনাথের বিয়ে : রিঙ্কি সামন্ত ত্র্যম্বকেশ্বর দর্শনে মোক্ষলাভ : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী কুম্ভমেলায় ধর্মীয় অভিজ্ঞতার থেকে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বেশি : তপন মল্লিক চৌধুরী রাজ্যে পেঁয়াজের উৎপাদন ৭ লক্ষ টন ছাড়াবে, কমবে অন্য রাজ্যের উপর নির্ভরতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ‘হিড়িক’ শব্দটির ব্যুৎপত্তি অধরা, আমার আলোকপাত : অসিত দাস বিজয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-র ছোটগল্প ‘শিকড়ের টান’ বাংলাভাষার নেচিতে ‘ময়ান’ ও ‘শাহিস্নান’-এর হিড়িক : অসিত দাস একটু একটু করে মারা যাচ্ছে বাংলা ভাষা : দিলীপ মজুমদার রাজ্যে এই প্রথম হিমঘরগুলিতে প্রান্তিক চাষিরা ৩০ শতাংশ আলু রাখতে পারবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায়
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বসন্ত পঞ্চমী ও সরস্বতী পুজোর  আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

সর্ব ধর্ম সমন্বয় — ক্ষীর ভবানী ও শঙ্করাচার্যের মন্দির : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী

মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী / ২৮১ জন পড়েছেন
আপডেট মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

১৮৯৮ খ্রীষ্টাব্দে স্বামীজী দ্বিতীয় বার কাশ্মীর সফরে গেছিলেন। এই সফরে গিয়ে তিনি পন্ডিত নারায়ণ দাসের বাড়ি আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন। পন্ডিত নারায়ণ দাস সেই সময়ে কাশ্মীরি পন্ডিতদের মধ্যে প্রথম ইংরেজি বলতে ও লিখতে পারতেন। ইংরেজি পোশাক পরতেন ও সাইকেল চালাতে পারতেন। অরণ্যমাল এবং পন্ডিত নারায়ণ দাস উভয়েই স্বামী বিবেকানন্দের ভক্ত ছিলেন। নামচিবলের বাড়িতে বিবেকানন্দ গেলে তাঁকে পায়েস নিবেদন করেছিলেন অরণ্যমাল। স্বামীজী পায়েসের খুব প্রশংসা করেছিলেন ও এই সময় মুন্ডকোপনিষদ থেকে কিছু শ্লোক আবৃত্তি করেছিলেন। যখন তিনি চলে আসছেন তখন নারায়ণ দাস তাঁর রুগ্না স্ত্রীকে আশীর্বাদ করে যেতে অনুরোধ করেন। নারায়ণ দাসের স্ত্রী ভীষণ মাথার যন্ত্রণায় ভুগতেন। ওষুধে কোনও ফল হয়নি। এই অনুরোধে স্বামীজী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ওনার স্ত্রীর মাথায় হাত রাখলেন কিছু সময়। এর পরে নারায়ণ দাসের স্ত্রী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান।

অমরনাথ দর্শনের পর দেবী মাতাকে দর্শনের জন্য অধীর আগ্রহে স্বামীজী ছুটে যান তুলমুল্লায় ক্ষীর ভবানীর মন্দিরে। মন্দির তখন মুসলমান আক্রমণ ও ভূমিকম্পের ফলে জরাজীর্ণ। তিরিশে সেপ্টেম্বর বিবেকানন্দ মন্দিরে পৌঁছন। তাঁর সঙ্গে যাঁরা ছিলেন তাঁদের কাউকে তিনি এই সময় সঙ্গে নেননি। এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশ ছিল তাঁর। মন্দিরে তিনি এক সপ্তাহ কাল অবস্থান করে প্রত্যহ মাকে ক্ষীর নিবেদন করে পূজা করতেন ও প্রত্যহ ওখানকার পন্ডিতের ছোট কন্যাকে কুমারী রূপে পূজার্চনা করতেন। এখানেই তিনি এক মুসলমান শিকারা চালকের চার বছরের বালিকা কন্যাকে কুমারী পূজার মাধ্যমে সমস্ত ভেদাভেদ মুছে  দিয়েছিলেন।

এই মন্দিরেই একদিন সকালে যখন তিনি এই ভেবে মন খারাপ করছিলেন যে কেন মুসলমানরা এভাবে মন্দির নষ্ট করে সব অপবিত্র করল। তিনি থাকলে এরূপ কখনোই ঘটতে দিতেন না, মাকে রক্ষা করতেন। সেদিন অদ্ভুতভাবে দৈববাণী শুনেছিলেন যে মা বলছেন “তুই রক্ষা করবার কে? আমার রক্ষা আমি করতে পারি না?” আর একদিন তিনি মনে মনে ভাবছেন যে এই জরাজীর্ণ মন্দির আমি সারিয়ে নতুন করে গড়ে তুলব। তখনও আবার দৈববাণী পেলেন যে

“তুমি কি মন্দির তৈরি করবে? আমি চাইলে এরকম অসংখ্য মন্দির ও সন্ন্যাস কেন্দ্র তৈরি করতে পারি। চাইলে সাত তলা সোনার মন্দিরও তুলতে পারি।” এই দৈববাণী শোনার পর বিবেকানন্দ বারবার বলেছেন  “আমার সব দেশপ্রেম শেষ হয়ে গেছে। আমার সব শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধুই মা! মা! আমি একটি ছোট্ট শিশু মাত্র। সব মায়ের ইচ্ছেতেই হোক।”

এই অলীক কাহিনী ও দৈববাণী কিছুটা হলেও যদি অনুভব করা যায় সেই উদ্দেশ্য নিয়েই ক্ষীর ভবানী যাত্রা করেন বহু বাঙালি। কলহনের রাজতরঙ্গিনীতে এই ক্ষীর ভবানী মন্দিরের উল্লেখ পাওয়া যায়। কলহন লিখেছেন যে তুলমুল্লা গ্রামের এই পবিত্র কুন্ড একটি জলাভূমিতে অবস্থিত। হাজার বছর আগে বন্যায় এই মন্দির ও প্রস্রবণ প্লাবিত হয়েছিল। শ্রীনগরের বোহরিকাদালের কাশ্মীরি যোগী কৃষ্ণ পন্ডিত তাপলু একটি স্বপ্ন দেখেন যে দেবী তাঁর নিজের অবস্থানের কথা জানিয়ে এই কুন্ডকে দেখাচ্ছেন। ভৃগু সংহিতায়ও এর উল্লেখ আছে।

আবুল ফজলের ‘আইন-ই-আকবরী’তে তুলমুল্লার একশত বিঘা জমির উল্লেখ আছে। যা গ্রীষ্মের সময় জলে ডুবে থাকত। কথিত আছে ক্ষীর ভবানীর পবিত্র স্থানের নিকট একটি তুঁতগাছ ছিল, যাকে স্থানীয় ভাষায় তুলমুল বলা হয়। কিন্তু আবার তুলমুল সংস্কৃত শব্দ অতূল্য মূল্য থেকে এসেছে। যার অর্থ মহান মূল্যবান।

ক্ষীর ভবানী দেবীর অপর নাম রাগন্য, রাজন্যা, রাজ্ঞা, রজনী, মহারাগ্য, মহারাজ্ঞ্য, ভগবতী এবং মহাদেবী। ক্ষীর ভবানীর মেলা উপলক্ষে প্রতি বছর সমস্ত কাশ্মীরি হিন্দুরা একত্রিত হন। এছাড়াও সেসময় আসেন বহু তীর্থযাত্রী ও পর্যটক। মেলাটি হয় জৈষ্ঠ্য অষ্টমীতে। তাই এই মেলাকে ‘জ্যেষ্ঠ অষ্টমী’ ও বলা হয়। ১৯৯০ সালের সন্ত্রাসবাদ ও হিন্দুদের নির্বাসনের সময় এই মেলা হুমকির মুখে পড়েছিল। এই হুমকির মুখ থেকে মেলাকে গান্ডেরবালে থাকা ভারতীয় সেনাবাহিনীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছিল। এখনও 115 BN CRPF এর দল এখানে সবসময়ের জন্য মোতায়েন থাকে। এমনকি পহেলগাম যাবার সময় বিভিন্ন জায়গায় সেনা টহল বা তাদের হাতের আগ্নেয়াস্ত্র দেখে একটুও ভেতর কাঁপবে না তাও নয়। বিশেষ করে যখন আদিলের (গাড়ি চালক ও মালিক) মুখে শুনতে হয় – এইখানে ব্লাস্ট হয়েছিল। এইখানে অ্যাটাক করেছিল। তবে এত ভয়ের, এত হুমকির মধ্যে অলৌকিক ভাবে এই ক্ষীর ভবানী মন্দির একটি ব্যতিক্রমী স্থান। এত সন্ত্রাস থাকা সত্ত্বেও এখান থেকে হিন্দু পুরোহিত কখনও মন্দির ছেড়ে যাননি।

 

এই মন্দির অনেকখানি জায়গা জুড়ে অবস্থান করছে। স্বামীজীর দেখা জীর্ণ মন্দির এখন নতুন ভাবে সংস্কার করা হয়েছে। মা নিজের কাজ নিজেই করিয়ে নিয়েছেন। মন্দিরে একটি হেপ্টাগোনাল স্প্রিং দেবীর চারপাশে ঘিরে রয়েছে। পবিত্র এই কুন্ড নাকি লাল, গোলাপি, কমলা, সবুজ, নীল এবং সাদা এইরূপ বিভিন্ন বর্ণে তার রঙ পরিবর্তিত করে। আমরা অবশ্য সবুজাভ রঙ দেখেছি। এই জলে কালো ছায়া বা কালো রং হলে তাকে ভয়ানক অশুভ মানা হয়। জানা গিয়েছে যে কাশ্মীরি পন্ডিত নির্বাসনের সময় এই কুন্ডের রঙ কালো হয়ে গেছিল। অন্যান্য রঙের তেমন তাৎপর্য নেই বলেই শোনা যায়। ১৮৮৬ সালে ব্রিটিশ কমিশনার ওয়াল্টার লরেন্স এই কুন্ডে বেগুনি আভা দেখেছিলেন।

মহারাজ রনবীর সিং সর্বপ্রথম এখানে ধরমশালা নির্মাণ করেন। ১৯১০-এর দশকে জম্মু ও কাশ্মীরের মহারাজা প্রতাপ সিংয়ের অধীনে বর্তমান মন্দিরটির রূপ নির্মাণ হয়। মন্দির এলাকায় বহু সুপ্রাচীন চিনার বা ম্যাপেল গাছ আজও রয়েছে। দেবীকে দুগ্ধ ও পরমান্ন নিবেদন করা হয় বলে মাকে কেউ কেউ দুগ্ধদেবীও বলে থাকেন। কাশ্মীরের হিন্দুরা মাতা ক্ষীর ভবানীকে কাশ্মীরের কুলদেবী বলে মান্যতা দেয়।

শঙ্করাচার্যের মন্দির

জাবারান (ZABARWAN) পাহাড়ের উপর অবস্থিত শঙ্করাচার্যের মন্দির ডাললেকের যে কোন অংশ থেকে চোখে পড়ে। যার অপর নাম জ্যেষ্ঠেশ্বর মন্দির। এটি মূলত শিবের মন্দির। এর উচ্চতা কাশ্মীর উপত্যকার  থেকে আরও তিনশ মিটার উপরে। এই মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে শ্রীনগর শহরটিকে খুব সুন্দর দেখতে পাওয়া যায়। বর্তমানে গাড়ি যাবার রাস্তা হয়েছে। যেটা গাগরিবাল বা বুলেভার্ড রোড থেকে অল্প দূরে অবস্থিত। এই পাহাড়ের অন্য নাম তখত্-এ-সুলেমান। সেইজন্য এই মন্দিরকে ‘সলোমনের সিংহাসন’ও বলা হয়। কথিত আছে রাজা সলোমন এই স্থান পবিত্র করার জন্য পূজা করেছিলেন।

শঙ্করাচার্যের মন্দির সংলগ্ন এলাকাকে জাতীয় স্থাপত্যের তকমা দেওয়া হয়। মহা শিবরাত্রির দিন কাশ্মীরি হিন্দুরা এখানে এসে পূজা দেন। ধর্মার্থ ট্রাস্ট ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে এই মন্দির পরিচালনার দায়িত্বে আছেন। ঐতিহাসিক এবং ঐতিহ্যগতভাবে এই মন্দিরটিকে কাশ্মীরের প্রাচীনতম মন্দির হিসাবে অভিহিত করা হয়। পারমিয়ান যুগের অগ্নুৎপাতের ফলে পীর পাঞ্জালের এই পর্বতটি সৃষ্ট। এই মন্দির ঠিক কবে স্থাপিত হয়েছে তার সঠিক তারিখ কিছু পাওয়া যায় না। কলহন প্রথম এই মন্দিরের কথা বলেন। তিনি এই পর্বতের নাম লিখেছেন গোপাদ্রি বা গোপা পর্বত। বৌদ্ধরা এই মন্দিরকে পাশ-পাহাড় নামে ডাকেন। বৌদ্ধরাও এই মন্দিরটিকে পবিত্র মনে করেন। তাঁদের মতে আড়াই হাজার বছর আগে এটি একটি বৌদ্ধ মন্দির ছিল। মন্দিরের বর্তমান ভবনটি খ্রীষ্টিয় নবম শতাব্দীতে নির্মিত। আদি শঙ্কর এই মন্দিরে এসে একটি শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেন। তখন এটি হিন্দু মন্দিরে রূপান্তরিত হয়।

পন্ডিত আনন্দ কলের (১৯২৪) মতে ‘সন্দিমন’ নামে এক রাজা এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এনার সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। কলের মতে সন্দিমন ২৬২৯-২৫৬৪ খ্রীষ্ট-পূর্বাব্দে কাশ্মীর শাসন করেছিলেন। রাজা গোপাদিত্য (৪২৬-৩৬৫ খ্রীষ্ট-পূর্বাব্দে) ও রাজা ললিতাদিত্য মুক্তিপাদ (৬৯৭-৭৩৪) এই মন্দির সংস্কার করান। ভূমিকম্পের পর কাশ্মীরের সুলতান গিয়াউদ্দিন  জয়নুল আবেদিন এই মন্দিরের ছাদ সংস্কার করেন। পরে শেখ গোলাম মহিউদ্দিন (১৮৪১-৪৬) এই মন্দিরের চূড়া সংস্কার করেন।

আর্য দেশ থেকে আগত ব্রাহ্মণদের হিন্দু রাজা গোপাদিত্য এই গোপাদ্রি পর্বতে মন্দিরের জন্য জমি দান করেন। ঐ এলাকার বর্তমান নাম গুপকার। কিছু ব্রাহ্মণকে ডাল লেকের কাছে জমি দান করা হয়েছিল। ৩৭১ খ্রীষ্টাব্দে রাজা গোপাদিত্য এই মন্দিরটি তৈরি করেন জ্যেষ্ঠেশ্বর মন্দির হিসাবে। এখানে পূজিত হতেন শিব। পরবর্তীকালে সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতে এই মন্দিরের বাইরের অংশে বেশ কিছু নতুন নির্মাণ কাজ হয়েছিল। সেই কাজ দেখে ১৮৯৯ সালে জেমস ফার্গুসন বলেছিলেন যে এই মন্দিরটি সপ্তদশ বা অষ্টাদশ শতকে নির্মিত। কিন্তু এই মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর ও সিঁড়িগুলি সেই প্রাচীনযুগে নির্মিত বলেই প্রমাণিত হয়েছে।

শঙ্করাচার্যের মন্দিরের মধ্যে একটি সৌধ রয়েছে যার নাম জলোকা। কলহনের মতে এটি সম্রাট অশোকের পুত্র জলোকার স্মৃতিতে নির্মিত। সুতরাং মন্দিরটির আকৃতি, বৌদ্ধদের বিশ্বাস, অশোকের পুত্রের নামে সৌধ  সব মিলিয়ে এটি যে পূর্বে বৌদ্ধ মন্দির ছিল সেদিকেই ইঙ্গিত করে।

কাশ্মীরি হিন্দুদের বিশ্বাস আদি শঙ্করাচার্য এই মন্দিরে এসে তপস্যা করে শঙ্করাচার্য নামের অধিকারী হয়েছিলেন। এখানেই বসে তিনি সৌন্দর্যলহরী নামে পুঁথি রচনা করেছিলেন। এই মন্দিরে ওঠার যে সিঁড়ি প্রাচীন কালে ছিল সেই সিঁড়ি ছাড়াও ডোগরা রাজা গুলাব সিং (১৭৯২-১৮৫৭) দুর্গানাগ মন্দির থেকে শঙ্করাচার্যের মন্দিরের পাহাড় অবধি সিঁড়ি করে দিয়েছিলেন। প্রাচীন সিঁড়ির পাথরগুলি নুরজাহান ‘পাথর মসজিদ’ তৈরির কাজে ব্যবহার করেন।

মাইশোরের মহারাজা শঙ্করাচার্যের মন্দির দর্শন করতে এসে ১৯২৫ সালে পাঁচটি সার্চ লাইট এবং মন্দিরের চূড়ায় একটি লাইট লাগিয়েছিলেন। এগুলির বিদ্যুৎ বিলও তিনিই মেটাতেন।

১৯৬১ সালের তদানীন্তন দ্বারকাপীঠের শঙ্করাচার্য এই মন্দিরে এসে আদি শঙ্করাচার্যের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। শ্রী শ্রী অরবিন্দ এই মন্দির দর্শন করেন ১৯০৩ সালের আগষ্ট মাসে। আর আচার্য বিনোবা ভাবে এই মন্দির দর্শন করেন ১৯৫৯ সালে। মন্দিরে পৌঁছতে মোট ২৪০টি সিঁড়ি অতিক্রম করতে হয়। প্রতিটি সিঁড়ি অতিক্রম করার অর্থ একটু একটু করে আধ্যাত্মিক উত্তরণ। ধর্মার্থ ট্রাস্ট সাধুদের বসবাসের জন্য এখানে দুটি ঘর করে দিয়েছেন। এখানে সুন্দর একটি ফুলের বাগান আছে। পাহাড়ের উপর থেকে একদিকে পুরো ডাললেক অন্যদিকে ঝিলম নদী ও হরি পর্বত দেখা যায়।

এটি কুড়ি ফুট উচ্চতার অষ্টভুজাকৃতি ভূমির উপর চতুর্ভুজাকৃতি মন্দির। গোটা মন্দিরটি একটি মাত্র প্রস্তরখন্ডের উপরে অবস্থিত। প্রতি অমরনাথ যাত্রার সময় তীর্থযাত্রীরা এই মন্দির দর্শন করেন। শিবরাত্রির সময় এই মন্দির আলোকমালায় সজ্জিত হয়। এক বিলিয়ন কোভিড ১৯ ভ্যাকসিন দেওয়ার পর ২০২১ সালে ASI ভারতের ১০০ টি বিশেষ সৌধে আলো জ্বালিয়েছিল। তার মধ্যে শঙ্করাচার্যের মন্দির অন্যতম। যারা কাশ্মীর গিয়েও এই মন্দিরে ওঠেননি, তারা ১৯৭৪ সালের ‘আপ কি কসম’ সিনেমার জয় জয় শিব শঙ্কর গানটি দেখে নিতে পারেন। দুধের স্বাদ ঘোলেও কখনও কখনও মেটে বৈকি। এছাড়াও মিশন কাশ্মীর ও পুকার সিনেমার শুটিং এখানে হয়েছে।

পরিশেষে এটাই অনুভবের যে, যে মন্দির একই সঙ্গে বৌদ্ধ, হিন্দু ও মুসলমান রক্ষা করে আসছেন সেটা কি আলাদা করে হিন্দু মন্দির না সর্ব ভারতীয় স্থাপত্যের নিদর্শন?


আপনার মতামত লিখুন :

2 responses to “সর্ব ধর্ম সমন্বয় — ক্ষীর ভবানী ও শঙ্করাচার্যের মন্দির : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী”

  1. Bisweswar Jana says:

    Excellent Summary & collection which is very much authentic.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন