দক্ষিণ এশিয়ার বাংলা বহুকাল ধরেই বিশ্বব্যবসাকেন্দ্র ছিল [আজ খুবই অবিশ্বাস্য মনে হয়। নবাবি আমলেও বাংলায় ৩০টার বেশি দেশের বণিকেরা ঘাঁটিগেড়েছিল!]। আজকে ইওরোপ যাকে রেশমপথ বলে, তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারকারী অঞ্চল ছিল দক্ষিণ এশিয়া। দক্ষিণ এশিয়ার কারিগর, চাষী অন্যান্য পেশাদারের পণ্য, জ্ঞান সেবা, এই রাজপথ ধরে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে গিয়েছে। যারা জীবন দিয়ে সেই কাজ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়েছেন তাদের রেশম পথই ছিল জীবন জীবিকার একমাত্র রাস্তা। ব্যবসায়ীক, পণ্য পরিবহক, জ্ঞানভিক্ষু, সন্ত, তীর্থযাত্রী, ডাক-পরিবহক ইত্যাদির কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে সে সময়ের রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে পথ চলা রাস্তা মাপার জন্যে রাস্তায় কিছু চিহ্ন তৈরি করতে হয়েছিল। যুগে যুগে এই ব্যবস্থা সে সময়ের তাত্ত্বিকতায় তৈরি হয়েছে।
মেগাস্থিনিস মৌর্য যুগে রাস্তা মাপনের কাঠামো দেখেছিলেন। যদিও ঐতিহাসিকেরা বলছেন সুলতানি আমলে রাস্তা মাপনের কোনও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না, কিন্তু সুলতানি আমলের বাংলা, পুরোনো মালদায় নিমসরাই মুঘল আমলের আগের রাস্তা মাপনের কাঠামোর কথা মনে করিয়ে দেয়। নিমসরাই নিয়ে দুচার কথা বলে আমরা মূলত মুঘল আমলের রাস্তামাপন ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করব।
ফতেহপুর সিক্রির হিরন মিনার
নিমসরাই
শোনা যায় একদা বাংলায় প্রতি ছ কিমি অন্তর মুসাফির আর ব্যবসায়ীদের বিশ্রাম নেওয়ার জন্যে সরাইখানা ছিল। শের শাহ হিন্দুস্তানজুড়ে ১৭০০০ সরাইখানা তৈরি করান। নিমসরাইএর অর্থ হল নিম = অর্ধেক, সরাই = পথিকদের বিশ্রামস্থল। রাস্তা মাপা আর সরাই নির্দেশক মিনারের পাশেই ছিল সরাইখানা। এটি স্থাপিত ছিল গৌড় আর পাণ্ডুয়ার ঠিক মাঝখানে। মিনারের মাথায় রাতে আলো জ্বলত, যাতে জনগণ দূর থেকে মিনারটি লক্ষ্য করে সহজেই সরাইতে আসতে পারেন। এটাই মুঘলেরা বলতেন আকাশ দিয়া। পরে এখানে ডাচ, ফরাসি আর ব্রিটিশ কোম্পানি ব্যবসা কুঠি খুলেছিল।
মুঘল আমলের অন্যান্য মিনার
হস গোমানস বলছেন মুঘল বাদশারা রাজত্বের ৪০% সময় প্রাসাদের বাইরে কাটিয়েছেন। বাহাদুর শাহ একদিনও প্রাসাদে রাত কাটান নি। তারা যেখানে শিবির পাততেন সেখানে খুব উঁচু আকাশ দিয়া লাগাতেন যাতে মুসাফিরেরা প্রয়োজনে শিবিরে আসতে বিশ্রাম নিতে পারে। এটা তাদের মধ্য এশিয়ার ঘোড়ায় চড়া দিনগুলোর অভ্যেসক্রিয়া বজায় রাখার প্রচেষ্টা।
তাই তারা নির্দিষ্ট দূরত্বে কোস মিনার তৈরি করান। আকবরের একদা রাজধানী ফতেহপুর সিক্রির প্রধান দর্শনীয় হল হিরন মিনার, যেটা দেশের প্রধানতম কোস মিনার। এখান থেকে রাস্তার দূরত্ব গোনা শুরু হয়। ফতেহপুর থেকে প্রতি ক্রোসে যে মিনার পোঁতা হল তার নাম হল কোস মিনার (১ কোস = ১.৪৭ কিমি)। কোস মিনারের মাথায় থাকত আলো বা আকাশ দিয়া, যাকে লক্ষ্য করে দূর থেকে মানুষ রাতেও রাস্তার দিকচিহ্ন তৈরি করতেন।
আকবরের আগে বাবর জনৈক অভিজাত চিকমাক বেগকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তার আমলাদের সঙ্গে করে আগরা আর কাবুলের মধ্যের রাস্তা মাপন করে প্রতি নয় কোসে একটা করে ২৪/৩৬ ফুট উঁচু মিনার তৈরি করতে। বাবরের পর শের শাহ, যার প্রশাসনিক নানান দিক অনুসরণ করবেন সম্রাট আকবর। তিনি প্রত্যেক রাস্তায় কোস মিনার আর ৬/৭ কোস অন্তর সরাই আর ডাকচৌকি তৈরির নির্দেশ দেন। আকবর রাজত্ব শুরুর সময় থেকেই আঝমেড়ে তীর্থ করতে যেতেন। তিনিই প্রথম আগরা থেকে সেই রাস্তায় কোস মিনার তৈরি করতে নির্দেশ দেন। ১৬১৯-এ সম্রাট জাহাঙ্গির বাকির খানকে নির্দেশ দেন দুই রাজধানী, আগরা আর লাহোর মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্বে কোস মিনার তৈরি করতে। অধিকাংশ কোস মিনার কালের হস্তাবলেপনে মুছে গেছে। শুধু পাঞ্জাবে ৩৪টা এখনও টিকে আছে – কিছু আছে বাংলায়। মিনারগুলি আট কোণা ভিত্তি করে তৈরি হত। মাথায় রাখতে হবে অধিকাংশ মিনার আলাদা আলাদা আকারে তৈরি হয়েছে। খুব কম মিনার আছে একটা অন্যটার জবাব বা নকল।
Boraborer moto, oshadharon.
বাংলায় টিকে থাকা আটটা মিনার ঠিক কোথায় কোথায় রয়েছে?
Ei lekha ta pore etotai tothyosomriddho holam, je amar mone onek proshno jglo. European ra Bharoter ar Bnaglar ei Kos Minar er golpo ta puro chalan diyechen tader Light House gulor dik e. Othocho, concept ta ek i chilo.