হ্যাঁরে অনি, আমাদের গ্রামের আমরা দুজনেই কেমন ছন্নছাড়া হয়ে গেলাম।
অনাদি, দেবা….।
তোকে নতুন করে কিছু বলতে হবে না। আমি সবার খবর নিয়েছি। আমাকে তোর কাজে লাগলে বলবি আয়েষা তোর পাশে সব সময় থাকবে।
সারাটা দিন এলোমেলো অনেক কথা হলো। বলতে পারিস শৈশবের হারান স্মৃতি ফিরিয়ে এনে বর্তমানের বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে তাকে চুল চেরা বিচার। সন্ধ্যের দিকে বেশ কয়েকবার বেল বেজে উঠলো।
ও আমাকে বললো একবারে বাইরে বেরবি না। তারপর উঠে গিয়ে নিজেই সবাইকে ভাগিয়ে দিয়ে এলো।
সেদিন গল্প করতে করতে অনেক রাত হলো।
আয়েষা বললো, কি খাবি?
কেন, ভাত!
না আমার এখানে তোর ভাত খাওয়া হবে না। পারলে তুই নিজে রান্না করে খা।
হাসলাম। কেন?
মোচলমানের ঘড়ে বামুনের অন্নভোগ নিষেধ।
তোর গায়ে লেখা আছে।
ওসব কথার মারপ্যাঁচে আয়েষা ভুলবে না।
সেদিন আমি ওর বাড়িতে খিচুরি রান্না করলাম। ও সব কেটে কুটে গুছিয়ে দিল।
আয়েষা পাতলা পাতলা করে আলু কেটে দিল। আমি ব্যাসন মাখিয়ে জিরে ছিটিয়ে দিয়ে ভাজলাম। আর বেগুনি।
আয়েষা আমার রান্না দেখে হেসে গড়িয়ে পড়ে।
তুই কি এই ভাবে একা একা রান্না করে খাস।
তাহলে কি করবো, কে করে দেবে বল।
ওখানে কেটেকুটে কে গুছিয়ে দেয়?
কখনো নেপলা, কখনো সাগির, কখনো অবতার। যেদিন আমি রান্না করি সেদিন ওদের রান্না বন্ধ। এক সঙ্গে করে নিয়ে একটু ঘেঁটে দিলাম। তারপর থালায় হাঁড়ি উল্টিয়ে দিয়ে, ঘি ছেড়িয়ে দিলাম। গরম গরম খেতে খুব একটা খারাপ লাগে না।
প্রত্যেক দিন তোর রান্না করতে ভালো লাগতো?
কেউ না কেউ কলকাতা থেকে প্রায়ই যেত। কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ ছিলই, ওদেরকে বলতাম চিঁড়ে, ছাতু নিয়ে আসিস।
চিঁড়ে, ছাতু খেতিস।
হ্যাঁ।
আয়েষার হাসি আর থামে না।
সত্যি তুই এখনো গাঁইয়া রয়ে গেলি।
তারপর দু-জনে ভাগাভাগি করে খিচুড়ি খেলাম।
আয়েষা আমার হাতের তৈরি খিচুড়ি খেয়ে আমাকে বিরাট রাঁধুনীর সার্টিফিকেট দিল।
তারপর ওর ঘরে পরিপাটি করে আমার বিছানা করে দিল। ও ভেতরের ঘরে গেল।
সারাটা দিনের কথা বলার ক্লান্তিতে কখন ঘুমিয়ে পরেছিলাম জানি না।
পরদিন অনেক বেলায় আমার ঘুম ভাঙলো। দেখলাম আয়েষা ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রয়েছে। ঘড়ের দরজা ভেজান। কোন সাড়া শব্দ নেই। পরনে একটা লালপাড় শাড়ি আটপৌরে করে পড়েছে।
বেশ লাগছিল ওকে দেখতে, একবারে নিপাট বাঙালি ঘরের বধূ।
আমি বেশ কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বসে রইলাম। বুঝলাম বেচারা ঘুমিয়ে পড়েছে। খাট থেকে নামতে গিয়ে, ক্যাঁচ করে আওয়াজ হলো। আয়েষা চমকে চোখ মেলে তাকাল।
তুই কখন উঠলি।
এই তো মিনিট তিনেক চারেক।
আয়েষা সটাং উঠে দাঁড়িয়ে আমার কপালে হাত দিল, আমার হাতের তালুটা ওর গালে ঠেকাল। তারপর আমার দিকে বিষ্ময় চোখে তাকিয়ে বললো।
তোর শরীর ঠিক আছে।
কেন!
এমনি বলছি।
কি হয়েছে বল!
শোয়ার আগে তোর ঘরে একবার তোকে দেখতে এসেছিলাম। তুই ঘুমিয়েছিস কিনা। আমার ঘুম আসছিল না। এসে দেখি তুই ভুলভাল বকছিস। একটু ভয় পেয়েগেলাম। ভাবলাম তুই হয়তো স্বপ্ন দেখছিস। তোর কপালে হাত দিয়ে তোকে ডাকতে গিয়ে দেখি তোর গা পুড়ে যাচ্ছে। ওই কানা রাতে ডাক্তার পাই কোথায়। বাধ্য হয়ে গামছা ভিঁজিয়ে এনে তোর কপালে দিলাম। কি ঘুমরে বাবা, তুই একবারও চোখ মেলে তাকালি না। বার বার তুই পীরবাবার কথা বলছিলি।
ভোরের দিকে তোর কপালটা একটু ঠান্ডা হতে স্নান করে এসে তোর কাছে বসেছি।
আমি হাসলাম।
আমাকে নিয়ে তোর কি দুর্ভোগ বলতো।
মেলা বকিস না।
তোর লোকজন আসে নি।
সব ওপাশে আছে। বলেছি এদিকের ত্রিসিমানা মারাবে না।
ঘুটের ছাই আছে।
আয়েষা বাচ্চা মেয়ের মতো খিল খিল করে হেসে উঠলো।
তুই এখনো।
হ্যাঁ, চিকনা পাঠায় ওতেই হয়ে যায়।
আজকের দিনটা কষ্টে শিষ্টে পেষ্ট দিয়ে মেজে নে।
তাই একটু দে।
তোর একটা গেড়ুয়া নিয়ে এসেছি।
এইতো পরে আছি। আবার নিয়ে আসতে গেলি কেন।
বাশি পরবি।
তুই পঁটা বামনি কবে থেকে হলি?
আয়েষা হেসেই যায়।
তুই বাথরুমে যা আমি সব গুছিয়ে রেখে এসেছি। কাপরটা ছেড়ে রেখে আসবি, আমি কেচে দেবো।
বাথরুম থেকে আবার আয়েষার ঘর। দেখলাম সব গোছান হয়ে গেছে। সংযোজন বলতে বেশ কয়েকটা চেয়ার। বুঝলাম এবার সকলে আসবে আলাপ করতে।
তুই ওই ইজি চেয়ারটায় বোস।
কেন।
কালকে থেকে আমার কর্মচারীদের না দেখতে পেয়ে মাথা খারপ করছিলি। এবার তাদের দেখবি না।
হাসলাম।
বাচ্চাদের মতো মাথা থেকে জল গড়িয়ে পরছে, ঠিক মতো মুছতেও পারিস না।
আমি নিজের গায়ের ওর্নাটা টেনে মাথাটা মুছতে যাচ্ছিলাম।
আয়েষা দাঁত মুখ খিঁচিয়ে তেরে এলো, চস্বর কাই কারার।
হেসে ফেললাম।
ও নিজের আঁচল দিয়ে আমার জটা মোছাল।
চা আনতে বলি।
বল।
কি খাবি।
দুটো বিস্কুট দে।
মুড়ি কিনে এনেছি, নারকোল কোড়া একটু ঘি দিয়ে মেখে দিই।
তাই দে, আমি কিন্তু এবার বেরবো।
সবার সঙ্গে দেখা করবি না।
তাড়াতাড়ি।
আয়েষা দরজার গোড়ায় গিয়ে আমিনা বলে চেঁচিয়ে উঠলো।
একে একে সবাই এলো।
আমিনা, আসাদুল, অর্জুন, ওর সেই চাচা। আরও অনেকে। বেশ মনে আছে অর্জুন সেদিন একটা সাদা পাজামা পাঞ্জাবী পরেছিল। অনেকক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকিয়েছিল। তারপর আয়েষার কথায় আমার পায়ে হাত ঠেকাতে এসেছিল। আমি ওর হাতটা ধরে ফেলছিলাম।
শরীরটা বড়োসরো হলেও মুখের আদলটা ঠিক ছিল।
আমাকে চিনতে পারো।
আম্মি বলেছে।
কাঁধে হাত রেখে ওর চোখে চোখ রেখেছিলাম। ও বেশিক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে নি। চোখ নামিয়ে নিয়েছিল।
জামিলভাই এলো একটু বেলার দিকে।
সেদিন বেড়তে বেড়তে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল। আসার সময় আয়েষার চোখটা ছল ছল করছিল।
দিল্লীতে ফিরে নিজের কাজ, আবার আমার জায়গা।
আমি থামলাম।
জানিস কনি, সেই রাতটা আমার ভীষণ ভাল কেটেছিল। আয়েষার মধ্যে দিয়ে আমি যেন তনু, মিত্রাকে দেখতে পাচ্ছিলাম।
আয়েষার গল্প শেষ হতে, আমার গল্প ওকে শোনালাম। শুনতে শুনতে কখনো ও কেঁদে ফেললো, কখনো ও রেগে আগুন হয়ে গেল। ওর খুব ইচ্ছে ছিল মিত্রা-তনুকে ও একবার চোখের দেখা দেখবে। সে সাধ ওর এই জীবনে পূরন করতে পারলাম না।
আমি অনেকক্ষণ পুকুরের জলটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। চারদিক নিস্তব্ধ। ঝির ঝিরে বাতাসে গাছের পাতা কাঁপছে। ফর ফর আওয়াজ চারদিকে ম ম করছে।
দেখে নিস, তোদের কথা দিলাম, দেবার মৃত্যুটা খুনের ইতিহাসে খোদাই করে লেখা থাকবে।
ডুকরে কান্নার আওয়াজে চমকে পেছন ফিরে তাকালাম।
নীরুর কান্নার আওয়াজ।
ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
কনিষ্ক, বটা, অনিকেতের চোখ জবা ফুলের মতো লাল। তনু মিত্রার সঙ্গে চোখা-চুখি হতে মাথা নীচু করে নিল। ওদের পাশে মিলিরা চোখ মুছছে। মোরাম ফেলা ছোট বাঁধটার ওপর অর্জুনরা সকলে মাথা নীচু করে বসে আছে। মেয়েরা ধীর পায়ে আমার দিকে এগিয়ে এলো।
নীরুর পিঠে হাত রাখলাম।
চল বেরতে দেরি হয়ে যাবে।
নীরু তবু ছাড়লো না। ওর কান্না থামে নি।
আমি বলতে চাই নি, তোরা শুনতে চেয়েছিলি।
তবু কেউ নিজের জায়গা ছেড়ে এতটুকু নড়লো না।
অনিকা, অনিসা, নম্রতা কাছে এসে দাঁড়াল। সবার চোখ ছল ছল করছে।
আমি একটুও কাঁদি নি বিশ্বাস করো। অনিসার গলাটা ভাড়ি হয়ে এলো। মাথা নীচু করে নিল।
অনিকা, নম্রতার চোখ মুখটা কেমন দুমড়ে মুচড়ে গেল।
এবার ছাড়।
নিজেকে নীরুর হাত থেকে মুক্ত করলাম। ধীর পায়ে মোরাম ফেলা ছোট বাঁধটার ওপর উঠে এলাম। অর্জুন উঠে দাঁড়িয়ে সামনে এসে দাঁড়াল। বিনদ, আলতাফ, ভিক্ষু, নেপলাদের চোখমুখটা ভাল ঠেকলো না।
আমি অর্জুনের দুই কাঁধে হাত রাখলাম।
অর্জুন ঝড় ঝড় করে কেঁদে ফেললো।
এতোবার তোমাকে আম্মির কথা জিজ্ঞাসা করেছি, তুমি বলো নি।
শুনলি তো তোর মায়ের গোপন কথা। তাকে কষ্ট দিই কি করে।
তোমার কথা মতো বাক্সটা কোন দিন কাছ ছাড়া করি নি। ওটা এই বাড়িতে রেখে যাই।
না। তোর মা তোর সঙ্গে যতদিন থাকবে, তোর কোন বিপদ হবে না।
তুমি আছ।
আমি তোকে গর্ভে ধরি নি।
অর্জুন আমাকে জড়িয়ে ধরলো। কান্না থামে নি।
বিনদ, আলতাফ আমার কাছে এসে দাঁড়াল। ওদের চোখ মুখের অস্বাভাবিকতা আমার চোখ এড়াল না।
ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম, তোরা তো আয়েষাকে দেখেছিস।
ওরা মাথা নীচু করে নিল।
দেবা আমার, জীবনে একটা খুন অন্ততঃ আমাকে করতে দে।
নেহি।
বিনদের কর্কশ কণ্ঠস্বর চারিদিকে গম গম করে উঠলো। অর্জুন আমার বুক থেকে মুখ তুললো।
বিনদ কথা বলছে না চোখ দুটো ছলছল করছে। ওর না বলা কথা, টলটলে চোখের জলে লেখা আছে।
ঠিক আছে, আমাকে জিজ্ঞাসা না করে কিছু করিস না। তাহলে আয়েষা কষ্ট পাবে।
বিনদ ফুঁপিয়ে উঠলো।
ঠাঁই ঠাঁই করে গুলির আওয়াজ হলো। গাছের ডালে বসে থাকা পাখিরা, যে যেদিকে পারলো ঝটপট শব্দে ডানা মেলে আকাশে উড়ে গেল। রিনিঝিনি করে সেই শব্দ চারদিকে ভেসে বেরাচ্ছে।
চমকে সামনের দিকে তাকালাম।
চকিতে অর্জুন, বিনদের কোমর থেকে পিস্তল ঝলসে উঠলো।
দেখলাম কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা অভিমন্যুর হাত থেকে পিস্তলটা খসে পরলো, ও থর থর করে কেঁপে মাটিতে পরে গেল।
নেপলা, চাঁদরা ছুটে ওর কাছে গেল।
বিনদ আমার দিকে তাকাল। চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরছে।
ও ঠিক সহ্য করতে পারে নি। ওকে পুকুরের ধারে ধরে নিয়ে যা। চোখে মুখে জল দে।
আমি আর একমুহূর্ত ওখানে দাঁড়ালাম না। মোরাম রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করলাম।
মাথা নীচু করে শুয়োরের মতো ঘঁত ঘঁত করে হাঁটছি। কোনদিকে আর তাকালাম না। বাজার পেরিয়ে বাঁধে উঠে পরলাম।
সধন বাঁকুড়ার ঘরের কাছে আসতে দেখলাম চিকনা হনহন করে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে আসছে। কাছে আসতে আমি দাঁড়িয়ে পরলাম। চিকনাও দাঁড়িয়ে পড়েছে।
কিরে কোথায় যাচ্ছিস? আমি চিকনার মুখের দিকে তাকালাম। থম থমে মুখ।
বেলা হলো, বেরতে হবে, তোদের ডাকতে যাচ্ছিলাম।
চল, যেতে হবে না। ওরা আসছে।
চিকনা তবু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। চোখদুটো মনে হলো ছলছল করছে।
কি হলো চল।
কেন এমন করিস।
কই! কিছু করি নি।
একটা অঘটন না ঘটিয়ে তুই ছাড়বি না।
না না সকলের নার্ভ সমান নয়।
সামনের দিকে তাকালাম। দেখলাম মীরচাচা, বাসু দৌড়তে দৌড়তে আসছে। সামনে এসে থমকে দাঁড়াল। দুজনেরই চোখে মুখে উৎকণ্ঠা। আমার মুখের দিকে একবার তাকায় একবার চিকনার মুখের দিকে।
ওরা কোথায়? বাসু বললো।
তুই যা, আমি ওর সঙ্গে যাচ্ছি। চিকনা বললো।
তোরা বৃথা টেনসন করছিস।
বাসু, মীরচাচা দাঁড়াল না। বাজারের দিকে হনহন করে হাঁটতে শুরু করলো। আমি চিকনা ধীর পায়ে হাঁটতে শুরু করলাম।
কেউ কোন কথা বললাম না। নিজেদের পায়ের শব্দ নিজেরা পাচ্ছি
মৌসুমী মাসির বাড়ির কাছে আসতেই দেখলাম, ছোটোমা নদী বাঁধে দাঁড়িয়ে।
এখান থেকেই বুঝলাম ছেলেকে নিয়ে বড্ড টেনসনে পরে গেছে।
ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে ছোটোমার কাছে এসে দাঁড়ালাম। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছোটোমা চোখ নামিয়ে নিল। আমি ছোটোমাকে জড়িয়ে ধরলাম।
চলো, সকলে ঠিক আছে।
ছোটোমা একটা কথাও বললো না। ছোটোমার গলা জড়িয়েই ওইটুকু পথ হেঁটে খামারে এসে দাঁড়ালাম। বড়োমা, মাসীমনি, আন্টি, বৌদি, দামিনীমাসি দাঁড়িয়ে। বারান্দায় আর সকলে বসে।
আমি হেসে বললাম, তোমরা রেডি।
কেউ আমার কথার কোন উত্তর দিল না। আমার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে।
ছোটোমাকে ছেড়ে বড়োমাকে জড়িয়ে ধরলাম।
বিশ্বাস করো, আমি বলতে চাই নি। কনিষ্ক জোড় করলো। তাই অভিমন্যু একটা ছোট্ট ভুল করে ফেলেছে। সবাই এখুনি চলে আসবে।
বান্ধবী চলে এসো। ওরা চলে এসেছে। ডাক্তারদাদা বারান্দা থেকে চেঁচিয়ে উঠলো।
বড়োমার মুখের দিকে তাকালাম।
ওই তো দেখলে, তোমায় বললাম না, কিছু হয় নি।
বড়োমার চোখ ছল ছল করছে।
বড়োমা, ছোটোমাকে ধরে বারান্দায় এলাম। আফতাবভাই, দিদি পাশাপাশি বসে। দু-জনের কেউই আমার চোখ থেকে চোখ সরায় নি।
মাসীমনি, বিধানদা, অনিমেষদা চেয়ারে বসেছে।
সুরোমাসি ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো। আমাকে দেখে থমকে দাঁড়াল।
হেসে ফেললাম।
একটু চা খাওয়াও। সোনাআন্টি, বৌদি বেঞ্চিতে বসলো। বড়োমা, ছোটোমা চেয়ারে।
আমি দিদির পাশে বেঞ্চিতে বসলাম। জ্যেঠিমনিকে ধারে কাছে দেখতে পেলাম না।
খামারের দিকে চোখ পরতেই দেখলাম তিনটে ট্রলি ঢুকছে। প্রথমটাতেই মিত্রারা বসে সঙ্গে বনি, সুরো আছে। ট্রলিটা থামতেই সুরো ছুটে এসে আমার কোলে বসে পরে জড়িয়ে ধরলো। খামারের দিকে তাকিয়ে সুরো চেঁচিয়ে উঠলো।
বনি আগে আমি একটু ভাগ নিই পরে তুই নিস।
আর আদর দেখাতে হবে না। বড়োমা দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো।
ফর ফর করছ কেন, ধরে আগা-পাসতলা দিতে পার না।
বড়োমা মুখ ঘুরিয়ে হেসে ফেললো। সকলেই হাসতে শুরু করেছে।
সুরো আমার দিকে তাকাল।
দেখলে।
আমি সুরোর দিকে তাকিয়ে।
মিত্রারা এসে বারান্দায় দাঁড়াল।
সব নাচনদাররা এলেন। বড়োমা আবার বললো।
সুরো মিত্রার মুখের দিকে তাকাল।
ছাড়োতো। কিছু করার মুরদ নেই, খালি ফর ফর।
মিত্রা হেসে ফেললো।
সুরো বড়োমার মুখের দিকে তাকাল।
তোমাকে বৌদি শোনাই নি। তখন ফঁসফঁস করছিলে কেন।
সবাই কম বেশি হেসে চলেছে।
এবার তুই ওঠ, আমি একটু বসি। বনি বললো।
ওর ঠ্যাং ভেঙে যাবে। বড়োমা বললো।
তোমার কোলে যেন বসছি। সুরো উঠে পড়েছে, বনি বসতে বসতে আমার গলা জড়িয়ে ধরে গালে গাল ঘসলো। বললো।
আজ তুম সবকো রুলা দিয়া।
আমি বনির মুখের দিকে তাকালাম।
আঁশুওকা এক এক বুঁদ কি কিমত তুমকো চুকানা পারেগা।
আমার ঠোঁটের কোনে হাসির ঝিলিক।
বনি দিদির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো। আফু আঙ্কেলকো মার দুঁ।
দিদি জোড়ে হেসে উঠলো।
বনি আমার গলা ছেড়ে পাশে বসে দিদির গলা জড়িয়ে ধরলো।
ও কাহানি শুনা না?
দিদি বনির দিকে তাকিয়ে।
হীরা কা কিমত সে ভি জাদা।
দিদির চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো।
রোনা মাত।
বারান্দাতেই সকলে ভিড় করে দাঁড়িয়ে। ভিড় ঠেলে অভিমন্যু কাছে এসে দাঁড়াল।
আমি অভিমন্যুর চোখে চোখ রাখলাম। মাথা নীচু করে নিল।
কন্ট্রোল ইওর সেলফ।
অভিমন্যু ফুঁপিয়ে উঠলো। সুরো অভিমন্যুর পিঠে হাত রাখলো।
বেরতে বেরতে নটা বেজে গেল।
খামারেই দুটো ট্রলি দাঁড়িয়ে আছে। যাদের আগে শেষ হচ্ছে তারাই গিয়ে ট্রলিতে চেপে বসছে। ট্রলি বাজার পর্যন্ত ছেড়ে আবার চলে এসেছে।
আমি বারান্দার বেঞ্চে বসে ছিলাম। মীরচাচা, বাসু আমার দু-পাশে বসে আছে।
আয়েষার ঘটনাটা ফিস-ফাস করে সকলের জানা হয়েগেছে। কম বেশি সকলেই ভীষণ রি-এ্যাক্ট করেছে। আমাকে কেউ কিছু না বললেও। চোখে-মুখে কম বেশি তার প্রতিচ্ছবি লক্ষ করেছি।
বড়োমা কথা বললেও ছোটোমা ফিরে আসার পর খুব বেশি একটা কথা বলে নি। যতবার হাসি হাসি মুখ নিয়ে তাকিয়েছি, চোখ নামিয়ে নিয়েছে। মাসীমনি ভাবলেশহীন মুখে আমার দিকে তাকিয়ে থেকেছে।
অনি। মীরচাচার ডাকে তাকালাম।
সে কি আর আইসবে নি?
কে বলো?
অর্জুন।
তোমায় নতুন করে কি বলবো বলো।
চাচী মোকে কইছে তার ভাগের সম্পত্তি তাকে বুঝি দিতে।
মীরচাচার দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
তুই হাসিস নি, ছিল নি ছিল নি, অখন আসি পরছে….।
ওকে বলেছ এসব কথা?
তাকে কইতে বুকে বল পাই নি।
কেন?
কি বলতে কি কয়ে দেয়।
তুমি তো ওর সম্পর্কে মামা হও।
চাচা মুখ নীচু করে রইলো।
বলে দেখতে পারতে।
তুই একবারটি তাকে ক। তোর কথা সে শুনবে।
কি করে বুঝলে।
কাল চাচীকে আয়েষার ফটক দেখাইছিল। চাচী ফটক দেইখে কাঁদি ফেললো। তা অর্জুন কইল, দাদি কাঁদ নি। অনিদা শুনতি পেলি কষ্ট পাবে। অনিদা তো মাকে আগ্রা থেকে বম্বে নিয়ে গেছল। মাকে আর নাচতে, গাইতে দেয় নি। সেখানে একটা ফ্ল্যাটে মন্যে থাকতি।
এখনো ফ্ল্যাটটা আছে। মায়ের সব জিনিসপত্র সেঠি আছে। চাচীকে কইছে তুমি মোর সঙ্গে চল। চাচী শুধু কাঁদিছে, কিছু কয় নি। তারপর কইলো, শুধু মোর কাছে মায়ের বাক্সটা রইছে। আমি যেখানেই যাই অনিদা কইছে বাক্সটা যেন মোর সঙ্গে থাকে।
মিত্রারা ভেতর থেকে বাইরের বারান্দায় এসে দাঁড়াল।
আমার মীরচাচার মুখের দিকে তাকিয়ে। বুঝল সকালের তরজা এখনো চলছে।
চল।
আর সবাই?
কখন বেরিয়ে গেছে।
কই দেখলাম না।
তাহলে এখানে বসে বসে কি করছিলি।
মীরচাচার সঙ্গে কথা বলছিলাম।
মিত্রা মীরচাচার দিকে তাকাল।
কাল অর্জুন চাচীকে যা কইছিল তাই কইতিছিলি। তুমাকে তো কইছি।
মিত্রা হাসলো।
কি বললো।
কিছু কয় নি।
তনু, ইসি, নয়না আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
কালই তোমাকে বলেছিলাম এইসব ভেবে কষ্ট পাবে না।
মনকে লেয় নি।
মেনে নিতে হবে।
মীরচাচা মাথা নীচু করলো। বয়স হইছে।
ঠিক আছে আমি ওকে বলে দেব ও যখন সময় পাবে তোমাদের সাথে এসে দেখা করে যাবে।
সেউ হইলে তাকে অন্ততঃ চোখের দেখা দেখতি পাব। তার মাকে সেই কইচা সময় দেখছিলি।
মীরচাচার চোখ দিয়ে জল পরতে শুরু করেছে।
কাঁদবে না। কাকী, সুরোমাসি রইল। সাবধানে থাকবে।
তোমায় ভাবতি হবে নি।
আমি কাকী, সুরোমাসিকে প্রণাম করে পায়ে পায়ে খামারে চলে এলাম।
ওরা সকলে আমার পেছন পেছন চলে এলো।
বিজয়, লক্ষ্মী দাঁড়িয়ে। দু-জনের দুটো ট্রলি। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের এই পরিবারের সঙ্গে ওতো-প্রতোভাবে জড়িয়ে আছে। একসময় বিজয়, লক্ষ্মীর বাবারা আমাদের মত পরিবারের লোক জনকে নিয়ে পাল্কি কাঁধে মাঠের পর মাঠ ছুটে বেরাত। এখন ট্রলি হয়েছে। একসময় বিজয়, লক্ষ্মীর বাবারা আমাদের জমি চাষ করতো। আমি বাসন্তীমাকে দান করার পরও তার ছেলেরা সেইভাবে চাষ করে চলেছে।
আমার সমস্যাটা তুমি আর মিটাইলে নি।
বিজয়ের দিকে তাকালাম।
তোর আবার কি সমস্যা?
তর সইছে নি, তাকে কইতি হবে। মীরচাচা ধমকে উঠলো।
তুমি তো সব জানো চাচা।
তোকে সবুর করতি কইছি।
কতদিন হয়্যাল কও।
অনি কি এঠি আইসে তোর সমস্যার সমাধান করবে, তার আর কাজ লাই।
দাদা একবারটি মুখে কয়া দিলে, সব সমস্যা মিটি যাবে।
মীরচাচার দিকে তাকালাম। কি হয়েছে কি?
তাকে হাঁড়ি পাড়ায় থাকতে দিবে নি। সে নাকি এখন জমিদার লোক হয়্যা মরছে।
হাসলাম। কে বলেছে?
ওনকার জ্ঞাতি গুষ্টি।
চিকনাকে বলেছিলি। বিজয়ের দিকে তাকালাম।
দু-বার গেছলো। কাজ হয় নি। সে কইছে এবার পিটবে। মীরচাচা বললো।
আমি মীরচাচার দিকে তাকিয়ে।
তুই গ্রামের রাজনীতি বুঝবি নি। বুঝাইলে যদি না হয় পিটতি হবে। উইঠা বস দেরি হয়ে যায়ঠে।
আমি ট্রলিতে উঠে বসলাম। আমার সঙ্গে মীরচাচা বাসু বসলো। আর একটা ট্রলিতে মিত্রারা চারজন বসলো।
নদী বাঁধ দিয়ে আসতে আসতে দেখলাম, মৌসুমি মাসির ঘরটা বন্ধ। বাসুর দিকে তাকালাম।
কিরে মৌসুমীমাসি যাচ্ছে নাকি?
সে সবার আগে গিয়ে বাজারে বসেছিল। ছোটগিন্নীকে নিয়ে তার দেশে যায়ঠে।
বুড়ীর দম আছে।
দম আছে কিরে! গ্রামে আর কারুর জানতে বাকি নেই।
নিশ্চই মাসীমনির গাড়িতে উঠেছে?
তবে আর কোথায় উঠবে।
কথা বলতে বলতে, বাজারে চলে এলাম। দেখলাম আরও চারটে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।
কাছে আসতেই নেপলা দাঁত বার করলো। বিনদ-অর্জুন বাসুর দোকানের ভেতর থেকে নেমে এলো। বুঝলাম বাবুরা আমাকে ছেড়ে একপাও নরবে না।
সত্যি তুমি না। নেপলা বলে উঠলো।
এত দেরি কেন ম্যাডাম। নেপলা মিত্রার দিকে তাকাল।
একটা গাড়িতে দেখলাম সুরো, বনি, মিলিরা বসে আছে।
মিলি ওখান থেকেই চেঁচিয়ে উঠলো, মিত্রাদি বাবু ঠিক আছেন?
মিত্রা হাসলো। নেপলার দিকে তাকাল। কার কথার উত্তর দেব।
নেপলা হাসছে।
বড়োমারা চলে গেছে?
হ্যাঁ। চকে নাকি অনেক কাজ।
আমি কনিষ্কর দিকে তাকালাম। দেরি করে আর লাভ কি?
কনিষ্ক হাসছে।
আজ আমার গাড়ির ড্রাইভার নেপলা। মাঝের সিটে বটা, অনিকেত, নীরু, কনিষ্ক পেছনে দেবা, চিকনা, অভিমন্যু, ঝিনুক। মাম্পি, মিকি ছাড়া বাবানকেও আজ আমার সঙ্গে গুঁজে দিয়েছে। ওদের নিয়ে আমি সামনের সিটে। তিনজনের কারুর মুখে সেলোটেপ লাগান নেই। অনর্গল বক বক করে চলেছে। বাবান এরই মধ্যে দু-একবার নেপলার ঘাড়ে উঠতে চেয়েছে। চেপে ধরেছি।
নেপলা আমার দিকে তাকিয়ে হেসেছে।
আমার সামনের গাড়িতেই বিনদদের ফুলটিম। ওই গাড়ি রতন চালাচ্ছে।
সাঁই সাঁই করে গ্রামের মেঠো পথ ধরে এঁকে বেঁকে গাড়ি ছুটে চলেছে।
সবাই যেন আজ মুখে কুলুপ এঁটেছে। কেউ কোন কথা বলছে না। একমাত্র মাম্পিরা নিজেদের মধ্যে কিচির মিচির করে চলেছে। আমি মাঝে মাঝে জানলার দিকে তাকাই আবার সামনের দিকে। উনা মাস্টারের বাড়ি পেরিয়ে আদাশিমলার শেষ সীমানায় চলে এলাম।
আমিই প্রথম নিস্তব্ধতা ভাঙলাম। চিকনা।
বল।
এদিকে সব ঠিক ঠাক আছে।
হ্যাঁ।
কার ওপর দায়িত্ব দিলি।
মীরচাচা রইল পচা-পাঁচু-ভানু আছে।
সব তৈরি কি বল।
তুই আসলি মালটা ছার তো। কোঁতাচ্ছিস কেন? চিকনা খেঁকিয়ে উঠলো।
আমি পেছনের দিকে তাকালাম।
কখন শুনলি অনি গুলি খেয়েছে?
কথাটা শুনে নেপলা প্রথমে জোড়ে হেসে উঠলো। হাসির ঢেউ পেছন পর্যন্ত ছুঁয়ে গেলো।
হারামি। চিকনা আস্তে করে বলে উঠলো।
দেখলাম সকলে জোড়ে হাসলেও অভিমন্যু মাথা নিচু করে খিক খিক করে চলেছে।
আমাদের হাসির শব্দ শুনে মাম্পিও হি হি করে হেসে উঠলো।
গাল দিলু। আমি বললাম।
মাম্পিও আমার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙিয়ে উঠলো, গাল দিলু।
কনিষ্করা জোড়ে হেসে উঠলো।
নীরু হাসতে হাসতেই বললো, কনিষ্ক সাবধান।
আমায় বলে কি হবে, অনিকে বল।
কেন?
ট্রান্সফার করে দিয়েছি।
কবে!
অনেকদিন।
গাই-বাছুর সমেত?
নীরুর কথা শেষ হলো না। ওরে বাবারে মরে গেলামরে বলে তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো।
নেপল হাসতে হাসতেই গাড়িটা ভোলার দোকানের সামনে এসে দাঁড় করাল।
হাসির ঢেউ গাড়ির চারপাশে আছড়ে আছড়ে পরছে।
গাড়ি থামতেই পেছনের দরজা খুলে অভিমন্যু, ঝিনুক, চিকনা হাসতে হাসতে নেমে চলে গেল। নেপলা সামনের গেট খুলে নিচে নেমেই বিকট শব্দে হাসতে আরম্ভ করেছে।
সামনের গাড়ি থেকে রতন, বিনদরা নেমে এগিয়ে এসেছে। ওরা প্রথমে অতটা বুঝতে পারে নি। নেপলাকে ওই রকমভাবে হাসতে দেখে প্রথমে কিছুটা অবাক হয়েছে।
মাঝের সিটে নীরুকে বটা, কনিষ্ক, অনিকেত, দেবা প্রায় টিপেই মেরে দেবে।
মাম্পি, মিকি, বাবান সিটের ওপর দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছে।
রতন এগিয়ে এসে নেপলাকে ইসারায় জিজ্ঞাসা করলো, ব্যাপারটা কি বল?
নেপলা হাত তুলে গাড়ির দিকে দেখিয়ে বললো, দাঁড়া আগে হেসে নিই, তারপর।
চিকনা, মিত্রাদের গাড়ির দিকে চলেগেল। টাটকা খবরটা দিতে হবে।
কিছুক্ষণ পর ওখান থেকে হাসির শব্দ ভেসে আসছে।
তুই কিছু বলতে পারছিস না। নীরু চেঁচিয়ে উঠলো।
আমি কি বলবো। আমিও হাসছি।
মজমা নিবি তুই, ঝাড় খাব আমি।
এবার দেখলাম বিনদ, অর্জুনরা হাসতে হাসতে গাড়িতে হেলান দিয়ে দিয়েছে।
আমি আমার সাইডের দরজাটা খুলতেই মিকি, মাম্পি, বাবান আমার ঘাড়ের ওপর দিয়ে নিচে নেমে বড়োমাদের গাড়ির দিকে দৌড় দিল।
মিলি হাসতে হাসতে গাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল। পেছনে অদিতি, টিনা, শ্রীপর্ণা।
মিত্রা, তনুকে দেখলাম বড়োমার গাড়ির কাছে। বুঝলাম খবরটা ওই পর্যন্ত এবার পৌঁছল।
এখান থেকেই দেখতে পাচ্ছি বড়োমারা সকলে মুখ টিপে হাসছে।
তোমার বড়কে কিছু বলতে পারছো না। নীরু মিলির দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝিয়ে উঠলো।
তুমি বলতে গেলে কেন।
যা সত্যি তাই বলেছি।
কনিষ্ক তখনো নীরুর থাইটা শক্ত করে ধরে আছে।
আমার লাগছে, এবার কামড়ে দেব।
কামড়া। বটা নীরুর ঘাড়টা শক্ত করে ধরেছে।
যা আমারটা ভাগা ভাগি করে নে।
আবার আমাকে নিয়ে টানাটানি কেন? শ্রীপর্ণা বলে উঠলো।
আমি এখন যুধিষ্ঠির। বউকে বাজি রেখে নিজে মুক্তি পেতে চাই।
ওদের রকম সকম দেখে কেউ আর গম্ভীর নেই।
কনি বৌদি বৌদি। অনিকেত বলে উঠলো।
বৌদি ওই গাড়ি থেকে আমাদের গাড়ির কাছে আসতেই নিজেরা ছাড়াছাড়ি করে নিল।
কপট গম্ভীর হয়ে বৌদি বললো, তোদের কি বয়স হবে না?
অনেকটা রাস্তা যেতে হবে, তাই গা গরম করে নিলাম। নীরু বেশ গম্ভীর হয়ে বলে উঠলো।
বৌদি আর দাঁড়াল না। হাসতে হাসতে চলে গেল।
নীরু। আমি বললাম।
বল।
সকাল থেকে অনেক হাঁটাহাঁটি হয়েছে। গা-হাত-পা বেশ ম্যাজ ম্যাজ করছিল, ম্যাসেজটা ভালই হলো বল। এখন পুরো ফিট।
আমি দাদ, হাজার মলম সঙ্গে নিয়ে আসি নি।
মিলিরা হেসেই চলেছে।
তুই নীচে নামবি না?
কনিষ্ক নামলেই নামবো।
কনি।
বল।
ভোলাকে বল নীরুর জন্য ডবল ডিমের অমলেট, ডবল দুধের চা।
বটা খ্যাক খ্যাক করে হেসে উঠলো।
খুব খুশবু নেওয়া হচ্ছে তাই না। নীরু আমার দিকে তাকিয়ে খিঁচিয়ে উঠলো।
ফিস ফিস করে বললো, হারামী।
তুই চোর, চোরের মন সব সময় বোঁচকার দিকেই থাকে। কনিষ্ক বললো।
ম্যানাবোতল, শোনো। নীরু তাকাল টিনার দিকে।
বটা আবার নীরুর ঘাড়টা চেপে ধরলো।
ওই দেখ, বেওয়ারিশ লাস পেয়েছিস নাকি?
টিনারা একে অপরে হেসে গড়াগড়ি খায়।
ভোলা আমার সামনে এসে দাঁড়াল।
তোমরা নামবে না!
কেন?
দোকানে বসবে চলো।
চল।
আমি নামলাম।
মিলি আমার আর ভোলার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে। আমি ফিক করে হেসে ফেললাম।
কিগো কনিষ্কদা। ভোলা কনিষ্কর দিকে তাকিয়ে।
যাচ্ছি, তুই জল গরম কর।
হয়েগেছে।
কনিষ্ক হাসছে।
(আবার আগামীকাল)