শনিবার | ৪ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৩:০৯
Logo
এই মুহূর্তে ::
পঞ্চানন কুশারীর জাহাজী গানই কি কবির লড়াইয়ের মূল উৎস : অসিত দাস দিব্যেন্দু পালিত-এর ছোটগল্প ‘ঝালমুড়ি’ নকশালবাড়ি আন্দোলন ও বাংলা কবিতা : কার্তিক কুমার মণ্ডল নিঃসঙ্গ ও একাকিত্বের আখ্যান : পুরুষোত্তম সিংহ ভিয়েতনামের গল্প (পঞ্চম পর্ব) : বিজয়া দেব অন্তরের আলো জ্বালাতেই কল্পতরু উৎসব : সন্দীপন বিশ্বাস কল্পতরু — এক উত্তরণের দিন : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী চলচ্চিত্র উৎসবে পানাজি থেকে কলকাতা (শেষ পর্ব) : সায়র ব্যানার্জী ফেলে আসা বছরে দেশের প্রবৃদ্ধির পালে হাওয়া না ঝড় : তপন মল্লিক চৌধুরী কার্ল মার্কসের পরিজন, পরিকর (শেষ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার জোয়ানিতা ম্যালে-র ছোটগল্প ‘নাইট জব’ অনুবাদ মনোজিৎকুমার দাস দেশজ ফসলের বীজকে কৃষির মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে হবে নদিয়া বইমেলা মুখপত্র : দীপাঞ্জন দে চলচ্চিত্র মহোৎসবে পানাজি থেকে কলকাতা (প্রথম পর্ব) : সায়র ব্যানার্জী শৌনক দত্ত-র ছোটগল্প ‘গুডবাই মাষ্টার’ হেলান রামকৃষ্ণ শিশু বিতানের রজত জয়ন্তী বর্ষপূর্তি উৎসব পালিত হল মহাসমারোহে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কার্ল মার্কসের পরিজন, পরিকর (ষষ্ঠ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার জীবনানন্দ দাশের স্বপ্নের নদী ধানসিঁড়ি আজও আছে কিন্তু মৃতপ্রায় : মনোজিৎকুমার দাস মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-এর ছোটগল্প ‘শঠে শাঠ্যং’ যথোচিত মর্যাদায় পালিত হল খানাকুলের রূপকার শান্তিমোহন রায়ের জন্মদিন : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় আবার দেখা যদি হলো সখা প্রাণের মাঝে আয় — নেতাজী নগর বিদ্যামন্দিরের পুনর্মিলন : সুশান্ত দাস মোদি বনাম মনমোহন: ইতিহাস বারবার এই বিশ্লেষণ করবে : সন্দীপন বিশ্বাস কবির লড়াইয়ের স্রষ্টা হলেন রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষ পঞ্চানন কুশারী : অসিত দাস চল্লিশতম নদিয়া বইমেলা স্মরণিকা : দীপাঞ্জন দে ভাগ্নার পদধূলিতে ধন্য হল মামার বাড়ি, বেলুড় মঠ ও মিশন অধিগ্রহণ করে মর্যাদা দিল : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ভিয়েতনামের গল্প (চতুর্থ পর্ব) : বিজয়া দেব কার্ল মার্কসের পরিজন, পরিকর (পঞ্চম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার ভিয়েতনামের গল্প (তৃতীয় পর্ব) : বিজয়া দেব চব্বিশে ভোট আর ফলাফলে ছিল উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক পরিবর্তন : তপন মল্লিক চৌধুরী কার্ল মার্কসের পরিজন, পরিকর (চতুর্থ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই ২০২৫ ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

জীবনানন্দ দাশের স্বপ্নের নদী ধানসিঁড়ি আজও আছে কিন্তু মৃতপ্রায় : মনোজিৎকুমার দাস

মনোজিৎকুমার দাস / ৯১ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

জীবনানন্দ দাশের বহু কবিতায় তাঁর প্রিয় নদী ধানসিঁড়ি বারবার উঠে এসেছে রূপময় ছন্দে, উপমার আকারে। এই নদী আজ কেমন আছে তা বলার আগে তাঁর কবিতা থেকে দেখবো তিনি ধানসিঁড়িকে কি চোখে দেখেছিলেন।

আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে — এই বাংলায়

হয়তো মানুষ নয় — হয়তো বা শঙখচিল শালিকের বেশে, —

সবকিছু ছাপিয়ে ধানসিঁড়ি জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বিশেষ ভূমিকা নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে।

জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কবিতা ‘হায় চিল’। এই কবিতায় কবি তাঁর প্রেয়সীর উদ্দেশ্যে কি বলেছেন আমরা দেখবো।

হায় চিল

হায় চিল, সোনালি ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে

তুমি আর কেঁদোনাকো উড়ে-উড়ে ধানসিঁড়ি নদীটির পাশে!

তোমার কান্নার সুরে বেতের ফলের মতো তার ম্লান চোখ মনে আসে;

পৃথিবীর রাঙা রাজকন্যাদের মতো সে যে চ’লে গেছে রূপ নিয়ে দূরে;

আবার তাহারে কেন ডেকে আনো? কে হায় হৃদয় খুঁড়ে

বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!

হায় চিল, সোনালি ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে

তুমি আর উড়ে-উড়ে কেঁদোনাকো ধানসিঁড়ি নদীটির পাশে।

‘অন্ধকার’ কবিতায় কবিকে ধানসিঁড়ি নদীর তীরে শুয়ে থাকার বাসনা প্রকায় করতে দেখি এভাবে — ‘ধানসিড়ি নদীর কিনারে আমি শুয়েছিলাম পউষের রাতে-কোনোদিন আর জাগবো না জেনে কোনদিন জাগবো না আমি — কোনদিন জাগবো না আর’ —

ধানসিঁড়ি নানাভাবে কবিতা রচনার উৎস হয়ে উঠেছে তার কাছে। যেমন দেখি — ‘এসব কবিতা আমি যখন লিখেছি বসে নিজ মনে একা, চালতার পাতা থেকে টুপ টুপ জ্যোৎস্নায় ঝরেছে শিশির কুয়াশায় স্থির হয়েছিল ম্লান ধানসিঁড়িটির তীর, ধানসিঁড়ির প্রতি কবির গভীর ভালবাসা ব্যক্ত হয়েছে এই পঙক্তিমালায় —

‘আমাকে সে নিয়েছিল ডেকে;

বলেছিলো, এ নদীর জল

তোমার চোখের মতো ম্লান বেতফল :

স্নিগ্ধ রাখছে পটভূমি।

এই নদী তুমি।’

এর নাম ধানসিঁড়ি বুঝি?

রূপসী বাংলার কবি লিখেছেন, —

‘পৃথিবীর পথ ঘুরে বহু দিন অনেক বেদনা প্রাণে সয়ে

ধানসিঁড়িটির সাথে বাংলার শ্মশানের দিকে যাবে বয়ে, যেইখানে এলোচুলে রাম প্রসাদের সেই শ্যামা

আজো আসে

যেইখানে কল্কা পেড়ে শাড়ি পরে কোন এক সুন্দরীর শব

চন্দন চিতায় চড়ে-আমের মাথায় শুক ভুলে যায় কথা যেইখানে সবচেয়ে বেশি রূপ সবচেয়ে গাঢ় বিষন্নতা যেখানে শুকায় পদ্ম-বহুদিন বিশালাক্ষী যেখানে নীরব আর জলসিঁড়ি।

সত্যিই জীবনানন্দ দাশের স্বপ্নের নদী ধানসিঁড়ি জলসিঁড়ি। জলসিঁড়ি নদীর পারে শুয়ে পড়তে চেয়েছেন কবি বাংলার পরিপূর্ণ রূপ দরশনে — ‘একদিন জলসিঁড়ি নদীটির পারে এই বাংলার মাঠে বিশীর্ণ বটের নিচে শুয়ে র’ব;

পশমের মতো লাল ফল ঝরিবে বিজন ঘাসে বাঁকা চাঁদ জেগে রবে।

নদীটির জল বাঙালি মেয়ের মতো বিশালাক্ষী মন্দিরের ধূসর কপাটে আঘাত করিয়া যাবে-ভয়ে ভয়ে’ (একদিন জলসিঁড়ি) জীবনানন্দ দাশ বনহংস হতে চেয়েছেন আর বনহংসীকে নিয়ে নিরালা নীড় রচনা করতে চেয়েছেন জলসিঁড়ি নদীর ধারে। ‘আমি যদি বনহংস হতাম, বনহংসী হতে যদি তুমি

কোন এক দিগন্তের জলসিঁড়ি নদীর ধারে ধান খেতের কাছে ছিপ ছিপে শরের ভিতর

এক নিরালা নীড়ে।’ (আমি যদি হতাম)

কবি পাড়াগাঁকে ভালোবেসেছেন। দু-পহরের রৌদ্রে যেন গন্ধ লেগে আছে স্বপনের। এই পড়াগাঁর দু’পহরেই কবি আবিষ্কার করেছেন-‘জলসিঁড়িটির পাশে ঘাসে শাখাগুলো নুয়ে আছে বহুদিন ছন্দহীন বুনো চালতার।’

(পাড়াগাঁর দু-পহর) কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে ধানসিঁড়িই জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বিশেষ ভূমিকায়। ধানসিঁড়ি নানাভাবে কবিতা রচনার উৎস হয়ে উঠেছে তার কাছে। যেমন দেখি —

‘এসব কবিতা আমি যখন লিখেছি বসে নিজ মনে একা,

চালতার পাতা থেকে টুপ টুপ জ্যোৎস্নায়

ঝরেছে শিশির

কুয়াশায় স্থির হয়েছিল ম্লান ধানসিঁড়িটির তীর’ (এ-সব কবিতা আমি)

ধানসিঁড়ির প্রতি কবির গভীর দুর্বলতা ব্যক্ত হয়েছে যে কবিতায় —

‘আমাকে সে নিয়েছিল ডেকে ;

বলেছিলো, এ নদীর জল তোমার চোখের মতো ম্লান বেতফল :

স্নিগ্ধ রাখছে পটভূমি।

এই নদী তুমি।’

কবির মন বলল এর নাম ধানসিঁড়ি বুঝি?

প্রণয়িনীকে শুধালেন তিনি। ধানসিঁড়ির আরো উপস্থিতি পাওয়া যায় —

‘মেঘের দুপুরে ভাসে —

সোনালী চিলের বুক হয়ে উন্মন মেঘের দুপুরে, আহা, ধানসিঁড়ি নদীটির পাশে,

সেখানে আকাশে কেউ নেই আর

নেই আর পৃথিবীর ঘাম’ (সিন্ধু সারস)

কবি অন্যত্র লিখেছেন —

‘যদিও আমার চোখে ঢের নদী ছিলো একদিন

পুনরায় আমাদের দেশে ভোর হলে,

তবুও একটি নদী রেখা যেত শুধু তারপর;

কেবল একটি নারী কুয়াশা ফুরোলে

 নদীর রেখার পার লক্ষ্য করে চলে’ (স্বভাব)

সেই একটি নারী যে-ই হোক না কেন, একটি নদী ধানসিড়িই বুঝি।

আর ‘শঙ্কমালা কবিতায় কবিকে যে খুঁজে ছিল তাঁর ও স্বীকাররোক্তি — ‘বেতের ফলের মতো নীলাভ ব্যথিত তোমার দুই চোখ খুঁজেছি নক্ষত্রে আমি-কুয়াশার পাখনার —

‘সন্ধ্যায় নদীর জলে নামে যে আলোক জোনাকির দেহ হতে খুঁজেছি তোমাকে সেইখানে

ধূসর পেঁচার মতো ডানা মেলে অঘ্রাণের

অন্ধকারে ধানসিঁড়ি বেয়ে বেয়ে।’

ধানসিঁড়ি জলসিঁড়ি, শিপ্রা, ধলেশ্বরী যে নদী-ই হোক না কেন জীবনানন্দ দাশের হৃদয়ের নদী, একথা সত্য যে নদী কবির কাব্যে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কবিতাকে প্রাণ দিতে, নান্দনিকতার ছোঁয়া দিতে কবির নদী বন্দনার তুলনা নেই। প্রিয়ার উপমায় নদীই কথা বলে।

ধানসিঁড়ির দৈর্ঘ্যে ১৩ কিলোমিটার। আজ আমাদের অনেক নদীর নিয়তির মতো রূপান্তরিত হয়েছে খালে। হয়ত একদিন নিশ্চিহ্নও হয়ে যাবে। একসময় নদীটির নাম ছিল ধানসিদ্ধের বাঁক।

বৃহত্তর বরিশালের ঝালকাঠি শহরের অদূরে ধানসিঁড়ি নদীর অপার সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর কবিতায় বারবার উল্লেখ করেছেন এর নাম। ঝালকাঠির সুগন্ধা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে ঝালকাঠির মোল্লাবাড়ি, বারৈবাড়ি এবং রাজাপুরের হাইলকাঠি, ইন্দ্রপাশা ও বাঁশতলা — এই গ্রামগুলোর বুকচিরে বয়ে চলা ধানসিঁড়ি এসে রাজাপুরের জলাঙ্গী (জাঙ্গালিয়া নদী) মোহনায় মিশেছে।

ধানসিঁড়ি নদীর প্রথম নাম ছিল ধানসিদ্ধ নদী। অনেকের মতে, ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার দিকে বয়ে যাওয়া এ নদীটি পারাপারে এক ডোঙা ধান সিদ্ধ হওয়ার সমপরিমাণ সময় লাগত বলে এর নাম ছিল ধানসিদ্ধ নদী। কথিত আছে, এক ডোঙা ধানসিদ্ধ হতে যে সময় লাগে নদীটি পার হতেও ওই একই সময় লাগতো।

কবি জীবনানন্দ দাশ ধানসিঁড়ি নামটি বারবার তাঁর কবিতায় ব্যবহার করে নদীটিকে বিখ্যাত করে গেছেন এভাবে নানা পঙক্তিমালায়। জীবনানন্দ দাশের স্বপ্নের নদী ধানসিঁড়ি আজও আছে কিন্তু মৃতপ্রায়।

মনোজিৎকুমার দাস, কথাসাহিত্যিক, লাঙ্গলবাঁধ, মাগুরা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন