২০০১ সাল থেকে ইউরোপিয় তথ্য-চিত্রপরিচালকদের সঙ্গে কাজ করছেন প্রভাস দাস। ২০১৮র ১৮ ডিসেম্বরের ‘দি টেলিগ্রাফ’ কাগজের একটি প্রতিবেদনে চোখ আটকে যায় তাঁর। প্রতিবেদনে ছবি ছিল একটি, যেখানে জঙ্গলের প্রেক্ষাপটে এক নদীর ওপর দাঁড়ানো একটি লোক এক বৃদ্ধের সঙ্গে কোনও কথা বলছেন। লেখাটি পড়ে জানতে পারেন বাংলার এক লেখক শৈলেন সরকার সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন সেই বৃদ্ধের। বৃদ্ধ খোসেন শেখ সুন্দরবন বঙ্গোপসাগের মোহনার ‘কে’ প্লটের বাসিন্দা। উনি সেই ৭৫ বছর আগে হওয়া পঞ্চাশের আকাল বা তেতাল্লিশের মন্বন্তরের নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছেন। শৈলেন সরকার নাকি ২০১৩ সাল থেকে খুঁজে খুঁজে সেই পঞ্চাশের আকালের পর তখন পর্যন্ত বেঁচে থাকা মানুষদের সঙ্গে কথা বলছেন। সেই আকালের দিনগুলিতে তারা কী দেখেছেন, কী খেয়েছেন, বেঁচেছেন বা কী ভাবে তার বিবরণ সংগ্রহ করছেন।
খুঁজেপেতে কলেজ স্ট্রিট থেকে শৈলেন সরকারের ‘দুর্ভিক্ষের সাক্ষী’ বইটি পড়ার পর তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা মেল করে ইতালির ডিয়েগো ডি’এনসেনঝোকে জানান। আর পরিচালক ডিয়েগো ডি’এনসেনঝো তক্ষুনি তাকে শৈলেন সরকারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। মূল বইটির ইংরেজি অনুবাদ পড়তে চান। ইতিমধ্যে আমেরিকার প্রিন্সটনবাসী হার্ভার্ডের প্রাক্তন ছাত্র ও ইংরেজি ভাষার ‘দি এপিক সিটি’ বইটির লেখক কুশনাভ চৌধুরী বইটির অনুবাদ শুরু করেছেন। পাঠান হল সেই অনুবাদ।
পরিচালক ডিয়েগো ডি’এনসেনঝোর সঙ্গী ক্যামেরাম্যান মার্কো পাসকুইনি। আন্ডার ওয়াটার ফটোগ্রাফিতে মার্কো পাসকুইনি এক পৃথিবী জোড়া নাম। ওঁরা ২০২০তেই আসবেন বলে ঠিক করে ফেলেছিলেন। বাদ সেধেছিল করোনা। অবশেষে ২০২৩। কিন্তু ইতিমধ্যে ২০১৮র বই ‘দুর্ভিক্ষের সাক্ষী’র ৫২ জনের মধ্যে মারা গেছেন ৪৩ জন। তাহলে? প্রভাসবাবু বললেন মাত্র ৯ জনে কী হবে? ওঁরা এতদূর থেকে আসবেন। শৈলেনবাবু জানালেন এই তিন বছরে তিনি বিভিন্ন জেলার আরও ১১ জনের সাক্ষাৎকার নিয়ে রেখেছেন অর্থাৎ মোট কুড়ি জন।
ডিয়েগো ডি’এনসেনঝো ও মার্কো পাসকুইনি তাদের যাত্রা শুরু করছেন ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে। ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে তাঁরা অনুসরণ করবেন সাক্ষাৎকার নিতে থাকা শৈলেন সরকারকে। মার্ক পাসকুইনি তাঁর ক্যামেরায় ধরবেন জেলা নদিয়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা, দক্ষিন ২৪ পরগনা বা সুন্দরবনের দুর্ভিক্ষের সাক্ষীদের। থাকবেন তখনকার পুর্ব পাকিস্তানের ঢাকা, বরিশাল, নারায়নগঞ্জে শৈশব কাটানো ও পরে উদ্বাস্তু হয়ে বিভিন্ন কলোনিতে আশ্রয় নেওয়া সাক্ষীরাও।
তাকিয়ে থাকলাম আরও খবরের জন্যে।