নিরঞ্জনি পিল্লাই, পেশায় আইনজীবী। দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকতেন বাবা মায়ের সঙ্গে। পারিবারিক শাড়ির ব্যবসা। দিল্লির বাসিন্দা সুমিত হান্ডা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবার আশায় চলে যান ডারবান, নিরঞ্জনির বাবার প্রতিষ্ঠানে। এক অনুষ্ঠানে আলাপ হয় সুমিত এবং নিরঞ্জনির। পরবর্তীতে প্রেম এবং বিয়ে। বছরখানেক বাদে তারা ভারতে ফিরে আসেন।
প্রথমদিকে বেশ আনন্দে জীবন কাটলেও, কয়েক মাস বাদে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। নিরঞ্জনির এক বন্ধু দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে নিয়মিত ভিডিও কলে গল্প করতেন। শুরুতে অসুবিধা না হলে ধীরে ধীরে সম্পর্কে সন্দেহের বাসা বাঁধে, মনোমালিন্য শুরু হয় তা থেকে ঝগড়া এবং পরে তা হাতাহাতিতে পৌঁছয়।
চরম পরিণতি ঘটে ২০১১-এর ২৯ শে অক্টোবর। প্রবল অশান্তিতে আচমকা স্ত্রীর পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেয়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে মোবাইল ফোনের চার্জার গলায় পেচিয়ে শ্বাসরোধ করেন সুমিত। বাথরুমে গিয়ে দেহের বিভিন্ন অংশ টুকরো টুকরো করে ট্রলি ব্যাগে ভরে লাগোয়া এক জঙ্গলে গিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।…
কিম্বা ধরুন — আরুষি তলওয়ার হত্যা ২০০৮ সাল বা নয়না সাহনি হত্যা যা ‘তন্দুর হত্যাকাণ্ড’ নামে বেশি পরিচিত সারা দেশে শোরগোল ফেলে দিয়েছিল।…
কিম্বা দিল্লি হত্যা মামলার যে চিত্র চলমান তদন্তের পটভূমিতে এসেছে তা গোটা বিশ্বকে হতবাক করেছে। গত ১৮ই মে আফতাব পুনাওয়ালার বিরুদ্ধে তার লিভ-ইন পার্টনার শ্রদ্ধা ওয়াকারকে খুন ও দেহ ৩৫ টুকরো করে মেহরৌলির জঙ্গলে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রায় ছয় মাস পর এই খুনের হদিশ পাওয়া যায়।
এরকম ঘটনার উদাহরণ বা নজির ভুরি ভুরি ছড়িয়ে আছে সমাজে। চারিদিকে যে এতো নারী খুন, লাঞ্ছনা, নিগ্রহের খবর আমরা পাই তাই শুনে কি কখনো মনে হয়না যে, চারিপাশে একগাদা কামুক পুরুষ ওৎ পেতে রয়েছে — সুযোগ পেলেই দাঁত-নখ বের করে ঝাঁপিয়ে পড়বে মেয়েদের ওপর। আসলে ক্ষমতাবান মানুষদের ক্ষমতাহীনদের উপর দখলদারির এক পরিচিত পন্থা হলো তাকে নিগৃহীত করা। সভ্যতার সেই উষালগ্ন থেকে শুরু হয়ে আজো সেই সহিংসতা ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। ‘সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে’, সমাজের অস্থি মজ্জায় ঢুকে থাকা একপেশে ধারণাটি মেয়েদের দুঃখ-যন্ত্রণা-একঘেয়েমির একটি কারণও বটে।
নারী যেমন সুচারুরূপে ঘর-সংসার সামলায় আবার শ্রমজীবী হয়ে ইটও ভাঙে, অফিসও করে। নির্বাচনে কে জিতববেন বা কে পিছিয়ে পড়বেন, অনেকটাই নির্ভর করে নারী ভোটারদের উপর। অথচ বিশ্বজুড়ে একবিংশ শতাব্দীতে নারী নির্যাতনের ঘটনা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সমাজের কাছে।
জাতিসংঘের প্রধান (UN Chief) সেক্রেটারি জেনারেল আন্তোনিও গুতেরেস (António Guterres) জানান, প্রতি ১১ মিনিটে একজন নারী বা একজন বালিকা পরিবারের একজন সদস্য বা অন্তরঙ্গ অংশীদার দ্বারা ব্যাপক সহিংসতার সম্মুখীন হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩০ শতাংশ নারী তাদের অন্তরঙ্গ পার্টনারের কাছ থেকে শারীরিক এবং/অথবা যৌন সহিংসতার শিকার হন।
গার্হস্থ্য সহিংসতা যা “ঘনিষ্ঠ সঙ্গী নির্যাতন” বা গৃহ নির্যাতন নামেও পরিচিত। এটি বিবাহ বা একসাথে বসবাসের (লিভ ইন) মতো পারিবারিক পরিবেশে সংঘটিত সহিংসতা বা অন্যান্য নির্যাতনকেও বোঝানো হয়। শারীরিক, যৌন, মানসিক এবং অর্থনৈতিক অপব্যবহার, ধর্মীয়, প্রজননমূলক এবং যৌন নির্যাতন-সহ একাধিক রূপ-এর অন্তর্গত। যেখানে সূক্ষ্ম, জবরদস্তিপূর্ণ রূপ থেকে শুরু করে বৈবাহিক ধর্ষণ, দমবন্ধ, মারধর, নারী জননাঙ্গের বিকৃতি এবং এসিড নিক্ষেপের মতো সহিংস শারীরিক নির্যাতন পর্যন্ত হতে পারে যা অবশেষে পঙ্গুত্ব বা মৃত্যু ডেকে আনে। পারিবারিক হত্যাকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে পাথর মেরে হত্যা করা, গৃহবধূকে অগ্নিদগ্ধ করা, অনার কিলিং বা সম্মান রক্ষার্থে হত্যা এবং যৌতুকের কারণে মৃত্যু (যা কখনও কখনও পরিবারের সদস্যদের যোগসাজসে হয়ে থাকে)।
পারিবারিক সহিংসতা একটি অপরাধ!
এই উদ্দেশ্যে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২৫ নভেম্বরকে “নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা নির্মূলের আন্তর্জাতিক দিবস” (International Day for the Elimination of Violence Against Women) হিসেবে মনোনীত করেছে (রেজোলিউশন ৫৪/১৩৪)। দিবসটির মূল উদ্দেশ্য হলো, নারী ধর্ষণ, গার্হস্থ্য সহিংসতা এবং অন্যান্য ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে সরকার, এনজিও এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি বিশ্বব্যাপী জন সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
জাতিসংঘের প্রধান বলেন, বিশ্বজুড়ে নারীর প্রতি সহিংসতা সবচেয়ে ব্যাপক ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’। তিনি এই দুর্যোগ মোকাবেলায় জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
১৯৬০ সালের ২৫ নভেম্বর লাতিন আমেরিকার দেশ ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে ন্যায়সংগত আন্দোলন করার জন্য প্যাট্রিয়া, মারিয়া তেরেসা ও মিনার্ভা মিরাবেল — এই তিন বোনকে হত্যা করা হলে তাদের স্মরণে ১৯৮১ সাল থেকে এই দিনটি আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিবাদ দিবস হিসেবে পালিত হয়।
২০২২-এর থিম হল ‘নারী ও মেয়েদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে সক্রিয়তা’ যার লক্ষ্য হবে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য সমস্ত সমাজকে সক্রিয় করার জন্য, নারী অধিকার কর্মীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করতে এবং বিশ্বজুড়ে নারীবাদী আন্দোলনকে সমর্থন করার জন্য সক্রিয় করা।
নারীর অধিকারের উপর রোলব্যাক প্রতিরোধ করুন এবং VAWG (নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে সহিংসতা) থেকে মুক্ত বিশ্বের জন্য আহ্বান জানান।
অপরাধীদের জাত-ধর্ম-বর্ণ নেই। শাস্তি তার প্রাপ্য। প্রতিবাদ না হলে বিকৃত মনষ্কদের সাহস আরো বৃদ্ধি পাবে।যেদিন পরিবার বা সমাজ পাশে নিয়ে নারী নিজে তার অধিকারের জন্য সরব হবে, প্রশাসন সক্রিয় হবে সেদিন সুখি-সমৃদ্ধ সমাজ ও দেশ গড়ে উঠবে। “সংসার সুখের হবে রমনীর গুণে/ গুনবান পতি যদি থাকে তার সনে”।
Source :Various sources have been referred to for information.
Khub bhalo Initiative.
আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই 🌹
প্রতি মুহূর্তে প্রতিটি নারীর মনে ভয় দ্বন্দ্ব অস্থির করে রাখে,কি হয়?কি হবে?কারন আজও পৃথিবী
পুরুষ শাসিত নীতি নিয়মের মুখ চেয়ে থাকে প্রতিটি দেশের নারী সমাজ* নারীর বিরুদ্ধে হিংসা
অশালীন অপমানের বিরুদ্ধে নারীকেই সঙ্ঘবদ্ধ
প্রতিবাদ প্রতিরোধের জন্য রুখে দাঁড়াতে হবে।
সুন্দর আবশ্যক শিক্ষাপ্রদ প্রতিবেদন সবার পড়া
উচিত।পেজ ফোর ও রিঙ্কি সামন্তকে ধন্যবাদ।
বড়ো ভালো বললেন। অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই আপনাকে 🌹
সময়োপযোগী লেখা। ভাল লিখেছেন।
অনেক ধন্যবাদ 🌹
খুব সুন্দর লেখনী 👏👏👏
থ্যাঙ্ক ইউ 🌹