আরামবাগের ছ’টি ব্লকে আলুচাষে বিমার ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে চাষিদের মধ্যে শুরু হয়েছে ক্ষোভ-বিক্ষোভ। বিগত বছরের তুলনায় ফসলের বিমা করার সময় চাষিদের বেশি টাকা দিতে হয়েছে। অথচ বেশ কিছু এলাকায় ক্ষতিপূরণের যে অঙ্ক স্থির করা হয়েছে তা জলঢালা অঙ্ক বলে চাষিরা ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন। প্রসঙ্গত, আলু বসানোর সময় এখানকার ব্লকগুলোতেএ বৃষ্টি হয়ে যাওয়ার কারণে বেশিরভাগ জমিতে আলুবীজ পচে গিয়েছিল। সেক্ষেত্রে চাষিদের পুনরায় আলু বসাতে হয়। তারপরেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফলন হয়েছে কম। এমত অবস্থায় আলু চাষে ক্ষতিপূরণ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ শুরু হয়েছে চাষিদের মধ্যে।
বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বিভিন্নরকম হলেও এমন কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে যেখানে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ খুবই কম বলে মনে করছেন এলাকার চাষিরা। ফলে চাষিরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছে বিভিন্ন এলাকায়। গোঘাট১ ব্লকের সাওড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ক্ষতিপূরণের শতকরা হার নিয়ে শুরু হয়েছে ক্ষোভ। এই পঞ্চায়েতে ০.০৯ শতাংশ ক্ষতিপূরণ স্থির হয়েছে। অর্থাৎ ১০০ টাকায় মাত্র ৯ পয়সা ধার্য্য করায় চাষিরা সম্প্রতি স্থানীয় সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি এবং স্থানীয় ব্যাঙ্কে বিক্ষোভ দেখায়। পার্শ্ববর্তী নকুন্ডা, বালি, গোঘাট, কুমুড়সা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ক্ষতিপূরণের শতাংশ কোথাও ৭ শতাংশ কোথাও ৩৩ শতাংশ। সাওড়া এলাকার চাষিদের অভিযোগ, এই দ্বিচারিতা আমরা মানবো না। উপগ্রহ চিত্র ধরে যে ক্ষতিপূরণ কষা হয়েছে তা নতুন করে ঠিক করতে হবে। শুধু সাওড়া নয়, গোঘাট-১ এবং গোঘাট-২ ব্লকের আরও বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েতের চাষিদেরও একই অভিযোগ। শ্যামবাজার গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার চাষিদের অভিযোগ আমরা মাত্র ৮.৬৮ শতাংশ ক্ষতিপূরণ পাচ্ছি। অথচ আমাদের পাশে পশ্চিমপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত পাচ্ছে ২৩.১৪ শতাংশ। এই দ্বিচারিতা কেন
হবে ? আমাদের ব্লকের পার্শ্ববর্তী বদনগঞ্জ ফুলুই-১ গ্রাম পঞ্চায়েত, বদনগঞ্জ ফুলুই-২ গ্রাম পঞ্চায়েত যথাক্রমে ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে ১৮.০৬ শতাংশ এবং ২০.৮৭ শতাংশ। কুমারগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েত পাচ্ছে ৭৮.৫১ শতাংশ। বালি গ্রাম পঞ্চায়েতের চাষিদেরও একই অভিযোগ, তারা মাত্র ৭.০৩ শতাংশ ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে। একই অভিযোগ গোঘাট গ্রাম পঞ্চায়েতের চাষিদের। নকুন্ডার চাষিদের অভিযোগ, আমাদের এখানে ৭.০৪ শতাংশ ক্ষতিপূরণ পাচ্ছি অথচ কুমুড়সা গ্রাম পঞ্চায়েত পাচ্ছে ৩৩.৯ শতাংশ। অপরদিকে আরামবাগ ব্লকের ক্ষেত্রেও এমন দ্বিচারিতার কথা বলছেন চাষিরা। সালেপুর-১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে মাত্র ৩ শতাংশ, তিরোল পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে ৬.২১ শতাংশ ধার্য্য করা হয়েছে। অপরদিকে মাধবপুর পঞ্চায়েতে ৯.০২ শতাংশ, বাতানল পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে ধার্য্য করা হয়েছে ১৫.৫২ শতাংশ। আরামবাগ পৌর এলাকার জন্য ১২.২২ শতাংশ ধার্য্য করা হয়েছে।
এছাড়াও পুরশুড়া, খানাকুল ব্লক দুটিতেও চাষিদের মধ্যে বীমার টাকা নিয়ে জোরদার শুরু হয়েছে বিক্ষোভ । জেলা জুড়ে এমন বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার চাষিদের বহু অভিযোগ আছে। অপরদিকে খানাকুল-১ এবং ২ পঞ্চায়েত সমিতি এলাকার কোনো সমবায় সমিতিকে ছাড়ের কথা জানানো হয়নি। তা নিয়ে ওইসব পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের মধ্যে শুরু হয়েছে তোলপাড়। যদিও জেলা সমবায় সমিতির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সমবায় সমিতিকে জানানো হয়েছে আগামী ২৪ জুন প্রতিটি সমবায়কে তাদের ছাড়ের বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। বর্তমানে বিভিন্ন সমাজমাধ্যমে বিমায় ছাড়ের যে তালিকা ঘোরাফেরা করছে তার সত্যতা স্বীকার করেনি সমবায় সমিতি জেলা দপ্তর। এদিকে বিভিন্ন সমবায় সমিতির পক্ষ থেকে মিটিং শুরু হয়েছে ব্লকের এডিএ এবং সিআই-দের সাথে। সমিতির আধিকারিকদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ শীঘ্রই জানানো হবে বলে সুত্রের খবর। বিভিন্ন সমবায় সূত্রে খবর এই সকল ক্ষতিপূরণের টাকা চাষিদের সমবায় কিংবা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যাবে। চাষিরা সেই টাকা তুলতেও পারবেন। তবে সমবায়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সকল চাষিদের ঋণ খেলাপি আছে তাদের ক্ষেত্রে খেলাপির টাকা পরিশোধ করা হতে পারে।