হাঁস চাষ। একদিকে প্রোটিন সমৃদ্ধ ডিম, অপরদিকে সুস্বাদু মাংস। গোটা রাজ্য জুড়ে এর চাহিদা বাড়ছে। বাড়ি বাড়ি হাঁস পালন, সেই সঙ্গে খামার তৈরি করে হাঁসের চাষ বাড়ানো। মাংস ও ডিমের চাহিদা মেটাতে পারে রাজ্যই। একদিকে কর্মসংস্থান, সেই সঙ্গে ছোট বড় শিল্প তৈরির ভাবনা। তাই রাজ্য সরকারও চুপচাপ বসে নেই। বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ডিম ও মাংসের চাহিদা মেটাতে সম্প্রতি রাজ্যসরকার একগুচ্ছ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তাতে উৎসাহিত বেকার যুবকরা এবং স্বনির্ভরগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত মহিলারাও।
প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে মুরগির ডিমের চেয়ে হাঁসের ডিম উচ্চ প্রোটিনযুক্ত। সেই সঙ্গে ভিটামিন ও খনিজ বিদ্যমান। আয়রন, বি-১২, ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ হাঁসের ডিম। এছাড়া উপকারী ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডও আছে। যা মানবশরীরে প্রয়োজনীয়।
প্রসঙ্গত, আমাদের রাজ্যে হোয়াইট পিকিং, খাকি ক্যাম্পবেল ও পাতিহাঁসের চাষ শুরু হয়েছে। তবে হোয়াইট পিকিং- এর চাহিদা বাড়ছে। প্রাণীসম্পদ দফতর ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে হাঁস প্রজনন খামার গড়ে তুলেছে কল্যাণীতে। এখান থেকে রাজ্যের বিভিন্ন হাঁস খামারগুলিতে বাচ্চা নিয়ে গিয়ে চাষ হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত আর্থিক বছরে রাজ্য সরকার হরিণঘাটা বিপণন কেন্দ্র থেকে ৫ টন হাঁসের মাংস বিক্রি করেছে। শীত মরসুমে এর চাহিদা যথেষ্ট ছিল। মাংসের পাশাপাশি হাঁসের ডিমের চাহিদা বাড়ছে। এজন্য খাকি ক্যাম্পবেল, হোয়াইট পিকিং এবং পাতিহাঁসের চাষ হচ্ছে। খাকি ক্যাম্পবেল ছ-সপ্তাহ পর ডিম পাড়ে। বছরে কমপক্ষে ৩০০ ডিম দিতে পারে পাতিহাঁস। এক থেকে তিন বছরের মধ্যে ডিম দেয়। সেক্ষেত্রে খাকি ক্যাম্পবেল ১৭ থেকে ১৮ সপ্তায় পরই ডিম দেওয়া শুরু করে। রাজ্য প্রাণীবিকাশ দফতর সূত্রে জানা গেছে, হাঁসের মাংস ও ডিমের যোগান বাড়ানো আমাদের লক্ষ্য। তিনি আরও বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর ডিম উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশেষ উৎসাহ প্রকল্প চালু করেছেন। হাঁসের খামার খোলার জন্য বিশেষ মূলধনী অনুদান প্রদান, প্রয়োজনীয় জমি কেনার জন্য শুল্ক ও রেজিস্ট্রেশন খাদে ভর্তুকি প্রদান। এছাড়া চলতি বছর পর্যন্ত মেয়াদি ঋণে সুদের উপর ভর্তুকি প্রদান, বিদ্যুতের দামে ও মাশুলে ভর্তুকি প্রদান। সেই সঙ্গে রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাইনর খামার খুলতে সবরকম সাহায্য করা হচ্ছে। ইচ্ছুক স্থানীয় পঞ্চায়েত বা বিএলডিও অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন হাঁস চাষের ব্যাপারে। এতে সরকার সবরকম সহযোগিতা করবে।
উল্লেখ করতেই হয়, রাজ্য প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতর (এআরডি) হাঁসের খামার বীরভূমের লাভপুরে গড়ে তুলেছে। এখানেও লক্ষ হাঁসের চাষ করা যাবে। প্রতিদিন আড়াই কোটি ডিমের প্রয়োজন। তা মেটাতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে খামার গড়ে তোলা দরকার। যে হারে চাহিদা বাড়ছে, তাতে হাঁস চাষ বাড়িয়ে ডিমের যোগান দিতে হবে। প্রতিদিন এখনও দক্ষিণ ভারত থেকে বিশেষ করে অন্ধ্র প্রদেশ ও তেলেঙ্গানা রাজ্য থেকে প্রতিদিন ৯৩ লক্ষ ডিম আমদানি করতে হয়। সরকারিভাবে খামার যেমন গড়ে উঠছে, তেমনি বেকার যুবকদের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতর ২০১৭ সালে পোল্ট্রি ফার্মগুলোকে ছাড় দিয়েছে। গড়ে উঠেছে ছোট বড় অসংখ্য খামার। এরই মধ্যে ৮০ লক্ষ লোকের কর্মস্থান হয়েছে। একজন ১০ হাজার হাঁস চাষ করতে পারেন খামারে।
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে বছরে ৬০১.১ কোটি ডিম উৎপাদন হচ্ছে। যার মূল্য ৫২.২ কোটি টাকা। আগামী কয়েক বছরে খামার বাড়িয়ে ডিমের উৎপাদন যেমন বাড়ানো হবে সেই সঙ্গে কর্মসংস্থান ঘটবে। সরকারি খামার ছাড়াও রাজ্যে বিভিন্ন প্রান্তে বেসরকারি খামারও গড়ে উঠছে। দক্ষিণ ২৪ পরগণার শিবানী ডাক ফার্ম, কিষাণগঞ্জ ও স্বভূমি ডাক ফার্মে বিভিন্ন প্রজাতির হাঁসের চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। এছাড়া ডাক ব্রিডিং সেন্টার, চাঁদপাড়া ডাক অ্যান্ড টার্কি ফার্ম, বসুন্ধরা পোলট্রি ফার্মগুলো হাঁস চাষ করে মাংস ও ডিম দুই-ই উৎপাদন করছে।