ঘরে কিম্বা বাইরে, শীতের মেনুতে হোক স্বাদ বদল। কিভাবে? চলুন আজ বরং সেই উপায় নিয়েই একটু গল্প করি।
খিদে পেলে খেতে হয়, সেটা একরকম আর খিদে না পেলেও খিদে পায়, সেটা আরেক রকম। যেটাকে বলে চোখের খিদে আর সেটা বিশেষ করে বাড়ে শীতের দিনে রাস্তায়। চোখে পড়লেই কেমন একটা উত্তেজনা। এই ধরুন আপনি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। হঠাৎই আপনার চোখে পড়লো রাস্তায় ধারের দোকানে গরম কড়াই থেকে ছান্তা দিয়ে তুলছে কড়াইশুঁটির কচুরি বা ভূরভরে গন্ধের হিংয়ের কচুরি। শীতকালের কনকনে হাওয়ায় সোনা রোদে একটু কি আপনি দাঁড়িয়ে পড়বেন না?
নিরামিষ দোকানের সামনে গিয়ে দেখলেন চিজ ম্যাগি, বাটার বড়া পাও, ঘুগনি, মোমো, পাঁপড়ি চাট, লাচ্ছা পরোটা আলুর দাম, চিল্লি চিকেন উইথ চাওমিন, চিকেন ড্রামস্টিক কিম্বা হাড়িয়ালি কাবাব… মন তো উড়ু উড়ু করবেই।
তবে শীতকালে বাইরে খাবার খেলে সব সময় কি সেই একই মেনু অর্ডার করবেন? যদি উত্তর না হয়, তাহলে এবার একটা ব্রেক নিন। শহরের বিভিন্ন রেস্তোরাঁতে এখন পাবেন শীতের প্রাণ ভরানো ইন্ডিয়ান ও কন্টিনেন্টাল বিভিন্ন খাবার। মিঠা রোদ মেখে অর্ডার করতে পারেন আমিষ নিরামিষ এখানকার উইন্টার মেনুগুলিতে।
স্ন্যাক্স যেমন পাবেন তেমনই আছে মেন কোর্সও।পাউরুটি পছন্দ হলে বার্গার বা টোস্ট এর দিকে যেতে পারেন। টোস্টের সঙ্গে গ্রিলড পিচ ফ্রেশ রাস্পবেরী-সহ রকমারি ফলের সম্ভারও পেতে পারেন। শরীর সুস্থ রাখতে স্যালাড খেতে চাইলে, সেই অপশনও পাবেন। নানা ধরনের স্যালাডের নাম এখানে থাকে। নতুন নাম দেখলে, জিজ্ঞাসা করে অর্ডার দিয়ে দিন।
শীতের সময় চায়ের অনেক ভ্যারাইটিও পাবেন। কলকাতায় বসেই নিতে পারেন কাশ্মীর চায়ের স্বাদ, এছাড়া বেরি টি, জিঞ্জার লেমন টি ইত্যাদি তো রয়েছেই। মধু মিশিয়ে চা খেতে পারেন আর সঙ্গে বেছে নিতে পারেন নোনতা কুকি, রোস্টেট সিড, সল্টেড মাখনা, বাদাম, রোস্টেড্ পটেটো ফ্লেক, কর্ন চাট, পপকর্ন… যেটা আপনার মন চাইবে।
মেন কোর্সও পাবেন ভ্যারাইটি। অচেনা নামের খাবারগুলো একটু নেট ঘেঁটে দেখে নিন আর নেটে না পেলে হোটেলের কর্মচারীদের জিজ্ঞাসা করে নিন। এমনকি কোন পদ যদি আপনার পছন্দ হয়ে যায় তবে নেট ঘেঁটে শিখেও নিতে পারেন। নতুন কিছু একবার ট্রাই করে দেখুন না।
শেষ পাতে যদি মিষ্টি খেতে ভালোবাসেন তাহলে একবারেই মিস করবেন না দেশি বিদেশি ডেজার্ট। হট কেক, ক্যারামেল পুডিং, ব্রাউনি উইথ আইসক্রিম, স্ট্রবেরি ট্রেস লেচেস… অভিনব নানান পদ আধুনিক প্রজন্ম পছন্দ করে বলে তা হোটেলের মেনুতে আনা হয়েছে। শীত আর বেশিদিন থাকার নয়, উইন্টার মেনুও তাই বন্ধ হয়ে যাবে। তাই এটাই নতুন মেনু চাখার আদর্শ সময়।
এইতো গেল পকেটের ভেলকিবাজির কথা, এবার আসি ঘরের কথায়। শীতের সকালে সদ্য হিমালয়ের বরফ গলা জল ঘাঁটতে কারই বা ভালো লাগে। তাই খুব সহজেই বানিয়ে নিন ওটস, কর্নফ্লেক্স, নানান ধরনের ভেজিটেবিল স্যুপ বা ডালিয়ার মত সহজ পুষ্টিকর খাবার। শীতকালে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই কমে যায় তাইতো কথায় কথায় ঘাড়ে চাপে জ্বর সর্দি কাশি। এদিকে শীতের অধিকাংশ সবজি ইমিউনিটি বাড়াতে সিদ্ধহস্ত তা আমাদের জানা। তাইতো শীতের মেনুতে স্যুপ থাকা মাস্ট।
খুব খিদে পেয়েছে অথচ হাতের কাছে সময় বড় কম। এমন অবস্থায় মুশকিল আসান করবে এগ টমেটো স্যুপ। মাত্র ১৫ মিনিটেই ঝটপট তৈরি হয়ে যাবে। দুটি ব্রাউন ব্রেডের সঙ্গে শীতের ব্রেকফাস্টে বা বিকালে খেতে মন্দ লাগবে না।
শীতে জ্বর, গলা ব্যাথা, এস্থেমা, সর্দি কাশি খুব কমন অসুখ। ঘরোয়া পদ্ধতিতে ইনফেকশন দূর করতে আদা রসুনের জুড়ি মেলা ভার। তাই আদা রসুন সহযোগে স্যুপ বানিয়ে খান।
মিষ্টি আলু খনিতে ভরপুর তাইতো এই শীতের মৌসুমে সবরকম সবজি দিয়ে রাঙ্গালু দিয়ে বানিয়ে ফেলুন স্যুপ।
শীত পড়তে না পড়তেই বাজার জুড়ে দেখা মেলে রামধনুর রঙে রাঙায়িত সবজি। শীতের মরশুমে লাস্টবেঞ্চার পালংশাকও চলে আসে প্রথম সারিতে। এসেই জুটি বাঁধে পনির কিংবা বিভিন্ন সবজির সঙ্গে। বিশেষ কোনো অসুবিধা না থাকলে অবশ্যই খান।
কড়াইশুঁটি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, গাজর, বিট, পেঁয়াজকলি-সহ অনেক রকমের সবজি এইসময় পাওয়া যায়। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে এগুলিতে। আর এইসব সবজির সহযোগিতা নিয়ে গরম স্যুপ বানিয়ে চুমুক দিলে শরীর বাবাজিকে নিয়ে আর কোন সেরকম চিন্তাই থাকবে না।
পছন্দের যে কোন সবজির সঙ্গে কর্ন, ব্রোকলি মিশিয়ে স্যুপ বানিয়ে খেতে পারেন। বাচ্চাদের জন্য সেরা এই রেসিপি। প্রোটিনের ঘাটতি মেটাতে চিকেন সেরা অপশন তাইতো সব রকমের সবজি সঙ্গে চিকেন যোগ করে বানিয়ে ফেলুন স্যুপ।
রোজ দুপুরে খাবার পাতে ভাত ডাল মাছ খেলেও সঙ্গে রাখতে হবে স্যালাড, যেখানে শসা, বিট, গাজর, কড়াইশুঁটি, টমেটো থাকবেই। সবজি বা তরকারি অবশ্যই রাখতে হবে মেন কোর্সে। তেমন হলে মাছের ঝোলে বিভিন্ন সবজি দিয়ে খান। ফুলকপি, শিম, পেপে, বরবটি, বিন্স, ব্রকলি, পটল, ঢেঁড়স ইত্যাদি সবজি হাই ফাইবার সমৃদ্ধ।
কথায় বলে পেট ঠিক, তো জগত ঠিক। তাই পেট ঠিক রাখতে হজম শক্তিকেও ঠিক রাখতে হবে। রোজকার খাদ্য তালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রাখা অত্যন্ত জরুরী। এই শীতে তেল মসলাযুক্ত খাবার একটু বুঝে শুনে খাবেন।
আসলে এ শুধু খাওয়া নয়, বরং সবটা। হয়তো রোজের খাবার থেকে আহামরি আলাদা তেমন কোন খাবার শীতে খাওয়া হয় না তবু নতুন কিছু ট্রাই করাই তো আমাদের বাঁচার নব উদযাপন। এতে স্বাস্থ্যও থাকবে, সাধও থাকবে, স্বাদও কিছু বদলাবে।