সোমবার | ৩রা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৩:১৫
Logo
এই মুহূর্তে ::
পেজফোর-এর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ২০২৫ এত গুণী একজন মানুষ কত আটপৌরে : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী সরস্বতীর উৎস সন্ধানে : অসিত দাস ‘সব মরণ নয় সমান’ সৃজনশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে যথোচিত মর্যাদায় স্মরণ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সিপিএম-এর রাজ্য সম্মেলন, তরুণ প্রজন্মের অন্তর্ভূক্তি নিয়ে খামতি রয়েছে দলে : তপন মল্লিক চৌধুরী প্রথম পাঠ — মার্কসবাদের বিশ্বভ্রমণ : সন্দীপন চক্রবর্তী বঙ্গবিভূষণ কাশীকান্ত মৈত্র স্মারকগ্রন্থ : ড. দীপাঞ্জন দে ‘খানাকুল বাঁচাও’ দাবিতে সরব খানাকুল-সহ গোটা আরামবাগের মানুষ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় হরি হরের কথা এবং বীরভূমের রায়পুরে বুড়োনাথের বিয়ে : রিঙ্কি সামন্ত ত্র্যম্বকেশ্বর দর্শনে মোক্ষলাভ : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী কুম্ভমেলায় ধর্মীয় অভিজ্ঞতার থেকে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বেশি : তপন মল্লিক চৌধুরী রাজ্যে পেঁয়াজের উৎপাদন ৭ লক্ষ টন ছাড়াবে, কমবে অন্য রাজ্যের উপর নির্ভরতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ‘হিড়িক’ শব্দটির ব্যুৎপত্তি অধরা, আমার আলোকপাত : অসিত দাস বিজয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-র ছোটগল্প ‘শিকড়ের টান’ বাংলাভাষার নেচিতে ‘ময়ান’ ও ‘শাহিস্নান’-এর হিড়িক : অসিত দাস একটু একটু করে মারা যাচ্ছে বাংলা ভাষা : দিলীপ মজুমদার রাজ্যে এই প্রথম হিমঘরগুলিতে প্রান্তিক চাষিরা ৩০ শতাংশ আলু রাখতে পারবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সামরিক জান্তার চার বছর — মিয়ানমার পরিস্থিতি : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ১৯ ফেব্রুয়ারি ও স্বামীজির স্মৃতিবিজড়িত আলমবাজার মঠ (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত চাষিদের বাঁচাতে রাজ্যের সরাসরি ফসল কেনার দাওয়াই গ্রামীণ অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (সপ্তম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার মোদীর মিডিয়া ব্যস্ত কুম্ভের মৃত্যুমিছিল ঢাকতে : তপন মল্লিক চৌধুরী রেডিওকে আরো শ্রুতিমধুর করে তুলেছিলো আমিন সায়ানী : রিঙ্কি সামন্ত গোপাল ভাঁড়ের আসল বাড়ি চুঁচুড়ার সুগন্ধ্যায় : অসিত দাস প্রতুলদার মৃত্যু বাংলা গানের জগতে অপূরণীয় ক্ষতি — মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় : সুমিত ভট্টাচার্য মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র ও গোপাল ভাঁড়, মিথ এবং ডিকনস্ট্রাকশন : অসিত দাস মহাকুম্ভ ও কয়েকটি প্রশ্ন : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ভিয়েতনামের গল্প (শেষ পর্ব) : বিজয়া দেব কাশীকান্ত মৈত্রের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন : ড. দীপাঞ্জন দে
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বসন্ত পঞ্চমী ও সরস্বতী পুজোর  আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

এত গুণী একজন মানুষ কত আটপৌরে : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী

মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী / ৭৭ জন পড়েছেন
আপডেট শনিবার, ১ মার্চ, ২০২৫

শিশির মঞ্চে সোজা ঢুকে গেলাম, গেটের কাছে যিনি ছিলেন তিনি শুধু বললেন ‘প্রতুলদা?’ আমি সামান্য থমকে গেলেও বুঝতে না দিয়ে ঘাড় নেড়ে জানালাম — হ্যাঁ, আমি প্রতুলদাকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। এই গান বা আবৃত্তি জগতে কয়েক বছরের ঘোরাফেরা করে প্রথমেই যেটি শিখতে হয় সেটি হল সকলকে দাদা এবং দিদি বলে সম্বোধন করতে শেখা। প্রতুলদার বয়স এখন যা, আমার মা বর্তমান থাকলে সেই বয়সে এসে পৌঁছতেন। তবে আমার মা অনেক আগেই দূর থেকে বহুদূরে চলে গেছেন। যে ধাক্কা সামলাতে আজও আমাকে সবসময় নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করতে হয়।

একটা করে মৃত্যু, আপনজনের মৃত্যু মানে আপনার পাশ থেকে, আপনার মাথার উপর হাত রাখার হাতটা সরে গেল। যিনি নরম মনের মানুষ হন, তাকে এগুলো ভুলতে অনেক কিছুর আশ্রয় নিতে হয়। সবথেকে বড় আশ্রয় সেক্ষেত্রে বই আর গান। আমি একটু আধটু লেখার ফাঁকে, গান, আবৃত্তি এগুলো নিয়ে ভান করি যে আমি ভালো আছি। যাদের হাত সরে গেছে তাদের আমি মনেই করি না। দিব্যি আনন্দে আছি। সবটাই আসলে নিজেকে নিজে ফাঁকি দিতে থাকি।

তখন বেশ বয়স কম। প্রথম প্রথা ভাঙা একটি গান শুনলাম। টিভি রেডিও সর্বত্র। ‘আমি বাংলায় গান গাই।’ আশ্চর্য এটাই, যে এই গায়কের সঙ্গে আমার পরিচয় (অবশ্যই টেলিভিশনের পর্দায়) ঘটালেন আমার জননী। উনি দেখছিলেন টিভি, চেঁচিয়ে ডাকলেন আমাকে, “শিগ্গির আয়, দেখ, কি অপূর্ব গান করেন ভদ্রলোক।” আমি শুনলাম, মুগ্ধ হলাম, এবং গানটি একবার শুনেই মাথায় গেঁথে গেল। ভুলতে পারলাম না। চলতে ফিরতে গানটি গাইতে লাগলাম। কখনো গুনগুন করে, কখনো গলা ছেড়ে। ‘আমি বাংলায় গান গাই। আমি বাংলার গান গাই।’

কিছু মানুষ থাকেন যাঁদের দেখলেই মনে হয় খুব কাছের একজন মানুষ। আমি যদি এনার কাছে গিয়ে দাঁড়াই, ইনি ঠিক আমার মাথায় হাত রাখবেন। প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে দেখে আমার ঠিক এই অনুভূতি হত। কেন? বলতে পারব না। আরও একজনকে দেখে হয়। তিনি শ্রী সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় মহাশয়। তো, এইরকম যাঁকে দেখলে মনের মধ্যে ‘আপন’ এই ভাবটি ফুটে ওঠে, তাঁকে সামনাসামনি দেখার প্রয়োজন পড়ে না। কারণ আমি তো মনে মনে তাঁকে নিজের একজন আপন মানুষ বলে ভেবে নিয়েছি। তিনি আমায় চেনেন কি চেনেন না, সেটা বোধহয় অপ্রাসঙ্গিক।

ছিলেন তিনি অন্তরে। কিন্তু ইদানিং একটু আধটু লিখতে শিখে চেনাজানাও বেড়েছে। জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় (দা) এর ডাকে বছর দুই আগে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে একদম সামনে থেকে আমার অতি প্রিয় গায়ককে দেখলাম। দেখলাম বলব না, শুনলাম। ওনার খালি গলায় হাতে তালি দিয়ে গান। ওনার প্রতিটি কথা শুনলাম। ভাষা নিয়ে ওনার হতাশা, তাও শুনলাম। মর্মে মর্মে কথাগুলি উপলব্ধি করলাম। আর দেখলাম, এই অতি সাধারণ মানুষটিকে অনায়াসে ভালোবাসা যায়। আমি যে এতদিন ধরে এনাকে আপনজন ভেবে এসেছি, সেটা এক্কেবারে ভুল করিনি। ইনি সত্যিই মানুষের আপনজন।

১৯৪২ এর ২৫ শে জুন জন্ম। অদ্ভুত এক নতুন ধারা নিয়ে এলেন গানে। কোনও আড়ম্বর নেই, বাজনার দরকার পড়ে না, শুধু গলা আর হাতে তালি এই সম্বল করে আপামর বাঙালির মনে ঢুকে পড়া খুব সহজ ব্যাপার নয়। অবিভক্ত বাংলাদেশের বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা প্রভাতচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন শিক্ষক। দেশবিভাগের পর তাঁর শৈশব কেটেছে চুঁচুড়ায়। মাত্র বারো বছর বয়সে তিনি কবি মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমি ধান কাটার গান গাই’ কবিতায় প্রথম সুর দেন। তাঁর অসংখ্য গান, আ্যলবামের নাম লিখতে আমি আজ বসিনি। অসামান্য এক গুণী মানুষের সৃষ্টি অসামান্যই হয়। এতে আশ্চর্যের কিছু নেই।

এত গুণী একজন মানুষ কত আটপৌরে হতে পারেন এটা তাঁকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না। আজ শিশির মঞ্চে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে বহু নামী দামী মানুষ এসেছিলেন। তাঁদের প্রত্যেকের বক্তব্য থেকে শুধু একটি কথাই উঠে আসছিল বারবার, যে অনেক গুণের সঙ্গে যেটি প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের ছিল, সেটি হলো সরল থাকার, সাধারণ মানুষ হয়ে থাকার, সকলের সঙ্গে মেশার ক্ষমতা। তাঁর অসাধারণ রসবোধের টুকরো টুকরো কথার কোলাজ গোটা প্রেক্ষাগৃহে যখন ছড়িয়ে পড়ছিল, তখন সকলের মুখে হাসির সঙ্গে চোখের কোণ ভিজে যাচ্ছিল। যেমন যায় খুব আপনজন চলে গেলে, দূরে বহুদূরে। ‘সব মরণ নয় সমান’ জানি, কারণ প্রিয় আপনজনের মৃত্যু কোনও কিছুর সঙ্গে তুলনায় আসতেই পারে না।


আপনার মতামত লিখুন :

3 responses to “এত গুণী একজন মানুষ কত আটপৌরে : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী”

  1. Gopal Chaudhury says:

    Excellent writing. It touched my heart.

  2. PALLAB KUMAR GHOSH says:

    Some genuine words said about a very genuine person.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন