সনাতন ধর্মের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে একটি প্রধান অনুষ্ঠান হল গিরি গোবর্ধন পুজো।
মথুরা ও বৃন্দাবন-সহ দেশের বিভিন্ন অংশে দীপাবলির উৎসবের অঙ্গ হিসেবে পালিত হয় গিরিগোবর্ধন পুজো। দীপাবলীর পরের দিন, কার্তিক মাসের প্রতিপদে গোবর্ধন পুজো হয়।
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, দীপাবলির পরের দিন গিরি গোবর্ধন তাঁর আঙুলের উপর তুলেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ।
ভক্তের বিপদে ভগবান কী ভাবে এগিয়ে আসেন, তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ বলে মনে করা হয় এই গিরি গোবর্ধন ঘটনা।
পুরাণ অনুযায়ী ভালো বৃষ্টি হয়ে যাতে ভালো ফলন হয়, তার জন্য দেবরাজ ইন্দ্রের পুজো করতেন বৃন্দাবনবাসী।
গরীব বৃন্দাবনবাসীকে ইন্দ্রের পুজোয় বহু খরচ করা পছন্দ করেননি শ্রীকৃষ্ণ। তিনি সেই খাবার ইন্দ্রকে না দিয়ে ছোট ছেলেমেয়েদের খাওয়াতে বলেন। কৃষ্ণের কথায় ইন্দ্র পুজো বন্ধ হল। এদিকে গাভীজাতের বৃদ্ধির জন্য তারও পুজো করার প্রয়োজন।
তাঁরা সকলে মিলে ইন্দ্র পূজার যে আয়োজন করেছিলেন, তা নিয়ে গোবর্ধন পূজা করতে চললেন।
সমস্ত আয়োজন গুলোকে জড়ো করা হলো, সেটা একটা পাহাড়ের রূপ ধারন করলো। সেই পাহাড়টি ছিলো অন্নের পাহাড়। অন্নকূট, অন্নের পাহাড়। তাতে প্রথমে দেওয়া হল রুটি, লুচি, তার উপরে দেওয়া হল অন্ন। বিভিন্ন রকমের অন্ন যেমন সাদা অন্ন, লাল অন্ন, নীল অন্ন, হলুদ অন্ন, সবুজ অন্ন ইত্যাদি। যত রকমের সবজী হয়েছিল সে গুলো দিয়ে সাজানো হলো।
তারপর সেই পাহাড়ের ওপর দিয়ে ঘি-এর ঝর্না বইতে লাগলো। এই ভাবে সমস্ত অন্নকুট বা অন্নের পাহাড়টি গোবর্ধনকে নিবেদন করা হলো।
তখন সবাই দেখলো, একদিকে এক ছোট কৃষ্ণ দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে, আর অন্যদিকে গোবর্ধনের জায়গায় এক বিশাল কৃষ্ণ অবস্থান করছেন, যে অন্নগুলো হাত দিয়ে তুলছে, সেই জায়গাটা আবার পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে।
এই ভাবে এক কৃষ্ণ খাচ্ছে আরেক কৃষ্ণ দেখছে। এই রকম উল্লেখ আছে যে, কখনও কখনও ঐ গোবর্ধন কৃষ্ণ বলছেন আরো নিয়ে এসো, আমার আরো লাগবে তখন সকল গোপেরা আর অনেক কিছু খাবার নিয়ে এসে কৃষ্ণকে দিচ্ছে।
এই ভাবে খাওয়া শেষ হলে গোবর্ধনের ঝর্ণা থেকে জল খেয়ে কৃষ্ণ ঢেকুর তুললেন। এই ভাবে তাঁর খাওয়া সমাপ্ত হলো। কিন্তু কিছুক্ষন পর ইন্দ্র দেবতা ঝড়, বৃষ্টি প্রচুর পরিণাম দিতে শুরু করল ক্রোধ বশবর্তীতে যে তাকে রেখে গোবর্ধন পুজা করছে একসময় ব্রজবাসী আতংকের মধ্যে পড়ে, যে এখন কি হবে? কে আমাদেরকে ইন্দ্র দেবতার হাত থেকে রক্ষা করবে, তখন করুণাময় ভগবান তার প্রিয় ব্রজবাসীদের রক্ষা করার জন্য গিরিগোবর্ধন তার হাতের কেড়ে আঙ্গুল-এর উপর ধরে, ৭ দিন ৭ রাত ঐ পাহাড় ধরে রেখেছিলেন।
তখন ইন্দ্রদেব প্রচুর বৃষ্টি, ঝড়, ব্রজপাত, দিতে শুরু করল কিন্তু ব্রজবাসীদের উপরে কোন প্রভাব পড়ল না।
তখন ইন্দ্রদেব তার সর্ব শেষ শক্তি প্রয়োগ করলেন — ঘূর্ণিঝড়ের মত।
তখন লীলাময় প্রভু তার এক হাতে তার বাঁশি বাজাতে শুরু করল, বাঁশির সুরে ব্রজবাসী ভয় মুক্ত হলো ও ইন্দ্রদেবকে ভগবান তার বাঁশির ভিতরে ঢুকিয়ে এমন আছাড় দিল যে গোবর্ধনের গোবরের মধ্যে মুখখানি পড়ল।
তারপর ইন্দ্রদেব তার অহংকার বুঝতে পারললেন।
কেউ যদি গোবিন্দের চরণে আশ্রয়ে থাকে তাহলে তার কোন ভয় থাকে না।
তিনি এটাও বোঝললেন যে তিনি সাধারণ বালক নন তিনি স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।
তারপর ইন্দ্রদেব তার অপরাধের জন্য ক্ষমাচাইলেন, ভগবান তাকে ক্ষমা করে দেন।
এই ভাবে গোবর্দ্ধন পূজা ও অন্নকূট মহোৎসবের সূচনা হলো।
পরবর্তীতে শ্রীল মাধবেন্দ পুরী গোপাল বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করার পর আবারো অন্নকূট মহোৎসব চালু করলেন।
কভার ছবি লেখক : অন্নকূট মহোৎসব, হরগৌরী মন্দির, হরকুমার টেগোর স্কোয়ার, কলকাতা।