শনিবার | ২২শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৬:৪৮
Logo
এই মুহূর্তে ::
বাংলাভাষার নেচিতে ‘ময়ান’ ও ‘শাহিস্নান’-এর হিড়িক : অসিত দাস একটু একটু করে মারা যাচ্ছে বাংলা ভাষা : দিলীপ মজুমদার রাজ্যে এই প্রথম হিমঘরগুলিতে প্রান্তিক চাষিরা ৩০ শতাংশ আলু রাখতে পারবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সামরিক জান্তার চার বছর — মিয়ানমার পরিস্থিতি : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ১৯ ফেব্রুয়ারি ও স্বামীজির স্মৃতিবিজড়িত আলমবাজার মঠ (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত চাষিদের বাঁচাতে রাজ্যের সরাসরি ফসল কেনার দাওয়াই গ্রামীণ অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (সপ্তম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার মোদীর মিডিয়া ব্যস্ত কুম্ভের মৃত্যুমিছিল ঢাকতে : তপন মল্লিক চৌধুরী রেডিওকে আরো শ্রুতিমধুর করে তুলেছিলো আমিন সায়ানী : রিঙ্কি সামন্ত গোপাল ভাঁড়ের আসল বাড়ি চুঁচুড়ার সুগন্ধ্যায় : অসিত দাস প্রতুলদার মৃত্যু বাংলা গানের জগতে অপূরণীয় ক্ষতি — মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় : সুমিত ভট্টাচার্য মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র ও গোপাল ভাঁড়, মিথ এবং ডিকনস্ট্রাকশন : অসিত দাস মহাকুম্ভ ও কয়েকটি প্রশ্ন : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ভিয়েতনামের গল্প (শেষ পর্ব) : বিজয়া দেব কাশীকান্ত মৈত্রের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন : ড. দীপাঞ্জন দে অমৃতের সন্ধানে মাঘী পূর্ণিমায় শাহীস্নান : রিঙ্কি সামন্ত বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (ষষ্ঠ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের যোগ : অসিত দাস ‘হরিপদ একজন বেঁটে খাটো সাদামাটা লোক’-এর গল্প হলেও… সত্যি : রিঙ্কি সামন্ত রোহিঙ্গা সংকট — ফেলে আসা বছর ও আগামীদিনের প্রত্যাশা : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (পঞ্চম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার ‘রাঙা শুক্রবার অথবা কহরকন্ঠ কথা’ উপন্যাস বিষয়ে শতদল মিত্র যা বললেন রবীন্দ্রনাথের ধর্মীয় পরিচয় : গোলাম মুরশিদ কেজরিওয়াল হারলো প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অরাজকতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য : তপন মল্লিক চৌধুরী বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (চতুর্থ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার সাহেব লেখক দেড়শো বছর আগেই বলেছিলেন পঞ্চানন কুশারীর কবিয়াল হওয়ার সম্ভাবনার কথা : অসিত দাস বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (তৃতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার সর্বপাপবিনাশীনি জয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (দ্বিতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার বাজেটে সাধারণের জীবনমানের উন্নয়নের একটি কথাও নেই : তপন মল্লিক চৌধুরী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বসন্ত পঞ্চমী ও সরস্বতী পুজোর  আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

সামরিক জান্তার চার বছর — মিয়ানমার পরিস্থিতি : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন

হাসান মোঃ শামসুদ্দীন / ২৪ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

মিয়ানমারের সামরিক সরকার ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের পর এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে এবং পরবর্তীতে কয়েক দফায় জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ায়। সামরিক অভ্যুত্থানের চার বছর পূর্তির এক দিন আগে জান্তা জরুরি অবস্থা মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণার সময়ও মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় জান্তার সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ চলছিল এবং চলমান আক্রমণের তীব্রতার কারনে জান্তা পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে। মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের কারনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা দরকার তা এখনও নিশ্চিত করা না গেলে ও জান্তা সরকার এ বছর মিয়ানমারে সাধারন নির্বাচনের পরিকল্পনার কথা জানায় এবং এর বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু করেছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সংগঠন আসিয়ান জান্তার প্রস্তাবিত নির্বাচনকে সমর্থন করার চেয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপ শুরু করতে বেশি আগ্রহী এবং নির্বাচনের আগে মিয়ানমারে শান্তি ফিরিয়ে আনার পক্ষে কাজ করছে। আসিয়ানের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত ওথমান হাশিম ৬ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি জান্তা সরকারের সাথে বৈঠক করতে মিয়ানমার সফর করে। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক মহাসচিব ওথমানকে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে মিয়ানমারে আসিয়ানের দূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। মিয়ানমার সফর শেষে আসিয়ানের বিশেষ দূত জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি), কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন, চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট এবং কারেনি ন্যাশনাল প্রগ্রেসিভ পার্টির সাথে আলোচনার জন্য ব্যাংকক যান। সেখানে আসিয়ানের শান্তি পরিকল্পনার তিনটি বিষয়ঃ সহিংসতা বন্ধ, আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা প্রদান এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।  মিয়ানমার আসিয়ানের দেওয়া যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার শর্ত মানেনি।  আসিয়ান চায় যে, মিয়ানমার পাঁচ দফা সমঝোতা মেনে চলুক, সংঘর্ষ বন্ধ করে সংলাপ শুরু এবং জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে নির্বিঘ্নে মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে সহায়তা করুক।

চার বছর ব্যাপী চলমান এই সংঘাতে মিয়ানমারের সাধারন জনগণ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে এবং হতাহত ও বাস্তুচ্যুতির পাশাপাশি মানবিক সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। জাতিসংঘ থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে, মিয়ানমারের চলমান সংঘাতের কারণে ৩৫ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, এবং সামনের দিনগুলোতে এই মানবিক সংকট আরও তীব্র হতে পারে বলে জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে। সশস্ত্র সংঘাত দেশের সীমান্ত এলাকা থেকে শুরু হয়ে বেশির ভাগ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার ফলে নিরাপত্তা এবং মৌলিক চাহিদা মেটাতে সাধারন মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। জাতিসংঘের মতে মিয়ানমারের সাগাইং অঞ্চলেই  ৭৪ হাজার বাড়ি এবং সাড়ে ১২ লাখের বেশি মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। দ্য মিয়ানমার মনিটরিং গ্রুপের তথ্য অনুযায়ী, গত চার বছরে জান্তা বাহিনীর আক্রমনে ১ লাখ ৬ হাজার বাড়িঘর ভস্মীভূত হয়েছে। ২০২৪ সালের শেষ দিকে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনার পাশাপাশি বিমান, ড্রোন হামলা, সামরিক অভিযান ও জোরপূর্বক গ্রেপ্তার, পরিস্থিতির অবনতিতে ভুমিকা রেখেছে। জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী, সংঘাত, বিপর্যয়, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে মিয়ানমারে মানবিক সংকট দেখা দিতে পারে এবং ২০২৫ সালে  ১ কোটি ৯৯ লাখ মানুষের জন্য মানবিক সহায়তার প্রয়োজন হবে যা আশঙ্কাজনক।

এনইউজির এক প্রতিবেদন বলা হয়েছে যে, বর্তমানে রাখাইন ও উত্তর শানে দুটি আঞ্চলিক সামরিক কমান্ডসহ ১৭৩টি ঘাঁটি বিদ্রোহীদের দখলে। পি ডি এফ ও থ্রি ব্রাদারহুড এলায়েন্স মিয়ানমারের ৩৩০টি শহরের মধ্যে মোট ১৪৪টি শহর নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মধ্যে ৯৫টি শহরে তারা তাদের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। বিদ্রোহীরা মিয়ানমারের ৪৪ শতাংশ শহরের নিয়ন্ত্রণ করছে, ২৪ শতাংশ এলাকায় সংঘাত চলমান এবং জান্তা ৩২ শতাংশ অঞ্চল তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। চলমান সংঘাত সেনাবাহিনীর মনোবলে নেতীবাচক প্রভাব ফেলেছে। ২০২১ সালে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৮৭২ জন সেনাসদস্য পক্ষ ত্যাগ করেছে। জনবলের ঘাটতি পুরনের জন্য সামরিক বাহিনীতে বাধ্যতামূলকভাবে যোগ দেওয়ার আইন পাস হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমারের সেনাবাহিনীতে ২০ হাজার নতুন জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মিয়ানমারের যুব সম্প্রদায়ের কাছে সেনাবাহিনীতে যোগদানের বিষয়টি এক সময়ে চালেঞ্জিং থাকলেও বর্তমানে তা আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভামার ও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের একাংশ বিগত দিনগুলোতে সেনাবাহিনী থেকে তাদের সমর্থন সরিয়ে নিয়েছে।

২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের উপর চালানো নির্মম নির্যাতন ও সহিংসতার জেরে আর্জেন্টিনায় রোহিঙ্গাদের একটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপের দায়ের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৪ ফেব্রুয়ারী আর্জেন্টিনার একটি আদালত জান্তা নেতা মিন অং হ্লাইং, সাবেক প্রেসিডেন্ট টিন কিয়াও এবং সাবেক নির্বাচিত বেসামরিক নেত্রী অং সান সু চিসহ বেশ কয়েকজন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এই আইনি অভিযোগটি সর্বজনীন এখতিয়ারের নীতির অধীনে দায়ের করা হয়েছিল। বার্মিজ রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশন ইউ কে’র পক্ষ থেকে এই রায়কে রোহিঙ্গা এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার মিয়ানমারের সব মানুষের জন্য ন্যায়বিচারের পথে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ এবং বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের সময়ে এটি আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের জন্যও একটি বিজয় বলে জানায়। তবে মিয়ানমারের সরকার, রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ওপর ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগে  জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করায় আর্জেন্টিনার আদালতের সমালোচনা করে তাদের বক্তব্য দিয়েছে। জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) তদন্ত চলমান রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালত মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যার’ একটি অভিযোগ তদন্ত করছে।

চীন তার সীমান্ত অঞ্চলে সংঘর্ষ বন্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গুষ্ঠিগুলোর মধ্যে যুদ্ধ বিরতির উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছে। থ্রি ব্রাদারহুড এলায়েন্সের সদস্য এমএনডিএএ মিয়ানমারে ২০ জানুয়ারি চীনের মধ্যস্থতায় নতুন করে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করে। চীনের চাপের মুখে এমএনডিএএ ২০২৪ সালের নভেম্বরে জান্তার সাথে শান্তি আলোচনার কথা জানায়। থ্রি ব্রাদারহুড এলায়েন্সের আরেক সদস্য তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) প্রতিনিধিরা ১৬ ফেব্রুয়ারি চীনর মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু করেছে। টিএনএলএ উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যের প্রায় ২৫টি শহর এবং রাজধানী লাশিও তাদের দখলে নেয়।  টিএনএলএ’র নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলো জান্তার বিমান ও আর্টিলারি হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। টিএনএলএ যুদ্ধ বিরতি আলোচনায় চীন সরকারের মধ্যস্থতার কথা স্বীকার করেছে।

মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে সংঘাত থামানো মিয়ানমারের সব পক্ষের পাশাপাশি এই অঞ্চলের দেশগুলোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। থ্রি ব্রাদারহুডের অগ্রগতিতে চীন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন কারণ তারা সীমান্ত অঞ্চল দখলের সাথে সাথে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় শহর মান্দালয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মিয়ানমারের সীমান্ত অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা চীনের বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে প্রভাব ফেলছে তাই চীন মনে করে যে, সীমান্ত এলাকার স্থিতিশীলতা ও শান্তি তাদের আঞ্চলিক স্বার্থ রক্ষার জন্য অপরিহার্য। চীন মিয়ানমারের উত্তরে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সংলাপ এবং সমঝোতার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও সহযোগিতা করবে। উত্তরের এলাকাগুলোতে যুদ্ধ বিরতি কার্যকর হলে একমাত্র রাখাইনে আরাকান আর্মির সাথে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ চলমান থাকবে। থ্রি ব্রাদারহুড এলায়েন্সের দলগুলো একত্রে মিয়ানমার জান্তার সাথে যুদ্ধ করায় জান্তা পিছু হতে। সামনের দিনগুলোতে অন্য দুটো দলের সাথে যুদ্ধ বিরতি হলে রাখাইনে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে জান্তার আক্রমণের তীব্রতা বেড়ে যাবে এবং বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এই অঞ্চল আবার সংঘাতময় হয়ে উঠতে পারে।

মিয়ানমারে চলমান এই সংঘাতের মধ্যে ও চীন ও ভারত তাদের নিজস্ব স্বার্থ নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। ভু-কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এবং খনিজ সম্পদে ভরা রাখাইন রাজ্যে দুই দেশের মধ্যকার প্রতিযোগিতা ক্রমেই বেড়ে চলছে। চীন রাখাইন রাজ্যের চকপিউতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। চীন এই সব প্রকল্পের নিরাপত্তায় বেসরকারি বাহিনী নিয়োগ দিয়েছে এবং এই দুটি প্রকল্পের বিষয়ে ১৪ জানুয়ারি মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী দলের সদস্যদের সাথে বৈঠক করে দুদেশের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রকল্প দ্রুত শেষ করার আহ্বান জানান।

ভারতও তার স্বার্থ রক্ষায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২৩ সালে নভেম্বর মাসে ভারত আরাকান আর্মির প্রতিনিধিদের সাথে রাখাইনে ভারতের স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে আলোচনা করে।  মিয়ানমারে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত এবং ইন্ডিয়ান গ্লোবাল লিমিটেডের প্রতিনিধি দল ফেব্রুয়ারি মাসে সিতওয়ে সফর করে ভারতীয় অর্থায়নে চলমান কালাদান মাল্টি-মডাল ট্রানজিট করিডর প্রকল্পের অধীনে নির্মিত সিতওয়ে বন্দরের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে। ২০২৩ সালের মে মাসে চালু হওয়া সিতওয়ে বন্দর ভারতের কালাদান মাল্টি-মডাল ট্রানজিট করিডর প্রকল্পের মূল অংশ। রাষ্ট্রদূত রাখাইন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেইন লিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সিতওয়ে বন্দরের কৌশলগত গুরুত্ব তুলে ধরে এবং এটিকে ভারত-মিয়ানমার বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের বিপরীতে ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’নীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই কালাদান প্রকল্প। ২০২৩ সালে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও রাখাইন ও চিন রাজ্যের চলমান সংঘাতে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।

বর্তমানে সিতওয়ে, চকপিউ এবং রামরি—এ তিনটি শহর ছাড়া রাখাইনের বাকি ১৪টি টাউনশিপ আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। আরাকান আর্মি পালেতওয়া এবং কালাদান নদীর গুরুত্বপূর্ণ শহর পাউকতাও, কিয়াউকতাও, ম্রউক-উ, মিনবিয়া এবং মেইবন তাদের দখলে রেখেছে। চলমান পরিস্থিতিতে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের সিতওয়ের মতো সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে সফর চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ভারতের অবস্থানের দৃঢ়তা ও গুরুত্ব তুলে ধরে। ভারত, চীন ও অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো তাদের নিজস্ব স্বার্থ রক্ষায় মিয়ানমার সরকার ও বিদ্রোহী গুষ্ঠি গুলোর সাথে যোগাযোগ রাখছে ও তাদের স্বার্থ নিশ্চিতে কাজ করছে। রাখাইন পরিস্থিতির অবনতি হলে বাংলাদেশ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বর্তমানে আরাকান আর্মির হাতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কাছ থেকে দখল করা বিপুল অস্ত্রের মজুত রয়েছে। বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চল আরাকান আর্মির দখলে। সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকলে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশকে মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে নিজস্ব স্বার্থ রক্ষায় দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।

লেখক : ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মোঃ শামসুদ্দীন, এন ডি সি, এ এফ  ডব্লিউ সি, পি এস সি, এম ফিল (অবঃ), মিয়ানমার ও  রোহিঙ্গা বিষয়ক গবেষক।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন