অনেক আগে থেকেই বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, করোনায় যত না লোক মরবে, তার চেয়ে বেশি মরবে করোনায় আক্রান্ত না হয়ে, অর্থনীতির উপর পড়া করোনা লকডাউনের ক্ষতিকর প্রভাবে। মোদী-শাহের গুজরাটে সেই আশঙ্কাই সত্যি হলো।
গুজরাটের রাজকোটে করোনার বলি ২ জন, অথচ রোজগার বন্ধ থাকায় এই জেলায় ৩ দিনে আত্মঘাতী হয়েছেন ৫ জন! তাঁরা হলেন ব্যবসায়ী অশোক ভাণ্ডারী (৩১), পেশায় দর্জি দীপেন বাঘেলা (১৯), গাড়িচালক আশরাফ কুরেশি (৩০), রূপার গহনা তৈরির কারিগর বিনোদ সোলাঙ্কি (৪৩) এবং ওয়েল্ডার প্রফুল মাকোয়ানা (৩৮)। আমেদাবাদে একজনও আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন।
নবগাম ছাপানিয়া কোয়ার্টারের বাসিন্দা আশরাফ কুরেশি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন। দুই পুত্র ও এক কন্যাসন্তানের পিতা আড়াই মাস ধরে রোজগার বন্ধ থাকায় কিছু টাকা ধার করেছিলেন। ধার পরিশোধের চাপে পড়ে বৃহস্পতিবার ২১ সন্ধ্যায় তিনি আত্মঘাতী হন।
এদিন আত্মহত্যা করেন বিনোদ সোলাঙ্কি। সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, মরবি রোড রেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেন। তাঁর স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে বর্তমান।
এদিন রাতেই প্রবল অর্থকষ্টে পড়া ওয়েল্ডার প্রফুল মাকোয়ানা তাঁর ভাইয়ের কারখানায় গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন।
বুধবার ২০ মে বিকেলে দীপেন বাঘেলাকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন তাঁর বাবা। দীপেনের মা কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছেন। বাবা ও দিদিকে নিয়ে দীপেনের সংসার। লকডাউনে পোশাক তৈরির দোকানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল। বুধবার গম চাষে ব্যবহৃত কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হন আতকোট শহরের বাসিন্দা, বছর ঊনিশের দীপেন।
৭-৮ জন শ্রমিককে নিয়ে একটি কারখানা চালাতেন অশোক ভাণ্ডারী। তাঁর কারখানায় উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের পরিযায়ী শ্রমিকরা কাজ করতেন, তাঁরা নিজেদের রাজ্যে ফিরে গিয়েছেন। মঙ্গলবার ১৯ মে কারখানার দরজা খুলে অশোকবাবু উপলব্ধি করেন, আর কারখানা চালাতে পারবেন না। সেই হতাশা থেকেই গলায় দড়ি দিয়ে তিনি আত্মঘাতী হন।
আমেদাবাদের গোমতীপুরে তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে চরম অর্থকষ্টে দিন কাটছিল কানুভাই (৩৫)-এর। লকডাউনে আয় বন্ধ। তাঁর ভাই ও বোন ফল বিক্রি করেন। তাঁদের কাছে কিছু ফল চেয়েছিলেন বিক্রি করবেন বলে। নয়তো এক হাজার টাকা ধার চেয়েছিলেন। দাদার অনুরোধ তাঁরা রাখতে পারেননি, কারণ তাঁদের আয় তেমন নেই। তাছাড়া ফল বিক্রি করতে আবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার দরকার ছিল। কানুভাই রোজ এক জায়গায় গিয়ে দাঁড়াতেন কেউ কাজ দেবেন এই আশায়। তাঁর স্ত্রী বেরোতেন ভিক্ষা করতে। অবশেষে বুধবার বাথরুম ক্লিনার খেয়ে ফেলে ভাইকে সে কথা বলেন কানুভাই। হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও তাঁকে বাঁচানো যায়নি।