বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবার এ রাজ্যের আলু ভিন রাজ্যে যাওয়া শুরু হয়েছে গত ২১ অগাষ্ট থেকে। এমনিতেই বাজারে আলুর দাম চড়া। পুজোর মুখে আলুর দাম বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। গত ২০ অগাষ্ট নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী, কৃষি বিপণন মন্ত্রী ও পঞ্চায়েত মন্ত্রীর উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রাজ্যের বর্ডার খুলে দেওয়ার। প্রসঙ্গত, বর্ডার বন্ধ রাখার প্রতিবাদে শুরু হয়েছিল প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির ধর্মঘট। ফলে আলু নামানো বন্ধ করে দেয় ব্যবসায়ীরা। নবান্নে বৈঠকের পর বর্ডার খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে খুশি ব্যবসায়ীরা। রাজনৈতিক মহলের অভিমত বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজ্য ফের একটি আন্দোলন যাতে মাথা চাড়া দিতে না পারে তার জন্য খুলে দেওয়া হয় বর্ডার।
উল্লেখ্য, রাজ্যজুড়ে আলু ব্যবসায়ীরা ভিন্ন আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েছিল। তার আগে নবান্ন থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের আলু বিভিন্ন রাজ্যে পাঠানো যাবে। বর্ডার খুলে দেওয়া হবে, পুলিশ কোনো গাড়ি আটকাবে না। চলতি এক সপ্তাহে উড়িশা, ঝাড়খন্ড, বিহার, আসাম সহ বিভিন্ন রাজ্যে ২ লক্ষ মেট্রিক টন আলু যাবার ছাড়পত্র দিয়েছে রাজ্য। তবে অনেকের মতে রাজ্য সরকার ছাড়পত্র দিয়েছে মানেই আর তেমন কোনও ঝুঁকি থাকবে না। এদিকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উড়িশাতে আলু না যাওয়ার জন্য উড়িশা সরকার এক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। উত্তরপ্রদেশ থেকে রেকে করে সেখানকার ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে আলু কিনে উড়িষ্যায় আনা হচ্ছে। এর আগে উত্তরপ্রদেশের আলু উড়িশাতে অনেক ঢুকেছে। তবে পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, উত্তরপ্রদেশের আলুর গুণগতমান ভালো নয়। যে সমস্ত আলু আগে ঢুকেছিল, তা ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল বিক্রি হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা প্রচুর লোকসান করেছেন। এমত অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীদের আলু যেগুলি বর্ডারে দাঁড়িয়েছিল সেই আলু নবান্নে ঘোষণার পরেই উড়িষ্যাতে ঢুকেছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে সোনাকুনিয়ার উড়িষ্যা বর্ডার দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৭০ গাড়ি আলু বাজারে প্রবেশ করছে।
এদিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে আলুর বর্তমান অবস্থা কীরকম? আলু লোড হয়েছে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ মিলে ৬৩ লক্ষ মেট্রিক টন। রাজ্যে আলু খেতে লাগে ৩৩ লক্ষ মেট্রিক টন। বীজ আলু লাগে ৫ লক্ষ মেট্রিক টন। ভিন রাজ্যে পাঠাতে হবে ২৫ লক্ষ মেট্রিক টন। ইতিমধ্যে ভিন রাজ্যে গেছে ১২ লক্ষ মেট্রিক টন। এখনো পাঠাতে হবে ১৩ লক্ষ মেট্রিক টন। নবান্ন ছাড় দিয়েছে ২ লক্ষ মেট্রিক টন। প্রসঙ্গত, আলুর বাজার দাম গোঘাট, আরামবাগ, চাঁপাডাঙ্গা, তারকেশ্বরে গড় ১১৫০ থেকে ১২০০ টাকা প্যাকেট। ডালা আলু ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকা প্যাকেট। তবে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা আলুর ভবিষ্যৎ খুব একটা ভালো হবে এমনটা ভাবছেন না। এর আগে পশ্চিমবঙ্গ বিভিন্ন রাজ্যে আলু পাঠানো বন্ধ করায় উড়িষ্যা সহ বিভিন্ন বর্ডার দিয়ে পেঁয়াজ, ডিম-সহ বিভিন্ন মালপত্র এ রাজ্যে স্বাভাবিকভাবে ঢুকছিল না। সেই বিষয়টিতে সরকারের নজর থাকলেও এতদিন কিছু করেনি। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এই ক্ষেত্রে সরকারের নীতি ভুল ছিল। কারণ পশ্চিমবঙ্গের আলু পাবার জন্য বিভিন্ন রাজ্য অধীর আগ্রহে থাকে। সব মিলিয়ে পড়শি রাজ্যের সাথে ব্যবসায়িক আদান-প্রদানের একটা খামতি ছিল। নবান্নের বৈঠকের পর জট অনেকটাই কাটলো।
এ বিষয়ে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সম্পাদক লালু মুখার্জির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভিন রাজ্যে আলু পাঠাতে ছাড় দেওয়াতে মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা এটাও বলেছি রাজ্যে পাইকারি বাজারে ২৫ টাকা কেজি দরে আলু পাওয়া যাবে। রাজ্যের বীজ এবং খাবার আলু বাদ দিয়ে এখনও ১৩ লক্ষ মেট্রিক টন আলু বাইরে পাঠাতে হবে, না হলে রাজ্যের আলুর ভবিষ্যৎ খুবই খারাপ হয়ে যাবে। ব্যবসায়ী ও চাষিরা মার খাবেন। অর্থনৈতিক ভারসাম্য হারিয়ে যাবে। যে পরিমাণ আলু আছে তাতে রাজ্যের আলুতে কোন ঘাটতি হবে না। ২ লক্ষ মেট্রিক টনের ছাড় দিয়েছেন এই দুই লক্ষ মেট্রিক টন আলু ভিন রাজ্যে পাঠাতে গেলে কমপক্ষে কুড়ি-পঁচিশ দিন সময় লাগবে। উড়িষ্যাতে ব্যবসায়ীরা এখন আলু পাঠাচ্ছেন। তাতে গাড়ি প্রতি ব্যবসায়ীদের ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে বলেও তিনি বলেন।