বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কালো চালের ভাত খান। কারণ কালো চালের ভাত অনেক বেশি পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর। ক্যানসার রোগপ্রতিরোধেও সহায়তা করে। এই চালের ভাতে শর্করার পরিমাণ অনেক কম এবং আয়রন ও ভিটামিন বি-এর পরিমাণ বেশি থাকায় ডায়াবেটিস রোগিদের পক্ষে স্বাস্থ্যের অনুকূল।
বিশেষজ্ঞরা আরও জানাচ্ছেন, ব্ল্যাক রাইস চাষ করে চাষিরা ন্যায্য দাম পাবেন। তাছাড়া এই কালো চালের চাহিদাও বাড়ছে উত্তরোত্তর। এমনকী ভিন রাজ্যেও বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। চাষিদের আগ্রহও লক্ষ্য করা যাচ্ছে এই ধরনের ধান চাষে। উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গ থেকে কর্ণাটক ও তামিলনাড়ু যাচ্ছে কালো চাল। তাছাড়া ইউরোপের দেশগুলিতেও পশ্চিমবাংলার কালো চাল-এর কদর বাড়ছে। কৃষি বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কালো ধানের চাষ বাড়াতে চাষিদের সবরকম সহযোগিতা করা হচ্ছে। বীজ, সার এবং সেই সঙ্গে প্রযুক্তির সহায়তা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, রাজ্যের প্রায় প্রতিটি ব্লকে এই ধরনের ধানের চাষ করা সম্ভবপর। তবে আমনের মরসুমেই এই ধান চাষ করা যেতে পারে। কারণ, এই জাতের ধানে ফুল ফোটার সময় যদি তাপমাত্রা বেশি থাকে তাহলে ফুল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আমন মরসুমে শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি সময় এই চাষের পক্ষে উপযুক্ত সময়। জৈব সারে চাষ করতে পারলে ভালো ফলন হবে। মাজরা পোকা, ও ধানের পাতামোড়া রোগ দমনে মহুয়া ও নিমখোল ব্যবহার করলে ভালো ফল মেলে। রাজ্যের হুগলি, হাওড়া, বর্ধমান, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর ইত্যাদি জেলায় কালো ধান চাষের জমির পরিমাণ বাড়ছে। এ জন্য ব্লক কৃষি দফতরও এগিয়ে এসেছে চাষিদের পাশে। পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েতে চাষিদের নিয়ে প্রশিক্ষণ, সচেতনা শিবিরও গড়ে তোলা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, কালো চালের ভাত পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর হওয়ায় বাজারে চাহিদা বাড়ছে। যেভাবে দিনের দিন ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস রোগীদের সংখ্যা বাড়ছে তাতে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই চালে যেসব পুষ্টি আছে তা হল-ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ভিটামিন-এ, আয়রন ইত্যাদি। এছাড়া এই চালের ভাত ক্যানসার প্রতিরোধে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পরিপূর্ণ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে মানবশরীরে কালো চালের ভাত অত্যন্ত উপকারী। কারণ, ক্যানসার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্নায়ুরোগ ছাড়াও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিহত করতে পারে। এছাড়া গবেষণায় দেখা গিয়েছে মানব শরীরে ধমনীতে রক্ত চলাচল যেসব কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয় কালো চালের উপাদান তা প্রতিহত করে। ফলে উচ্চ রক্তচাপ হয় না এবং হৃদরোগ অর্থাৎ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও কমে যায়।
ড. অনুপম পাল অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত কৃষি অধিকর্তা, কৃষি অধিকার, পশ্চিমবঙ্গ সরকার। যিনি পশ্চিমবঙ্গে এই চালের প্রবর্তন করেছেন। অনুপম পাল বলেন — সাদা চালের যেমন বিভিন্ন জাত আছে সেই রকম কালো চালের বিভিন্ন জাত আছে। পশ্চিমবঙ্গে জনপ্রিয় কালো চালের জাতের নাম হলো কালা ভাত। ২০০৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের এটিসি ফুলিয়াতে নিয়ে আসা হয় উড়িষ্যা থেকে। আজ পশ্চিমবঙ্গে এই কালো চালের সর্বাধিক উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৪০০ টন। কিন্তু তার ৯৫ ভাগেরও বেশি অংশ অন্য রাজ্য থেকে রপ্তানি হয়ে যাচ্ছে। কালো চাল পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে পুষ্টিকর চাল। আন্টি ক্যান্সার এবং এন্টি ডায়াবেটিক এবং এর মধ্যে ভিটামিন-এ (বিটা ক্যারোটিন ) আছে। এছাড়া এর মধ্যে রয়েছে খনিজ পদার্থ ভরপুর পরিমাণে। এই চালের ভাত আঠালো কিন্তু সুগন্ধি। পায়েস, খিচুড়ি এবং চাল গুঁড়ো করে আটার সাথে মিশিয়ে রুটি করে খাওয়া যায়। পায়েসের রং হয় কিছুটা গোলাপি বর্ণের। চাল ভিজিয়ে রাখলে লাল রংয়ের অ্যান্থোসায়ানিন (যা বিটে পাওয়া যায়) যুক্ত চাল সুগন্ধী দ্রবন পাওয়া যায়। সামান্য গুড় বা চিনি মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। ছাতুর মত তাৎক্ষণিক খাবার হিসেবে (ব্ল্যাক বুন) আমাদের পশ্চিম মেদিনীপুরের কৃষক গোষ্ঠী বিক্রি করছেন। শিশু থেকে বয়স্ক অসুস্থ রোগী সবাই খেতে পারেন। সুস্বাদু। কালো চাল এর ভাত যদি ওষুধের মত করে রোজ খাওয়া যায় তাহলে চিকিৎসা ব্যয় অনেকাংশেই কমবে। কালাভাত কিন্তু উৎপাদন হয় সম্পূর্ণ জৈব সার প্রয়োগ করে।