শনিবার | ২২শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১২:২৭
Logo
এই মুহূর্তে ::
নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘অমৃতসরী জায়কা’ মহিলা সংশোধনাগারগুলিতে অন্তঃসত্ত্বা একের পর এক কয়েদি, এক বছরে ১৯৬ শিশুর জন্ম : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ‘শোলে’র পঞ্চাশ বছর : সন্দীপন বিশ্বাস বিভাজনের রাজনীতি চালিয়ে হিন্দুত্ববাদীরা ইতিহাস পালটাতে চায় : তপন মল্লিক চৌধুরী অশোক সম্পর্কে দু-চারটে কথা যা আমি জানি : অসিত দাস চৈত্রের শুরুতেই শৈবতীর্থ তারকেশ্বরে শুরু হলো সন্ন্যাস মেলা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় প্রথম বাঙালি পরিচালকের প্রথম নির্বাক লাভ স্টোরি : রিঙ্কি সামন্ত গোপিনী সমভিব্যাহারে রাধাকৃষ্ণের হোলি ও ধ্যানী অশোকবৃক্ষ : অসিত দাস শেখাওয়াটির হোলী-হাভেলী : নন্দিনী অধিকারী সংস্কৃত সাহিত্যে অশোকবৃক্ষ যখন দোহলী : অসিত দাস প্রাণগৌরাঙ্গের প্রিয় পঞ্চব্যঞ্জন : রিঙ্কি সামন্ত ‘দ্য স্টোরিটেলার’ — শিল্প এবং বাজারের মধ্যে দ্বন্দ্ব : কল্পনা পান্ডে অপুষ্টি আর দারিদ্রতা ঢাকতে সরকার আর্থিক উন্নয়নের পরিসংখ্যান আওড়ায় : তপন মল্লিক চৌধুরী দোহলী মানে অশোকবৃক্ষ, তা থেকেই দোল ও হোলি : অসিত দাস সিনেমা প্রেমীদের হোলির গান : রিঙ্কি সামন্ত দোলের আগের দিনের চাঁচর নিয়ে চাঁচাছোলা কথা : অসিত দাস খোল দ্বার খোল, লাগল যে দোল — দোলা লাগল কি : দিলীপ মজুমদার শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বৃন্দাবন যাত্রা (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত সিঙেরকোণ-এর রাধাকান্ত এখনও এখানে ব্যাচেলর : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বৃন্দাবন যাত্রা (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত বাজারে ভেজাল ওষুধের রমরমা দায় কার : তপন মল্লিক চৌধুরী বাঙালি বিজ্ঞানীর গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য ‘কুড়কুড়ে ছাতুতে’ ক্যানসার নিকেশ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বোলপুর কি সত্যিই বলিপুর : অসিত দাস রাখাইন পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের উপর প্রভাব : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন অসুখী রাজকন্যাদের লড়াইয়ের গল্প : রিঙ্কি সামন্ত বিশ্ব থেকে ক্যানসারকে নির্মূল করতে গবেষণায় একের পর এক সাফল্য রূপায়ণের : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কল্পনার ডানায় বাস্তবের রূপকথা : পুরুষোত্তম সিংহ হাইকোর্টের রায়ে ভাবাদিঘীতে তিন মাসের মধ্যে কাজ শুরুর নির্দেশ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কমছে, সঙ্কটে সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুল : তপন মল্লিক চৌধুরী ফল্গু নদীর তীরে একটি ছোট শহর এই বুদ্ধগয়া : বিজয় চৌধুরী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ দোলপূর্ণিমা ও হোলি ও বসন্ত উৎসবের  আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

শঙ্খ ঘোষ-এর ‘এখন সব অলীক’ নস্টালজিক অনুভূতি দিয়ে ঘেরা মায়াময় এক জগৎ : অমৃতাভ দে

অমৃতাভ দে / ১১০ জন পড়েছেন
আপডেট বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

স্মৃতিপথে হেঁটে যান কবিতাসাধক

নানা রঙের পাথর কুড়িয়ে নিয়ে তুলে দেন হাতে

ভিতরে জমতে থাকা অন্তহীন মন্থরতা যেন এক ভাস্কর্য

বহু স্তব্ধ রবিবারের কালো পাথর দিয়ে নির্মিত হয়েছে তা

তার মতো আমারও ইচ্ছে করে প্রতিটি দিনের মধ্যে প্রশান্তি ভরে দিতে

সেই রবিবারকে খুঁজে চলেন কবি যে রবিবার মানেই আত্মীয়তার দিন…

ট্রামে ঘুরে বেড়াবার স্মৃতি

ময়দান থেকে উঁচু হয়ে জেগে উঠতে থাকে মনুমেন্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়াম… এই শীতের সূর্যে

পুরনো দিনগুলোকে স্মৃতির কৌটো থেকে বের করে আনতে বড় ইচ্ছে করে

কথার স্রোতে ভাসতে চাওয়া কবির জানলার কাছে রবিবার ঠোঁট থেকে ফেলে যায় এক টুকরো সবুজ পাথর…

***

স্মৃতিপথে উঠে আসে নানা রঙের পাথর বসানো রবিবার…উপরে জেগে থাকে কাজ, ভিতরে বিরাম।

***

স্মৃতিপথে উঠে আসে সপ্তমীর দিন

কবিতা সাধক ছইয়ের উপর থেকে নেমে আসেন নৌকার পাটাতনে

বাড়ির ঘাটে নৌকো লাগতে না লাগতেই ঝাঁপ দিয়ে লাফিয়ে পড়েন ডাঙায়

বেনেবাড়ির ছড়ানো ঘাটেপ্রাঙ্গণে থরে থরে শিউলি জবা ঝুমকো

***

আজও তো ঘর ভরে ওঠে নতুন কাপড়ের গন্ধে

***

কবিতা সাধক স্মৃতিপথে খুঁজে চলেন খয়েরি রঙের রেখসিনে বাঁধানো একখানা বই

বইয়ের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে হয়ে ওঠেন অরণ্যের পরিব্রাজক…

***

কবিতাসাধকের স্মৃতিপথে আমিও হেঁটে যাই

বর্তমানকে ডুবিয়ে দিই অতীতের মধ্যে…

এই শরতের দুপুরে শঙ্খ ঘোষের ‘এখন সব অলীক’ পড়তে পড়তে পংক্তিগুলো লিখতে ইচ্ছে করল। তাঁর প্রতিটি গদ্যগ্রন্থ একে অপরের থেকে আলাদা। প্রতিটি গ্রন্থে মিশে আছে তাঁর প্রজ্ঞা, দার্শনিক চেতনা। তাঁর একান্ত অনুভবের ভাষ্য সেইসব গ্রন্থ। একেবারেই ভিন্ন স্বাদের একটি গ্রন্থ ‘এখন সব অলীক’। স্মৃতির সরণি বেয়ে সারাটা দুপুর মৌন হয়ে হেঁটে চললাম মায়াময় শব্দের গালিচায়। ফেলে আসা অতীত মিশে যায় বর্তমানের সাথে, আগামীর পথে ছড়িয়ে দেয় আলোময় দ্যুতি।

‘যে সব সময় আমরা কাটিয়ে এলাম, তারই কিছু ছবির কথা আজ ভাবতে ইচ্ছে করে। কিন্তু নিছক ব্যক্তিগত সেই ছবিগুলো তো নিজেরই কাছে সঞ্চিত রাখবার কথা; অন্যের দরবারে পেশ করা কেন? খুব-যে কারণ আছে তা নয়। তবু কখনো কখনো মনে হয়, ব্যক্তিগত এই অভিজ্ঞতাগুলির মধ্যে হয়তো-বা রয়ে গেছে বিলীয়মান একটা সমাজ-সময়ের ছায়া, একটা সময় থেকে আরেকটা সময়ের দিকে তাকিয়ে দেখবার ক্ষীণ একটা সুযোগ। ব্যক্তি-অংশটা গৌণ করে দিয়ে পাঠক যদি সেইদিকটাকে লক্ষ্য করতে পারেন, তাহলে এ-লেখাগুলি প্রকাশের একটা মানে থেকে যায়।

পুরনো দিনের কথা লিখতে লিখতে অনেকসময়ে নিজেই অবাক হয়ে ভাবি: সত্যি সত্যি এসব ঘটেছিল একদিন? এইসব ঘটনা এইসব মানুষ দেখেছি একদিন নিজেরই দুচোখে? সমস্ত মূল্যবোধ এত দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে চারপাশে যে- অন্যদের কাছে তা তো বটেই- নিজেরও কাছে এর অনেক অংশ অবিশ্বাস্য লাগে আজ, অলীক। অথচ প্রতিটি মুহূর্তকে এখনও দেখতে পায় প্রায় হাতে-ছুঁয়ে-দেখার স্পষ্টতায়, পাঠকের কাছে যে-স্পষ্টতা পৌঁছে দেওয়া আমার পক্ষে হয়তো সম্ভব নয়।’

আমার জন্ম তখনও হয়নি কিংবা স্কুলের গন্ডি তখনও পেরোইনি, যখন শঙ্খ ঘোষ ‘এখন সব অলীক’গ্রন্থের হৃদয়স্পর্শী রচনাগুলিতে যে সময়ের কথা লিখেছেন। পুরোনো দিনের ছবিগুলো উল্টে দেখতে আমারও খুব ভালো লাগে, হয়তো আমার মতো আরও অনেকের। হারিয়ে যাওয়া রঙিন মুহূর্তগুলি কিংবা হারিয়ে যাওয়া সেই বিস্ময়কর মানুষগুলোকে আজকের এই জটিল সময় দাঁড়িয়ে স্পর্শ করতে ইচ্ছে করে খুব। কোলকাতার একটি অনুষ্ঠানে এই প্রিয় কবিকে স্পর্শ করার সুযোগ পেয়েছিলাম একবার, তাঁর আঙুল ছুঁয়ে তাঁকে মঞ্চে উঠিয়ে দিয়েছিলাম- রোমাঞ্চিত হয়েছি, আপ্লুত হয়েছি। তাঁর লেখা এই গ্রন্থ পড়তে পড়তে আমিও যেন প্রায় হাতে ছুঁয়ে দেখার স্পষ্টতায় পুরনো দিনের প্রতিটি মুহূর্তকে দেখতে পেলাম। অবিশ্বাস্য, অলীক মুহূর্ত সত্যিই আজকের এই ভাঙনের সময়ে আমাদের পৌঁছে দেয় স্বপ্নের আশ্রমে। তাঁর লেখায় ফুটে ওঠা ‘বড়ো বড়ো থাম’ আমিও তো স্পর্শ করতে পাচ্ছি। গ্রাম থেকে শহর কলকাতায় কলেজে পড়তে গিয়ে আমারও তো মনে হয়েছিল, ‘সে-কলকাতার যে-কোনো বিন্দুতে দাঁড়ালেই নিজেকে মনে হয় নিতান্ত বাইরের লোক, অবাঞ্ছিত, থাকতে হয় তাই সন্তর্পণে।’যে সময় ওপার বাংলার এক দীন মফঃস্বল-স্কুল থেকে কলকাতায় পৌঁছেছিলেন তিনি, সেই সময় যাঁদের শিক্ষক হিসেবে পেয়েছেন তা ভাবলে আমাদের এই প্রজন্ম সত্যিই বিস্মিত হবে। প্রথম দিনের প্রথম ক্লাসে সংস্কৃতের বিখ্যাত পন্ডিত গৌরীনাথ শাস্ত্রীর কথাগুলি বারবার ফিরে ফিরে এসেছে শঙ্খ ঘোষের চেতনায়, মননে-‘ইট পাথরের থাম দিয়ে কলেজ বড়ো হয় না, কলেজের আসল স্তম্ভ হলেন সেইসব মানুষ, একদিন যাঁরা এখানে পড়েছেন, পড়িয়ছেন। ‘সুশোভন সরকার, গোপীনাথ ভট্টাচার্য, সোমনাথ মৈত্র, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত, রবীন্দ্রনাথ চ্যাটার্জী, উপেন্দ্রনাথ ঘোষাল প্রমুখ প্রবাদপ্রতিম শিক্ষকদের কথা উঠে এসেছে তাঁর লেখায়। রুটিনে টিফিনের পরে আসবেন এসসিএসজি। পুরো নাম সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত। বই আছে তাঁর। উত্তেজনায় গেঁয়ো ছেলের কাঁপুনি আসে প্রায়। দৌড়ে গিয়ে তাঁর ‘বঙ্কিমচন্দ্র’ নামের বইটি নিয়ে এসে পিছনবেঞ্চ ছেড়ে দিয়ে একেবারে সামনে গিয়ে বসেন, কেননা বইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে মিলিয়ে দেখতে হবে মানুষটিকে। এঁরই আছে পড়বেন ভেবে আত্মহারা হয়ে যান।

‘সাজানো বাগান’ শীর্ষক লেখায় সামাজিক চেহারার বদলের ছবি ধরা পড়ে। এই সাজানো বাগান আসলে প্রেসিডেন্সি কলেজ। তারা যে সময় আই.এ. ক্লাসে পড়তেন সেসময় ক্লাসে ছিলেন ছেচল্লিশটি ছেলে আর একটি মাত্র মেয়ে‌। ছাত্রীসমাকীর্ণ বর্তমান প্রেসিডেন্সির কথা উল্লেখ আছে এখানে। যেহেতু প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সুযোগ আমারও হয়েছিল, সালটা ২০০১, সে সময় কুড়ি জন ছাত্র ছাত্রীর মধ্যে ছাত্রী সংখ্যা ছিল বারো, ছাত্রের সংখ্যা ছিল আট। পুরোনো প্রেসিডেন্সির কথা পড়তে পড়তে আমিও পৌঁছে যাচ্ছিলাম সেই ‘সাজানো বাগানে’। প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক সুধীর চক্রবর্তীর বিভিন্ন বক্তৃতায় এবং লেখায় সেই সময়ের শিক্ষকদের কথা, তাঁর সহপাঠীদের (যারা সবাই পরবর্তী সময়ে নিজও নিজও ক্ষেত্রে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিহ্নিত) কথা শুনেছি, পড়েছি। সুধীরবাবুর বক্তৃতায় আজও উঠে আসে শঙ্খ ঘোষের কথা।

এই গ্রন্থে খুবই সহজ ভঙ্গিতে তাঁর কলেজ জীবনের কথা যেভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে, তা এই সময়েও প্রাণময়, জীবন্ত। সেই সময়ের মাস্টারমশাই-ছাত্রদের মধ্যে সম্পর্ককে ঈর্ষা করতে হয়। যদিও একবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে আমরাও পেয়েছি এমন বেশ কিছু শিক্ষককে যাঁদের সাথে আমাদের সম্পর্ক ছিল খুব গভীর অন্তরঙ্গ। শঙ্খ ঘোষের কথায় উঠে এসেছে বাংলা বিভাগের বিস্ময়কর দেবীপদ ভট্টাচার্য, শ্রীশচন্দ্র দাস, গোপীনাথ ভট্টাচার্য, গৌরীনাথ শাস্ত্রী, ক্ষুদিরাম দাস, তাপস মজুমদার, হরপ্রসাদ মিত্র, অমিয়কুমার মজুমদার, তারকনাথ সেন অমল ভট্টাচার্য প্রমুখের ছাত্রছাত্রী-প্রীতির কথা। তিনি লিখছেন,’বিস্ময়কর ছিল বাংলা বিভাগের দেবীপদ ভট্টাচার্যের অভিনিবেশ। বাংলা পড়াতেন বলে কলেজের প্রায় সব ছেলেই তাঁর ছাত্র, প্রায় সকলেরই নাম মনে থাকে তাঁর, অনেককেই জানেন একেবারে ব্যক্তিগত স্তরে।মাস্টারমশাইদের আশকারা পেয়ে পেয়ে কোনো- কোনো ছাত্র হয়তো তখন তুড়িতে উড়িয়ে দিচ্ছে পৃথিবী, গ্রাহ্য করছে না পরীক্ষাকে, কিন্তু ‘অন্বিষ্ট’র মতো সদ্যপ্রকাশিত কবিতা-বই নিয়ে ছাত্রশিক্ষকে কথা চলছে সমবয়সীর মতো। ক্লাসের মধ্যে যথেষ্ট সময় হয় না বলে জিজ্ঞাসু কোনো ছাত্রকে হয়তো বাড়িতেই ডেকে নেন শ্রীশচন্দ্র দাস, তন্ত্রশাস্ত্রের অনুপুঙ্খ আলোচনা করেন তার সঙ্গে। রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে নতুন ভাবনায় বই লিখবেন বলে কোন ছাত্রের সঙ্গে দিনের পর দিন আলোচনায় বসেন ক্ষুদিরাম দাস আর ক্লাসের মধ্যেই দার্শনিক তর্কে ছেলেমেয়েদের উস দিতে চেষ্টা করেন গোপীনাথ ভট্টাচার্য গৌরীনাথ শাস্ত্রী

‘খাইনি সারাদিন’ শীর্ষক লেখাটি সময়ের দলিল। নতুন দেশের নতুন রাজনীতিতে তখন অভ্যস্ত হয়ে ওঠে নি সবাই।’ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়’ স্লোগান দিয়ে পথে পথে শুরু হয়েছিল মিছিল, পুববাংলা থেকে পৌঁছানো উদবাস্তুতে ছেয়ে গিয়েছিল শহর, নিষিদ্ধ হয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি, কলকাতার যুবসমাজে তার তাপ পড়েছিল। তবে প্রেসিডেন্সি পর্যন্ত সেটা কম পৌঁছে ছিল। ধরে নেওয়া হতো তারা নিতান্তই বইয়ের জগতের লোক, পথের রাজনীতি নিয়ে অকারণ তাদের ব্যস্ত না হলেও চলবে। তবে তার মধ্যে দু-চারটে আন্দোলন অল্প পরিমাণ জড়িয়ে পড়েছিল তারা কখনো-সখনো। দেখতে দেখতে এসে যায় পঞ্চাশ সাল। সাতচল্লিশের উদ্বাস্তু প্রবাহের পর আরও একটা নতুন ধাক্কা তখন এপার বাংলার উপর এসে পড়ে। কলকাতাতেও তার প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় দাঙ্গা সমাজমনস্ক পরিণত মানুষদের সঙ্গে প্রেসিডেন্সি ছেলেমেয়েরাও তখন নেমে পড়েছে পথে দাঙ্গাপ্রতিরোধে, কখনো-বা কখনো উদ্বাস্তু ত্রাণের কাজে। গোপীনাথ ভট্টাচার্যের ক্লাসে দাঁড়িয়েও কেউ কেউ ছুটি চায় কাজের জন্য। নির্দ্বিধায় ছেড়ে দেন স্যার। শঙ্খ ঘোষ তুলে ধরেছেন সমকালীন রাজনৈতিক স্থিরচিত্রের পাশাপাশি সেই নিঃস্ব সময়ের প্রতিফলন যেভাবে শিল্প-সাহিত্যে পড়েছে তার কথা। সবাই দল বেঁধে ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে শম্ভু মিত্র ‘মধুবংশীর গলি’ শুনতে যাওয়া হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘রানার চলেছে’, ‘অবাক পৃথিবী’, কিংবা ‘কোনো এক গাঁয়ের বধূ’ শুনতে যাওয়ার ঘটনা আমরাও যেন অনুভব করতে পারি। ‘সুকান্ত- হেমন্ত-সলিল চৌধুরী মিলেমিশে প্রায় একটাই নাম হয়ে ওঠে সকলের মুখে মুখে, কলেজের কমনরুমে বা করিডরের আড্ডায় গুনগুনিয়ে ওঠে সেই সুর।’শম্ভু মিত্রের নাটক ‘বিভাব’প্রসঙ্গে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য পাই এখানে। ‘বহুরূপী’এই নাটক লাইব্রেরির নিরাভরণ ডায়েসের উপরই প্রত্যক্ষ করেছিলেন শঙ্খ ঘোষ।’কী কৌশলে কথা বলতে বলতেই শম্ভূ মিত্র শুরু করে দিয়েছিলেন নাটক, অতর্কিতে।… গর্বিত ছিলাম এই ভেবে যে প্রেসিডেন্সির বাইরে এই ‘বিভাব’ নাটক বেশি আর দেখেনি কেউ তখনও, একটা ঐতিহাসিক লগ্নের তাই সাক্ষী রইলাম আমরা।’প্রসঙ্গত বলতে খুব ইচ্ছে করছে শম্ভু মিত্রকে নিয়ে কাজ করার জন্য আমার এই নাটকটি খুব দরকার হয়ে পড়েছিল কোথাও খুঁজে না পেয়ে কলকাতা লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও গবেষণা কেন্দ্রের কর্ণধার সন্দীপ দত্তর কাছে যাই। উনি ‘বহুরূপী’র একটি সংখ্যা আমার হাতে তুলে দিলে ‘বিভাব’ নাটকটি সেখানে পাই।নাটকটি হাতে পেয়ে আমারও মনে হচ্ছিল এক চলমান ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখছি আমি।এখন যখন স্কুলে নাটকটি পড়াই তখন বারবার রোমাঞ্চিত হই, শিহরিত হই, আর ভাবি এইরকম একটি অভিনব নাট্যরীতির প্রয়োগ কীভাবে ঘটালেন শম্ভু মিত্র!

প্রেসিডেন্সি কলেজের নানা স্মৃতির কোলাজ আছে এই গ্রন্থে। উনিশশো পঞ্চাশের বৃক্ষরোপণ অনুষ্ঠানের কথা ১৯৯২-এ বসে তখন লেখেন তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না পুরোনো দিনের সেই ছবিগুলো তাঁর কাছে তখনও সজীব।

‘বিকেল হয়ে আসছে বিভাগীয় প্রধানের ঘরে টেবিলের উপর কনুই রেখে গালে হাত দিয়ে একা বসে আছেন অজিত দত্ত, অন্য হাতে ধরা আছে জ্বলন্ত সিগারেট: যাদবপুরের খুব পুরোনো দিনের কথা ভাবলে এই ছবিটাই আমার মনে আসে প্রথমে।’যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু প্রথম দিকের অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ আছে ‘ছেড়ে যাবার আগে’ রচনায়। যাদবপুর মানেই একটা আন্তরিক পরিমণ্ডল। অজিত দত্তের আহ্বানেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পৌঁছেছিলেন শঙ্খ ঘোষ। সবাইকে চমকে দিয়ে ‘যৌবন বাউল’-এর অলোকরঞ্জনও এসে পৌঁছান যাদবপুরের বাংলা বিভাগে। যদিও ছাত্র জীবন সংঘ করেই অলক রঞ্জন যাদবপুরের অধ্যাপনায় যুক্ত হয়েছিলেন তুলনামূলক সাহিত্যে, অধ্যাপনার খ্যাতি তখন তুঙ্গে। শঙ্খ ঘোষ লিখছেন, তার এই রহস্যজনক বিভাগ বদলেরর কোনো মানে খুঁজে পায়নি কেউ‌।মানে একটাই ছিল কোথাও, সেটা এখানে অত স্মরণীয় নয়, আমার কাছে স্মরণীয় কেবল এইটুকু যে অনেকে তখন কৌতুকভরে বলতে শুরু করেছেন: দু-বন্ধু একত্রে থাকবার জন্যই বিভাগ ছাড়ল অলোক।’দীপ্তিতে উজ্জ্বল অলকের মুখচ্ছবিটা সব সময় যাতে দেখতে পান তাঁর জন্য শঙ্খ ঘোষ বেছে নিয়েছিলেন একটি নির্দিষ্ট ঘরের একটি নির্দিষ্ট টেবিল। আসলে বিভাগের মধ্যমণি ছিল অলোক। ‘শ্লেষযমকের তৎসমভরা তার কথার ফুলঝুরি, তার একেবারে নিজস্ব ‘অলৌকিক’ ভাষা, বিশ্বসাহিত্যে ঘুরে বেড়াবার তার মানসিক ক্ষিপ্রতা, বিদ্যুচ্চমকের মতো প্রজ্ঞার সঙ্গে মেলানো তার অবিশ্বাস্য ছেলেমানুষি, প্রতিমুহূর্তে কিছু-না-কিছু করবার জন্য ছটফটে আবেগ, সব মিলিয়ে ছাত্রছাত্রীদের কাছে অনায়াসে তাকে করে তুলতে পারতো একজন অন্তরঙ্গ মানুষ। সে-অন্তরঙ্গতার অনেকটাই অবশ্য দখল করে নিয়েছিলাম আমি। ‘পরবর্তী সময়ে অলোকরঞ্জন চলে যান জার্মান দেশে। ছ-বছরের মার্কিনপ্রবাস সাঙ্গ করে সর্বতোমুখী বিদ্যাচর্চার বিচ্ছুরণ নিয়ে বিভাগে আসেন পবিত্র সরকার। বিভাগের মধ্যে তৈরি হওয়া পারিবারিক আবহাওয়ার কথা বারবার বলেছেন শঙ্খ ঘোষ-‘সুনীলবাবুর উচ্চাঙ্গসংগীত, মদনবাবুর পুরোনো বাংলা গান, মৈত্রেয়ীর গলায় ভজন বা কীর্তন, আর অলোক পবিত্র পিনাকেশের সুঠাম স্বরে রবীন্দ্রনাথ।’এসেছে অশিক্ষক কর্মী নটবরের কথা, যে ছিল বিভাগের সবখানি জুড়ে। তুমি আর আপনি বলার কোন স্থিরতা ছিল না নটবরের। শঙ্খবাবুর শরীরের দিকেও খেয়াল ছিল তার। যাদবপুরের যে ক’টি সুখের মুহূর্ত আমুত্যু গাঁথা থাকবে তাঁর মনে তার একটি ছিল নটবরের ওই প্রত্যাখান।

আরেক রকম মানুষ’ শিরোনামে লিখেছেন সজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়ে- রেজাউল করিম, বিশ্বপতি চৌধুরী, হেড মাস্টারমশাই, কিরণচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, নির্মলকুমার বসু, প্রবোধচন্দ্র সেন স্মৃতিপটে উঠে এসেছেন। পড়তে গিয়ে মনে হয় একেকটি গল্প পড়ছি।”ছোট একটা জনপদে সবাই সবার কথা জেনে যায় সহজে। সেইভাবেই একদিন জানাজানি হয়ে গেল যে স্কুলের হেডমাস্টারমশাই ভাতের বদলে এখন তরকাসেদ্ধ খাচ্ছেন কদিন।”-এভাবেই শুরু হয়েছে ‘হেডমাস্টার মশাই’। দুর্ভিক্ষের বছর, চালের দাম উঠে গেছে চল্লিশ টাকা মণ। খোলাবাজারে পাওয়া যায় না কিছু। লুকিয়ে লুকিয়ে অবশ্য চাল বেচা চলছিল। বিদ্যাসাগরের ভক্ত এই মাস্টারমশাই সেভাবে কিছুতেই চাল কিনতে রাজি ছিলেন না।’চাল না হোক, আলু-পটল তো পাওয়া যাচ্ছে, সেদ্ধ করে খেলেই হয় সেসব।’ আবার বাড়িতে সংসার জীবন চলছে কেমন করে সেটা জানবার তাঁর সময় নেই বেশি। এমন এক মাস্টারমশাই কথা তিনি লেখেন যিনি ছেলেকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি রেখে স্কুলে এসে বাংলা টেক্সট পড়াবার বদলে খুলে বসে ছিলেন ‘নৈবেদ্য’। দুরারোগ্য অসুখে ভুগছিল মাস্টারমশাই-এর ছেলে। মাস্টারমশাই থেকে অন্যমনস্ক মন্থর দেখে কয়েকজন ছাত্র পৌঁছায় তাঁর বাড়িতে।গোটা বাড়ির থমথমে মৃত্যুমুখী আবহাওয়ার মধ্যে ছাত্রদের মনে ভেসে আসে অল্প আগে শোনা কবিতাগুলির কোনো কোনো লাইন।’

তোমাতে রয়েছে কত শশী ভানু,

কভু না হারায় অণু-পরমাণু,

আমার ক্ষুদ্র হারাধনগুলি

রবে না কি তব পায়।

বুঝতে পারে তারা, কেন ওই মুহূর্তে এইসব কথাই ওভাবে উচ্চারণ করতে হচ্ছিল তাঁদের মাস্টারমশাইকে। ছেলেটি শেষ পর্যন্ত বেঁচে গিয়েছিল।বেশ কয়েকজন ছেলেমেয়েকে নিয়ে মাস্টারমশাইয়ের বড় সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তাঁর নীতির দিক থেকে গর্হিত ছিল প্রাইভেট ট্যুইশন।এম.এ. পড়তে পারল না বড় ছেলে। রেলওয়ে অফিসের চল্লিশ টাকার চাকরিতে বহাল হয়ে যায় সে। অথচ হেডমাস্টার মশাইয়ের কাছে নিভৃতে একটি আবেদন এসেছিল স্কুলের বাইরে কাউকে একটু পড়িয়ে দেবার জন্য। সেই গৃহশিক্ষকতার জন্য মাস্টারমশাইকে দেবার কথা হয়েছিল চল্লিশ টাকাই।”কিন্তু কেমন করে তা হবে? ছেলের উচ্চশিক্ষা কি নীতির চেয়েও বড়ো? প্রশ্নের উত্তর হিসেবে এটাই হয়তো সেদিন ভেবেছিলেন আপাদমস্তক সেই মাস্টারমশাই, ছোটো একটা জনপদে সেদিন যাঁকে ভালবাসতেন সবাই, শ্রদ্ধা-মেশানো এক ভালোবাসা।”

“কলেজস্ট্রিটের কফি হাউসকে এক সময়ে বলা হতো (হয়তো আজও হয়) প্রেসিডেন্সি কলেজের ছেলেমেয়েদের কমনরুম।”-এভাবেই শুরু করেছেন কিরণচন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে তাঁর লেখাটি। স্বদেশী আমলের সন্ত্রাসবাদী কর্মীদের একজন, বাঘা যতীনের বিপ্লবী শিষ্য কিরণ। সিগনেটের পাশে ন্যাশনাল বুক এজেন্সি, তার পাশের দরজা দিয়ে দোতলায় উঠে গেলেই লম্বা একফালি ঘর, প্রজ্ঞানন্দ পাঠাগার, মানে কিরণদার লাইব্রেরি।” এই সেই কিরণদা, যাঁকে গ্রেপ্তার করতে এসে টেগার্ট সাহেব ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাঘাযতীনের ছবিখানার ওপর, বেত মারতে মারতে ভেঙে ফেলেছিলেন ফ্রেম। এই সেই কিরণদা যাঁকে ব্রিটিশ সরকার বন্দী করে নিয়ে যেত বারবার, জীবনের প্রায় কুড়ি বছরই কেটে গেছে জেল-গারদের অন্ধকারে। প্রফুল্ল চাকীর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী এই সেই কিরণদা, বক্সার জেলে ব্রিটিশের বর্বর অত্যাচারের চিহ্ন প্রত্যক্ষ লেগে আছে যাঁর সমস্ত শরীর জুড়ে। এসব ইতিহাসের কথা। স্বাধীন ভারতের আরেকজন কিরণদাকে তিনি দেখেছেন তাঁর নিজের চোখে। ছড়ি হাতে অশক্ত শরীর নিয়ে তিনি টুকটুক করে হেঁটে বেড়াতেন পথে, যুবক ছাত্রদের দেখলেই টেনে নিতে চাইছেন তাঁর পাঠাগারে। তৈরি করতে চেয়েছেন এক যুবকদল, জ্ঞানচর্চা, শরীরচর্চা আর সর্বোপরি শৃঙ্খলাচর্চায় স্বাধীন ভারতের ঋদ্ধ নাগরিক হয়ে উঠবে যে যুবক দল, দেশকে যারা গড়ে তুলতে পারবে তাঁর সত্যধর্মে। কিরণচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের কথা পড়তে পড়তে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে যায় আমারও।

“মাস্টারমশাইদের মধ্যে কেউ কেউ থাকেন যাঁদের শ্রদ্ধা করা যায় অনেক, মুগ্ধ হওয়া যায় যাঁদের জ্ঞান নিয়ে, যাঁদের পড়াশোনার কুশলতা- গভীরতা নিয়ে উচ্ছ্বাসও করা যায় অবিরত। কিন্তু কমই থাকে সে-রকম মানুষ, যাঁদের ওই একই সঙ্গে ভালোবাসা যায়। জ্ঞানের জন্য নয়, অধ্যাপনার দীপ্তির জন্য নয়, কেবল অন্তরঙ্গ এক প্রিয় জন হিসেবে কোনো অধ্যাপকের সান্নিধ্য পেয়ে যাওয়া ছাত্রজীবনের একটা বাড়তি লাভ। বাংলা বিভাগে, ছিপছিপে হালকা বিশ্বপতি চৌধুরী ছিলেন আমাদের সেই প্রিয় জন।”আত্মমর্যাদাবোধের একটা নতুন শিক্ষা পেয়েছিলেন বিশ্বপতি চৌধুরীর কাছে।

শ্রদ্ধেয় প্রবোধচন্দ্র সেনকে নিয়ে ছোট্ট একটি লেখায় উঠে এসেছে শান্তিনিকেতনের স্মৃতি। শঙ্খ ঘোষ শান্তিনিকেতনে এসেছেন শুনে শান্তিনিকেতনের টুরিস্ট লজে হাজির হন ৭৫ বছর বয়সের প্রবোধচন্দ্র সেন। লেখাটি পড়ে বিস্মিত হতে হয়। শঙ্খ ঘোষকে সঙ্গে করে তিনি নিয়ে যান তাঁর নিজের বাড়িতে।”তুমি তো কদিন লেখাপড়া করবে ভেবেই এসেছ? তাহলে আমার বাড়িতে থাকবে না কেন?”

শঙ্খ বাবু লিখছেন, — “এমন নয় যে তাঁর কোনো প্রত্যক্ষ ছাত্র ছিলাম আমি। এমন নয় যে আমাদের জীবনযাপন বা জীবনভাবনার খুব একটা সদৃশ্যতা ছিল কোথাও। এমনও নয় যে এর আগে দীর্ঘকাল তাঁর সান্নিধ্য কাটিয়েছি কখনো। তবু যে তিনি আমাকে শিষ্যের মান দিতে এগিয়ে এসেছিলেন তাঁর বাড়িকেই মনে করতে বলেছিলেন আমার গুরুগৃহ, পরবর্তী সমস্তটা কাল ভরে দিয়েছিলেন প্রায় পুত্রস্নেহে, সেটা আমার কোনো বিশিষ্টতার জন্য নয়, সেটা ছিল তাঁরই একটা নিজস্ব চরিত্রলক্ষণ।” এসমস্ত স্মৃতিকথা পড়তে পড়তে ভাবি গুরু-শিষ্যের এমন সম্পর্ক আমাদের চলার পথের পাথেয় হয়ে থাকুক। কীভাবে একজন মানুষ তাঁর কথার ভিতরে দিয়ে একবার ছুঁয়ে নিতে চান একই সঙ্গে তাঁর অতীতকে তাঁর দেশকে। শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে। প্রবোধচন্দ্র সেন ছিলেন ‘অনেকখানি শান্তিনিকেতন’। ভোরেরবেলা থালায় ভরা চাঁপাফুল আজও হয়তো কেউ রেখে যান শঙ্খবাবুর জন্য, দূর থেকে ভেসে আসে থালায় ভরা একরাশ চাঁপা ফুলের গন্ধ।

কবিতা সাধকের সাথে আমিও হেঁটে চলি

‘আর এক আরম্ভের জন্য’

রাসবিহারী এভিনিউ থেকে ঢাকা শহর… ফ্যাসিস্ট বিরোধী মিছিল…

খুন হয় সম্ভাবনাময় গল্পকার

আমিও দেখতে পাই ‘কবিতা ভবন’ যেখানে জনতা তার দৈনন্দিন থেকে দূরে সরে গিয়ে শুদ্ধ কবিতার চর্চা করবে

একদিকে বুদ্ধদেব বসু অন্যদিকে বিষ্ণু দে

আমার চোখের সামনে উঠে আসে ‘কবিতা কিংবা ‘সাহিত্যপত্র’

সমান্তরাল দুই ধরণ

জটিল এক সময়ের স্থিরচিত্র যেন কবিতাসাধকের চলার পথে

স্বাধীনতা আন্দোলনের কতনা ছবি

দাঙ্গা দুর্ভিক্ষ দেশভাগের যন্ত্রণা

আমি আমার মুঠোর মধ্যে রেখে দিই সেইসব জীবন্ত ইতিহাস…

এখন সবারই গ্রন্থের দ্বিতীয় অধ্যায়ে একটিই প্রবন্ধ আছে,’আর এক আরম্ভের জন্য’। প্রবন্ধটি বৃহত্তর ইতিহাসের দলিল, বলা ভালো সাহিত্য -আন্দোলনের এক জীবন্ত চিত্র। বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের নানা কথার কোলাজ এটি। বুদ্ধদেব বসুর ‘কবিতা’ পত্রিকা, বিষ্ণুদেব ‘সাহিত্য পত্র’ পত্রিকার ভিন্নধর্মী আদর্শের কথা দিয়ে প্রবন্ধটি শুরু হলেও এখানে আলোচিত হয়েছে যুদ্ধ,দাঙ্গা,মন্বন্তর-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের কথা, বাংলা সাহিত্যের কথা। ১৯৪২ সালে ৮ই মার্চ ফ্যাসিস্ট বিরোধী এক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য মিছিল নিয়ে চলেছিল ২২ বছরের সোমেন চন্দ। খুন হন তিনি, সম্ভাবনাময় গল্প লেখকের মৃত্যু হয় সেদিন। পৃথিবীর ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় ছোট্ট শহরের স্থানীয় ঘটনা। প্রতিবাদের ঝড় ওঠে কলকাতায়। লেখকদের পক্ষ থেকে সভা হয়, এগিয়ে আসেন বহু লেখক। বিভিন্ন মতাদর্শের লেখক শিল্পীরা এক সূত্রে বাঁধা পড়েন লেখেন প্রবন্ধ গল্প নাটক। ছাপা হয় লেখকদের সমাজমুখী জবানবন্দি। একদিকে সুকান্ত ভট্টাচার্যের উত্থান,যাঁর ‘রবীন্দ্রনাথের প্রতি’ কবিতা শুনে তারাশঙ্কর তাকে জড়িয়ে ধরেন বুকে, সুধীন্দ্রনাথ দত্তের সম্পাদনায় ‘পরিচয়’ পত্রিকার নবপর্যায়, অন্যদিকে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হারাণের নাতজামাই’-এর মতো গল্পের পাঠ। পিছুপিছু এল দুর্ভিক্ষ। ফ্যানের খোঁজে বুভুক্ষু মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরের পথে। স্কুল কলেজ জীবনে দুর্ভিক্ষের গল্পকবিতা উপন্যাস পড়তে পড়তে কেঁদেছি, কষ্ট পেয়েছি। মনে পড়ে যাচ্ছিল সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতা বিভূতিভূষণের উপন্যাস মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প। শঙ্খবাবুর লেখায় উঠে আসে বিভিন্নন পত্র-পত্রিকায় কথা। বলতে ভোলেন না ‘পূর্বাশা’ অফিসে সে সময়় সাহিত্যিক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছিল-‘যুদ্ধকালীন সাহিত্য’। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়় লিখছেন ‘মন্বন্তর’। গঠিত হচ্ছে IPTA। গণনাটক কবিতাকে সাধারণ মানুষের গ্রহণযোগ্য রূপে তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া, লোকশিল্পের উজ্জীবন ঘটানোর চেষ্টা শুরু হলো। গণনাট্য সংঘ মন্বন্তরের সঙ্গে লড়াইয়ে দায়িত্ব নিয়ে ফেলে। প্রাবন্ধিক এর কথায় উঠে আসে হেমাঙ্গ বিশ্বাস দেবব্রত বিশ্বাসের গানের কথা, বিজন ভট্টাচার্য, বিনয়় ঘোষ, শম্ভু মিত্রের নাট্যচর্চার কথা। শঙ্খ ঘোষ এক জায়গায় লিখছেন, —

“প্রগতি লেখক ফ্যাসিস্ট বিরোধী বা ভারতীয় গণনাট্য সমস্ত সঙ্ঘেরই একটা মানবিক দিক ছিল বলে সচেতন শিল্পীমাত্রেই তার সঙ্গে নিজেকে অল্পবিস্তর যুক্ত করতে চেয়ে ছিলেন সেদিন। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এও ঠিক যে সকলের পক্ষে সেই সংঘগুলির রাজনৈতিক দৃষ্টিকে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না।”কেউ কেউ নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন গণনাট্য থেকে। পরবর্তী সময়ে আমরা দেখব ‘কংগ্রেস সাহিত্যসংঘ’ গড়ে উঠছে। ‘শনিবারের চিঠি’র সূত্রে এর অধিনায়ক হয়ে উঠলেন সজনীকান্ত দাস। কম্যুনিস্টবিরোধিতার একটা কেন্দ্র হয়ে উঠল ১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী এই সংঘ। তারপরেও এক দীর্ঘ ইতিহাস। বাংলা সাহিত্যে এলেন সতীনাথ ভাদুড়ী। চমকে দিলেন পাঠকদের। বিয়াল্লিশের আগস্ট আন্দোলন নিয়ে স্মরণীয় একটি উপন্যাস ছাপা হলো অখ্যাত এক প্রকাশনা থেকে ১৯৪৫ সালের শেষে। হয়তো বদলে যেতে থাকলো বাংলা সাহিত্যের গতিপ্রকৃতি। ১৯৫৪ সালের ২৮-২৯ জানুয়ারির দুই সন্ধ্যায় ঐতিহ্যবাহী সেনেট হলে কলকাতা দেখল এক নতুন ধরনের সমাবেশ। প্রবীণ থেকে নবীনতম পর্যন্ত ৭২ জন কবিকে ডাকা হল তাঁদের কবিতা পড়বার জন্য। সেটা ছিল ঐতিহাসিক প্রথম কবি সম্মেলন। জীবনানন্দ, সুধীন্দ্রনাথ থেকে কুড়ি বছরের তরুণ অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত।” এরপর থেকে কবি সম্মেলন হয়ে দাঁড়ালো আমাদের যে-কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের এক সুনিশ্চিত অংশ।” ‘কবিতামেলা’ নাম দিয়ে বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়েরা আহ্বান করলেন তিনদিনের এক আসর ১৯৫৭ সালের মে মাসে জোড়াসাঁকোয়। কত কথাই না উঠে এসেছে এই প্রবন্ধে। ‘কৃত্তিবাস’, ‘সিগনেট’, ‘শতভিষা’, ‘হাংরি জেনারেশন আন্দোলন’, ‘কবিতা সাপ্তাহিকী’, ‘এক্ষণ’, ‘কবিপত্র’ প্রভৃতির কথা। কলকাতার রাজনৈতিক চেহারার পরিবর্তন ঘটে যাবে। ঘটে যাবে বাংলা সাহিত্যের কত না পরিবর্তন। বদলাবে মনন-চিন্তন, বদলাবে বিষয়বস্তু, বদলাবে গঠন, বদলাবে ভাষা। ঘটে যাবে খাদ্য আন্দোলন,কলকাতাকে এক রাজনৈতিক বোধে মথিত করে তুলবেন উৎপল দত্ত এবং তাঁর লিটল্ থিয়েটার।দেশভাগের সর্বনাশকে নিয়ে সাধারণ মানুষের মর্মান্তিক জীবনযাপনকে সামনে নিয়ে আসবেন ঋত্বিক। জেলে যাবার আগে নতুন একটা স্লোগানতুলে দেবেন সবার মুখে সুভাষ, মানে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় ‘রাস্তাই একমাত্র রাস্তা’।

রাজনৈতিক পালাবদল ঘটে যাবে। একটা স্বাধীন দেশে তৈরি হয়ে যাবে, বাংলাদেশ। হয়ে গেছে মুক্তিযুদ্ধ। তার আগের কুড়ি বছরের ইতিহাস এক ক্ষতের ইতিহাস, যন্ত্রণার ইতিহাস। অসংখ্য মানুষ চলে এসেছেন এপারে। তৈরি হয়েছিল আশ্রয়ের সংকট। বাংলাদেশ বিষয়ে আবেগে ভরে উঠতে থাকে সাময়িকপত্রগুলি। নকশালপন্থী আন্দোলন থেকে জেগে ওঠা কিছু দীর্ঘশ্বাসের ছবি মনে করাতে ভোলেন না লেখক। উচ্চারণ করেন বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নাম।যিনি লিখেছিলেন ‘মুণ্ডহীন ধরগুলি আহ্লাদে চিৎকার করে’। পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের সামনে প্রশ্ন তুলতে চাইছিলেন তিনি। শঙ্খ ঘোষ লিখেছেন,”পূর্ব দিকের সামরিক অত্যাচার নিয়ে ক্ষুব্ধ আর ব্যাকুল এবার বাংলা লেখকরা কি এই নিজের দেশে চোখ মেলে তাকান? এই ছিল তাঁর জিজ্ঞাসা।১৯৬৭ সালের পর থেকে নকশালপন্থা নামে যে অতিবাম বৈপ্লবিক আন্দোলন শুরু হয়েছিল এখানে, তাকে দমন করার জন্য এ-সরকারের বর্বরতাও কি কম ছিল কিছু? তবে কেন সে-বিষয়ে নীরব থেকে লেখকরা কেবল পুবদিকেরই দুঃখ গাইছেন?”বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় গড়ে তুললেন নতুন এক antipoetry-র কাব্যভাষা। এলেন মহাশ্বেতা দেবী, এল ‘অনুষ্টুপ’, ‘প্রস্তুতিপর্ব’, ‘নক্ষত্রের রোদ’, ‘স্পন্দন’ প্রভৃতি পত্রিকা।

সত্তরের দশক আসে। যে দশক ছিল মুক্তির দশক। “পারস্পরিক হানাহানিতে ভরে যাচ্ছে শহরগ্রাম,এ-বাড়ি থেকে ও-বাড়ি থেকে ছেলেরা ফেরার হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বনেজঙ্গলে গাঁয়েগঞ্জে। সিনেমা বদলে যাচ্ছে, নাটক বদলে যাচ্ছে। আসছে থার্ড থিয়েটার। জারি হল জরুরি অবস্থা। কেড়ে নেওয়া হলো কথা বলার স্বাধীনতা। প্রতিবাদ অবশ্য থেমে থাকেনি। জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হল। পশ্চিমবাংলায় শুরু হলো বামফ্রন্ট সরকার। নতুন নতুন লিটল ম্যাগাজিনের জন্ম হলো। সর্বভারতীয় পুরস্কারে ভূষিত হলেন বাংলার সাহিত্যিকেরা। পাশাপাশি শহরের কোণে কোণে বিরুদ্ধ প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। জন্ম হয় ছোট ছোট পত্রিকার- ‘জিজ্ঞাসা’, ‘প্রমা’, ‘অনুক্ত’। একদিকে প্রতিষ্ঠান, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা। এই লেখায় উঠে আসে সেই উজ্জ্বল দিনের কথা। ১৯৭৬ সালের ৫ই মার্চ বিড়লা প্লানেটরিয়াম এর উল্টোদিকের মাঠে শুরু হয়েছিল কলকাতার নতুন এক উৎসব ‘ক্যালকাটা বুক ফেয়ার’। “ভ্রাম্যমান প্রতিষ্ঠিত লেখকদের কাছাকাছি এগিয়ে যান ভক্ত পাঠকেরা, পাঠকদের দিকে ছোটো ছোটো পত্রিকা হাতে এগিয়ে আসেন উপেক্ষিত তরুণেরা কেউ কেউ।…’মিনি বুক’ প্রকাশ করতে শুরু করেছিলেন সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় কয়েক বছর আগে। বইমেলায় তিনি ঘুরে বেড়ান সেই ‘মিনিবুক’-এর ট্রে গলায় ঝুলিয়ে, কাঁধ-ঝোলায় তাঁর এবং অনুষদের ছোট ছোট বই নিয়ে ঘুরে বেড়ান বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলালের উৎসাহে তরুণ কবিরা এগিয়ে আসেন ওই রকমই ছোটো ছোটো বইয়ের প্রকাশে।”আজ আমি যখন লেখা লিখছি অর্থাৎ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, তখন শতবর্ষ পেরিয়ে চলেছেন মানুষের কবি, জীবনের কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। কিছুদিন আগেই প্রয়াত হয়েছেন পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল। কিন্তু আমি যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আজও তাঁদের মতো অনেক কবি এই ভাবেই উচ্চারণ করে যাবেন, —

“আমি আর একবার সেই আশ্চর্য স্বপ্ন

যা আমার হারিয়ে-যাওয়া কবিতা

যা আমার এবং যে-কোনো মানুষের একটিই বেঁচে থাকার পৃথিবী

তাকে খুঁজে বের করব।

সেজন্য আমাকে যত মূল্যই দিতে হোক।”

(আর এক আরম্ভের জন্য: কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)

এই স্বপ্ন তো আমাদের সবার। এই স্বপ্ন আছে বলেই আমরা আজও লিটল ম্যাগাজিন করি, শ্রদ্ধা জানাই লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও গবেষণাকেন্দ্রের কর্ণধার সন্দীপ দত্তকে, যিনি আজও তরুণ পত্রিকার সম্পাদকের ডাকে ছুটে যান বিভিন্ন জেলায়।স্বপ্ন আছে বলেই কবিতা লেখার চেষ্টা করে যাই, অগ্রজদের কবিতার প্রতি আসক্ত হই, প্রকাশ করি তাঁদের গ্রন্থ, শিখতে চাই তাঁদের কাছে, হাঁটতে চাই অন্য পথে, লিখতে চাই অন্য রকম ভাষায়। প্রতিবাদ করি, প্রতিরোধ করি কবিতার মধ্যে দিয়ে। আর তাই প্রণম্য কবি, আমাদের সকলের অভিভাবক শঙ্খ ঘোষ আজ আমাদের শুনিয়ে চলেন সেইসব অলীক কাহিনী যা আমাদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখায়। এই গ্রন্থটি সম্পর্কে লিখতে বসে শেষ করব জন্ম নেওয়া কয়েকটি পংক্তি দিয়ে, জানি এই কবিতা সাধকের স্মৃতিপথে হাঁটতে হাঁটতেই পেলাম-

শিউলি ফুলের গন্ধে ফুটে উঠতে থাকে ভোর

কবিতাসাধক আজও হেঁটে চলেছেন স্মৃতিপথে

ফুলঝুরি পেট্রোম্যাক্সের আলো, নিঃঝুম গ্রাম, চৌকিদারের হাঁক-

টুকরো টুকরো ছবির মতোন

তারপর সেই ছবিতেই হরেক রেখার টান

ফ্রেমের পরে ফ্রেম

দরজায় দরজায় তালা ঝুলিয়ে পায়েহাঁটা সুড়কির পথ ধরে অল্প অল্প ভিজে হাওয়ায় ফিরে গিয়েছিলেন কবি শহরের পথে

স্মৃতিপথে ফেরার ডাক

বাড়ি ফেরার সেই ডাক আমিও শুনতে পাই

কবিতাসাধকের সঙ্গে আমিও ফিরি

***

শুনি একান্নবর্তী ঘনিষ্ঠতার ডাক

নিজেকে একবার ছুঁয়ে দেখবার জন্য ফিরে যাওয়া নিজের নিজের বাড়ি

***

পুজো আসে

চালচিত্রের বাহারের কলকা কাগজ আর রংবেরঙের রাংতায় মোড়া হয় আজও

নদীর ঘাটে আজও স্টিমার এসে দাঁড়ায়

যুদ্ধ থেমে গেছে

স্মৃতি পথে রানাঘাট বনগাঁ খুলনা হুলার হাট বাণারিপাড়া…

দুলতে দুলতে নৌকো চলে সারাদিন

দু’ধারে সুপারিবন,নারকোলের সারি, পানের বরজ

মাঝিরা তাদের ভাত ফুটিয়ে নেয় তাদের গলুইয়ের ওপর

***

সন্ধে নামে

খালের মুখ মানেই কবির গ্রাম

আমিও নামি

ছোট ছোট টুকরি নিয়ে দৌড় লাগাই এদিক-ওদিক…

শিউলি টগর ঝুমকো জবা ভরে ভরে পৌঁছে দিয়ে যাই ঘরে…

(নতুন কবি সম্মেলন পত্রিকায় প্রকাশিত)


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন