রবিবার | ৪ঠা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৩:১৪
Logo
এই মুহূর্তে ::
তরল সোনা খ্যাত আগর-আতর অগুরু : রিঙ্কি সামন্ত নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘সাদা-কালো রীল’ গঙ্গার জন্য লড়াই, স্বার্থান্বেষীদের ক্রোধের শিকার সাধুরা : দিলীপ মজুমদার সিন্ধুসভ্যতার প্রধান মহার্ঘ রপ্তানিদ্রব্য কস্তুরী : অসিত দাস রাখাইন পরিস্থিতি রোহিঙ্গা সংকট ও মানবিক করিডোর : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন রামকৃষ্ণ মিশন মানে ধর্মকর্ম নয়, কর্মই যাঁদের ধর্ম তাঁরাই যোগ্য : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে সিংহবাহিনী মন্দির, নবগ্রাম (ঘাটাল) : কমল ব্যানার্জী পরিবেশ মেলা ২০২৫ : ড. দীপাঞ্জন দে মন্দির-রাজনীতি মন্দির-অর্থনীতি : দিলীপ মজুমদার স্বাধীনতা-সংগ্রামী মোহনকালী বিশ্বাস স্মারকগ্রন্থ : ড. দীপাঞ্জন দে অক্ষয়তৃতীয়া, নাকি দিদিতৃতীয়া : অসিত দাস আরএসএস-বিজেপি, ধর্মের তাস ও মমতার তৃণমূল : দিলীপ মজুমদার সাবিত্রি রায় — ভুলে যাওয়া তারার খোঁজে… : স্বর্ণাভা কাঁড়ার ছ’দশক পর সিন্ধু চুক্তি স্থগিত বা সাময়িক অকার্যকর হওয়া নিয়ে প্রশ্ন : তপন মল্লিক চৌধুরী বিস্মৃতপ্রায় বঙ্গের এক গণিতবিদ : রিঙ্কি সামন্ত অসুখবেলার পাণ্ডুলিপি : পুরুষোত্তম সিংহ বাবু-ইংরেজি আর সাহেবি বাংলা : মাহবুব আলম সিন্ধুসভ্যতার ফলক ও সিলে হরিণের শিং-বিশিষ্ট ঋষ্যশৃঙ্গ মুনি : অসিত দাস বৈশাখ মাসে কৃষ্ণপক্ষে শ্রীশ্রীবরুথিনী একাদশীর ব্রতকথা মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত সিন্ধুসভ্যতার লিপি যে প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার অকাট্য প্রমাণ : অসিত দাস বাঙালির মায়াকাজল সোনার কেল্লা : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ট্যাটু এখন ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’ : রিঙ্কি সামন্ত ফের আমেদাবাদে হিন্দুত্ববাদীদের অন্য ধর্মের উপর হামলা : তপন মল্লিক চৌধুরী লোকসংস্কৃতিবিদ আশুতোষ ভট্টাচার্য ও তাঁর চিঠি : দিলীপ মজুমদার নববর্ষের সাদর সম্ভাষণ : শিবরাম চক্রবর্তী নববর্ষ গ্রাম থেকে নগরে : শিহাব শাহরিয়ার ফিরে আসছে কলের গান : ফজলুল কবির সিন্ধুসভ্যতার ফলকে খোদিত ইউনিকর্ন আসলে একশৃঙ্গ হরিণ : অসিত দাস একটু রসুন, রসুনের কথা শুনুন : রিঙ্কি সামন্ত ১২ বছর পর আরামবাগে শোলার মালা পরিয়ে বন্ধুত্বের সয়লা উৎসব জমজমাট : মোহন গঙ্গোপাধ্যায়
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ অক্ষয় তৃতীয়ার আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (শেষ পর্ব) : জমিল সৈয়দ

জমিল সৈয়দ / ১৬৬ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫

রত্নগিরি

ভৌমকর বংশের রাজারা যেসময়ে উড়িষ্যাকে দখলে রেখেছেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে বৌদ্ধধর্মের অনুরাগী ছিলেন। যখন পরিবারের কিছু সদস্য ছিলেন ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ, অন্যরা ছিলেন বৈষ্ণব বা শৈবধর্মের পৃষ্ঠপোষক। এতটাই অদ্ভুত যে স্বামী-স্ত্রীর বিভিন্ন ধর্মীয় অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত থাকার উদাহরণ রয়েছে। ভৌমকরদের সময় উড়িষ্যায় বৌদ্ধধর্মের মহাযান রূপের উত্থান ঘটেছিল।

সুতরাং এটা স্পষ্ট যে খ্রিস্টীয় ৫ম এবং ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে পূর্ণ সহযোগিতা, সম্প্রীতি এবং সহনশীলতা বিদ্যমান ছিল। কিন্তু কর্ণসুবর্ণের বৌদ্ধবিদ্বেষী রাজা শশাঙ্ক যখন উড়িষ্যার উপকূলীয় অঞ্চলগুলিতে, বাংলার সমতট থেকে শুরু করে মহেন্দ্র-পর্বত পর্যন্ত, তার আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন, তখন এই সম্প্রীতি অত্যন্ত বিঘ্নিত হয়েছিল। বলা হয় যে শশাঙ্ক প্রচুর পরিমাণে বৌদ্ধ বিহার ধ্বংস করেছিলেন। বৌদ্ধ স্থাপনাগুলির সর্বনিম্ন স্তরে ধ্বংসের চিহ্ন দেখা যায়, যার উপরে নতুন করে ফের স্থাপনা নির্মিত হয়েছিল।

পরবর্তী সময়ে, ৬ষ্ঠ বা ৭ম শতাব্দীর দিকে বৌদ্ধধর্মের মহাযান রূপ বিবর্তিত হতে হতে তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের একটি রূপ বজ্রযান — সুষ্পষ্ট চেহারা ধারা ধারণ করে।

অমোঘসিদ্ধি, অক্ষোভ্যা, রত্নসম্ভব,পীত-প্রজ্ঞাপারমিতা, সম্বর,ত্রৈলোক্যবিজয়, সপ্তাক্ষর, বজ্রসত্ত্ব, জটামুকুট-লোকেশ্বর, মঞ্জুঘোষ, লোকনাথ, হেরুকা, হেবজ্র, খাদিরাবাণী তারা, মরীচি, একজটা, অশোককান্ত, মহাময়ূরী, আর্য্যজঙ্গুলী, চুণ্ডা, অনুরাধা, কণিকা, বৈষ্ণবী, বিদ্যাধর, বিদ্যাধরী, উৎপলা, দুর্গোত্তারিণী তারা — এইসব দেবদেবীর সৃষ্টি হয় বজ্রযান রূপের প্রচলনের সময়।

রত্নগিরিতে এইসব তান্ত্রিক দেবদেবীর বহু মূর্তি আবিষ্কার করেছিলেন দেবলা মিত্র।

দ্বাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে উড়িষ্যার সোমবংশী (বা কেশর) রাজবংশকে সরিয়ে গঙ্গাবংশীয় রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। গঙ্গাবংশীয় রাজারা বিভিন্ন মঠ ও গুহা থেকে বৌদ্ধভিক্ষুদেরকে বিতাড়িত করতে শুরু করেন।

একাদশ শতাব্দীর শেষ দশকে সেন রাজারা এসে পাল রাজাদেরকে উৎখাত করেন। এবং সেই মুহূর্ত থেকে ভারতে বৌদ্ধধর্ম দ্রুত এবং চূড়ান্ত অবক্ষয়ের দিকে যাত্রা করে। কিছু প্রমাণ রয়েছে যে সেন রাজাদের ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে বৌদ্ধরা প্রাণভয়ে সুফি ধর্মপ্রচারকদের দ্বারা প্রচারিত ইসলাম ধর্মে ব্যাপকভাবে ধর্মান্তরিত হয়েছিল। উড়িষ্যায় গজপতি রাজবংশের রাজা প্রতাপরুদ্রদেবের শাসনকালে শ্রীচৈতন্যের (১৪৬৮-১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দ) নেতৃত্বে বৈষ্ণবধর্মের উত্থান ঘটে, যা শুধু রাজার উপর গভীর প্রভাব বিস্তার করেনি, বরং দেশে এক চিরস্থায়ী চিহ্ন রেখে যায়। (তথ্যসূত্র : সুনীলকুমার পটনায়কের বই ‘Buddhist Heritage of Odisha’)

গজপতি রাজবংশের পতনের পর পূর্বদেশীয় চালুক্য বংশের একটি শাখা উড়িষ্যা অধিকার করে। রাজা মুকুন্দদেবের রাজত্বকালে (১৫৫৫-৬৮ খ্রিস্টাব্দ) রাজ্যের মৃতপ্রায় বৌদ্ধ বিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। রাজা মুকুন্দদেবে উড়িষ্যায় বৌদ্ধ মন্দির এবং কয়েকটি মঠ নির্মাণ করেছিলেন এবং এর মাধ্যমে তাঁর পূর্বসূরি প্রতাপরুদ্রদেবের দ্বারা ধ্বংস হওয়া ধর্মকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন। বলা হয়, রাজা নিজে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের অনুসারী ছিলেন, কিন্তু তাঁর রানি বুদ্ধের মন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন, সেকারণে অনুমান করা হয়, রাজা হয়তো রানির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন।

বৌদ্ধমঠের ধ্বংসস্তূপগুলির অদূরে, একই বৌদ্ধক্ষেত্রে, একটি মহাকাল মন্দির আছে। মন্দিরটি অবশ্যই প্রাচীন, কিন্তু সেখানে যে মূর্তিগুলি আছে সেগুলি এখান থেকেই সংগৃহীত বলে ধারণা করা হয়।

রত্নগিরি গ্রাম একসময় প্রতিবছর বন্যাপ্লাবিত হতো। তাই এখানকার বাসিন্দারা বৌদ্ধবিহারের ইট-পাথর তুলে নিয়ে গিয়ে নিজেদের বাড়িঘরকে উঁচু করতো। এখানকার দেবদেবীর মূর্তি নিয়ে গ্রামে মন্দির বানানো হতো। এটা দেবলা মিত্র উল্লেখ করেছেন।

আমরা বৌদ্ধবিহার থেকে বেরিয়ে ফিরে আসছি, এক তরুণী বধূ আচমকা শুদ্ধ বাংলা ভাষায় বলে উঠলো, আপনারা বাঙালি, তাই না।

— হ্যাঁ। তুমি কি কলকাতা থেকে এসেছ?

— না, আমার বাড়ি এই গ্রামে।

— সে কী! বাংলা শিখলে কী করে?

— আমার বিয়ে হয়েছে পশ্চিমবাংলায়। হাওড়া — বর্ধমান!!

— অতদূরে বিয়ে হলো কী করে?

মেয়েটি সলজ্জভাবে হেসে বললো, ভালোবেসে!!

[সমাপ্ত]


আপনার মতামত লিখুন :

One response to “ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (শেষ পর্ব) : জমিল সৈয়দ”

  1. Anirban Roy says:

    তথাকথিত অ্যাকাডেমিক বাঙালী মহলের, অর্থাৎ ইংরেজদের শিখিয়ে যাওয়া ইতিহাস মুখস্ত করে যারা, সেই টিপিক্যাল স্টাইলে লেখা! – বৌদ্ধদের ওপরে অত্যাচারের কিছু প্রমাণ পাওয়া যায় বললেন, কিন্তু প্রমাণ উল্লেখ করলেন না!
    বৌদ্ধ ধর্ম, হিন্দু ধর্ম থেকে আলাদা, এটা পুরো লেখায় বারবার বললেন, কিন্তু স্বয়ং বুদ্ধও কি কোথাও হিন্দু ধর্মের বিরোধিতা করেছেন? কোথায়? বৌদ্ধ ধর্মের মূল তত্ত্ব, বৈদিক ঔপনিষদিক দর্শনে আধারিত!
    যেমন শৈব, শাক্ত, বৈষ্ঞব হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায়, তেমনই বৌদ্ধ সম্প্রদায়! যোগ, বিভিন্ন দেব দেবী, দর্শন … তফাৎ কোথায়??
    আর, এত বিস্তারিত ইতিহাস এর তথ্যসূত্র কি? উল্লিখিত একটা বই? সেটা কতটা নির্ভরযোগ্য?

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন