সোমবার | ১৪ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | সকাল ৮:৩৬
Logo
এই মুহূর্তে ::
সিন্ধিভাষায় দ্রাবিড় শব্দের ব্যবহার : অসিত দাস সিন্ধুসভ্যতার জীবজগতের গতিপ্রকৃতির মোটিফ : অসিত দাস হনুমান জয়ন্তীতে নিবেদন করুন ভগবানের প্রিয় নৈবেদ্য : রিঙ্কি সামন্ত গল্প লেখার গল্প : হাসান আজিজুল হক ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (শেষ পর্ব) : জমিল সৈয়দ চড়কপূজা কি আসলে ছিল চণ্ডকপূজা : অসিত দাস অরুণাচলের আপাতিনি : নন্দিনী অধিকারী ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (সপ্তম পর্ব) : জমিল সৈয়দ শাহরিয়ার কবিরকে মুক্তি দিন : লুৎফর রহমান রিটন ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (ষষ্ঠ পর্ব) : জমিল সৈয়দ ওয়াকফ সংশোধনী আইন এই সরকারের চরম মুসলিম বিরোধী পদক্ষেপ : তপন মল্লিক চৌধুরী ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (পঞ্চম পর্ব) : জমিল সৈয়দ যশোধরা — এক উপেক্ষিতা নারীর বিবর্তন আখ্যান : সসীমকুমার বাড়ৈ কলকাতার কাঁচাভেড়া-খেকো ফকির ও গড়ের মাঠ : অসিত দাস ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (চতুর্থ পর্ব) : জমিল সৈয়দ রামনবমী পালন এবং হুগলী চুঁচুড়ার শ্রীরামমন্দির : রিঙ্কি সামন্ত ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (তৃতীয় পর্ব) : জমিল সৈয়দ মিয়ানমারে ভূমিকম্প — প্রতিবেশী দেশের জনগণের পাশে বাংলাদেশ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (দ্বিতীয় পর্ব) : জমিল সৈয়দ হুমায়ুন-এক স্মৃতি-এক আলাপ : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী সনজীদা যার সন্তান : শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (প্রথম পর্ব) : জমিল সৈয়দ অবসর ঠেকাতেই মোদী হেডগেওয়ার ভবনে নতজানু : তপন মল্লিক চৌধুরী লিটল ম্যাগাজিনের আসরে শশাঙ্কশেখর অধিকারী : দিলীপ মজুমদার রাঁধুনীর বিস্ময় উন্মোচন — উপকারীতার জগৎ-সহ বাঙালির সম্পূর্ণ মশলা : রিঙ্কি সামন্ত রামনবমীর দোল : অসিত দাস মহারাষ্ট্রে নববর্ষের সূচনা ‘গুড়ি পড়বা’ : রিঙ্কি সামন্ত আরামবাগে ঘরের মেয়ে দুর্গাকে আরাধনার মধ্য দিয়ে দিঘীর মেলায় সম্প্রীতির মেলবন্ধন : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ‘বিজ্ঞান অন্বেষক’ পত্রিকার ২২তম বর্ষ উদযাপন : ড. দীপাঞ্জন দে হিন্দিতে টালা মানে ‘অর্ধেক’, কলকাতার টালা ছিল আধাশহর : অসিত দাস
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ অন্নপূর্ণা পূজা ও বাসন্তী পূজার আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (ষষ্ঠ পর্ব) : জমিল সৈয়দ

জমিল সৈয়দ / ৬৬ জন পড়েছেন
আপডেট মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৫

রত্নগিরি

উদয়গিরি ছেড়ে এবার চললাম রত্নগিরির দিকে। মাত্র ১০ কিলোমিটারের দূরত্ব। পথে পেরোতে হলো ব্রাহ্মণী নদীর ব্রিজ। এখানে ব্রাহ্মণী নদীর নাম কেলুয়া। ছোট অথচ ভারি সুন্দর নদী। কিন্তু সেখানে থেমে একটু জিরিয়ে নেবো, তার উপায় ছিলো না। নদীর ধারে একটু থামবো, তার জল ছোঁবো, সেই ইচ্ছেটুকু কখনওই পূরণ হয় না। কারণ, শুধু নদীর জন্যই হবে আমার ভ্রমণ, এরকম সূচি এখনও তৈরি করতে পারিনি!!!

আমি গেছিলাম কটক থেকে একটি গাড়ি নিয়ে। সুন্দর মসৃণ পথ। যাওয়া-আসার কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু এই প্রত্নক্ষেত্রগুলি যখন শিক্ষিত জনসাধারণের কাছে প্রথম পরিচিত হচ্ছে, তখন কীরকম ছিলো যাতায়াতের পথ?

১৯২৮ সালে ‘মডার্ন রিভিউ’ পত্রিকায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হারাণচন্দ্র চাকলাদার মহাশয়ের লেখায় আছে সেই পথনির্দেশ — বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ের ধানমণ্ডল স্টেশনে নামতে হবে (কলকাতা থেকে ২৩২ মাইল এবং কটক থেকে ২২ মাইল দূরে)। ধানমণ্ডলে গরুর গাড়ি কিংবা পালকি পাওয়া যায় এবং ধানমণ্ডল থেকে ট্রাঙ্ক রোডের দুই মাইল দূরে বরচনা গ্রামে একটি ডাকবাংলো আছে। সেখান থেকে বিরূপা নদীর তীরে বালিচন্দ্রপুরে পৌঁছাতে প্রায় আট মাইল পথ যেতে হয়। সেখানে রাস্তা দুভাগে বিভক্ত হচ্ছে। এই গ্রাম থেকে, ললিতগিরি (বা স্থানীয় উচ্চারণে নালতিগিরি) প্রায় তিন মাইল দক্ষিণে এবং উদয়গিরি প্রায় সাড়ে চার মাইল পূর্বে। বালিচন্দ্রপুর থেকে সেচ খালের পাশ দিয়ে রাস্তা ধরে চার মাইল ভ্রমণ করে, গোপালপুর বা খড়গপুর ডাকবাংলোতে পৌঁছাতে হয়। গোপালপুর বাংলো থেকে উদয়গিরি পাহাড় উত্তরে প্রায় আধ মাইল এবং রত্নগিরি পূর্বে প্রায় তিন মাইল দূরে অবস্থিত, তাই এখান থেকে এই দুটি স্থান-ই সহজেই পৌঁছানো যায় এবং উদয়গিরি এদের মাঝামাঝি অবস্থিত, যেখান থেকে অন্যান্য দুটি পাহাড়ই দেখা যায়।

উড়িষ্যায় বৌদ্ধধর্ম অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী ছিল। বুদ্ধের জীবদ্দশাতেই উড়িষ্যায় এই ধর্মের ঘাঁটি ছিল বলে মনে হয়। উক্কলের (উৎকল, যা বর্তমান উড়িষ্যা রাজ্যের একটি বৃহৎ অংশ ছিল) দুই বণিক, ত্রপুষ (তপুষ্ বা তপাসু) এবং ভল্লিকা (ভল্লুক বা ভল্লীয়) বুদ্ধের প্রথম সাধারণ ভক্ত ছিলেন বলে জানা যায়। বুদ্ধের বোধিলাভের পর সপ্তম সপ্তাহের শেষ দিনে এই দুই বণিক মধ্যদেশে যাওয়ার পথে বুদ্ধের সঙ্গে দেখা করেন।

বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তারা তাঁকে চালের পিঠা এবং মধু উপহার দেন। পালি ভাষায় রচিত “অঙ্গুত্তর-নিকায়” গ্রন্থের ভাষ্যে বলা হয়েছে যে, বুদ্ধ তাঁদেরকে নিজের মাথার কেশ দিয়েছিলেন। সেই দুই বণিক বাড়ি ফিরে তাঁদের গ্রাম অসিতাঞ্জনে চৈত্য বানিয়ে বুদ্ধের কেশ সেখানে রেখে দিয়েছিলেন।

মৌর্য সম্রাট অশোক যখন কলিঙ্গ আক্রমণ করেন তখন অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে বহু বৌদ্ধ-শ্রমণও কলিঙ্গে ছিল। কলিঙ্গ বলতে বর্তমান উড়িষ্যার একটি বৃহৎ অংশকে বোঝাত। কলিঙ্গ বিজয়ের ফলে অসংখ্য ব্যক্তির ভয়াবহ হত্যা, মৃত্যু এবং বন্দীদশা হয়েছিল, যা অশোকের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। গভীর অনুতাপের কারণে, তিনি দিগ্বিজয়ের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করেন এবং অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে বৌদ্ধধর্মের পথ গ্রহণ করেন। তাঁর দুটি শিলালিপি উড়িষ্যায় পাওয়া যায়, একটি জৌগড়া-য় (জেলা গঞ্জাম), তখন নাম ছিলো সমাপা এবং অন্যটি ধৌলি (জেলা পুরী), এই জায়গার প্রাচীন নাম ছিলো তোশালি।

রত্নগিরির খননকার্য চালিয়েছিলেন শ্রীমতি দেবলা মিত্র, ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণের (ASI-এর) কলকাতা শাখার সুপারিনটেনডেন্ট (পূর্ব সার্কেল) এবং পরবর্তী কালে প্রথম মহিলা ডিরেক্টর জেনারেল। ১৯৫৮ সালে তাঁর বয়স মাত্র ৩৩ বছর। উড়িষ্যায় তখন পথঘাটের অবস্থা একেবারেই ভালো নয়। কটক জেলা প্রশাসন তাঁর জন্য ফোর-হুইল জিপ বরাদ্দ করেছিল, সেই জিপ নিয়ে তাঁকে রোজ যেতে হতো রত্নগিরি। ব্রাহ্মণী নদীতে ব্রিজ ছিলো না। নৌকায় জিপ তুলে পার হতেন তিনি।

রত্নগিরি খননের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলো দেবলা মিত্রের প্রচুর শ্রম, অধ্যাবসায় ও নিবেদিত মন-প্রাণ। এর আগে ১৯৫৭ সালে গঞ্জাম জেলার জৌগড়াতে খনকার্য পরিচালনা করেছিলেন তিনি।

১৯৫৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁর নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল রত্নগিরির খননকার্য। তিন বছর ধরে, চারটি সিজন জুড়ে তিনি খননকার্য পরিচালনা করেছেন। উড়িষ্যার কড়া রোদ উপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো তাঁকে। খননকালে আবিষ্কৃত প্রতিটি প্রাচীন দ্রব্য নথীভুক্ত করা, মাপজোক করা ও সনাক্তীকরণের কাজ করতে হতো তাঁকে।

রত্নগিরির কথা প্রথম লিখেছিলেন জাজপুরের মহকুমা শাসক মনোমোহন চক্রবর্তী। পরে হারাণচন্দ্র চাকলাদার মহাশয় ইংরেজি ‘মডার্ণ রিভিউ’ ও বাংলা ‘প্রবাসী’ পত্রিকাতে দুটি প্রবন্ধ লেখেন। প্রবন্ধের সঙ্গে একাধিক মূর্তির ছবিও দিয়েছিলেন। লেখাগুলি আয়তনে ছোট, কিন্তু মূল্যবান তথ্যের আকর থেকে তুলে আনা বিশুদ্ধ হীরকখণ্ডের দ্যুতি আছে সেই লেখায়।

দেবলা মিত্র ওই দুই পূর্বসূরীর কথা সসম্মানে উল্লেখ করেছেন তাঁর রিপোর্টে। [ক্রমশ]


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন