রবিবার | ৪ঠা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৩:৪৬
Logo
এই মুহূর্তে ::
তরল সোনা খ্যাত আগর-আতর অগুরু : রিঙ্কি সামন্ত নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘সাদা-কালো রীল’ গঙ্গার জন্য লড়াই, স্বার্থান্বেষীদের ক্রোধের শিকার সাধুরা : দিলীপ মজুমদার সিন্ধুসভ্যতার প্রধান মহার্ঘ রপ্তানিদ্রব্য কস্তুরী : অসিত দাস রাখাইন পরিস্থিতি রোহিঙ্গা সংকট ও মানবিক করিডোর : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন রামকৃষ্ণ মিশন মানে ধর্মকর্ম নয়, কর্মই যাঁদের ধর্ম তাঁরাই যোগ্য : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে সিংহবাহিনী মন্দির, নবগ্রাম (ঘাটাল) : কমল ব্যানার্জী পরিবেশ মেলা ২০২৫ : ড. দীপাঞ্জন দে মন্দির-রাজনীতি মন্দির-অর্থনীতি : দিলীপ মজুমদার স্বাধীনতা-সংগ্রামী মোহনকালী বিশ্বাস স্মারকগ্রন্থ : ড. দীপাঞ্জন দে অক্ষয়তৃতীয়া, নাকি দিদিতৃতীয়া : অসিত দাস আরএসএস-বিজেপি, ধর্মের তাস ও মমতার তৃণমূল : দিলীপ মজুমদার সাবিত্রি রায় — ভুলে যাওয়া তারার খোঁজে… : স্বর্ণাভা কাঁড়ার ছ’দশক পর সিন্ধু চুক্তি স্থগিত বা সাময়িক অকার্যকর হওয়া নিয়ে প্রশ্ন : তপন মল্লিক চৌধুরী বিস্মৃতপ্রায় বঙ্গের এক গণিতবিদ : রিঙ্কি সামন্ত অসুখবেলার পাণ্ডুলিপি : পুরুষোত্তম সিংহ বাবু-ইংরেজি আর সাহেবি বাংলা : মাহবুব আলম সিন্ধুসভ্যতার ফলক ও সিলে হরিণের শিং-বিশিষ্ট ঋষ্যশৃঙ্গ মুনি : অসিত দাস বৈশাখ মাসে কৃষ্ণপক্ষে শ্রীশ্রীবরুথিনী একাদশীর ব্রতকথা মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত সিন্ধুসভ্যতার লিপি যে প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার অকাট্য প্রমাণ : অসিত দাস বাঙালির মায়াকাজল সোনার কেল্লা : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ট্যাটু এখন ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’ : রিঙ্কি সামন্ত ফের আমেদাবাদে হিন্দুত্ববাদীদের অন্য ধর্মের উপর হামলা : তপন মল্লিক চৌধুরী লোকসংস্কৃতিবিদ আশুতোষ ভট্টাচার্য ও তাঁর চিঠি : দিলীপ মজুমদার নববর্ষের সাদর সম্ভাষণ : শিবরাম চক্রবর্তী নববর্ষ গ্রাম থেকে নগরে : শিহাব শাহরিয়ার ফিরে আসছে কলের গান : ফজলুল কবির সিন্ধুসভ্যতার ফলকে খোদিত ইউনিকর্ন আসলে একশৃঙ্গ হরিণ : অসিত দাস একটু রসুন, রসুনের কথা শুনুন : রিঙ্কি সামন্ত ১২ বছর পর আরামবাগে শোলার মালা পরিয়ে বন্ধুত্বের সয়লা উৎসব জমজমাট : মোহন গঙ্গোপাধ্যায়
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ অক্ষয় তৃতীয়ার আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (চতুর্থ পর্ব) : জমিল সৈয়দ

জমিল সৈয়দ / ১৪৮ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫

উদয়গিরি

উদয়গিরির খননকাজের ফলে আবিষ্কৃত হয় ইটের তৈরি একটি বিশাল মঠ কমপ্লেক্সের ধ্বংসাবশেষ (দৈর্ঘ্য ৩৫.০ মি X প্রস্থ ৩৫.০ মি), ৪.৮০ মিটার উঁচু একটি মহাস্তূপ যার প্রতিটি পাশেই ধ্যানী বুদ্ধের মূর্তি রয়েছে। সবগুলোই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বারা খোদাই করা।

পাওয়া গেছে একটি পাথরের উঁচু প্ল্যাটফর্মের উপরে একটি চৈত্যগৃহ। এই স্থান থেকে বুদ্ধ এবং অন্যান্য বৌদ্ধ দেবদেবীদের ভাস্কর্য যেমন বজ্রপাণি, জম্ভল, তারা, মঞ্জুশ্রী, ভৃকুটি, হরিতি, চুণ্ড, বিরোচন, অবলোকিতেশ্বর, মৈত্রেয়, অপরাজিতা, বসুধারা ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে। পাথর, পোড়ামাটির এবং ধাতুর তৈরি অনেক প্রাচীন নিদর্শনও উদ্ধার করা হয়েছে।

যদিও এইসব মূর্তি উদয়গিরি চত্বরে নেই। হয়তো অন্যত্র সরিয়ে রাখা হয়েছে। অন্য কোনও মিউজিয়ামে।

শুধু খোলা চত্বরে পড়ে আছে দু-একটি মূর্তি, সেগুলো নমুনা হিসেবে রাখা হয়েছে কি না, জানি না। কিন্তু রোদে-বৃষ্টিতে এই মূর্তিগুলোও ক্ষয়ের পথে এগিয়ে চলেছে।

এই বৌদ্ধবিহারের সময়কাল প্রথম শতাব্দী থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দীর মধ্যে। অর্থাৎ তখন সম্রাট অশোক নেই। কিন্তু গুপ্ত যুগ থেকে পাল যুগ পর্যন্ত বৌদ্ধধর্মের প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন রাজারা।

৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে হিউয়েন সাং এই এলাকায় এসেছিলেন। তখন রাজা ছিলেন শিলাদিত্য। কে এই শিলাদিত্য? অনেকের অনুমান, এই শিলাদিত্য হলেন রাজা হর্ষবর্ধন।

হিউয়েন সাং লিখে গেছেন, এই দেশটির পরিধি প্রায় ৭,০০০ ফুট (সওয়া এক মাইল), জলবায়ু উষ্ণ, মাটি উর্বর এবং প্রচুর পরিমাণে শস্য ও ফল উৎপন্ন হয়। মানুষ ছিল অসভ্য, লম্বা এবং হলুদাভ-কালো বর্ণের, তারা শিক্ষা লাভ করতে পছন্দ করত এবং বিরতিহীনভাবে শিক্ষার সঙ্গে নিজেদেরকে নিয়োজিত করে রাখত। তাদের বেশিরভাগই বুদ্ধের নীতিতে বিশ্বাস করত। প্রায় শতাধিক মঠ ছিল যেখানে ১০,০০০ পুরোহিত ছিলেন, সকলেই মহাযান তত্ত্ব অধ্যয়ন করতেন এবং ৫০টি দেব মন্দিরে বিভিন্ন ধরনের সম্প্রদায়ের লোক যাতায়াত করত। এই জেলার রাজধানী জাজপুর তাম্রিলিপ্তির দক্ষিণ-পশ্চিমে ৭০০ “লি” অর্থাৎ প্রায় ২০০ মাইল দূরে অবস্থিত; দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে পুষ্পগিরি নামে একটি আশ্চর্য মঠ ছিল, যা একটি বিশাল পাহাড়ের উপর অবস্থিত; এবং দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে, সমুদ্রের সীমানায়, ‘চরিত্রপুর’ নামে একটি বিশাল প্রাচীরবেষ্টিত বন্দর ছিল। (এই চরিত্র বন্দরকে কোনও কোনও ইতিহাসবিদ বর্তমানের পুরী বলে সনাক্ত করেছেন। কেউ বলছেন, এটা চন্দ্রভাগা সৈকত। কেউ আবার বলছেন, এটা বর্তমানের চিলিকা হ্রদের কাছে মানিকপাটনা।)

সেইসব বৌদ্ধেরা কোথায় গেল?

ক্রমশ ব্রাহ্মণ্যধর্মের উত্থানের ফলে বৌদ্ধগণ রাজার আনূকুল্য থেকে বঞ্চিত হতে থাকল।

রাজা শশাঙ্কের রাজত্ব বঙ্গ থেকে কলিঙ্গ পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছিল এবং পূর্বদিকে কামরূপ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তিনি ভয়াবহ বৌদ্ধ-বিদ্বেষী ছিলেন। তিনি বহু বৌদ্ধ স্তূপ ধ্বংস করেছিলেন এবং বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি তাঁর কোনো সহানুভূতি ছিল না। বোধগয়ার মহাবোধি মন্দিরে বুদ্ধের বোধিবৃক্ষটি কেটে পুড়িয়ে দেন।

ব্রাহ্মণ্যধর্মের দ্বারা নিপীড়নের চেয়েও, বৌদ্ধরা সঙ্কটে পড়ল যখন হিন্দুধর্ম পুরো বৌদ্ধদেরকে আত্তীকরণ করতে শুরু করলো। দশম শতাব্দীতে, রামাই পণ্ডিত তাঁর “ধর্মপূজাবিধানে” জগন্নাথকে বিষ্ণুর বুদ্ধ অবতার হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। বৌদ্ধরা হিন্দু ধর্মের দিকে ঝুঁকে পড়তে শুরু করেছিল, যখন তারা হিন্দু ধর্মের মধ্যে বৌদ্ধ বিশ্বাসের উপাদান খুঁজে পেয়েছিল। বিষ্ণু ধর্ম তাঁদেরকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছিল, কারণ জগন্নাথকে বুদ্ধের সঙ্গে সমতুল্য করা হয়েছিল।

ঈশ্বর দাস, যিনি ওড়িয়া ভাষায় চৈতন্যদেবের জীবনী লিখেছেন, তিনি শ্রীচৈতন্যকে বুদ্ধের অবতার হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

বলা হয় যে কেশরী রাজাদের রাজত্বকালে বৌদ্ধদের সংখ্যা ছিল মাত্র সাতশ, তাদের মধ্যে ৬১৬ জনকে হত্যা করেছিলেন রাজারা। বেঁচে থাকা কয়েকজন প্রাণ বাঁচাতে প্রকাশ্যে বিষ্ণু ধর্মমত গ্রহণ করেছিলেন।

বৌদ্ধদের অগ্রগণ্য পণ্ডিত ছিলেন বীরসিংহ — তিনি প্রথমে বিনোদ মিশ্র নামে একজন ব্রাহ্মণ ছিলেন এবং তিনি নৃসিংহের উপাসনা করতেন। পেশায় তিনি একজন চিকিৎসক ছিলেন। পরে তিনি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হন এবং বীরসিংহ নামে পরিচিত হন। তিনি বৌদ্ধদের নেতা হয়ে ওঠেন, তাঁদের সংখ্যা বাংলা থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের আগমনের কারণে বৃদ্ধি পায়। এই বাঙালি বৌদ্ধেরা বাংলা থেকে উড়িষ্যায় চলে এসেছিলেন। তাঁদের শাস্ত্র থেকে জানা যায় যে তাদের পূর্বপুরুষরা বর্ধমান জেলার নন্দীগ্রামে বাস করতেন। এই পূর্বপুরুষরা প্রতাপরুদ্রের রাজত্বকালে পুরীতে এসেছিলেন।

কলিঙ্গের রানি পদ্মাবতীর সঙ্গে একদিন বীরসিংহের সাক্ষাৎ ঘটে ও তিনি বৌদ্ধধর্মের কথা শুনে বৌদ্ধধর্মের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। এইকথা জেনে রাজা প্রতাপরুদ্র ক্রুদ্ধ হন। তিনি একটা মুখ-ঢাকা কলসিতে বিষধর সাপ রেখে, বৌদ্ধ পণ্ডিত বীরসিংহ ও তাঁর অনুগামীদেরকে এবং অনুরূপভাবে ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদেরকে একসঙ্গে ডেকে পাঠালেন। রাজা প্রশ্ন করলেন, কে বলতে পারবে এই কলসিতে কী আছে?

বৌদ্ধরা তাঁদের অতিপ্রাকৃত জ্ঞানের কারণে পাত্রের ভেতরে সাপের অস্তিত্ব সঠিকভাবে অনুমান করতে পেরেছিলেন। ব্রাহ্মণরা পাত্রের ভেতরের জিনিসকে অভিশাপ দিলেন এবং ঘোষণা করলেন যে এতে ছাইয়ের স্তূপ ছাড়া আর কিছুই নেই। [ক্রমশ]


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন