বুধবার | ১২ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৭:৪৮
Logo
এই মুহূর্তে ::
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বৃন্দাবন যাত্রা (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত বাজারে ভেজাল ওষুধের রমরমা দায় কার : তপন মল্লিক চৌধুরী বাঙালি বিজ্ঞানীর গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য ‘কুড়কুড়ে ছাতুতে’ ক্যানসার নিকেশ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বোলপুর কি সত্যিই বলিপুর : অসিত দাস রাখাইন পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের উপর প্রভাব : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন অসুখী রাজকন্যাদের লড়াইয়ের গল্প : রিঙ্কি সামন্ত বিশ্ব থেকে ক্যানসারকে নির্মূল করতে গবেষণায় একের পর এক সাফল্য রূপায়ণের : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কল্পনার ডানায় বাস্তবের রূপকথা : পুরুষোত্তম সিংহ হাইকোর্টের রায়ে ভাবাদিঘীতে তিন মাসের মধ্যে কাজ শুরুর নির্দেশ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কমছে, সঙ্কটে সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুল : তপন মল্লিক চৌধুরী ফল্গু নদীর তীরে একটি ছোট শহর এই বুদ্ধগয়া : বিজয় চৌধুরী শাহিস্নান নয়, আদতে কথাটি ছিল সহিস্নান : অসিত দাস মৈত্রেয়ী ব্যানার্জি-র ভূতের গল্পো ‘হোমস্টে’ রহস্য ঘেরা বলিউডের নক্ষত্রপতন : রিঙ্কি সামন্ত বাঁকুড়ার দু-দিন ব্যাপী দেশীয় বীজ মেলায় দেশজ বীজের অভূতপূর্ব সম্ভার পেজফোর-এর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ২০২৫ এত গুণী একজন মানুষ কত আটপৌরে : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী সরস্বতীর উৎস সন্ধানে : অসিত দাস ‘সব মরণ নয় সমান’ সৃজনশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে যথোচিত মর্যাদায় স্মরণ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সিপিএম-এর রাজ্য সম্মেলন, তরুণ প্রজন্মের অন্তর্ভূক্তি নিয়ে খামতি রয়েছে দলে : তপন মল্লিক চৌধুরী প্রথম পাঠ — মার্কসবাদের বিশ্বভ্রমণ : সন্দীপন চক্রবর্তী বঙ্গবিভূষণ কাশীকান্ত মৈত্র স্মারকগ্রন্থ : ড. দীপাঞ্জন দে ‘খানাকুল বাঁচাও’ দাবিতে সরব খানাকুল-সহ গোটা আরামবাগের মানুষ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় হরি হরের কথা এবং বীরভূমের রায়পুরে বুড়োনাথের বিয়ে : রিঙ্কি সামন্ত ত্র্যম্বকেশ্বর দর্শনে মোক্ষলাভ : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী কুম্ভমেলায় ধর্মীয় অভিজ্ঞতার থেকে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বেশি : তপন মল্লিক চৌধুরী রাজ্যে পেঁয়াজের উৎপাদন ৭ লক্ষ টন ছাড়াবে, কমবে অন্য রাজ্যের উপর নির্ভরতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ‘হিড়িক’ শব্দটির ব্যুৎপত্তি অধরা, আমার আলোকপাত : অসিত দাস বিজয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-র ছোটগল্প ‘শিকড়ের টান’
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বসন্ত পঞ্চমী ও সরস্বতী পুজোর  আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

আবার দেখা যদি হলো সখা প্রাণের মাঝে আয় — নেতাজী নগর বিদ্যামন্দিরের পুনর্মিলন : সুশান্ত দাস

সুশান্ত দাস / ৪২৯ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

ছিন্নমূল মানুষের উৎকণ্ঠা আর আত্মপ্রত্যয় যখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে, তখন ইতিহাস তৈরী হয়। পূর্ব পাকিস্তানের মায়া ছেড়ে যখন মানুষগুলো কোনো রকমে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখছেন, তার অনতি দূরে আরও একটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন দক্ষিণ কলকাতার নেতাজীনগর কলোনিতে। ১৯৫১ সাল। দেশ ভাগের মর্ম বেদনা শরীর থেকে মোছেনি। এক রাতে কলোনির মানুষ গড়ে তুললেন একটা স্কুল বাড়ি। বাড়ি নয়, দরমার বেড়া আর টিনের চালে তৈরি হলো নেতাজী নগর বিদ্যামন্দির। অনেক স্বপ্নের বাস্তবায়ন। অনেক ঘাম আর ব্যাথার স্থানিক প্রতীক। আজ বহু বছর অতিক্রান্ত। সেদিনের সেই স্বপ্নের বুনিয়াদ বর্তমান প্রজন্মের কাছে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে আজ। সচল। সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত নেতাজী নগর বিদ্যামন্দির।

অনেক কৃতি মানুষকে উপহার দিয়েছে এই শিক্ষা কেন্দ্র। এই বছর (২০২৫) ২রা জানুয়ারি ৭৫ বছরে পদার্পণ করবে। এতগুলো বসন্তে বহু ছাত্র দেশ ও বিদেশের মাটিতে নানাভাবে তাদের কৃতিত্বে প্রতিষ্ঠিত। বিদ্যামন্দিরের পরিচালন সমিতিতে বিভিন্ন থেকেছেন সুকুমার ব্যানার্জী, প্রশান্তকুমার শূর, জ্যোতিপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের মতো ব্যক্তিত্বরা। শক্তি ঠাকুর, সৌমেন বসুর মতো মানুষেরা এখানে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন। বিদ্যামন্দিরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আলোকিত করেছেন শিবরাম চক্রবর্তী, আশাপূর্ণা দেবী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, অরুণ মুখোপাধ্যায়, নারায়ন সান্যাল, উষা গাঙ্গুলি প্রমুখ ব্যক্তিত্ব। অতনু বিশ্বাস, কৌশল চন্দ, অমিতাভ রায় এর মতো ব্যক্তিরা এই বিদ্যামন্দিরের প্রাক্তন ছাত্র। বিদ্যামন্দিরের বহু কৃতী ছাত্র ছড়িয়ে আছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিবিধ ক্ষেত্রে, বিশ্বের নানা প্রান্তে। গত ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪, বিদ্যামন্দিরের প্রাক্তন ছাত্রদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো পুনর্মিলন উৎসব। এই পুনর্মিলন উৎসবের মাধ্যমে তাদের এক সুতোয় বাঁধার কাজ শুরু হলো।

আবেগ, নস্টালজিয়া আর ভালোবাসার স্মৃতি বারবার রোমন্থন হলো পুনর্মিলন উৎসবে। ‘৫৭ সালের মাধ্যমিক, ‘৬১ সালের মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি প্রমাণ করে দিয়েছে বিদ্যামন্দিরের প্রতি তার প্রাক্তন ছাত্রদের অপার ভালোবাসার কথা। অনুষ্ঠানের সূচনা করেন প্রাক্তনী কমিটির সভাপতি সব্যসাচী ব্যানার্জী। ঘটনাক্রমে তিনি বিদ্যামন্দিরের বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিও বটে। গোটা বছর ধরে প্রাণের বিদ্যামন্দিরের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। আমেরিকার থেকে ছুটে এসেছেন কেউ, মুম্বাই থেকে সরাসরি স্কুলে। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন প্রাক্তনী এবং বিদ্যামন্দিরের বর্তমান শিক্ষক মানস গঙ্গোপাধ্যায়, দেবাঞ্জন দাস, তন্ময় সিনহা। প্রাক্তনীদের বক্তব্যে বারবার তাদের সময়ের নানান কথা উঠে এসেছে। একই সঙ্গে বর্তমান সময়ে পঠনপাঠন ও অন্যান্য বিষয়।

সরকারি বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রদের ভর্তির মাত্রাতিরিক্ত অনীহার ইদানিং কারণ আলোচনার মধ্যে উঠে এসেছে। যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক। অনুষ্ঠানের মধ্যাহ্ন ভোজের পর উপস্থিত হন বিদ্যামন্দিরের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ড. দিলীপ মজুমদার। উপস্থিত প্রাক্তনীদের বৃহৎ শতাংশ ছাত্র তাঁর স্নেহচ্ছায়ায় বড়ো হয়েছেন একদা। তাঁর উপস্থিতি অন্য মাত্রা তৈরি করেছে। সংক্ষিপ্ত ভাষণে মূল্যবান পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, “আমাদের মতাদর্শের জায়গায় পার্থক্য থাকতেই পারে, মনের দিক থেকে যেন সেই পার্থক্য হাজির না হয়। মতান্তর থাকলে থাকুক, মনান্তর যেন না থাকে। তবেই প্রকৃত লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে।” সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রাক্তনী পল্লব কাঞ্জিলাল। গানে গল্পে আড্ডায় মুখরিত ছিল সারাদিন।

প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক দিলীপ মজুমদারের সংযোজন

সব্যসাচী, পল্লব, সুশান্তদের ডাক এড়াতে পারলাম না। পুনর্মিলন উৎসবে গেলাম। গিয়ে বুঝলাম, এই উৎসব একটা টাইম মেশিন। পাকা চুল, আধপাকা চুলের প্রাক্তন ছাত্রদের দেখতে দেখতে ধাঁ করে চলে গেলাম সুদূর অতীতে। দেখতে লাগলাম নিজেকে। তখন আমি তিরিশ-চল্লিশের ঘরে। কৈশোরের ঘরে ছাত্ররা। তারপর তাদের যৌবনের শ্যামল গৌরব এসেছে। তারপর তাদের এসেছে বার্ধক্য। তাদেরই একজন আমাকে বলল, ‘আপনি আশির ঘর ছুঁতে চললেন, এখনও দিব্যি হেঁটে চলে বেড়াচ্ছেন, হা হা করে হাসছেন, শরীরের চামড়া কুঁচকোয় নি, দাঁত পড়ে যায় নি, মনে শ্যাওলা পড়ে নি, ব্যাপারটা কি বলুন তো?’

রেসিপির কথা জানতে চাইছে তারা।

রেসিপিটা এমন কিছু দুর্লভ নয়। বয়সটা শরীরের বাড়ে। বাড়ুক। মনের বয়েসটা ঠিক রাখতে পারলে কেল্লা ফতে। কি করে ঠিক রাখব মনের বয়েস? মনে রেখো আমাদের ঠাকুরের কথা। ঠাকুর? আপনি তো তেমন আস্তিক নন, তাহলে ঠাকুরের কথা আসছে কেন? আরে, এ হল মানুষ — ঠাকুর। আমি জোড়াসাঁকোর ঠাকুরের কথাই বলছি। প্রৌঢ় হবার পরেও যিনি ছিলেন সবুজ সংসদের গুরু। কি বলেছেন তিনি? বলেছেন : সহজ হবি, সহজ হবি, ওরে মন সহজ হবি। সহজ হবি আর ভালোবাসবি। বিশেষ করে শিশুদের। বেশি বেশি করে মিশবি শিশুদের সঙ্গে। শিশুর সঙ্গে শিশু হলে সহজ হওয়া যাবে। পুর্নমিলন উৎসবে আমি দেবাঞ্জন আর সঞ্জয়ের গোমড়া মুখ দেখে সেই আগেকার মতো বকে উঠলাম : এমন রামগরুঢ়ের ছানার মতো বসে আছিস কেন? সমস্যা আছে? কার না থাকে সমস্যা? সেই ঠাকুরের কথা আওড়া : ভালো মন্দ যাহাই আসুক সত্যেরে লও সহজে।

তা তো হল, খাদ্যাখাদ্য কি কিছুই নয়? কে বলল,. কিছুই নয়! আমি বাপু জীবনে মাত্র চার-পাঁচবার ফাস্ট ফুড খেয়েছি। আর তোরা? ঘরে গড়া রুটি খাবি না, মুড়ি খাবি না, শাক-পাতা খাবি না, তেতো খাবি না, কেবল চপ-কাটলেট-বিরিয়ানি–ফাস্ট ফুড ফাস্ট ফুড ফাস্ট ফুড। দেখ বাপু, প্রকৃতি আমাদের সবকিছু সাজিয়ে দিয়েছে, প্রতিটি ঋতুতে যেসব সবজি — যেসব ফল ফলে, শরীরে তার দরকার। মানিস এসব? প্রকৃতিকে টপকালে প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নেবেই। নিচ্ছে।

তা বলে কি রোগ হবে না? নিশ্চয়ই হবে। কিন্তু রোগের চিকিৎসার নামে যা চলছে তা তো মেডিকেল মাফিয়াদের খেলা। প্রথম কথা শরীরের সঙ্গে মনের গাঁটছড়া বাঁধা। সাইকোমনোরোলজি বলে একটা শাখার কথা শুনেছিস? সেখানে বলা হচ্ছে মনই সবচেয়ে বড়ো অ্যান্টি-সেপটিক, অ্যান্টিবায়োটিক। তার মানে মনই সবচেয়ে বড় প্রতিষেধক। প্রকৃতি আরও প্রতিষেধক দিয়েছেন। এককোয়া রসুনের গুণ জানিস? রোজ কয়েকদানা গোলমরিচ চিবিয়ে খেয়ে দেখিস। ভাত খাবার পরে রোজ একটু হরতকি + আমলকি+ দারচিনি+ এলাচ+ লবঙ্গ + গোলমরিচ খেয়ে দেখিস তো? ভোর সকালে একটু ত্রিফলার জল।

না রে, এসব শুকনো উপদেশ নয়। ‘আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শিখাও’ — আমি মানি। আমি নিজে এসব খাই। নিয়মিত। এই আমার রেসিপি।

আরও একটা কথা বলি। এই পুনর্মিলন উঃসবে এলি তোরা। তারপর ভুলে গেলি। আমার কিন্তু মনের খেলা চলতে শুরু করল। পুরানো ছাত্রদের দেখলাম, তাদের অতীতের কথা ভাবতে লাগলাম। কেমন ছিল তারা। কিছু স্মৃতি, কিছু আলাপ, কিছু প্রলাপ, কিছু কষ্ট, কিছু আনন্দ। এই হল মনের ব্যায়াম। এই ব্যায়াম না করলে মনে মরচে ধরে। ডিমনশিয়া চেপে ধরে।


আপনার মতামত লিখুন :

One response to “আবার দেখা যদি হলো সখা প্রাণের মাঝে আয় — নেতাজী নগর বিদ্যামন্দিরের পুনর্মিলন : সুশান্ত দাস”

  1. SASWATA BASU THAKUR says:

    অসাধারণ বর্ণনার মাধ্যমে সুন্দর স্মৃতিচারণা। আমি নিজেও উপস্থিত থেকে ঋদ্ধ হয়েছি। সংগীত পরিবেশন করে ধন্য হয়েছি।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন