বুধবার | ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৯:৪৬
Logo
এই মুহূর্তে ::
ধনং দেহী ধনতেরাস অ্যান্ড পুরুষালী গয়না : রিঙ্কি সামন্ত এ উৎসবের লগনে : নন্দিনী অধিকারী রায় ভিলা ও বিশ্বরূপ মহারাজ (দ্বিতীয় পর্ব) : কৌশিক মজুমদার কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (শেষ পর্ব) : শংকর ধনতেরাস এখন বাঙালিরও : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ডাক্তারদের আন্দোলন উপনির্বাচনে ইস্যু নয়, জয় নিয়ে শাসকদল নিশ্চিত : তপন মল্লিক চৌধুরী রায় ভিলা ও বিশ্বরূপ মহারাজ (প্রথম পর্ব) : কৌশিক মজুমদার কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (তৃতীয় পর্ব) : শংকর সেকালের প্রেতচর্চা — শিক্ষিত জনের কাছে থিওসফি : প্রলয় চক্রবর্তী মা কালী যখন মহালক্ষ্মী : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (দ্বিতীয় পর্ব) : শংকর মহাকাব্যে ভেড়ার উল্লেখ : অসিত দাস কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (প্রথম পর্ব) : শংকর রমা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও একাদশী পালনের নিয়মাবলী : রিঙ্কি সামন্ত আশাপূর্ণা দেবী-র ছোটগল্প ‘চাবি’ একে দানা-য় রক্ষা নেই তারওপর ডিভিসি-র ৪২ হাজার কিউসেক জল : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (নবম পর্ব) : বিজয়া দেব চেতনার সমস্যা, সামাজিক অবকাঠামো এবং বলপ্রয়োগ : এরিক ফ্রম, অনুবাদ ফাতিন ইশরাক বারবার ভিলেন সেই বঙ্গোপসাগর : তপন মল্লিক চৌধুরী নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রাখাইন পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের উদ্যোগ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ‘দানা’ থেকে ভয় পাবেন না, সতর্ক থাকুন, মোকাবিলায় রাজ্য সরকার প্রস্তুত : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সই বা বন্ধুত্ব স্থাপনের উৎসব সয়লা : রিঙ্কি সামন্ত প্রথম পাঠ — “নিশিপালনের প্রহরে” নিয়ে, দুয়েকটি কথা : সোনালি চন্দ বৃহন্নলার অন্তরসত্তা : নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী দুই দশক : শৈলেন মান্না ভরা বর্ষায় জলপ্রপাতের মুখোমুখি… : বিদিশি বসু দামোদর মাউজো-এর অনুবাদ গল্প ‘হরতাল’ বঙ্গে কুবেরের পূজা : অসিত দাস বাংলা সাহিত্যের দেবতারদের দেখা মেলে ওই ঘরেই : অশোক মজুমদার মালবাণকে ছুঁয়ে রূপোলী সমুদ্রসৈকতে : নন্দিনী অধিকরী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই মহাঅষ্টমীর আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

ধনতেরাস এখন বাঙালিরও : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী

মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী / ৭৩ জন পড়েছেন
আপডেট মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৪

“বৌদি সামনেই ধনতেরাস, আসছেন তো?” পাড়ার ছোটখাটো শ্রীরামকৃষ্ণ জুয়েলার্সের মালিক একমুখ হেসে নিমন্ত্রণ রাখে। বৌদিও একগাল হেসে সম্মতি জানায়। কিন্তু এটাও মনে মনে ভাবে, বাড়িতে বললেই অশান্তি, কারণ সোনা রূপোর দাম শুনলেই মধ্যবিত্ত ছ্যাঁকা খায়। আগে এই ধনতেরাস ধনবর্ষা এগুলো কিছুই বাঙালির জীবনে ছিল না। বাড়িতে একমাত্র বিয়ে থা লাগলে তবেই মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তা গিন্নী সোনার দোকানে যেতেন। নতুবা নয়। আয়ে দায়ে, পালা পার্বণে ঘরের গহনা থেকেই টুকটাক উপহার দিয়ে বেশ সম্মান ধরে রাখা যেত। কর্তার মাইনের উপর আঁচ পড়ত না। তাব’লে গিন্নী যে নিজের সোনা থেকে দান করলেন, সেজন্য কোনও পিঠচাপড়ানিও পেতেন না। কারণ ওটাই দস্তুর। নীরবে নিজের সবটুকু না হলেও বেশকিছু দান করার জন্যই তুমি বধূ হয়ে এসেছো। গহনা দিয়ে এমন কিছু আহামরি কাজ তুমি করোনি। এই ছিল পুরোনো দিনের গল্প।

তারপর বনেদী বাড়ি ভাঙল, ছোট বড় দেশলাই বাক্সের মত ফ্ল্যাট তৈরি হল। মধ্যবিত্ত নিজের নিজের ‘আপনি কোপনি’ বুঝে নিতে শিখল। তবুও বধূ মাঝেমধ্যেই নিজের গহনা থেকে উপহার দিতে ভুলে গেল না। তবে তখন একটু পিঠচাপড়ানি জুটতে লাগল উপরি পাওনা হিসাবে। তখন সুযোগ পেলে টুকটাক গহনা বিনা কারণে কেনার দিকে ঝোঁক বাড়ল। তারপর চাকুরিরতা মহিলারা নিজের টাকায় গহনা কেনার দিকে অগ্রসর হবেন, এটা আর বড় কথা নয়। আর এই সুযোগে ঢুকে পড়ল ধনতেরাস ধনবর্ষা। প্রথম দিকে এত বিজ্ঞাপন ছিল না। কিন্তু ক্রমে ক্রমে এমন হল যে গোটা কাগজে খবর কম, শুধুই গহনার ছবি। আর একথাও প্রচার হতে লাগল যে এই সময় গহনা না কেনা খারাপ, বরং কিনলে লক্ষ্মী লাভ হয়। সারাবছর লক্ষ্মী বাঁধা থাকেন। বাঙালির মাথায় ধীরে ধীরে এটি গেঁথে গেল। এখন এমন দাঁড়াল যে যিনি গহনা কিনতে পারলেন না, তিনি ধনতেরাসে ধাতব কিছু একটা কিনবেনই। নাহলে একটা ঝাড়ুও কিনবেন অন্তত। সোনার দোকান ঝলমলে হয়ে উঠল ধনতেরাসে।

ধনতেরাস কিন্তু ধন্বন্তরীর পূজার দিন। লক্ষ্মী পূজার নয়। সমুদ্র মন্থনের সময় এক হাতে অমৃত পাত্র এবং অন্যহাতে আয়ুর্বেদ ধারণ করে উত্থিত হন। তিনিই দেবতাদের বৈদ্য বা ডাক্তার। এই দিন আসলে সেই ডাক্তারের পুজোর দিন বা নীরোগ শরীর পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় পুজো।

এবার এর সঙ্গে এল লক্ষ্মী আবাহন। কারণ সমুদ্র মন্থনে ধনলক্ষ্মীও উঠে এসেছেন। এদিন তাই সন্ধ্যায় মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে লক্ষ্মীকে ভজনা করা হয়। মহারাষ্ট্রে এই দিনে গুড়ের সাথে শুকনো ধনে বীজের মিশ্রণ তৈরি করে তা মা লক্ষ্মীকে উপাচার হিসাবে দেওয়া হয়।

ধনতেরাসে সমস্ত গৃহকোণ পরিষ্কার করা হয়। কেউ কেউ এসময় ঘরে রঙও করে থাকেন। স্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধির জন্য পুজো করতে হলে ঘরদোর তো পরিষ্কার করতেই হবে। এদিন সন্ধ্যায় ধন্বন্তরীর পুজো করা হয়। মূল প্রবেশদ্বার সুন্দর করে সাজানো হয়। আলপনা দেওয়া হয়। মা লক্ষ্মীর চরণ আঁকা হয় সারা বাড়িতে। আর সারারাত প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা হয়। ধনত্রয়োদশীর দিন দেবী লক্ষ্মী দুধসায়র থেকে আবির্ভূতা হয়েছিলেন তাই লক্ষ্মী পুজো করা হয় এই ত্রয়োদশীতে।

সোনা ও রূপো এ দুটিই অত্যন্ত শুভ ধাতু। সুতরাং ধনতেরাসে এই দুটি ধাতু ঘরে আনার অর্থ সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধিকে আবাহন করা। রান্নাঘরের সরঞ্জাম ও গাড়ির মত জিনিসও শুভ মনে করা হয়। আসল কথা যা সৌভাগ্য বয়ে আনে তা কেনা এই সময় শুভফলদায়ক। এই একই সময়ে আবার মা কালীর উপাসনা করা হয়। তার সঙ্গেই আসে দীপাবলির আলোর উৎসব। অকালমৃত্যু এড়াতে যম দেবতার উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালানো হয় অর্ঘ্যস্বরূপ। আবার এই একই সময়ে গ্রামাঞ্চলে কৃষক তার গবাদি পশুকে পুজো করে থাকেন, ওই একই অর্থে। গবাদি পশু সমৃদ্ধি নিয়ে আসে বলে।

হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী আশ্বিন বা কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে ধনতেরাস পালিত হয়। এই দিন আয়ুর্বেদের দেবতা ধন্বন্তরীর পুজো হয়, কারণ তিনি মানবজাতির স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখেন। এই কারণে এই দিনে “জাতীয় আয়ুর্বেদ দিবস” পালন করা হয় ২৮ শে অক্টোবর ২০১৬ সাল থেকে।

এই অনুষ্ঠানের নাম ধনতেরাস। অন্য নাম ধনত্রয়োদশী। এটি পালন করেন হিন্দুরা। এটি দেওয়ালির একটি অংশ। আবার এটি আয়ুর্বেদ দিবস। আবার মা কালীকেও এসময় অনেক স্থানে লক্ষ্মীরূপে পুজো করা হয়। দক্ষিণ ভারতে, বিশেষ করে তামিলনাড়ুর ব্রাহ্মণ মহিলারা মারুন্ডু তৈরি করে নরক চতুর্দশীর প্রাক্কালে ধনত্রয়োদশীতে ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করেন। মারুন্ডু প্রার্থনার সময় দেওয়া হয় ও সূর্যোদয়ের পূর্বে খাওয়া হয়। শরীরের ত্রিদোষের ভারসাম্যহীনতা দূর করতে এটি খাওয়া হয়।

কথিত আছে, এক রাজা ছিলেন। তাঁর ষোল বছরের পুত্রের বিবাহের পরই পুত্রের সর্পদংশনে মৃত্যুযোগ ছিল। সেই রাতে নববধূ তার ষোল বছর বয়সী স্বামীকে জাগিয়ে রেখেছিল, ঘুমোতে দেয়নি। সে তার সমস্ত অলংকার শয়নকক্ষের প্রবেশদ্বারে রেখে অনেক প্রদীপ জ্বালিয়ে দেয়। তারপর নানা গান, কাহিনী বলে স্বামীকে জাগিয়ে রাখে। সেই রাতে মৃত্যু দেবতা যম সর্পের রূপ ধারণ করে এসে অলংকারে প্রদীপের আলোর ঝলকানিতে অন্ধ হয়ে গেলেন। যমের আর কক্ষে প্রবেশ করে রাজকুমারের প্রাণ নেওয়া হল না। তিনি অলংকারের স্তূপে বসে নববধূর গান ও কাহিনী শুনতে লাগলেন। সকাল হলে তিনি চলে গেলেন। নববধূর বুদ্ধিতে রাজকুমারের প্রাণ রক্ষা পেল। এর জন্য দিনটি ধনতেরাস হিসাবে পালিত হয়।

যমের উদ্দেশ্যে দীপ জ্বালানো হয় বলে এই প্রথা যমদীপদান নামেও খ্যাত। আবার দীপাবলির আগের রাত বলে উত্তর ভারতে এটি ‘ছোটি দেওয়ালি’ নামেও ডাকা হয়। আবার জৈন ধর্মের মতে তেরো সংখ্যাটি শুভ। এদিন মহাবীর সমস্ত পার্থিব বস্তু ত্যাগ করে ধ্যানে মগ্ন হয়েছিলেন তাই এই দিন ধন্য হয়েছে।

সমস্ত দিক থেকে দিনটি যখন শুভ, তখন এই দিনটি বাঙালি আপন করে নিলে ক্ষতি নেই, বরং সোনার দোকানের মালিকের খুশি হওয়ার দিন। এই জগতে যা কিছু সুন্দর তা নারীর প্রয়োজনেই বেশি ব্যবহৃত হয়। সে পোশাক হোক বা অলংকার। আর দেবী লক্ষ্মী নিজে অলংকারে ভূষিতা, তাই ধনতেরাসে বাঙালি নারীরা সোনার দোকান অভিমুখী হবেন এ আর নতুন কথা কি? তাই ধনত্রয়োদশীর সন্ধ্যায় বড় ছোট সোনার দোকানে বৌদি, মাসিমা, কাকিমারা যে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে একটুও অধৈর্য্য হবেন না সেটা দেববৈদ্য ধন্বন্তরীও জানেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন