বুধবার | ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৯:৪৯
Logo
এই মুহূর্তে ::
ধনং দেহী ধনতেরাস অ্যান্ড পুরুষালী গয়না : রিঙ্কি সামন্ত এ উৎসবের লগনে : নন্দিনী অধিকারী রায় ভিলা ও বিশ্বরূপ মহারাজ (দ্বিতীয় পর্ব) : কৌশিক মজুমদার কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (শেষ পর্ব) : শংকর ধনতেরাস এখন বাঙালিরও : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ডাক্তারদের আন্দোলন উপনির্বাচনে ইস্যু নয়, জয় নিয়ে শাসকদল নিশ্চিত : তপন মল্লিক চৌধুরী রায় ভিলা ও বিশ্বরূপ মহারাজ (প্রথম পর্ব) : কৌশিক মজুমদার কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (তৃতীয় পর্ব) : শংকর সেকালের প্রেতচর্চা — শিক্ষিত জনের কাছে থিওসফি : প্রলয় চক্রবর্তী মা কালী যখন মহালক্ষ্মী : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (দ্বিতীয় পর্ব) : শংকর মহাকাব্যে ভেড়ার উল্লেখ : অসিত দাস কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (প্রথম পর্ব) : শংকর রমা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও একাদশী পালনের নিয়মাবলী : রিঙ্কি সামন্ত আশাপূর্ণা দেবী-র ছোটগল্প ‘চাবি’ একে দানা-য় রক্ষা নেই তারওপর ডিভিসি-র ৪২ হাজার কিউসেক জল : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (নবম পর্ব) : বিজয়া দেব চেতনার সমস্যা, সামাজিক অবকাঠামো এবং বলপ্রয়োগ : এরিক ফ্রম, অনুবাদ ফাতিন ইশরাক বারবার ভিলেন সেই বঙ্গোপসাগর : তপন মল্লিক চৌধুরী নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রাখাইন পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের উদ্যোগ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ‘দানা’ থেকে ভয় পাবেন না, সতর্ক থাকুন, মোকাবিলায় রাজ্য সরকার প্রস্তুত : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সই বা বন্ধুত্ব স্থাপনের উৎসব সয়লা : রিঙ্কি সামন্ত প্রথম পাঠ — “নিশিপালনের প্রহরে” নিয়ে, দুয়েকটি কথা : সোনালি চন্দ বৃহন্নলার অন্তরসত্তা : নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী দুই দশক : শৈলেন মান্না ভরা বর্ষায় জলপ্রপাতের মুখোমুখি… : বিদিশি বসু দামোদর মাউজো-এর অনুবাদ গল্প ‘হরতাল’ বঙ্গে কুবেরের পূজা : অসিত দাস বাংলা সাহিত্যের দেবতারদের দেখা মেলে ওই ঘরেই : অশোক মজুমদার মালবাণকে ছুঁয়ে রূপোলী সমুদ্রসৈকতে : নন্দিনী অধিকরী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই মহাঅষ্টমীর আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

ধনং দেহী ধনতেরাস অ্যান্ড পুরুষালী গয়না : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ৫২ জন পড়েছেন
আপডেট মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৪

ইন্টারনেটে যুগে সরস্বতী পূজার পাশাপাশি বাঙালি তরুন প্রজন্ম যেমন ভালেন্টাইন দিবসেও প্রেম নিবেদন শিখল, তেমনিও বঙ্গ জীবনেও শুরু হল ধনতেরাসে সোনা কিংবা মূল্যবান ধাতু কেনার প্রথা। এমনিতেই ধর্মীয় বিশ্বাস ছিলো যে, ধন ত্রয়োদশীর শুভ মুহূর্তে সোনার বা মূল্যবান ধাতু কিনলে তা সৌভাগ্য বয়ে আনে। আর এমন সোনা-সৌভাগ্য কপালে কে না লিখতে চায় বলুন!! কনজিউমারিজমের প্রভাবে একটি মঙ্গলজনক দিবস কিভাবে কেনাকাটা উৎসবের চেহারা নিতে পারে তার জ্বলজ্বলে প্রমাণ ধনতেরাস।

প্রাচীন ধর্মীয় কাহিনীতে কথিত আছে যে, সে যুগের রাজা হিম বা হিমার ১৬ বছরের পুত্রের ভাগ্য গণনা করে রাজজ্যোতিষীবৃন্দ ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে রাজপুত্র বিবাহের চতুর্থ রাতে সাপের কামড়ে মারা যাবে। নববধূ ঝুঁকি নিলেন। নির্দিষ্ট রাত্রি কালের আগে থেকেই তিনি তার যত অলংকার স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্রা ইত্যাদি জড়ো করে দরজার সামনে উঁচু করে প্রবেশপথ রুদ্ধ করলেন। সারা ঘরে মাটির প্রদীপ সাজিয়ে রেখে চোখ ধাঁধানো আলোর ব্যবস্থা করলেন। এই রাতে শয়ন কক্ষে রাজকুমার যাতে রাতে ঘুমিয়ে না পড়ে, তার জন্য তাকে পাশে বসিয়ে রাজপুত্রবধু সারারাত নানান কাহিনী ও ভজন গেয়ে স্বামীকে জাগিয়ে রাখলেন।

যথাসময়ে সর্পরূপী যম চুপিসারে রাজশয়ন কক্ষে ঢুকতে গেলে প্রথমেই বাধা পায় কারণ প্রবেশপথ আগলে আছে উঁচু অলংকারের ঢিপি। তারপর কোনক্রমে অলংকারের ঢিপিতে উঠে শয়ন কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করতেই প্রদীপের তীব্র আলোয় তার চোখ ধাঁধিয়ে গেল। অন্ধপ্রায় সাপ নববধূর ভজন কীর্তন এবং প্রবচন শুনে ভোরের আলো ফুটতেই পালিয়ে গেল। এই দিনটি হল ধনতেরাস উৎসবের লগ্ন। অলংকারের দ্যুতি এবং প্রদীপের আলোয় দুষ্টের দমন হয়, নেমে আসে ঋদ্ধি সিদ্ধি লাভ শুভ ও সমৃদ্ধি।

ধন অর্থ সম্পদ আর তেরাস্ অর্থ ত্রয়োদশী অর্থাৎ আশ্বিনের কৃষ্ণা একাদশী। হিন্দু শাস্ত্র মতে ভক্তগণ ধন-সম্পদ লাভের জন্য লক্ষ্মী দেবী আরাধনায় নিজেদের সমর্পণ করেন। প্রচলিত অর্থে বিশেষ করে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় বিশ্বাস করেন এই পুণ্য তিথিতে দেবীকে আবাহন করলে দেবী লক্ষ্মী তার ভক্তদের গৃহে যান ও তাঁদের ইচ্ছাপূরণ করেন। শাস্ত্র মতে, এমনি তিথিকে সমুদ্রমন্থনে কুবেরের পাশাপাশি অমৃত কলস নিয়ে উঠে এসেছিলেন মা লক্ষ্মী। এটি সৌভাগ্যের দিন হিসেবে চিহ্নিত। তাই মনে করা হয়, এই দিন ধাতু কিনলে গৃহস্থের কাছে সারা বছর মা লক্ষ্মীর কৃপা ও আশীর্বাদ বজায় থাকবে।

প্রাচীন কাল থেকে গয়না কেনা ও পরার রীতি আমাদের সমাজে প্রচলিত। আগেকার দিনে নারী ও পুরুষ উভয়েই নানা গয়নায় সাজতেন। মেয়েদের মতো ছেলেরাও কানে দুল, হাতে কঙ্কন ও গলায় হার পরতেন। এখনকার দিনে পুরুষদের গয়না পরার রীতি কমে এলেও, পুরুষরা গয়না দেখে নাক সিঁটকোন এমন কিন্তু মোটেও নয়। পুরুষদের মধ্যে কিছু কিছু গয়নার কদর ভীষণ বেশি যেমন হীরের স্টাড, সোনার চেন, সোনার ব্রেসলেট, হীরে ও সোনার আংটি ইত্যাদি। পুরুষের গয়নার মধ্যে কানের দুল তো রীতিমতো হটকেক।

বিশেষ করে যারা কর্পোরেট সেক্টরে চাকরি করেন, তাদের জন্য হীরে বসানো টাইপিনের একটা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। আবার অনেকে হীরের কাফলিংকও পরতে ভালোবাসেন।

নতুন প্রজন্মের কাছে ট্রেন্ডি সোনার গয়না কেনা অনেকটা “গাড়ু ভেঙে নাড়ু আর নাড়ু ভেঙে গাডুর মত’। তাদের চিন্তায়, বাড়িতে ঠাকুমা দিদিমার গয়না তো রয়েছেই তাদের সোনা গয়না দিয়েই কাজ চলে যেতে পারে, তাহলে নতুন ট্রেন্ডে গা ভাসিয়ে হীরে বা দামী পাথর কেনা যেতেই পারে।

ছেলেদের মধ্যে ‘বাটন কভার’ গয়নার কদর বেড়েছে। আমাদের সময় বাবা-কাকাদের দেখেছি কোন অনুষ্ঠান বাড়ি বা বিয়ে বাড়িতে পাঞ্জাবিতে হীরের (ফলস বা আসল) ঝিলিক দেওয়া সোনার (সেটিও ফলস বা আসল) বোতাম সাঁটিয়ে যেত। তবে সোনার বোতাম এখন আর কেউ সেভাবে কিনছেন না বরং শার্টের বোতামের ওপর দিয়ে পড়ার মতো বাটন কভার কিনছে। বিয়েতে ছেলেরা যেহেতু ধুতি পাঞ্জাবি ছেড়ে শেরওয়ানির দিকে বেশি ঝুঁকেছেন, তাই সেই পোশাকের সঙ্গে মানানসই ব্রোচের কদরও বেড়েছে। আর সেই ব্রোচে পাথরের কাজ থাকছে এমন হীরের ঝলকও চোখে পড়ে। এখন ছেলেরা যেসব পাঞ্জাবি পড়ে, তাতে আর বোতাম লাগে না প্রায় সবই রেডিমেট। তাই বোতাম কেনার ট্রেন্ড অনেকটাই কমেছে।

সোনার আংটির ডিমান্ড এখনো প্রচুর। সোনার বোতামের জায়গা নিয়েছে গলার চেন, রিস্টচেন ইত্যাদি। জ্যামিতিক নকশা ও নানা ধরনের সিম্বল ধরে করা গয়না পুরুষেরা বেশি ভালোবাসেন। লম্বা চেনের সঙ্গে কিছুটা মেটাল ও পাথর বসানো মালাগুলো পরা যাবে টি-শার্ট, হাইনেক সোয়েটার বা শার্টের সঙ্গে।

দেশি–বিদেশি গয়নার নকশাকাররা বলছেন, ছেলেদের গয়না জনপ্রিয়তা পাওয়ার পেছনে বিশেষ প্রভাবক তারকাদের। বলিউডের সাইফ আলী খান, রণবীর সিং হয়ে আনন্দ আহুজা — বিয়ের সাজে সবাই এখন কাটাই কাজের ভারী জুয়েলারি পরছেন। শুধু বিয়েতেই নয়, নানা অনুষ্ঠানেও বলিউড তারকাদের নিয়মিত গয়না পরতে দেখা যাচ্ছে। বিনা উপলক্ষেও পুরুষদের নানা ধরনের গয়না পরতে দেখা যাচ্ছে এখন।

হীরের কাফলিঙ্ক বা প্লাটিনামের কাফলিঙ্ক ছেলেরা পড়ছে। কেউ হয়তো কর্পোরেট সেক্টরে চাকরি করলে কালভদ্রে টাইপিনও কেনেন তাতেও হীরের কাজ উল্লেখযোগ্য। বাঙালিরা বর্তমানে হীরের গয়নার দিকে ঝুঁকছে। সোনার আর হীরের আংটির মধ্যে খুব একটা দামের পার্থক্য হচ্ছে না। তাই ফ্যাশনেবল হতে দ্বিতীয়টাকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন ক্রেতারা।

পুরুষদের গয়নার কথা হচ্ছে অথচ মহর্ষি পরিবারে সদস্যদের কথা ভুলে গেলে তো মোটেও চলবে না। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের তৃতীয় পুত্র হেমেন্দ্রনাথ বরবেশে এসেছিলেন বেনারসি জোড়ের ওপর নানা রকম গয়না পরে। সেখানে ছিল মুক্তোর মালা, হীরের কণ্ঠী, হাতের বালা ও নানান আংটি। পুরুষের অলংকার প্রসঙ্গে মহর্ষির সেই বিখ্যাত জুতো জোড়ার কথা আর একবার স্মরণ করতে হয়। অলংকার বা সোনার তৈরি না হলেও, এই জুতোজোড়া দিয়ে তিনি তৎকালের অভিজাত সমাজকে হতবাক করে দিয়েছিলেন। নিজের বুদ্ধিবলে অত্যন্ত অভাব অনটনের সময়ে শোভাবাজার রাজবাড়িতে জলসায় গিয়েছিলেন মুক্তখচিত জুতোপড়ে। তাতেই নজর কেড়েছিল উপস্থিত সকলের।

উৎসবের অলংকার সম্পর্কে গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট মেয়ে সুজাতা বলেছিলেন — সেসময়ে দিনে সোনার গয়না, বিকালে মুক্তোর গয়না এবং রাতে হিরে জহরতে জড়োয়া গয়না পরার রীতি ছিল। হয়তো আলোর সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে এই নির্বাচন। চোখ ধাঁধানো আভিজাত্য আর অলংকারের আলোয় বাঙালির নয়ন চিরকালই মুগ্ধ থাকবে। বাঙালিয়ানার ঐতিহ্য আর হাল ফ্যাশনের চাহিদার সুচারু মিশ্রণ ঘটিয়ে সোনার গয়না কিনুক বাঙালি, কারণ সোনা থাকা মানেই যে বাড়তি আত্মবিশ্বাস। মধ্যবিত্তের স্বপ্ন ডানা মেলুক সোনার ওপর ভর করে। বাঙালির ঘরে ধনতেরাসে হোক ধনলক্ষ্মীর শুভাগমন।


আপনার মতামত লিখুন :

One response to “ধনং দেহী ধনতেরাস অ্যান্ড পুরুষালী গয়না : রিঙ্কি সামন্ত”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন