সালটা ৮৩ কিংবা ৮৪ হবে। ‘পিপিএফ’-এর (প্রোগ্রেসিভ পিপল ফন্ট) পক্ষ থেকে মিউনিসিপ্যালিটির ইলেকশনে পরাজিত হয়ে বীরের মতো মার্চ করতে করতে আর গান গাইতে গাইতে বীর দর্পে ফিরে যাচ্ছে দলটা। দেখলে মনে হবে যেন জিতেছে। গানটা আমার গান, “যদি একবার হারো বারবার লড়ো, বারবার লড়ো / বার বার যতদিন না বিজয়ী হও।” সেই দলে সুমিত চ্যাটার্জীদের সঙ্গে দেবাশিস ও ছিল। সেই থেকে আলাপ। নকশাল বাড়ির গান যখন গাইতাম তখন সেটা গোপনে গোপনে, মঞ্চে গান গাইতাম না। ৮২ সালের পর থেকে প্রকাশ্য মঞ্চে গণসংগীত গাইতে শুরু করলাম। তার পরেই ওদের সঙ্গে যোগাযোগ। আমি ব্যাংকে চাকরি করতাম। সেখানে দেবাশিস আসতো। খুব সম্মান করতো আমাকে। ম্যানেজার বাবুর কাছেও আমার কথা খুব বলত। ওদের ডাকে কালীঘাটে গিয়ে মিটিং বা সভায় গান করতাম আবার বাসে ফিরে আসতাম।
ওর যে বিষয়টা আমাকে সবচেয়ে বেশি কাছে টানত, তা হল ওর কথা বলার ভঙ্গি। একেবারেই সেটা পন্ডিতের মত নয়, খুব সরল সাদাসিধে ভঙ্গিতে কথা বলতো, অথচ যে কনটেন্ট থাকতো অনেক পন্ডিত সেভাবে কথা বলতে পারবে না। অত্যন্ত মূল্যবান কথা অনায়াসে বলে ফেলতে পারত সে। তার স্মৃতিশক্তিও ছিল বিস্ময়কর! কোনো কাগজপত্র না দেখে একেবারে স্মৃতি থেকে তথ্যনিষ্ঠ বক্তব্য রাখতো।
ভোটের অ্যানালিসিস-এর সময় স্মৃতি থেকে এত রাজনৈতিক ইতিহাস বলতে পারতো যে, তা আমাদের কাছে খুবই বিস্ময়কর ছিল। এরকম প্রতিভাবান সাংবাদিক আমি খুব কম দেখেছি। কেউ কিছু ভুলে গেলে ওকে জিজ্ঞেস করলেই হত।
একটি ঘটনার কথা আমি খুব কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি। আমার গান “আমি বাংলায় গান গাই” এর ২৫ বছর উদযাপন করার জন্য ‘মা মাটি মানুষের’ স্পেশাল একটা মিটিং ডেকেছিল দেবাশিস। সেখানে আমাকে নিয়ে গিয়েছিল এবং আমাকে অসাধারণ একটি স্মারক উপহার দিয়েছিল। আমার সম্পর্কে যে লেখাটি সেখানে লিখেছিল তা আমার চিরকাল মনে থাকবে। আমার গানের জন্য এরকম একটা এ্যপ্রিসিয়েশন খুব কম সাংবাদিকের কাছ থেকে লিখিতভাবে পেয়েছি। একজন সাংবাদিক হিসেবে, প্রাবন্ধিক হিসেবে এবং অনুভবী একজন মানুষ হিসেবে তার যে অবদান, তা আমরা যেন ভুলে না যাই।