মূলত ইঁদুর খেয়েই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি কৃষকের বন্ধু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে দাঁড়াশ সাপ।
মানুষের অন্ধ বিশ্বাস হল, সাপ মানেই বিপদ, অতএব সাপেদের বেঁচে থাকার কোনও অধিকার নেই। যদি ধরেও নিই যে সাপ মানেই বিপদ, তাও তো সে যেচে কারও ক্ষতি করতে যায় না, বরং মানুষ দেখলেই পড়ি কি মরি করে ছুটে পালায়। ‘কালনাগিনীর মারাত্মক বিষ’, ‘লাউডগা চোখ খুবলে নেয়’, ‘ঘরচিতির কামড়ে প্রাণ যেতে পারে’ আজ অবধি এ সবের কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি।
ধান পাকার ঠিক আগে ইঁদুরের উপদ্রব দেখা যায় কৃষি জমিতে। ফসল নষ্ট করে এই ইঁদুরেরা।
প্রবীণ কৃষকরা বলছেন, ইঁদুরের সংখ্যা আগের থেকে অনেক বেড়ে গেছে। সাপের সংখ্যা কমে যাওয়াই এর কারণ। সাপ থাকলে ইঁদুর এভাবে হাজারে বিজারে বংশ বিস্তার করতে পারত না। তাঁর কথায়, বন্যার জল নেমে যাওয়ার পর পর ইঁদুরের উপদ্রব বেশি দেখা যায়। যত দিন যাচ্ছে ইঁদুরের উপদ্রব তত বারছে। অজ্ঞতার কারণে লোকজন দাঁড়াশ সাপ মেরে ফেলছে। একেকটা দাঁড়াশ সাপ সারা বছর ধরে কয়েক হাজার ইঁদুর সাবাড় করে দেয়।
গ্রামের এই প্রবীণ কৃষকদের কথা একেবারেই ফেলনা নয়।
সাপ না থাকায় এখন ঘরে-বাইরে সমান তালে ক্ষতি করছে ইঁদুর। ধানের গোছা বের হওয়ার আগেই গাছ নষ্ট করে দিয়েছে। জমিতে গেলে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়। বাজারের ওষুধেও কাজ হচ্ছে না, জানালেন এই প্রবীণ কৃষক।
তাঁর কাছ থেকেই জানলাম—
দাঁড়াশ সাপ কৃষকের নীরব বন্ধু। সারা দেশেই এদের দেখা মেলে। এ সাপ এখনো বিপন্ন না হলেও আগের মতো তেমন একটা দেখা যায় না। বাস্তবে কৃষকের বন্ধু হলেও অজ্ঞতা আর কু-সংস্কারের কারণে মানুষের হাতে প্রাণ দিতে হয় প্রতিনিয়ত। দাঁড়াশ সাপ কৃষি জমিতে থাকতে পছন্দ করে এবং যে জমিতে থাকে তার আশপাশে প্রায় ৩ একর এলাকাজুড়ে সে বিচরণ করে এবং এই জায়গায় খুঁজে খুঁজে ইঁদুর ধরে। যার ফলে ইঁদুরের কারণে যে ফসলহানি ঘটে তা থেকে রক্ষা মেলে। দাঁড়াশ এখনো বিপন্ন পর্যায়ে না গেলেও বর্তমান তেমন একটা দেখা যাচ্ছেনা। দাঁড়াশ দেখতে খুবই সুন্দর। এদের ইংরেজি নাম Rat Snake বৈজ্ঞানিক নাম Ptyas mucosa।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, প্রতি বছর ইঁদুর যে পরিমাণ খাদ্যশস্য নষ্ট করে তার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। এর মধ্যে বেশি ক্ষতি করে ধান ও গমের। এ সাপ রক্ষা করতে পারলে বছরে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার ফসলের পাশাপাশি কৃষি বিভাগ যে টাকা ইঁদুর দূর করতে খরচ করে তাও রক্ষা করা সম্ভব।
মানুষের ধারণা দাঁড়াশ সাপের কোমরে বা লেজে কাঁটা আছে, যা দিয়ে আঘাত করলে মানুষের প্রাণ যায়। এ ছাড়া দাঁড়াশ সাপ রাতে গরুর দুধের বাঁট থেকে দুধ চুষে খেয়ে থাকে বলেও মনে করে অনেকে। তবে এর সবই ভুল। দাঁড়াশ সাপের কোমর বা লেজে কোনো কাঁটা নেই। বাস্তবে সাপটি খুব নিরীহ। তবে রেগে গিয়ে বা ভয় পেয়ে কাউকে কামড় দিলেও ক্ষতি হয় না।
প্রাণীবিদ্জ্ঞানী ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে বিপুল অঙ্কের রবি ফসল বাঁচাতে এ সাপের প্রজনন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা উচিত। এ জন্য তার আবাসস্থল ধ্বংস এবং প্রজনন সমস্যা দূর করতে হবে।
Darun excellent.