নদিয়া জেলার চাপড়া বাঙ্গালঝি মহাবিদ্যালয়ে ৫ অক্টোবর, ২০২৪ (শনিবার) ১৫৫তম গান্ধী জয়ন্তী উদযাপন করা হয়েছিল একটি সেমিনার আয়োজনের মধ্যে দিয়ে। চাপড়া বাঙ্গালঝি মহাবিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে এই এক দিবসীয় সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছিল। সহযোগিতায় ছিল কলেজের ইন্টারনাল কোয়ালিটি অ্যাসেসমেন্ট সেল অর্থাৎ আই.কিউ.এ.সি.। সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. অনিলকুমার সরকারকে (ভূতপূর্ব জগজীবন রাম চেয়ার প্রফেসর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়)। তাঁর আলোচনার বিষয় ছিল ‘একুশ শতকে গান্ধী ভাবনার প্রাসঙ্গিকতা’। চাপড়া বাঙ্গালঝি মহাবিদ্যালয়ের দ্বিতলে অবস্থিত কলেজের বিশেষ সেমিনার হল ‘নদীয়া কক্ষ’-এ গান্ধী জয়ন্তীর এই সমগ্র অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছিল। দুপুর বারোটা থেকে সেমিনার শুরু হয় এবং প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে সেমিনারটি চলে।
একটি চারাগাছে জল সিঞ্চনের মধ্যে দিয়ে এদিনের আলোচনাচক্রের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। প্রধান বক্তা ড. অনিলকুমার সরকার, চাপড়া বাঙ্গালঝি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ড. নিরঞ্জন গুহ এবং কলেজের ইন্টারনাল কোয়ালিটি অ্যাসেসমেন্ট সেলের (আই.কিউ.এ.সি.) কোঅর্ডিনেটর ড. কাজল গাঙ্গুলী চারাগাছে জল সিঞ্চন করেন। এরপর মঞ্চে উপস্থিত ব্যক্তিদের বরণ করে নেওয়া হয়। চাপড়া বাঙ্গালঝি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ড. নিরঞ্জন গুহকে পুষ্পস্তবক দিয়ে বরণ করে নেন কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপিকা স্বপ্না রায়। অধ্যাপক অনিলকুমার সরকারকে পুষ্পস্তবক দিয়ে বরণ করে নেন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপিকা ঐন্দ্রিলা বিশ্বাস।
ড. কাজল গাঙ্গুলীকে পুষ্পস্তবক দিয়ে বরণ করে নেন কলেজের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপিকা ইন্দ্রাণী বিশ্বাস। এদিন মঞ্চে ড. অনিলকুমার সরকারের হাতে কলেজের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ স্মারক তুলে দেওয়া হয়। মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এই স্মারকটি তাঁর হাতে তুলে দেন। সেমিনারে স্বাগত ভাষণ রাখেন অধ্যক্ষ ড. নিরঞ্জন গুহ। তিনি সেমিনারে আগত সকল শিক্ষার্থী, রিসার্চ স্কলার, শিক্ষাকর্মীবৃন্দ এবং অধ্যাপক অধ্যাপিকাদের স্বাগত জানান। গান্ধী জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত এই সেমিনারে এসে বক্তব্য রাখার আমন্ত্রণ গ্রহণের জন্য প্রধান আলোচক ড. অনিলকুমার সরকারকে তিনি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান। অধ্যক্ষের স্বাগত ভাষণের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব সমাপ্ত হয়। এরপর অনুষ্ঠানের মূল পর্ব অর্থাৎ প্রধান বক্তার আলোচনায় প্রবেশের পূর্বে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপিকা গার্গী সেনগুপ্ত প্রাক্ কথনে কলেজের পক্ষ থেকে গান্ধী জয়ন্তী উদযাপনের বিষয়টি নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
এ দিনের সেমিনারে চাপড়া বাঙ্গালঝি মহাবিদ্যালয়ের নদীয়া কক্ষে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। আলোচক অনিলকুমার সরকার তাঁর বক্তব্যের শুরু থেকেই সভাকক্ষে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেন। তিনি একুশ শতকের ভারতে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর মতাদর্শের প্রাসঙ্গিকতা সহজভাবে শিক্ষার্থীদের বোধগম্য ভাষায় উপস্থাপন করেন। তাঁর প্রায় এক ঘণ্টার বক্তব্যে গান্ধী-জীবনের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ঘটনার পাশাপাশি গান্ধী-জীবনের বহু অনালোচিত প্রসঙ্গও উঠে আসে, যা শ্রোতাদের সকলকে আরো বেশি আগ্রহী করে তোলে। অধ্যাপক অনিলকুমার সরকার এদিন ‘হিন্দ স্বরাজ’, ‘মাই এক্সপেরিমেন্টস উইথ ট্রুথ’-এর প্রসঙ্গ উত্থাপন করে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেমন পরিবেশন করেন, তেমনি গোপালকৃষ্ণ গোখলে, জওহরলাল নেহেরু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে সম্পর্কিত গান্ধীজীর একাধিক গল্পও সুচারুভাবে উপস্থাপন করেন। গান্ধীর ‘মহাত্মা’ হয়ে ওঠার বিষয়টিও প্রসঙ্গক্রমে তাঁর আলোচনায় উঠে আসে। সার্বিকভাবে এই দিনের আলোচনা তাই কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে শিক্ষকমণ্ডলী, শিক্ষাকর্মীবৃন্দ, গবেষক এবং শিক্ষার্থীরা সকলে মনোযোগ সহকারে উপভোগ করেন। চাপড়া বাঙ্গালঝি মহাবিদ্যালয়ের একটি উল্লেখযোগ্য পিয়ার রিভিউ রিসার্চ জার্নাল হলো ‘এথেনা’ (ISSN: 2454-1605)। সম্প্রতি এই রিসার্চ জার্নালের একটি নতুন সংখ্যা প্রকাশ পেয়েছে। ‘এথেনা’ জার্নালের সাম্প্রতিক সংখ্যাটি (VOLUME VIII, JULY 2024 C.E.) এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে অধ্যাপক অনিলকুমার সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কলেজের পক্ষ থেকে অধ্যক্ষ ড. নিরঞ্জন গুহ তাঁর হাতে জার্নালের নতুন সংখ্যাটি তুলে দেন।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সাল থেকে এথেনা রিসার্চ জার্নালের পথচলা শুরু হয়। ধীরে ধীরে এই একাডেমিক রিসার্চ জার্নালটি পণ্ডিত এবং গবেষকদের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সফল হয়েছে। অধ্যাপক অনিলকুমার সরকারও এই জার্নালের পিয়ার রিভিউ বোর্ডের সদস্য। তিনি জার্নালের নতুন সংখ্যাটি হাতে পেয়ে নিজের ভালোলাগার বিষয়টি জাহির করেন। সেমিনারের মূল বক্তব্য শেষ হলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে ইতিহাস বিভাগের প্রধান অধ্যাপিকা স্বপ্না রায় সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। সবশেষে অধ্যক্ষ ড. নিরঞ্জন গুহ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। ১৫৫তম গান্ধী জয়ন্তীর সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক দীপাঞ্জন দে। সকলের সহযোগিতায় এভাবেই চাপড়া বাঙ্গালঝি মহাবিদ্যালয়ে আয়োজিত গান্ধী জয়ন্তীর অনুষ্ঠানটি সুসম্পন্ন হয়।
লেখক: অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, চাপড়া বাঙ্গালঝি মহাবিদ্যালয়।