‘লাল সিং চাড্ডা’ পারেনি, বলিউডের ভরসা এখন সবেধন নীলমণি ‘ব্রহ্মাস্ত্র’। দক্ষিণী ছবির কাছে বলিউড হেরেই চলেছে। চেনা তারকা, চেনা মুখ, চেনা ধামাকা কিছুই আর রক্ষা করতে পারছে না তাকে। এটা ঠিক ২০২০ ও ২১ এর তুলনায় অবস্থা কিঞ্চিৎ ভালো হয়েছে। কিন্তু একে সাফল্য বলা কঠিন। এবছরের প্রথম ৮ মাসে হিন্দি ছবির ব্যবসার অঙ্ক ২,২৯৯ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেলেও বিশেষজ্ঞদের মতে এই ফল আশানুরূপ নয়। এটা ঠিক গত দু’বছরের তুলনায় এবছরে অতিমারির ধাক্কা বলিউড খানিকটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। তবে ২০১৯ এর ব্যবসার অঙ্কে পৌঁছতে এখনও ঢের দেরি। সময় তো আর মাত্র ৪মাস! মনে রাখতে হবে, ২০১৯ এ হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ব্যবসার অঙ্ক দাঁড়িয়েছিল ৫,২০০ কোটি টাকা। তেমন কোন মিরাকল না ঘটলে এবছর এই অঙ্কে পৌঁছনো কঠিন। কোন আনুমানিক তথ্য নয়, বলিউডের এই চিত্রটি তুলে ধরেছে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার অগাস্ট মাসের ইকোর্যাপ।
হারের কারণ
সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠবে এই হারের কারণ কি? বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্বল বিষয়, গোটা দেশ জুড়ে সিনেমা হলগুলির একের পর এক বন্ধ হয়ে যাওয়া, হিন্দি ছবির ওপর বিনোদন কর বৃদ্ধি, জনবিন্যাসের ফারাক এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের আসমুদ্রহিমাচল বিস্তার, বিপদে ফেলেছে হিন্দি ছবিকে। এসবিআই এর বিশেষজ্ঞরা লক্ষ্য করেছেন, দু’বছরের লকডাউনের অভিজ্ঞতা বদলে দিয়েছে মানুষের বিনোদনের দৃষ্টিভঙ্গিটা। তাদের মতে মানুষ অতীতের জয়গান করলেও আদতে কখনোই পুরনো অভিজ্ঞতা ও অভ্যাসে ফিরতে চায় না। সবসময় তার ঝোঁক সামনে চলার দিকে। কাজেই ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ও ডিজিটাল অভিজ্ঞতার বাইরে বেরিয়ে লোকজন যে আবার হলমুখো হবেন সেই সম্ভাবনা বেশ কম।
সবচেয়ে বড় কথা হল, নতুন প্রজন্মের দর্শকরা মনে করছেন নানা দুর্বলতা সত্বেও ওটিটি বিষয়বস্তুর অভিনবত্বের বিচারে এগিয়ে আছে। বলিউডের গতবছর মুক্তি পাওয়া ৪৩টি ছবির তুলনায় ওই বছরই ১৮টি ডাব করা হিন্দি ছবির বিষয়বস্তু অনেক বেশি আকর্ষণীয় এবং অভিনব। তাছাড়া প্যানডেমিক পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় এখন ছবির সংখ্যাও কমেছে। আগে বছরে গড়ে ৭০-৮০টি ছবি মুক্তি পেত। তা থেকে আয় দাঁড়াতো ৩ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা। এর পাশাপাশি ডাবল ভার্সান ছবি বেশি হওয়ার কারণেও দক্ষিণী ছবির ব্যবসা বেড়েছে।
হল এবং মল
এটা ঘটনা দিনহীন সিনেমা হলগুলির তুলনায় ঝকঝকে মলের চকচকে স্ক্রিনে ছবি দেখার খরচ অনেক বেশি। হলগুলির সংস্কার করেননি মালিকরা। আবার মলে গিয়ে সিনেমা দেখাও একটা ব্যয়বহুল ব্যাপার। এই অবস্থাটা যে দক্ষিণী ছবির সাফল্যের পিছনে একটা বড় শক্তি তা মানতেই হবে। তাছাড়া হিন্দি ছবির বিনোদন কর বেশি হওয়ায় টিকিটের দামও বেশি হয়। এরকম পরিস্থিতিতে বলিউডকে শুধু বিষয়বস্তু বা তারকা নয়, ছবির প্রদর্শন নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ই এখন বলিউডের ব্রহ্মাস্ত্র। তার সূত্রেই আবার লড়াইয়ে ফিরতে পারে মুষড়ে পড়া বলিউড।