সোমবার | ৭ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৭:১৪
Logo
এই মুহূর্তে ::
কলকাতার কাঁচাভেড়া-খেকো ফকির ও গড়ের মাঠ : অসিত দাস ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (চতুর্থ পর্ব) : জমিল সৈয়দ রামনবমী পালন এবং হুগলী চুঁচুড়ার শ্রীরামমন্দির : রিঙ্কি সামন্ত ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (তৃতীয় পর্ব) : জমিল সৈয়দ মিয়ানমারে ভূমিকম্প — প্রতিবেশী দেশের জনগণের পাশে বাংলাদেশ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (দ্বিতীয় পর্ব) : জমিল সৈয়দ হুমায়ুন-এক স্মৃতি-এক আলাপ : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী সনজীদা যার সন্তান : শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (প্রথম পর্ব) : জমিল সৈয়দ অবসর ঠেকাতেই মোদী হেডগেওয়ার ভবনে নতজানু : তপন মল্লিক চৌধুরী লিটল ম্যাগাজিনের আসরে শশাঙ্কশেখর অধিকারী : দিলীপ মজুমদার রাঁধুনীর বিস্ময় উন্মোচন — উপকারীতার জগৎ-সহ বাঙালির সম্পূর্ণ মশলা : রিঙ্কি সামন্ত রামনবমীর দোল : অসিত দাস মহারাষ্ট্রে নববর্ষের সূচনা ‘গুড়ি পড়বা’ : রিঙ্কি সামন্ত আরামবাগে ঘরের মেয়ে দুর্গাকে আরাধনার মধ্য দিয়ে দিঘীর মেলায় সম্প্রীতির মেলবন্ধন : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ‘বিজ্ঞান অন্বেষক’ পত্রিকার ২২তম বর্ষ উদযাপন : ড. দীপাঞ্জন দে হিন্দিতে টালা মানে ‘অর্ধেক’, কলকাতার টালা ছিল আধাশহর : অসিত দাস আত্মশুদ্ধির একটি বিশেষ দিন চৈত্র অমাবস্যা : রিঙ্কি সামন্ত চাপড়া বাঙ্গালঝি মহাবিদ্যালয় : ড. দীপাঞ্জন দে রায়গঞ্জে অনুষ্ঠিত হল জৈব কৃষি বিপণন হাট অশোকবৃক্ষ, কালিদাসের কুমারসম্ভব থেকে অমর মিত্রর ধ্রুবপুত্র : অসিত দাস কৌতুকে হাসতে না পারলে কামড় তো লাগবেই : তপন মল্লিক চৌধুরী জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর ও রোহিঙ্গা সংকটে অগ্রগতি : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন এথেন্সের অ্যাগনোডাইস — ইতিহাসের প্রথম মহিলা চিকিৎসক : রিঙ্কি সামন্ত সন্‌জীদা খাতুন — আমার শিক্ষক : ড. মিল্টন বিশ্বাস হিমঘরগুলিতে রেকর্ড পরিমাণ আলু মজুত, সস্তা হতে পারে বাজার দর : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় শিশুশিক্ষা : তারাপদ রায় জঙ্গলমহল জৈন ধর্মের এক লুপ্তভুমি : সসীমকুমার বাড়ৈ ওড়িশা-আসাম-ত্রিপুরার অশোকাষ্টমীর সঙ্গে দোলের সম্পর্ক : অসিত দাস পাপমোচনী একাদশী ব্রতমাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ অন্নপূর্ণা পূজা ও বাসন্তী পূজার আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

প্রিয়তমের সঙ্গে প্রিয়তমার নিষ্কাম ও দিব্য মিলনই শান্তিপুরে ভাঙারাস : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ৮৬৪ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২২

পনেরো ষোল শতকে যে গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্ম আর সংস্কৃতির প্লাবন সারা বাংলাদেশ তথা ভারতের অন্যান্য অঞ্চলকেও ডুবিয়ে ছিল — নবদ্বীপ আর শান্তিপুর ছিল তার উৎসমুখ। শ্রীশ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এবং শ্রী অদ্বৈতের লীলা রঙ্গভূমি নবদ্বীপ আর শান্তিপুরই গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্ম ও মতের অনুকূলে অনুশীলন আচার আর উৎসব-অনুষ্ঠানের প্রাণ কেন্দ্র হয়েছিল বহুকাল ধরে।

দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপুজোর পর যে শুক্লপক্ষ পরে তারই পূর্ণিমায় অনুষ্ঠিত হয় রাসযাত্রা। বড়ই মধুর রসে জারিত এই রাসযাত্রা। মূর্তিমান প্রেম শ্রীকৃষ্ণ, লীলা মাধুরী শ্রীরাধিকা, কিরণ উজ্জ্বল সখীবৃন্দ — সে এক অলৌকিক প্রেমের উদ্ভাস। রসই বিষয়, রসই আশ্রয়, রসই খেলা, রসই লীলা। রসের প্রাচুর্যে রাস, রাসের বিস্তারে রসের প্রসার। প্রিয়তমের সঙ্গে প্রিয়তমার নিষ্কাম ও দিব্য মিলনই রাস। কালক্রমে এর অভিব্যক্তি এমন ভাবে সাধারন মানুষকে আকর্ষণ করেছে যে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বেড়া টপকে রাস এখন হয়ে উঠেছে এক লৌকিক উৎসব।

পরবর্তীকালে আমাদের এই বাংলায় রাস উৎসব একটু অন্যদিকে বাঁক নিয়েছিল, জন্ম হয়েছিল নদীয়ার শান্তিপুরের বিখ্যাত ‘ভাঙারাস’ এর। শান্তিপুরের রাস ইতিহাসে রয়েছে ঐতিহাসিক বা পৌরাণিক নানান জনশ্রুতি। শান্তিপুরে বাসিন্দারা মনে করেন এই রাস আসলে সব ধর্মের, সব বর্ণের মানুষের মিলন মেলা।

এক সময় বৈষ্ণবদের হাত ধরে শুরু হলেও, এখন তা সর্বজনীন।

একবার নাকি বৃন্দাবনের তমালবনে কৃষ্ণের বিরহে গোপিনীরা যখন বড়ই কাতর, তখন শ্রীরাধিকা তার মনের গভীর দুঃখ চেপে রাখতে না পেরে প্রকাশ করে ফেলেন সখীদের কাছে। অবশেষে সখীদের পরামর্শে রাই নিজেই হলেন রাখাল রাজা, সাজলেন পুরুষের বেশে। পুরুষ রূপে কৃষ্ণপ্রেমে লীন হওয়ার সেই সুখানুভূতি রাধা সারা জীবনেও ভুলতে পারেননি। রাইয়ের এই পুরুষ বেশে রাখাল রাজা সাজাকেই বলে “রাইরাজা”। এইভাবে ভগবানের মধ্যে ভক্তের লীন হওয়াকে কেন্দ্র করেই ভাঙারস উৎসবের সূচনা।

ভারতীয় দর্শন ও আধ্যাত্মিকতায় চিরদিনই শক্তি আর শক্তিমানের অভেদত্ব প্রমাণিত। এর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রমাণ হলো রাধা কৃষ্ণ। সেদিনের সেই কাহিনীকে স্মরণ করে আজও শান্তিপুরের ভাঙ্গা রাসে প্রধান আকর্ষণ রাইরাজা। শান্তিপুরের রাস বলতে সবাই জানে এই ভাঙা রাসকেই। এখানে রাস তিনদিনের — আদি বা গোটা, মধ্যরাস আর ভাঙারাস।

প্রচলিত রীতি অনুসারে, কোন ব্রাহ্মণ ঘরের সুন্দরী কুমারীকন্যাকে বেশে, বসনে, চন্দনে, তিলকে রাইরাজা সাজিয়ে লক্ষ লক্ষ দর্শকের সামনে দিয়ে শোভাযাত্রা করে নিয়ে যাওয়া হয়। এই রাইরাজা সাজার অধিকারিনী শুধু এখানকার বিগ্রহ বাড়ির কন্যারা। কাচের ফানুসে মোমবাতি জ্বেলে সিংহাসনে বসে সুন্দরী রাইরাজা বের হন শান্তিপুর প্রদক্ষিনে।

রাইরাজা এখানে দেবীর সম্মান পান। ময়ূরপঙ্খীর গান শান্তিপুরের ভাঙা রাসের মিছিলের আরেক বড় আকর্ষণ। গরুর গাড়ির উপর বাঁশ আর রংবেরঙের কাগজে তৈরি হয় ময়ূরের মতো খাঁচা। চলে পুরুষ কণ্ঠে বামাবেশে বামা ঢঙে গান। গানের বিষয়বস্তু রাধা কৃষ্ণের প্রেমলীলা। সঙ্গে থাকে রাধা কৃষ্ণের বিগ্রহ। শোভাযাত্রার বড় আকর্ষণ এই বিগ্রহগুলি।

শান্তিপুরে পূর্ণিমার দিন থেকেই রাস বসে। গোস্বামীদের বিভিন্ন মন্দির এবং শান্তিপুরের আরো অন্যান্য মন্দিরে রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহদের সাধ্যমত রত্নালঙ্কারে সাজিয়ে রাসমণ্ডপে বসানো হয়। চলে পূজা পাঠ কীর্তন যাত্রা প্রভৃতি। নাট্যমন্দিরগুলি চাঁদোয়ায়, ঝালোরে, ঝাড়লন্ঠনে সাজে।

শান্তিপুরের বড় গোস্বামী বাড়ির প্রচলিত ভাঙা রাসের এক অপূর্ব গল্প শোনা যায়। এখানকার সেবিত বিগ্রহ রাধারমন (পুরীতে যিনি দোলগোবিন্দ নামে পুজিত হতেন) প্রায় ৩৫০ বছর আগে একাকী মন্দিরে পূজিত হতেন। ছিলেন না রাধারানী। সেই সময় মাঝে মাঝেই শ্রীকৃষ্ণের বিগ্রহ হারিয়ে যেত বা অপ্রকট হতো, এমতাবস্থায় কাত্যায়নী মায়ের  পূজার মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণের বিগ্রহ ফেরত আনা সম্ভব হলেও দরকার ছিল একটা স্থায়ী সমাধান। তখন শান্তিপুর বড় গোস্বামী বাড়ির সদস্যরা মিলে প্রস্তাব করেন, রাধারানী কে আনলে হয়তো কৃষ্ণের সংসারে মন বসবে এবং তিনি মন্দির ছেড়ে আর কোথাও যাবেন না। কথা মত রাধারানীর মূর্তি গড়ানো হয় এবং প্রতিষ্ঠিত হয় রাস উৎসব-এর সময়। সেবার দ্বিতীয় রাসের পরের দিন শান্তিপুর বড় গোস্বামী বাড়ির সদস্যরা মিলে রাধা এবং কৃষ্ণের যুগল মূর্তি নগরবাসীকে দর্শন করানোর উদ্দেশ্যে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা আয়োজন করেন। এবং শান্তিপুরের অন্যান্য বিগ্রহ বাড়ি সেই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। ব্যাপারটা এরকম রাধারমন হচ্ছেন বর-বউ এবং বাকিরা বরযাত্রী। এখান থেকেই প্রথম ভাঙ্গারাসের সূচনা হয়। তাই আজও এই পরিবারের শোভাযাত্রা বের হয় সবার আগে।

এছাড়া পাগলা গোস্বামী পাড়া, চাকফেরা, খাঁবড়ি, আতাবুনে, মদন গোপাল পাড়া, হাটখোলার গোস্বামী বাড়ি, সাহাবাড়ি, প্রামানিকবাড়ি পল্লী বাড়ি থেকে ভাঙা রাসের মিছিল বার হয়। ভাঙা রাসের মিছিলের প্রধান বাদ্যভান্ড ঢাক। ষাট থেকে দেড়শটি ঢাকের গুরুগুরু আওয়াজ তুলে নাচতে নাচতে এই মিছিলের যাওয়ার প্রথা বহুদিনের।

শান্তিপুরের রাস উপলক্ষে বিভিন্ন ঠাকুরবাড়ির প্রাঙ্গণে, রথতলায় দোকানপাট বসে। কাঠের বাসনকোসন, ধামাচুপড়ি, খেলনা, শোলার পুতুল, পাঁপড়, কচুরি বেগুনির  দোকানগুলি লোকের কেনাকাটায় সেজে ওঠে। শান্তিপুর এর রাসযাত্রার সময়সূচি —

৮ ই নভেম্বর — মঙ্গলবার — প্রথম রাস

৯ ই নভেম্বর — বুধবার — মাঝের রাস

১০ ই নভেম্বর — বৃহস্পতিবার — ভাঙারাস

১১ ই নভেম্বর — শুক্রবার — কুঞ্জভঙ্গের ঠাকুরনাচ।

নবদ্বীপের রাস পূর্ণিমা পেরোতে না পেরোতেই এক বিশাল জনস্রোত গঙ্গা পার হয়ে ওপারের শান্তিপুরে ভাঙারাসে গিয়ে আছড়ে পড়ে। এপারে নবদ্বীপ ওপারে শান্তিপুর মাঝখানে গঙ্গা। এ যেন জননীর দুটি স্নেহ মুষ্টির বন্ধনে যেন দুদিকে দু-টি শিশুর হাত ধরা। রাসযাত্রা মূলত বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের উৎসব হলেও এদের শ্রেষ্ঠ স্মৃতিগ্রন্থ “শ্রী হরি ভক্তিবিলাসে” এই উৎসব পালনের কোনও বিধান দেওয়া নেই। প্রাচীন স্মৃতিকারকগণ কয়েকটি বৈষ্ণব উৎসবের উল্লেখ করলেও এই অনুষ্ঠানের কোনও উল্লেখ সেভাবে করেননি। তাই ভাঙা রাস উৎসবটি নদীয়া জেলার শান্তিপুরের নিজস্ব অবদান বলেই স্বীকার করে নিতে হয়।।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার: ডাঃ দেবব্রত দাস এবং শান্তিপুরের রাস উৎসব কমিটি।


আপনার মতামত লিখুন :

8 responses to “প্রিয়তমের সঙ্গে প্রিয়তমার নিষ্কাম ও দিব্য মিলনই শান্তিপুরে ভাঙারাস : রিঙ্কি সামন্ত”

  1. তপন says:

    অপূর্ব সুন্দর লাগল। পড়তে পড়তে মনে হচ্ছে যেন রাসের মেলাতে নিজেই ঘুরে বেড়াচ্ছি। পাপড়ের গন্ধ নাকে এলো।

  2. আশিস ব্যানার্জী says:

    অপূর্ব বর্ণনা, কত অজানারে হোলো জানা, ভীষণ ভালো লাগলো।

  3. শুভাশিস ঘোষ says:

    চমৎকার লাগল। জানলাম অনেক তথ্য, অসংখ্য বিষয়। সমৃদ্ধ হলাম।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন