দেশ-বিদেশ সর্বত্র কদর। কেবল মাংস নয়, দুধ ও চামড়া দুটোই বিক্রি করে উপার্জন। এই মুহূর্তে গ্রামীণ অর্থনীতিতে একটা বড় ভূমিকা পালন করছে। তাহল ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট অর্থাৎ বাংলার কালো ছাগল। দেশের উত্তর-পূর্ব ভারত, বিহার, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের ছাগলের চাষ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রামীণ চিত্রে চোখ রাখলে দেখা যায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতে অন্ততপক্ষে এক-দুটি ছাগল চাষ দেখা যাবে। যে প্রজাতির ছাগল এখানে চাষ হচ্ছে তার অধিকাংশ বাংলার কালো ছাগল। কিছু কিছু অবশ্য বাদামী, ধূসর রঙের ছাগলও দেখা যাবে। প্রতিবেশি দেশ বাংলাদেশে এই ধরনের ছাগল চাষ বেশি। এর মাংস ও দুধ সুস্বাদু এবং চামড়া গুণগতমানে ভাল বলে রপ্তানিও হচ্ছে। গ্রামীণ বহু দরিদ্র পরিবার আছে, ছাগল চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এই সমস্ত ছাগলের মাংসের চাহিদা বাড়ছে। গড়ে উঠছে ছাগলের খামার। বহু বেকার যুবক খামার তৈরি করে ছাগল চাষ করছেন। এখান থেকে মাংস যেমন বিক্রি হচ্ছে, সেই সঙ্গে প্রোটিন সমৃদ্ধ দুধও বিক্রি হচ্ছে। লাভবান হচ্ছেন বেকার যুবকরা। উত্তরোত্তর যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে ছোট বড় শিল্প গড়ে ওঠার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। প্রসঙ্গত, বাংলা দেশে ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট সবচেয়ে বেশি পরিমাণে দেখা যায়। চাষ হচ্ছে খামারগুলিতে। সরকারও ভাবছে কীভাবে আরও বেশি টাকা উপার্জন করা যায়। তাই রপ্তানির ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। বহুমূল্যে বিক্রি হচ্ছে ছাগলের চামড়াও। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িষাতেও ছাগল চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের মধ্যে।
উল্লেখ্য, এধরনের ছাগলগুলো কালো রঙের হয়। কিন্তু কোথাও কোথাও বাদামী, ধূসর ও সাদা রঙেরও দেখতে পাওয়া যায়। এই ছাগলগুলি ছোট আকারের হয়। কিন্তু শরীর হয় শক্তপোক্ত। শিং ছোট এবং পাগুলোও ছোট হয়। একটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ছাগল ২৫ থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত হয় এবং স্ত্রী ছাগল ২০ থেকে ২৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে এই প্রজাতির ছাগল থেকে দুধ পাওয়া যায় খুব কম। তবে এর মাংস সুস্বাদু। চাহিদাও বেশি। বাজারে ন্যায্য দামও পাওয়া যায়। পাশাপাশি এ জাতের ছাগলের চামড়ার গুণগতমানও ভাল। এজন্য চামড়াও বেশি দামে বিক্রি হয়।
প্রসঙ্গত, এই প্রজাতির ছাগল চাষে খরচও কম বলে খামারের চাষিরা জানিয়েছেন। অল্প খাদ্য হলেও চলে। চিকিৎসা খরচও কম। একসঙ্গে বছরে দু’বার ১ থেকে ৩ টি বাচ্চার জন্ম দেয়। সরকারও এগিয়ে এসেছে এই চাষ বাড়ানোর জন্য। চাষিদের উৎসাহদান সেইসঙ্গে সচেতনতা শিবিরও খুলেছে এ রাজ্যের পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েতে। বড় ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে রাজ্যসরকারের প্রাণিসম্পদ দপ্তর। রাজ্যের সমস্ত জেলায় ছাগলের খামার তৈরি হয়েছে। নতুন করেও বহু খামার তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ছাগলের মাংস বিক্রি করে যেমন ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। সেইসঙ্গে বেশি উৎপাদন করতে পারলে রাজ্যর বাইরেও বিক্রি করে সরকার মোটা অংশের আর্থিক উপার্জনের পথ দেখবে। কেবল মাংস নয়। এ প্রজাতির ছাগলের চামড়াও গুণগতমানে উচ্চশ্রেণির। তাই এই চামড়া দেশ-বিদেশে কদর বাড়ছে। মিলছে মোটা অঙ্কে আর্থিক প্যাকেজও। তাই ঝোঁক বাড়ছে ছাগল চাষিদের।
গ্রামে-গঞ্জে এখন ছাগলের সংখ্যা যাতে বাড়ে এজন্য প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করে সহায়তা করা হচ্ছে। আগ্রহী স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিও। সহজ শর্তে ঋণও মিলছে। একই ভাবে বেকার যুবকরাও এগিয়ে এসেছেন এ ধরনের ছাগল চাষ করতে। কারণ স্বল্পদিনেই প্রচুর ছাগল চাষ সম্ভব এবং পর্যাপ্ত মাংস, দুধ ও চামড়াও পাওয়া যায়। প্রাণিসম্পদ দফতরের বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই জাতের ছাগলের মাংস যেমন সুস্বাদু, সেই সঙ্গে ছাগলের দুধে অত্যাধিক পরিমাণে প্রোটিন আছে। যা যক্ষা ও অ্যাজমা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। তাই লক্ষ্য করা যাচ্ছে বাংলাদেশে এই প্রজাতির ছাগল চাষ গত দু’বছরে বহুগুণ বেড়েছে। বর্তমানে প্রায় ৩ কোটি এই প্রজাতির ছাগল চাষ হচ্ছে। যা থেকে বৈদেশিক আর্থিক উপার্জনের এক বড় পথ খুলে যাচ্ছে। টনক নড়েছে পার্শ্ববর্তী দেশগুলিরও। পশ্চিমবঙ্গও চুপচাপ বসে নেই। বিশেষজ্ঞরা অত্যাধুনিক উপায়ে এ প্রজাতির ছাগল চাষ কীভাবে বাড়ানো যায় এবং তা থেকে খামারশিল্প গড়ে একদিকে কর্মসংস্থান, অপরদিকে রপ্তানি করে মোটা অঙ্কের অর্থ ঘরে তোলা।
প্রসঙ্গত, চলতি আর্থিক বছরের বাজেটে কেন্দ্র সরকার গ্রামীণ সম্পদ ও মৎস্য চাষ সংক্রান্ত নতুন দুটি উন্নয়নমূলক প্রকল্পে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। যা ছাগল চাষিদের কাছে অক্সিজেন পাওয়া।