রবিবার | ৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | সকাল ১০:১১
Logo
এই মুহূর্তে ::
গাছে গাছে সিঁদুর ফলে : দিলীপ মজুমদার ভালো থাকার পাসওয়ার্ড : বিদিশা বসু সলিমুল্লাহ খানের — ঠাকুরের মাৎস্যন্যায় : ভাষা-শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতা : মিল্টন বিশ্বাস নেহরুর অনুপস্থিতিতে প্যাটেল, শ্যামাপ্রসাদও ৩৭০ অনুমোদন করেছিলেন : তপন মল্লিক চৌধুরী সিঁদুরের ইতিকথা আর কোন এক গাঁয়ের বধূর দারুণ মর্মব্যথা : দিলীপ মজুমদার সাহিত্যিকদের সংস্কার বা বাতিক : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষে শ্রীপাণ্ডবা বা নির্জলা একাদশীর মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত দশহরার ব্যুৎপত্তি ও মনসাপূজা : অসিত দাস মেনকার জামাই ও জামাইষষ্ঠী : শৌনক ঠাকুর বিদেশী সাহিত্যিকদের সংস্কার ও বাতিক : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ভক্তের ভগবান যখন জামাই (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-এর ছোটগল্প ‘সময়ের প্ল্যাকটফর্ম’ গুহাচিত্র থেকে গ্রাফিটি : রঞ্জন সেন জামিষষ্ঠী বা জাময়ষষ্ঠী থেকেই জামাইষষ্ঠী : অসিত দাস কার্বাইডে পাকানো আম দিয়ে জামাইষষ্ঠীতে জামাই খাতির নয়, হতে পারে ক্যান্সার : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ভক্তের ভগবান যখন জামাই (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত কাশ্মীর নিয়ে বিজেপির নেহরুকে দোষারোপ ধোপে টেকেনা : তপন মল্লিক চৌধুরী রবীন্দ্র নাটকের দুই ট্র্যাজিক রাজা : শৌনক দত্ত কবির মৃত্যু : দিলীপ মজুমদার শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণের সপ্তসঙ্গিনী : স্বামী তেজসানন্দ মহারাজ দীঘায় জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাস্টার স্ট্রোক : সন্দীপন বিশ্বাস সিঁদুরে মেঘের গর্জন : অসিত দাস শতবর্ষে অন্য বিনোদিনী — তৃপ্তি মিত্র : শৌনক দত্ত আমার প্রথম অভিনয় দেখে সত্যেন বসুই বলেছিলেন— তোর হবে : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ইন্দ্রজিৎ আমাকে ক্লান্ত করে কেবলই ক্লান্ত : তপন মল্লিক চৌধুরী মনোজ বসু-র ছোটগল্প ‘বাঁশের কেল্লা’ গ্রেস কটেজ বুলেটিন প্রকাশ : দীপাঞ্জন দে অথ ওয়াইন কথা : রিঙ্কি সামন্ত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের চিকিৎসাবিভ্রাট : অসিত দাস বাংলা ইসলামি গান ও কাজী নজরুল ইসলাম : আবু বকর সিদ্দিকি
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা (গুরু পূর্ণিমা) আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

মহাশ্বেতা দেবী-র ছোটগল্প ‘বাঁয়েন’

মহাশ্বেতা দেবী / ২৫৪৭ জন পড়েছেন
আপডেট সোমবার, ২৮ মার্চ, ২০২২

ভগীরথ যখন খুব ছোট তখনি ওর মা চণ্ডীকে বাঁয়েনে ধরেছিল। বাঁয়েনে ধরবার পরে চণ্ডীকে সবাই গাঁ-ছাড়া করে দিল। বাঁয়েনকে মারতে নেই, বাঁয়েন মরলে গাঁয়ের ছেলে-পিলে বাঁচে না। ডাইনে ধরলে পুড়িয়ে মারে, বাঁয়েনে ধরলে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়।

তাই চণ্ডীকে সবাই গাঁ-ছাড়া করে রেলের ধারে চালা তুলে দিল।

ভগীরথ বড় হয়েছে অন্য মা-র কাছে, অন্য মা-র আদরে-অনাদরে। নিজের মা কাকে বলে ভগীরথ জানে না। শুধু মাঠের ওপারে ছাতিম গাছের নিচে একটা চালা ঘর দেখেছে, শুনেছে এখানে চণ্ডী বাঁয়েন একলা থাকে।

কখনো মনেও হয়নি চণ্ডী বাঁয়েন কারো মা হতে পারে। দূর থেকে দেখেছে ঘরের মাথায় লাল নেকড়ার ধ্বজা, মাঝে মাঝে দেখেছে উদভ্রান্তের মত ধানক্ষেতের আল ধরে চৈত্রের চষা দুপুরে লালকাপড় পরে কে যেন কাঠি দিয়ে টিন বাজাতে বাজাতে মজা পুকুরের দিকে যাচ্ছে, পেছনে একটা কুকুর।

বাঁয়েন যখন যায় তখন টিন বাজিয়ে সাড়া দিতে দিতে যায়। বাঁয়েন যদি কোন ছোট ছেলে বা পুরুষকে দেখে তখনি চোখের দৃষ্টিতে তাদের শরীর থেকে রক্ত শুষে নিতে পারে।

তাই বাঁয়েনকে একলা থাকতে হয়। বাঁয়েন যাচ্ছে জানলে যুবা বুড়ো সব পথ ছেড়ে সরে যায়।

একদিন, শুধু একদিন ভগীরথ তার বাবা মলিন্দরকে বাঁয়েনের সঙ্গে কথা বলতে দেখেছিল।

—চক্ষু লামা ভগীরথ, ওর বাবা ধমকে বলেছিল।

বাঁয়েন পা টিপে টিপে পুকুর-পাড়ে এসে দাঁড়িয়েছিল।

ভগীরথ এক পলক দেখেছিল পুকুরের জলে লাল কাপড়, তামাটে মুখ, জটাবাঁধা চুল।

দেখেছিল দুই চোখে কি ক্ষুধিত দৃষ্টি, যেন ভগীরথকে চোখ দিয়ে মেরে ফেলবে।

না, ভগীরথের মুখের দিকে চায়নি বাঁয়েন। ভগীরথ যেমন করে কালো জলে বাঁয়েনের লাল ছায়া দেখেছিল, বাঁয়েনও ঠিক তেমনি করেই ভগীরথের ছায়াটাকে দেখেছিল। ভগীরথ শিউরে উঠে চোখ বুজেছিল, বাবার কাপড় চেপে ধরেছিল।

—কেন এসেছিস? ভগীরথেব বাবা হিসহিসিয়ে উঠেছিল।

—মোর মাথায় তেল লাই গঙ্গাপুত্ত, ঘরে কেরাসিন নাই। একলা মোকে ডর লাগে গো!

বাঁয়েন কাঁদছিল, চণ্ডী বাঁয়েন। জলের ওপর ওর ছায়া-চোখে জল পড়ছিল।

—কেন, এ শনিবার বারের ডালা দেয় নাই?

শনিবার শনিবার ডোমপাড়ার একজন বারের ডালা নিয়ে যায়, চাল, ডাল, লবণ, তেল নিয়ে গিয়ে ছাতিম গাছের কাছে রেখে ছাতিম গাছকে সাক্ষী রেখে বাঁয়েনের বারের ডালা দিলাম গো বলে ছুটে চলে আসে।

—কুকুর খেয়ে দিলে।

—টাকা লিবি? টাকা লে।

—আমায় কে জিনিস বিচবে?

—দেব, আমি কিনে দেব, তুই এখন যা!

—আমি একলা থাকতে পারি না।

—তবে বাঁয়েন হলি কেন? যা বলছি।

ভগীরথের বাবা পুকুর পাড় থেকে একদলা কাদা তুলেছিল।

গঙ্গাপুত্ত, এ খোকাটা কি….

একটা বিশ্রী গালি দিয়ে ভগীরথের বাবা কাদার দলাটা ছুঁড়ে মেরেছিল। তখন পালিয়ে গিয়েছিল চণ্ডী বাঁয়েন।

—বাবা তুমি বাঁয়েনের সঙ্গে কথা বললে?

ভীষণ ভয় পেয়ছিল ভগীরথ। বাঁয়েনের সঙ্গে কথা বললে তার মৃত্যু অবধারিত। ভগীরথের মনে হয়েছিল ওর বাবা মরে যাবে আর বাবা মরে যাওয়ার কথা ভাবলেই ভগীরথের মনে হত মাথায় বুঝি বাজ ভেঙে পড়ল, বাপ মরলে সৎ-মা যে তাকে তাড়িয়ে দেবে তাতে সন্দেহ নেই।

—এখন বাঁয়েন বটে, কিন্তু উ তোর মা।

বাবা আশ্চর্য গম্ভীর গলায় কথাটা বলেছিল। গলার কাছটায় ডেলা আটকিয়ে গিয়েছিল ভগীরথের। মা! বাঁয়েন কারো মা হয়। বাঁয়েন কি মানুষ? বাঁয়েন তো মাটি খুঁরে মরা ছেলে বের করে, আদর করে, দুধ খাওয়ায়, বাঁয়েনের দৃষ্টিতে একটা গোটা গাছ অব্দি চড়চড়িয়ে শুকিয়ে যেতে পারে। ভগীরথ তো একটা জল-জীয়ন্ত ছেলে। সে কেমন করে বাঁয়েনের পেটে জন্মাল? ভগীরথ ভেবে পায়নি।

আগে মানুষ ছিল, তোর মা ছিল।

—তোমার বউ।

—আমার বউ।

মলিন্দর কি ভেবে যেন নিশ্বাস ফেলেছিল। বলেছিল—তোরে সব বলে যাব ভগীরথ, তোর কোন ভয় লাই।

ভগীরথ অবাক হয়ে ওর বাবার দিকে চেয়ে চেয়ে আল হাঁটছিল। মলিন্দর গঙ্গাপুত্রের গলায় এমন স্বর ও কখনো শোনেনি। শধু ডোম নয় ওরা, শ্মশানের ডোম, শ্মশানে এখন মিউনিসিপ্যালিটি শুধু একজন ডোম থাকতে দেয়। ভগীরথরা বাঁশবেতের কাজ করে, সরকারী মুরগী খোঁয়াড়ে কাজ করে, ময়লা ফেলে সারমাটি করে। একা মলিন্দর ছাড়া এ অঞ্চলে কোন ডোম নাম সই করতে জানে না। সেইজন্য মলিন্দর কিছুদিন আগে মহকুমার লাশঘরে কাজ পেয়েছে।

সরকারী কাজ। মলিন্দর গঙ্গাপুত্র লিখে বেয়াল্লিশ টাকা মাইনে নেবার কাজ। ভগীরথ জানে বাবা মাঝে মাঝে বেওয়ারিশ মড়া চুন আর ব্লিচিং পাউডারে পচিয়ে হাড় বের করে। হাড়, যদি গোটা মানুষের হাড়, নয়তো খুলি, নিদেনপক্ষে পাঁজরা খাঁচাটা পাওয়া যায়,

তাহলে অনেক লাভ।

সরকারবাবু কলকাতার হবু ডাক্তারদের কাছে খুলি-হাড়-কঙ্কাল মোটা লাভে বেচে দেয়। বাবাকে দশ-পনের যা দেয় তাতেই বাবা খুশি। এই উপরি টাকা সুদে খাটিয়ে খাটিয়ে বাবা কয়েকটা শুয়োর কিনেছে।

মলিন্দর গায়ে পিরান পরে, পায়ে জুতো পরে মহকুমা যায়, পাড়ায় ও সম্মানী মানুষ।

সেই মলিন্দর চোখ লাল করে অনেকক্ষণ চণ্ডী বাঁয়েনের ঘরের ওপরে গেরুয়া আকাশের কপালে এতটুকু একটা সিঁদুর-ফোঁটার মত লাল নেকড়ার নিশানটুকুর দিকে চেয়েছিল। বিড়বিড় করে বলেছিল—আঁধারের ডর খায়, অন্ধকারে থাকতে লারত তারেই বিধাতা বাঁয়েন করে ছাড়ল? এখন মলে বাঁয়েন শান্তি পায়, কিন্ত বাঁয়েন নিজে না মরে তো কেউ ওর জান নিতে লারবে, জানু বাপু?

খুব দুঃখু না পেলে মলিন্দর এত কথা বলে না।

—কে মানুষকে বাঁয়েন করে বাবা?

—বিধাতা।

মলিন্দর ভাল করে চেয়ে দেখেছিল ভগীরথের আশ-পাশ দিয়ে দুপুরের রোদে কোন ছায়া চলেছে কিনা? বায়েনরা ঠিক হাট-বাজারের ফুল, গোলাপ, মাখনবালার মত, নানা ছলাকলা জানে। ধর কোন ছোট ছেলেকে বাঁয়েন নিতে চায়, সে যখন হেঁটে যাবে চারদিক রোদে পুড়লেও তার মুখে ঠিক ছায়া থাকবে। অদৃশ্য হয়ে বাঁয়েন আঁচলের ছায়া ধরে ছেলেকে আড়াল করে নিয়ে যবে। ছেলেটা মরে গেলে কেউ যদি দোষ দেয় তাহলে বাঁয়েন মুচকি হেসে বলবে—তা কি জানব বল? খর রোদ দেখে এট্টু ছেঁয়া দিতে গেলাম তা তোমার ঠোকাটা যেনু ননীর পুতুল। এট্টু তাতে মরে গেল?

ভগীরথের আশেপাশে কোন ময়লা গন্ধ ওঠা লালচে আঁচলের ছায়া দেখতে না পেয়ে মলিন্দর যেন নিশ্চিন্ত হয়েছিল। বলেছিল—তোর কি ভয় বাপ? তোর কুনো অনিষ্ট উ করবে না।

তবু ভগীরথ ভরসা পায়নি।

শুধু ঐদিকে মন চলে গিয়েছিল ওর। ধানক্ষেত যাক, গরু নিয়ে যাক, কেবল মনে হত, রেললাইন ধরে ছুটে চলে যায় ওখানে। গিয়ে দেখে আসে একলা থেকে থেকে বাঁয়েন কি রকম ভয় পায়। দেখে আসে বাঁয়েন মাথায় তেল মেখে চুলের জল কেমন করে চৈত্রী বাতাসে শুকোয়।

যেতে পারত না ভগীরথ, ভয় পেত।

মনে হত যদি আর না ফিরতে পারে কোনদিন? যদি ওখানেই ভগীরথকে একটা গাছ করে, একটা পাথর করে রেখে দেয় বাঁয়েন?

কয়েকদিন ভগীরথ শুধু চেয়ে দেখত।

দেখত ছাতিমগাছ আর চালাঘরের মাঝামাঝি আকাশটা যেন কার কপালের মতন। সেই কপালে এক ফোঁটা সিন্দূর-টিপের মত লাল নেকড়ার নিশানটা কখনো স্থির হয়ে থাকে, কখনো দোলে। মনে হত ছুটে চলে যায় একবার, আর পাছে ছুটে যায় সেই ভয়ে উলটোদিকে ছুটে ভগীরথ বাড়ি চলে আসত।

আশ্চর্য, বাঁয়ানের ছেলে বলে ওকে কেউ হেনস্তা করত না, বরঞ্চ বেশি খাতির করত।  বাঁয়েনের ছেলেকে খাতির করলে বাঁয়েন সে কথা জানতে পারে। সে ভাল খাতির দেখায়।

তার কচিকাঁচা ভাল থাকে। যে দূর ছাই করে তার ঘরে শুধু মরতেই থাকে ছেলেপুলে।

ভগীরথের এখানকার মা-ও কিছু বলেনি। সতীনের ছেলের ওপর ওর অনুরাগ আছে, না বিরাগ, দ্বেষ না ভালবাসা, তার কোনটাই ও কোনদিন প্রকাশ করেনি। তার প্রধান কারণ ওর নিজের ছেলে নেই। গৈরবী আর সৈরভী দুটো মাত্র মেয়ে। পুত্রসন্তান না থাকলে

স্বামীর ওপর জোর থাকে না। তাছাড়া এখানকার মা-র ওপরের ঠোঁট ফাঁক, মাড়ি বেরকরা। বাড়ি থেকে বেরোতে চায় না বেশি। বলে — কুন মুখ দেখাতে যাব সি বল দেখি? মুখ মোটে বুজে না যি। না হাসলেও মনে হয় মাগী হাসতেছে। দেখ গঙ্গাপুত্র, মলে পরে মুখখানা গামছা দিয়ে ঢেকে দিও — জানলু? লইনে মানুষ বলবে দাঁতী ডোমনী চলল।

 

যশি শুধু কাজ করে, ঘর নিকোয়, ভাত রাঁধে, কাঠ কুড়োয়, গোবর চাপড়া দেয়, শুয়োর তাড়ায়, মেয়েদের মাথার উকুন বাছে, ভগীরথকে ‘বাপ’ বলে কথা বলে, খেতে এস বাপ, লাতে যাও বাপ, যেন ওদের মধ্যে কুটুমের সম্পর্ক, বাঁয়েনের ছেলেকে যত্ন-আত্তি না করলে বাঁয়েন তার মেয়ে দুটাকে বাণ মেরে দিতে পরে। যশি জানে। আরো জানে, একদিন ভগীরথের ভাতের ওপরই তাকে নির্ভর করতে হবে।

মাঝে মাঝে মাড়ি বের করেও সভয়ে গালে হাত দিয়ে বসে থাকে, কে জানে ভর দুপুরে বাঁয়েন ওর মেয়ে দুটার কথা মনে করে মাটি দিয়ে পুতল গড়ছে কিনা, বাণ ফুঁড়ছে কিনা। তখন যশিকে যত কুচ্ছিত তার চেয়েও কুচ্ছিত দেখায়। অনেক দুঃখে মলিন্দর ডোমপাড়ার সবচেয়ে কুৎসিত মেয়েটিকে সাঙা করেছে। কয়েকটা গাঁয়ের ডোমপাড়ার সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটি বাঁয়েন হয়ে যাবার পর মলিন্দর আর রূপসী মেয়ে দেখতে পারে না।

মলিন্দর বউকে নাকি খুব ভালবাসত।

হয়তো সেই ভালবাসার কথা মনে করেই একদিন মলিন্দর ভগীরথকে চণ্ডী বাঁয়েনের কথা বলল! দুজনে রেললাইনের পাশ দিয়ে হাঁটছিল। মলিন্দরের হাতে মাংসের পোঁটলা, এই এক আচর্য দুর্বলতা মলিন্দরের, নিজের হাতে পালা শুয়োরগুলোকে ও কাটতে পারে না। শুয়োর পোষে, বড় করে, তারপর কাটবার দরকার হলে গোটা শুয়োরটা কাউকে বেচে দেয়। যে কেনে সে মলিন্দরকে একটু মাংস দেয়।

—এট্টু গাছের ছেঁয়ায় বসি?

যন তের বছরর ছেলের অনুমতি নিল মলিন্দর, বটগাছের গুঁড়িতে হেলান দিয়ে বসল। ভগীরথ যিগ্যেস করল—এখান হতে ডাকাতরা যায়, না কি বাপ?

ভগীরথ এখন বুনিয়াদী ইস্কুলে যায়। এই সরকারী স্কুলের দেয়ালে ওদের মাস্টারমশই এক সময়ে দেয়াল-পত্রিকা লিখিয়েছিলেন ছেলেদের দিয়ে। নিজে হরফগুলি লিখে এনেছিলেন। ভগীরথ সেগুলি কালি দিয়ে ভরেছিল। সেই লেখাটি পড়ে ভগীরথ জানতে পেরেছিল উনিশশো পঞ্চান্নর অচ্চুৎ আইনের পর থেকে ওরা কেউ আর অচ্চুৎ নয়।

জেনেছিল ভারতীয় সংবিধান বলে একটা জিনিস আছে, তার প্রথমেই একটা মৌলিক অধিকারের কথা স্পষ্ট করে লেখা আছে, তারা নাকি সবাই সমান।

দেয়াল-পাত্রিকাটা এখনো টাঙানো আছে। কিন্তু ভগীরথরা জানে সহপাঠীরা বা মাস্টাররা ওদের একটু দূরে বসাই পছন্দ করেন। এই ইস্কুলে অন্য জাতের ছেলেরা নেহাত গরীব বা অপারগ না হলে আসে না। আসবে কেন? এখন চারদিকে ইস্কুল।

যা হোক, ভগীরথ এখন একটু অন্য রকম ভাষায় কথা বলে। মলিন্দর ওর কথা শুনতে ভালবাসে ও ভগীরথের পাশে প্রায়ই ওর নিজেকে এক অযোগ্য বাপ বলে মনে হয়।

ভগীরথ ডাকাতদের কথা জিগ্যেস করল। এখন এই সোনাডাঙা পলাশী, ধুবুলিয়া জায়গায় জায়গায় সন্ধ্যার ট্রেনে ডাকাতি খুব বেড়ে গিয়েছে। ডাকাতি সবাই করে বলতে গেলে। ভদ্রলোক গরীব ছাত্র কলোনির বাসিন্দে পাকা বাড়ির মালিক—নানা রকম পরিচয় তারা বাইরে দেয়, কামরায় ওঠে। তারপর ঠিক সময়ে চেন টেনে ট্রেন থামিয়ে দেয় অন্ধকার মাঠে। অন্ধকার থেকে সেথোরা আসে। তারপর সবাই মিলে যা পারে নিয়ে থুয়ে মেরে ধরে চম্পট দেয়। বিশেষ করে এই বটগাছটা সন্ধ্যের পর বড় ভয়ের হয়ে উঠেছে।

তাই ভগীরথ ডাকাতের কথা জিগ্যেস করল। মলিন্দর কিন্তু সে কথা বিশেয গায়ে মাখল না। শূন্য মাঠের দিকে চেয়ে চেয়ে আকাশে ও মাঠে কি যেন খুঁজল, তারপর বলল—আমি আগে নিমায়া-নিদায় ছিলু জানলু বাপ! তোর মা ছিল তুষু তুষু ফ্যানেকে কানত। বিধেতার বিচার!

যেন ভগবানই একদিন ডোমপাড়ায় এসে পাশা উল্টে দিলেন। চণ্ডী হয়ে গেল বাঁয়েন, নিষ্ঠুর নির্দয় শিশুহন্তা। আর মলিন্দর হয়ে গেল তুষুপ্রাণ। হতেই হবে।

একজন যদি অমানুষ হয়, মানুষের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে অলৌকিক জগতের অদৃশ্য দরজা খুলে ঢুকে যায়, তাহলে আরেকজনকে মানুষের মত মানুয হতেই হবে।

ভগীরথ এই সময়ে বুঝতে পারল, ওর বাবা ওকে কিছু বলেতে চায়। ভগীরথ একটু আশ্চর্য হল। সেই একদিন বাবা বাঁয়েনের সঙ্গে কথা বলেছিল আর বলেনি। আজ আবার বাঁয়েনের কথা কেন?

মলিন্দর ভগীরথের হাত চেপে ধরল। বলল—ভয় কি? সবাই জানে আর তুই তোর মায়ের বিত্তান্ত জানবি না?

ওরা গঙ্গাপুত্র। ওরা ডোম, মলিন্দর বাঁশ বইত, কাঠ কাটত আর চণ্ডীর ছিল কাঁচা ভাগাড়ের কাজ।

ওর বংশগত উত্তরাধিকার। এই গ্রামের উত্তরে বিলের ধারে বটগাছতলে কাঁচা ভাগাড়। পাঁচ বছরের নিচে শিশু মরলে এখন পোড়াতে হয়, তখন সবাই পুঁতে দিত। ঐ ভাগাড়ে চণ্ডীর বাবা খন্তা দিয়ে গর্ত খুঁড়ত, কাঁটা গাছ দিয়ে গর্ত ঢেকে রাখত, শেয়াল তাড়াত। হই হই হইয়া…. ওর প্রমত্ত কণ্ঠের ভয়ঙ্কর ডাক রাতে বিরেতে হরদম শোনা যেত।

শুধু মদ আর গাঁজা খেত চণ্ডীর বাবা। আর শনিবার একটা ডালা হাতে গায়েঁ বেরুত। বলত—আমি আপোনাদের সেবক গো, আমি গঙ্গাপুত্ত, আমার ডালাটা দিয়ে দেন গো।

সবাই ওকে ভয় পেত। ওর চোখ থেকে ছোট ছেলেমেয়েকে সরিয়ে রাখত। একটাও কথা না বলে ওকে ভিক্ষা দিয়ে চলে যেত।

 

একদিন একটা ফর্সা মেয়ে, কটা চোখ, লালচে চুল, এসে দাঁড়িয়েছিল। বলেছিল—আমি চণ্ডী, অমুক গঙ্গাপুত্তের বিটি, বাপ মরে গেল। বাপের ডালা এখন মোকে দেন।

—বাপের কাজ তুই করবি?

—করব।

—তোকে ভয় লাগে না।

—মোর ভয়ডর নাই।

এই ভয়ডরের কথাটা চণ্ডী বুঝতে পারত না। ছেলে মেয়ে মরলে মা বাপ কাঁদে, সে শোকের অর্থ বোঝা যায়। কিন্তু মরাকে কি কেউ বাড়িতে ধরে রাখে, না রাখতে পারে? তার সৎকার করাটা তো চণ্ডীর কাজ; অন্যত্র জীবিকা। এতে ভয়ের কি আছে, নিষ্ঠুরতাই বা কি? যদি থাকে সেও তো বিধাতার নিয়ম? সে নিয়ম তো গঙ্গাপুত্ররা তৈরি করেনি? তবে তাদের এত ঘেন্না করে কেন মানুষ, কেন ভয় পায়?

এই চণ্ডীকে মলিন্দর বিয়ে করেছিল। তখনো মলিন্দর সরকারবাবুর সঙ্গে হাড় বেচার কাজ করত। গো-ভাগাড়ের হাড় থেকে সার হয়, সে হাড়েরও দাম আছে। হাতে পয়সা ছিল মলিন্দরের, বুকে সাহস, রাতে মাঠ দিয়ে চেঁচাতে চেঁচাতে ও ফিরত—কিসিকো নেই ডরতা, হাম আগুন খাতা! কিসিকো নেই ডরতা!

সন্ধ্যেবেলা লণ্ঠন হাতে একা চণ্ডীকে বটগাছতলায় ঘুরতে দেখে ও বলেছিল—এই, তু আঁধারে ডরিস না?

না। হাম আগুন খাতা জানিস। চণ্ডীর হাসি দেখে মলিন্দর খুব অবাক হয়েছিল। সেই বৈশাখেই ও চণ্ডীকে বিয়ে করে। আরেক বৈশাখে চণ্ডীর কোলে ভগীরথ এসেছিল।

চণ্ডী ভগীরথকে কোলে নিয়ে একদিন কাঁদতে কাঁদতে ফিরে এসেছিল, বলেছিল

—মোকে ওরা ঢেলা মেরেছিল গঙ্গাপুত্ত। বলল আমার নজর মন্দ।

—কে ঢেলা মারল?

—লাও। তাকে কি তুমি মারবা?

—ঢেলা মারল কেন?

মলিন্দর উঠোনে বেড়া পুঁততে পুঁততে প্রায় নাচতে শুরু করেছিল চটকা রাগে। আমার বউকে ঢেলা মারে কে? কার এত আস্পর্ধা? গালাগালি দিতে শুরু করেছিল মলিন্দর।

চণ্ডী ওর দিকে কিছুক্ষণ নির্নিমেষে চেয়ে বসে ছিল। তারপর বলেছিল—মোর মন চায় না গঙ্গাপুত্ত, খন্তা ধরতে, মন চায় না কিন্তুক বিধাতা ই কাজ মোকে দিয়ে করাবে, তা আমি কি করব বুল?

চণ্ডী আশ্চর্য হয়ে ঘাড় নেড়েহিল, নিজের হাত পা দেখেছিল। ওর বংশে ভাই-কাকা-দাদা থাকলে বংশের কাজ করত, কিন্তু কেউ নেই। ওরা সেই আদিম যুগের শ্মশানের দাস, যখন হারিশ্চন্দ্র চাঁড়াল হয়েছিলেন তখন চণ্ডীদের পূর্বপুরুষ ওকে কাজ শিখিয়েছিল। আবার যখন হরিশ্চন্দ্র রাজা হলেন তখন সসাগরা পৃথিবী ওঁর, দান করতে লাগলেন ভারে ভারে।

—মোদের কি বেবস্থা?

সেই আদিম গঙ্গাপুত্র রাজসভা ফাটিয়ে জিগ্যেস করেছিল। ওদের কানের ভেতরে রাবণেব চিতা শোঁ শোঁ করে, তাই ওরা প্রতিটি কথাই চেঁচিয়ে বলে, ধীরকণ্ঠ শুনতে পায় না।

—কিসের বেবস্থা?

—বামুন গাই-বলদ পাবে, সন্নেসীর নিত্য ভিক্ষা, মোদের কি বেবস্থা? মোদের কি দিলে?

—পৃথিবীর সকল শ্মশান দিলাম।

—কি দিলে?

—সসাগরা পৃথিবীর সকল শ্মশান তোমাদের দিলাম।

—দিলে?

—দিলাম, দিলাম, দিলাম।

তখন সেই আদি গঙ্গাপুত্র দুই হাত তুলে ভীষণ নেচেছিল। উল্লাসে বলেছিল—হা, মোরা সকল শ্মশান পেয়েছি গো, সকল শ্মশান পেয়েছি। এ পিথিমীর সকল শ্মশান মোদের।

সেই মানুষটির বংশের একজন হয়ে চণ্ডী কেমন করে জাতকর্মে লাথি মারত? মারলে যে সে দেবরোষে পড়ত না তার ঠিক কি? অথচ, চণ্ডীর ভীষণ ভয় করত ইদানীং, খন্তা দিয়ে গর্ত খুঁড়ে ও মুখ ফিরিয়ে নিত। গর্তে কাঁটা ঝোপ চাপা দিলেও ওর ভয় যেত না। মনে হত যে-কোন সময়ে মুখে আগুন নিয়ে একটা শেয়াল বটগাছের মত বড় বড় থাবা দিয়ে মাটি খুঁড়তে শুরু করবে।

ভগমান—ভগমান—ভগমান… চণ্ডী গুনগুন করে কাঁদত। একছুটে চলে আসত বাড়ি। ঘরে বাতে জ্বেলে বসে থাকত আর ভগীরথের দিক চেয়ে ঠাকুরকে ডাকত। এই সময়ে চণ্ডী সব সময়ে কামনা করত গ্রামের প্রতিটি শিশু যেন অখণ্ড পরমায়ু নিয়ে বেঁচে জীয়ে থাকে কেন না আগে তার যে দুর্বলতা ছিল না এখন সেই দুর্বলতা হয়েছে।

ভগীরথের কথা মনে করে ওর প্রতিটি শিশুর জন্য কষ্ট হয়, নিদারুণ কষ্ট হয়। যদি বটতলায় বেশি সময় থাকতে হয়, ওর বুকের দুধ টনটন করে। মুখ নিচু করেও গর্ত করে ও বাপকে মনে মনে দোষ দেয়। মেয়েকে কেন সে এই নিষ্ঠুর কাজে ব্রতী করে গেল?

—আপনারা অন্য মানুষ দেখে লাও, মোর মন উঠে না।

চণ্ডী একথাও বলেছিল একদিন। কিন্তু ওর কথা কেউ কানে নেয়নি। মলিন্দর ওর কথা বিশেয বুঝত না, কেন না অন্য মানুষ যা দেখে ভয় পায়, ঘৃণা করে, সেই অশুচি শবদেহ, হাড়, চামড়া নিয়েই ওর জীবিকা। চণ্ডীর কথাবার্তা শুনে ও বলত— ধুস্ যত মিছা ডর!

চণ্ডী বেশি কাঁদলে বলত—তো-মানীর বংশে তো কেউ লাই, কে আসবে শুনি?

এই সময়েই সেই নিদারুন ঘটনাটা ঘটেছিল। গ্রামে বেড়াতে এসেছিল মলিন্দরের এক জ্ঞাতি বোন। তার মেয়েটা ক’দিনেই চণ্ডীর ন্যাওটা হয়েছিল। গ্রামে সেবার খুব বসন্ত হচ্ছে। চণ্ডীরা কোনদিনই টিক নেয় না, শীতলাতলায় যায়। ননদের মেয়েটিকে কোলে নিয়েছিল চণ্ডী। ননদকে নিয়ে পূজা দিয়ে এসেছিল শীতলাতলায়। রেললাইনের ধারে বিহারী কুলীরা যখন কাজ করত ওরা একটি শীতলাথান বসিয়ে গেছে। সেখানে পাকাপাকিভাবে বিহারী পুরোহিত থাকেন একজন।

কয়েকদিন পরে সেই শিশুটিই, কি আশ্চর্য, মায়ের দয়ায় মারা গেল। চণ্ডীর বাড়িতে নয়, অন্যত্র, কিন্তু মেয়ের ম্য-বাবা-পিশী-কাকা সবাই বলতে লাগল চণ্ডীই ওকে নিয়েছে।

—আমি?

—হাঁ গো তুম।

—আমি লয় গো আমি লয়।

চণ্ডী ওদের সমাজের মেয়েপুরুষগুলির দিকে চেয়ে সকাতরে বলেছিল।

—হ্যাঁ তুমি।

—কখুনো নয়।

চণ্ডী সপের মত ফুঁসে উঠেছিল। বলেছিল—আমা হতে কারো মন্দ হবার লয়। জান আমি কার বংশ?

ভীরু কুসংস্কারে অন্ধ মানুষগুলি ভীত চোখ নামিয়ে ফিসফিস করে বলেছিল— টুকনিকে

মাটি দিবার কলে তোমার বুক হতে দুধ মাটিতে পড়ল কেন?

—হা রে বোকার সমাজ।

চণ্ডী কিছুক্ষণ ঘৃণা ও বিস্ময়ে সকলের দিকে তাকিয়েছিল। তারপর বলেছিল—ঠিক আছে। পিত্তিপুরুষের শাপ মোকে লাগুক, ডর করি না। উকাজ ছেড়ে দিলাম আজ হতে।

—কাজ ছেড়ে দিবি?

—দিব। যা, যেয়ে বীরপুরুষ সব, পাওরা দেগা। মোর মন ই কাজে বহুদিন লাই, গঙ্গাপুত্ত গোরমেণ্টের ঘরে সরকারী কাজ পাবে, ই কাজে আমি মরতে যাব কেন?

সমাজের সকলকে বোবা করে দিয়ে চণ্ডী ঘরে চলে এসেছিল। মলিন্দরকে বলেছিল—কাজ যিখানে সিথা ঘর মেলে না? সিথা চলে যাব। উরা মোকে কি বলে তা জান?

মলিন্দর চণ্ডীকে ঠাট্টা করে অবস্থাটা সহজ করে নেবার জন্য স্বভাবসিদ্ধভাবে চেঁচিয়ে হেসে বলেছিল—কি বুলে উরা?  তু বাঁয়েন হছিস?

বলেই মলিন্দর আর্তনাদ চেপে নিয়েছিল। কি বলল! মলিন্দর আর্তনাদ চেপে নিয়েছিল। কি বলল! মলিন্দর একি ভয়ানক কথা উচ্চারণ করল?

চণ্ডী কাঁপতে শুরু করেছিল বাঁশের খুঁটি ধরে। উত্তেজনায়, দুঃখে, রাগে, চতুর্গুণ, চেঁচিয়ে ও বলেছিল—ঘরে বনশধর রইতে কেউ উ বাক্য মুখে ল্যায়? আমি বাঁয়েন? আমি ঘরের ছেলে ফেলে, মারা ছেলেকে দুধ দেই, মরা ছেলে লিয়ে সোহাগ করি? আমি বাঁয়েন?

—চুবো!

মলিন্দর ওকে ধমক দিয়ে উঠেছিল, কেন না তখন ভর দুপুর। এ সময়ে মানুষের কুকথা-দুঃসংবাদ বাতাসের মুখে ধায়। এ সময়ে মাথায় তেল, ভাত না থাকলে মনে ভয়ঙ্কর হিংসে-রাগ-আক্রোশ সহজে ধুঁইয়ে ওঠে। মলিন্দর ওর সমাজের লোকের স্বভাব চরিত্র

জানত।

—আমি বাঁয়েন লই গো আমি বাঁয়েন লই!

চণ্ডীর কান্না চিল ছোঁ মেরে বাতাসকে পৌঁছে দিয়েছিল। বাতাস নিমেষে সে কান্নার খবর ঈশান থেকে অগ্নি আকাশের সবকটা কোণে ছড়িয়ে দিয়েছিল।

 

ঐ একবার কেঁদেই চুপ করে গিয়েছিল চণ্ডী, আর কোন কথা বলেনি, মলিন্দরকে নাকি বলেছিল—মোরা আঁধারে চলে যাই কুথা।

—কুথা যাবি?

—পালাবা?

—কুথা?

—জানি না।

চণ্ডী মলিন্দরের কাছে এসে ভগীরথকে কোলে নিয়ে বসেছিল, বলেছিল—কাছে গুইড়ে এসো, বুকে মাথা রাখি।

বলেছিল—মোক বড় ডর লাগছে। পিত্তিপুরুযের কাজ করব না বলে এলাম থিকে ডর লাগছে। এতাদিন তো ডরি লাই? আজ অ্যামন ডর লাগছে, তুমাকে আর দেখব না, ভগীরথকে আর দেখতে দিবে না, ভগমান?

এই কথাটি বলে মলিন্দর চোখ মুছল। বলল—এখুন মনে ল্যায় বাপ, সিদিন ভগমান উর মুখ দিয়ে কথাটা বুলিয়েছিল, জানলু?

—তারপর?

তারপর চণ্ডী কয়েকদিন আচ্ছন্ন হয়ে বসে থাকছিল। অল্প কাজকর্ম করে আর ভগীরথকে কোলে নিয়ে বসে থাকে, গান গায়। ঘরে খুব ধুনো জ্বালে পিদীম জ্বালে আর মাঝে মাঝে কান পেতে শোনে।

একটানা দুটো মাস খুব ভাল কেটেছিল। আর চণ্ডীকে ডাকতে আসেনি কেউ আর দরকারও হয়নি। খুব শান্তিতে ছিল ওরা সেই কটা দিন। চণ্ডীও খুব শান্ত হয়ে গিয়েছিল, বলেছিল—ই কাঁচাকচিদের অন্য বেবস্থা হতে হয়। ই বেবস্থা খুব মন্দ।

—হবে, বেবস্থা হবে। দিকে দিকে হচ্ছে।

চণ্ডী বলত—ভাল করলাম কী মন্দ করলাম কে বুলে দিবে? দেখ, মোক মন বুলে নিশি য্যাখন শুনলাম ত্যাখন জানি মোকে বাপ হাঁকুর দেয়।

—তুই শুনলি

—মন বুলে যেমন হই-হই-হইয়া ডাক উঠে, বাপ কি শিয়াল তাড়ায় নাকি?

—চুপ যা চণ্ডী।

মলিন্দর ভয় পেত। মাঝে মাঝে কি তারই মনে হত না চণ্ডী বাঁয়েন হয়ে যাচ্ছে, চণ্ডী রাতে চমকে উঠে বটতলায় কাদের কান্না শোনে? হয়তো সমাজ যা বলছে সে কথাই সতি। মনে হত এর চেয়ে দেশ-গ্রাম ছেড়ে শহরে যাওয়া অনেক ভাল।

সমাজও চণ্ডীকে ভোলেনি। চণ্ডীর ওপর চোখ রাখছিল। চণ্ডী তা বুঝতে পারত না এই যা!  সমাজ যখন চায় তখন লক্ষ্যে চোখ রাখে, যখন চায় না তখন অলক্ষ্যে চোখ রাখে। সমাজের অসাধ্য কাজ নেই।

তাই একদিন ঝড় বাদলের রাতে, মলিন্দর যখন মদ খেয়ে নেশায় টুপটুপে হয়ে ঘুমোচ্ছে, ওর উঠোনটা মানুষে মানুষে ভরে গিয়েছিল। ওকে ডেকে তুলেছিল কেতন, চণ্ডীর কি রকম মেসো। বলেছিল—তোর বউ বাঁয়েন কিনা দেখে যা!

ঘুম ভাঙা চোখে মলিন্দর বোকার মত ওদের দিকে চেয়ে বসেছিল কিছুক্ষণ।

—দেখে যা শালা দেখে যা, ঘরে বাঁয়েন পুষ্যে মোদের ছেলেগুলোকে সারা করাছিস ত্যাতদিন ধরে!

মলিন্দর দেখতে গিয়েছিল।

দেখেছিল—বটতলায় মশাল জ্বলছে, লণ্ঠন। সমাজের বেটাছেলেরা ভিড় করে চাক বেঁধে আছে, কেউ কথা বলছে না।

—চণ্ডী রে।

মলিন্দরের আর্ত চিৎকারটা কে শূন্যেই ছূরি দিয়ে কেটে ফেলেছিল। সবাই স্তব্ধ, সবাই দেখছে এরা কি করে।

চণ্ডী!

চণ্ডী দাঁড়িয়ে ছিল। হাতে একটা দা, পাশে লণ্ঠন, এক পাঁজা কাঁটা গাছেল ডাল পাশে উঁচু করা।

—ডাল ঝোপ এনে আমি গর্ত ঢাকছিলাম গো।

—কেন, তু উঠে এলি কেন?

—শিয়ালগুলো চেঁচাতে যেয়ে য্যামন থেমে গেল ত্যামন মোক মন বুলল—উরা গর্তে যেয়ে খাবলাচ্ছে, মরা তুলবে।

—তু বাঁয়েন!

গ্রামের লোকেরা মন্ত্রধ্বনির মত বলল, সভয়ে।

—ক্যাও পাওরা দেয় না থি।

—তু বাঁয়েন!

—মোক বংশকাজ। উরা কি জানবে?

—তু বাঁয়েন!

—আমি বাঁয়েন লই গো, মোক বুকে কচি ছেলা, মোক বুক দুধে ফেটে যায়। বাঁয়েন আমি লই! গঙ্গাপুত তুমি বুল না গো, তুমি তো সব জান?

লণ্ঠনের আলোয়, বৃষ্টিতে লেপটানো বুক আঁচলটা দেখছিল মলিন্দর মন্ত্রমুগ্ধের মত। বুকের ভেতর ফেটে যাচ্ছিল মলিন্দরের। কে বলছিল ও মলিন্দর সাপ দেখলে তু কাছে যাস, আগুনে যেয়ে হাত ঢুকাস, এখন যাস না তু, তুদের কত ভালবাসার বিয়ে, ভালবাসার ঘর। তু গেলে মহা সর্বনাশ হয়ে যাবে।

মলিন্দর কাছে গিয়েছিল, রক্ত চোখ দিয়ে চণ্ডীকে ভাল করে দেখতে দেখতে চেঁচিয়ে উঠেছিল জন্তুর মত—আরি ই-ই-ইহার! তু বাঁয়েন! বটতলায় এসে কারে দুধ দিচ্ছিলি রে? আরি ই-ই-ই-ই-গো।

—গঙ্গাপুত্ত…হায় গো।

চণ্ডীর ভীষণ ও বুকফাটা কান্না মাটির মৃত শিশুদের, চণ্ডীর বাবার অশান্ত আত্মাকে, ওর আদিমপুরুষ সেই আদিম ডোমকে অব্দি ভয় পাইয়ে দিয়েছিল। মানুষের জগৎ থেকে অমানুষটি অতিলৌকিক লোকে নির্বাসনের সময় মানুষের আত্মা বুঝি অমন করেই কাঁদে। অমনি আকাশ-মাটি-পাতাল কাঁপিয়ে।

কিন্তু মলিন্দর ছুটে ঘরে এসে ওর শ্বশুরের শনিপুজোর ঢোলটা নিয়ে আবার বটতলা চলে গিয়েছিল। ঢোলে কাঠি দিয়ে গ্রাম কাঁপিয়ে চেঁচিয়ে উঠেছিল—আমি মলিন্দর গঙ্গাপুত্ত শোহরৎ দেই। আমার বউ বাঁয়েন হয়্যাছে গো বাঁয়েন হয়্যাছে!

—তারপর? ভগীরথ জানতে চাইল।

—তারপর সমাজ উকে বেলতলা লিয়ে গেল বাপ। জানলু, একেল হতে সি য্যামন ডরাও, সি একেবারে একেল হয়ে গেল। উই, উহ্ শোন বাঁয়েন গান গায়।

অনেক দূর থেকে টিনের কৌটোর শব্দ আর এক আশ্চর্য গানের সুর ভেসে এল। সে গানে শব্দ নেই। কথা নেই বলে মনে হয়, কিন্তু কথা ধীরে ধীরে শোনা গেল।

ঘুম এস ঘুম এস রে সোনা, ঘুম এস রে যাদু…

গানটা ভগীরথ জানে, গানটা গেয়ে ওর এখনকার মা গৈরবী-সৈরভীকে ঘুম পাড়ায়।

—চল, ঘরকে যাই বাপ!

মলিন্দর অভিভূত ভগীরথকে নিয়ে ঘরে ফিরে চলল। ভগীরথ বুঝতে পারল—বাঁয়েনের গানটা ওর ভেতরে ঢুকে গেল, ওর রক্তে মিলে গেল, একটা দুর্বোধ্য বেদনার মত ওর কানের ভেতর বাজতে থাকল!

তার কয়েকদিন পর ভগীরথ দুপুরবেলা একলা চলে এল মজা বিলের পাশে। অনেক দূর থেকে ও টিনের শব্দ শুনেছে, শুনে ছুটে ছুটে এসেছে।

জলে বাঁয়েনের ছায়া। বাঁয়েন ওকে দেখছে না। চোখ নিচু করে জল ভরছে মাটির কলসীতে।

—তোমার আর কাপড় নাই?

বাঁয়েন চুপ; বাঁয়েন মুখ ফিরিয়ে আছে।

—তুমি ভাল কাপড় পরবে?

—গঙ্গাপুত্তের বেটা ঘরে যাক।

—আমি, আমি এখন ইস্কুলে পড়ি। আমি ভাল ছেলে।

—মোক সঙ্গে কথা বুলে নারে। আমি বাঁয়েন।

—আমি ছেঁয়াকে বলছি।

—মোক ছেঁয়াতে পাপ আছে ইকথা গঙ্গাপুত্তের বেটা জানে না?

—আমার ভয় নাই।

—ঘরে যাক, এখন ত্যতম্পর তাত। ইকালে দুধের ছেলা বাইরে ঘুরে না।

—তুমি… তুমি একলা থাকতে ভয় পাও?

—একলা? না-রে মোক কুন ভয় নাই। একলা থাকতে বাঁয়েন ডরে?

—তবে তুমি কাঁদ কেন?

—কে বুলে?

—আমি শুনেছি।

—গঙ্গাপুত্তের বেটা শুনেছে! আমি কাঁদি?

জলে লাল ছায়াটা কাঁপছে। বাঁয়েনের চোখে জল, বাঁয়েন চোখ মুছল, বলল—ঘরে থেয়ে গঙ্গাপুত্তের বেটা য্যান ফিরে কাড়ে, বাঁয়েনের ধারে কুনদিন আসবে না, লয় তো… লয় তো আমি গঙ্গাপুত্তকে বুলে দিব।

ভগীরথ দেখতে পেল আল ধরে বাঁয়েন চলে যাচ্ছে। চুলের গোছা উড়ে উড়ে পড়ছে, কাপড়ের আঁচল লাল। অনেকক্ষণ বসে রইল ভগীরথ, বিলের জল স্থির হওয়া অব্দি বসে রইল। কিন্তু আর কেউ গান গাইল না—ঘুম এস ঘুম এস সোনা, ঘুম এস রে যাদু।

ঘরে গিয়ে বাঁয়েনও অনেকক্ষণ বসে রইল। বসে বসে আকাশ-পাতাল ভাবতে থাকল। ভেবে ভেবে শেষে উঠে অনেকক্ষণ বাদে একটা ভাঙা আরসি টেনে বের করল।

—চ্যাহারার কছু লাই।

অস্ফুটে বলল বাঁয়েন। চুলগুলো একবার আঁচড়াতে চেষ্টা করল। ভীষণ জোট।

—টোকাটা কাপড়ের কথা বলল কেন? উর তো কিছু মনে থাকার কথা লয়। ফর্সা কাপড়, ভাল চ্যাহারার কথা? ভুরু কুঁচকে অনেকক্ষণ ধরে ভাবল বাঁয়েন। অনেকদিনই ও মানুষের মত গুছিয়ে কিছু ভাবতে পারে না। ভাববার কিছু নেইও ওর। শুধু গাছের পাতার শব্দ, বাতাসের ডাক, রেলের আওয়াজ নিয়ে কত কথা আর ভাবা যায়।

কিন্তু আজ ওর মনে হল টোকাটার সর্বনাশ হয়ে যাবে। হঠাৎ মানুষের বউয়ের মত অবিবেচক মলিন্দরের ওপর রাগ হল। টোকাটাকে সামলে রাখবা কার কাজ?  বাঁয়েনের নজর থেকে আড়াল করা কার দায়িত্ব?

উঠে, লন্ঠন জ্বেলে ও হনহন করে রেললাইন ধরে ধরে এগোতে লাগল। লাইন ধরে এগিয়ে গেলে ঐ দূরে গুমটি ঘর, লেভেল ক্রসিং। ওখান দিয়ে আসে মলিন্দর। এসে আলপথ ধরে ঘরে যায়। লাইন ধরে যেতে যেতে ও লোকগুলোকে দেধতে পেল। লোকগুলো লাইন থেকে কি সরাচ্ছে।

না, লাইনের উপর বাঁশ গাদা করছে এনে এনে।

আজ বুধবার রাতের ফাইভ-আপ লালগোলায় মেলব্যাগ আসবে। অনেক টাকা। অনেকদিন ধরে ওরা এই জন্যে তৈরি হচ্ছে।

—তোরা কে?

বাঁয়েন লন্ঠন তুলল, নিজের মুখের পাশে দোলাল। লোকগুলো মুখ তুলছে। ভয়ে সাদা, চোখ বিস্ফারিত। ওর সমাজের মানুষদের এত ভয় পেতে বাঁয়েন কোনদিন দেখেনি।

—বাঁয়েন?

তুরা বাঁশ-গাড়ি দিচ্ছিস, তুরা গাড়ি মারবি? আবার পালিয়ে যাচ্ছিস, হা মোক ডরে? ই বাঁশ ফেলা আগে, সর্বনাশ হবে।

—ওরা বাঁশ নামাতে পারে না লাইন থেকে, সর্বনাশ ঠেকাতে পারে না। সমাজ চিরকাল এই করে, সমাজের এই কাজ। ওদেরি একজন একদিন ঢোল শোহরৎ দিয়ে ওকে বাঁয়েন করে দিয়েছিল। বাতাসে বৃষ্টির ঝাপট, চণ্ডী লণ্ঠনটা হাতে নিল। অসহায়, কি অসহায় চণ্ডী। ও যদি বাঁয়েন হয় তো ওর পোষা অন্ধকারের দানবগুলো এসে ঐ ট্রেনটাকে থামিয়ে দিচ্ছে না কেন? সমাজ তো এই পারে। শুধু এইটুকু। কি অসহায় চণ্ডী, চণ্ডী এখন কি করে?

লন্ঠন হাতে চণ্ডী লাইন ধরে ছুটতে লাগল। এক হাত তুলে মানা করতে লাগল—এসো না, আর এসো না-গো, এখানে পাহাড়-প্রমাণ বাঁশ গাড়া।

ট্রেন দুরন্ত ছেলের মত কোন বাধা না মেনে একেবারে চণ্ডীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।

প্রাণ দিয়ে ট্রেনটাকে দুর্ঘটনা থেকে বাঁচাবার জন্যে চণ্ডীর নাম অনেক দূর পৌঁছে গিয়েছিল। বুঝি বা সরকারের ঘরেও।

লাশ ঘর থেকে ওরা যখন চণ্ডীকে নিয়ে চলে গেল তখন দারোগাবাবু মলিন্দরদের গ্রামে এলেন। সঙ্গে বি.ডি.ও.।

—রেল কোম্পানী চণ্ডী গাঙ্গোদাসীকে মেডেল দিবে মলিন্দর, তা তোদের বেত্তান্ত তো আমি জানি বললাম, ওর কেউ নেই তবু মুকাবিলা করে দেওয়া দরকার তাই ইনি এসেছেন।

—সাহসের কাজ, খুব সাহসেব কাজ করেছে, সবাই ভাল বলছে মহকুমার। তোমার পরিবার?

সবাই চুপ করে। সমাজের লোকগুলি এ ওর দিকে চাইল, ঘাড় গলা চুলকে মাটির দিকে চেয়ে কেউ বলল, আজ্ঞা আমাদেরি জ্ঞাতি।

ভগীরথ অবাক হয়ে গেল। সকলের মুখের দিকে চাইতে লাগল।

চণ্ডীকে ওরা জ্ঞাতি বলল? চণ্ডীকে ওরা স্বীকার করে নিচ্ছে?

—তামাদের সকলের হাতে তো ওর মেডেল দেবে না সরকার।

—আজ্ঞা আমাকে দেন।

ভগীরথ এগিয়ে এল।

—তুই কে

—উনি আমার মা।

—বটে, তোর নাম কি—কি করিস…

বি.ডি.ও. লিখতে লাগলেন। ভগীরথের চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল… ভগীরথ গলা ঝেড়ে বলল—আজ্ঞা আমার নাম ভগীরথ গঙ্গাপুত্র।

বাপ পূজা মলিন্দরের পুত্র। নিবাস ডোমপাড়া।

মা ঈশ্বর চণ্ডী গঙ্গাদাসী…।

ভগীরথ বংশপরিচয় দিতে লাগল।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন