বুধবার | ৭ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | সকাল ১০:০১
Logo
এই মুহূর্তে ::
সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে দেখা : লুৎফর রহমান রিটন সংস্কৃতি জগতের এক নক্ষত্রের নাম বসন্ত চৌধুরী : রিঙ্কি সামন্ত আংশিক বর্ণান্ধতাজনিত হীনম্মন্যতাই রবীন্দ্রনাথের স্কুল ছাড়ার কারণ : অসিত দাস পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ কি অবশ্যম্ভাবী : তপন মল্লিক চৌধুরী সাত্যকি হালদার-এর ছোটগল্প ‘ডেলিভারি বয়’ নব নব রূপে এস প্রাণে : মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য ভারতের সংবিধান লেখার সেই ঝর্না কলমটা… : দিলীপ মজুমদার গীতা রাজনৈতিক অস্ত্র নয়, ভারতাত্মার মর্মকথা : সন্দীপন বিশ্বাস সিন্ধুসভ্যতা ও সুমেরীয় সভ্যতায় কস্তুরীর ভূমিকা : অসিত দাস রবি ঠাকুর ও তাঁর জ্যোতিদাদা : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী তরল সোনা খ্যাত আগর-আতর অগুরু : রিঙ্কি সামন্ত নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘সাদা-কালো রীল’ গঙ্গার জন্য লড়াই, স্বার্থান্বেষীদের ক্রোধের শিকার সাধুরা : দিলীপ মজুমদার সিন্ধুসভ্যতার প্রধান মহার্ঘ রপ্তানিদ্রব্য কস্তুরী : অসিত দাস রাখাইন পরিস্থিতি রোহিঙ্গা সংকট ও মানবিক করিডোর : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন রামকৃষ্ণ মিশন মানে ধর্মকর্ম নয়, কর্মই যাঁদের ধর্ম তাঁরাই যোগ্য : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে সিংহবাহিনী মন্দির, নবগ্রাম (ঘাটাল) : কমল ব্যানার্জী পরিবেশ মেলা ২০২৫ : ড. দীপাঞ্জন দে মন্দির-রাজনীতি মন্দির-অর্থনীতি : দিলীপ মজুমদার স্বাধীনতা-সংগ্রামী মোহনকালী বিশ্বাস স্মারকগ্রন্থ : ড. দীপাঞ্জন দে অক্ষয়তৃতীয়া, নাকি দিদিতৃতীয়া : অসিত দাস আরএসএস-বিজেপি, ধর্মের তাস ও মমতার তৃণমূল : দিলীপ মজুমদার সাবিত্রি রায় — ভুলে যাওয়া তারার খোঁজে… : স্বর্ণাভা কাঁড়ার ছ’দশক পর সিন্ধু চুক্তি স্থগিত বা সাময়িক অকার্যকর হওয়া নিয়ে প্রশ্ন : তপন মল্লিক চৌধুরী বিস্মৃতপ্রায় বঙ্গের এক গণিতবিদ : রিঙ্কি সামন্ত অসুখবেলার পাণ্ডুলিপি : পুরুষোত্তম সিংহ বাবু-ইংরেজি আর সাহেবি বাংলা : মাহবুব আলম সিন্ধুসভ্যতার ফলক ও সিলে হরিণের শিং-বিশিষ্ট ঋষ্যশৃঙ্গ মুনি : অসিত দাস বৈশাখ মাসে কৃষ্ণপক্ষে শ্রীশ্রীবরুথিনী একাদশীর ব্রতকথা মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত সিন্ধুসভ্যতার লিপি যে প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার অকাট্য প্রমাণ : অসিত দাস
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ অক্ষয় তৃতীয়ার আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

পোড়ামাতলা ও বটবৃক্ষের পুনর্জীবন উৎসব : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ১০১৪ জন পড়েছেন
আপডেট শুক্রবার, ১৭ জুন, ২০২২

নবদ্বীপের অধিষ্ঠাত্রী লৌকিক দেবী পোড়ামাতা। দেবী জাগ্রত এবং নিত্য পূজিতা। অধিষ্ঠিত কোন মূর্তি নেই। দুটি ইটের উপর সংস্থাপিত ঘটে দক্ষিণাকলিকার ধ্যানে দেবীর পূজা-আরাধনা হয়। দেবীর কোন মন্দির নেই, শতাধিক প্রাচীন বটবৃক্ষমূলে প্রতিষ্ঠিত আছে দেবীর ঘট। কথিত আছে, পুরাকালে এই বটবৃক্ষ কোন কারণবশত শুকিয়ে যায়। নবদ্বীপের পণ্ডিত-ব্রাহ্মণগন বিভিন্ন প্রকারের হোম যজ্ঞ করে ১০৮ ঘড়া জল ঢেলে এই বটবৃক্ষের পুনর্জীবন দেন। জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রার পুণ্য তিথিতে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

সেই থেকেই প্রতিবছর মহাসমারোহে স্নানযাত্রা তিথিতে নবদ্বীপের পোড়ামাতলায় বটবৃক্ষের মূলে ১০৮ ঘড়া জল ঢালা হয়। এবছরও বহু ভক্তের সমাগমে মন্ত্র উচ্চারণের মধ্যে অনুষ্ঠিত হলো এই পুজো।

নবদ্বীপের শাক্তদেবী পোড়ামাতা সম্পর্কে বৈষ্ণব গ্রন্থগুলি একেবারে নীরব। দেবীর প্রাচীনত্ব নির্দিধায় স্বীকার করেন সবাই। দেবীর উদ্ভব সম্পর্কে নানামুনির নানামত।

গদাধর বংশীয় রামগোপাল তর্কতীর্থের থেকে শোনা কাহিনী বলে, দক্ষিণাকালিকার তান্ত্রিক সাধক (ভবানন্দ?) সিদ্ধান্তবাগীশ এবং অপর একজন গোপালমন্ত্রে দীক্ষিত বিশিষ্ট পন্ডিতের মধ্যে তর্কযুদ্ধ বাধে। শর্ত ছিলো যে, তর্কেযুদ্ধে পরাজিত ব্যক্তি ইষ্টমন্ত্র ত্যাগ করে বিজয়ীর শিষ্যত্ব গ্রহন করবেন।

শাক্তসাধক পরাজিত হয়ে ইষ্টমন্ত্র ত্যাগ করতে উদ্যত হলে সাধকের মন্দির ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়।

সিদ্ধান্তবাগীশ মন্দিরাভ্যন্তরে দেবীর ক্রোড়ে উপবিষ্ট গোপালমূর্তি দেখে অভিভূত হলেন। অগ্নিতে সবকিছু ভস্মিভূত হলেও দুটি ইট ছিলো অক্ষত। সেই দুটি ইটের উপর ঘট স্থাপন করে আজো পোড়ামাতলায় পূজা সম্পন্ন হয়।

আবার ভোলানাথ চন্দ পোড়ামার উদ্ভব সম্বন্ধে লিখেছেন যে, ধাত্রিগ্রাম ও বিল্বগ্রামের দুজন সাধক নবদ্বীপের জঙ্গলে তপস্যাবলে দেবী সরস্বতীর আশীর্বাদ লাভ করেন। এই ঘটনার কিছুদিন পর তিন ঘর ব্রাহ্মণ ও ন-ঘর চাষী সঙ্গে নিয়ে নবদ্বীপে বাস করতে আসেন রাজা কাশীনাথ। কাশীনাথের অগ্নিসংযোগের ফলেই ঘন জঙ্গল অগ্নিদগ্ধ হয়, সেইসঙ্গে দেবীস্থান সহ বটগাছটিও। তবে এই তথ্যের সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

সমাচার দর্পণ (১২৩৩ সাল) পত্রিকায় যে কাশীনাথের সংবাদ প্রকাশিত হয়, তিনি ছিলেন নবদ্বীপের পণ্ডিত। নবদ্বীপে এনার টোল ছিলো। অগ্নিদাহে টোল ও ভদ্রাসন ভস্মীভূত হয়ে যায়। চন্দবাবুর কাশীনাথের সঙ্গে এই কাশীনাথের কোনো যোগ আছে কিনা জানা যায়নি।

নদীয়া রাজের দেওয়ান কার্তিকেয় চন্দ্র রায় (১৮১০_১৮৮৫ খ্রি:) পোড়ামাতার উদ্ভব সম্বন্ধে লিখেছেন যে, ত্রয়োদশ কিম্বা চতুর্দশ শতাব্দীতে জনৈক যোগী দেবীর ঘট স্থাপন করেন। অল্পকালের মধ্যেই ভক্তবৃন্দের কৃপালাভের আশায় দেবী আরাধনায় মগ্ন হলে ক্রমে এই স্থান তীর্থ স্থান হয়ে ওঠে।

ভক্তেরা ভক্তিভরে চিনি-সন্দেশ ও মালা দিয়ে দেবীর আরাধনা করেন। ছাগবলির প্রথা ছিলো। রাজবাড়ির আদেশে ১৪১৪ সালের ১লা বৈশাখ থেকে বলি বন্ধ আছে।

পোড়ামা বা বিদগ্ধজননী মানেই দেবী বিখ্যাত। অগ্নিদগ্ধ ঘটনার সঙ্গে এই নামের যে একটি যোগসূত্র আছে অধিকাংশ পন্ডিতগণ এতে সহমত পোষণ করেন। কারো মতে, সূচনাপর্বে, ইনি ছিলেন পড়ুয়াদের মা– তাই পোড়ামা। পড়ুয়াদের মা অর্থে বিদ্যাদেবী অর্থাৎ নীল সরস্বতী। অন্য মতে, “পাড়ার মা” অপভ্রংশে হয়েছে “পোড়ামা”। আবার কেউ বলেন পোড়ামা ‘পরামায়া’ শব্দের অপভ্রংশ।

এই স্থানের পূর্বনাম ছিলো চিনাডাঙা। পোড়ামাতার নামে একটি ঘাট আজও বিদ্যমান — পোড়াঘাট। ভোলানাথ চন্দ মহাশয় পোড়ামাতলার বটগাছটিকে একশো বছরের প্রাচীন বলে নির্দিষ্ট করেছেন।

শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মভূমি প্রাচীন মন্দির নগরী নবদ্বীপ শুধুমাত্র বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীদের কাছে নয়, বিশ্ববাসীর কাছে একটি পবিত্রস্থান। সংস্কৃত শাস্ত্রের পরীক্ষা ও উপাধি প্রদান হতো পোড়ামাতলার এই বটমূলে। নবদ্বীপের প্রাণকেন্দ্র পোড়ামাতলা। শুধু উৎসবে নয়, বছরের যে কোন সময়ে ঘুরে আসতে পারেন এই পবিত্র ভূমি।

তথ্যসূত্র : বাঙ্গালীর সারস্বত অবদান — দীনেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য, নবদ্বীপের ইতিবৃত্ত এবং সংবাদ মাধ্যম।


আপনার মতামত লিখুন :

6 responses to “পোড়ামাতলা ও বটবৃক্ষের পুনর্জীবন উৎসব : রিঙ্কি সামন্ত”

  1. তপন says:

    বটবৃক্ষের ঝুঁড়ি যে ভাবে সব মন্দিরে পরিবেষ্টিত সত্যিই অভূতপূর্ব।

  2. PALLAB DEY says:

    অপুর্ব লেখনী,, অনেক না জানা কথা জানতে পারলাম 👏👏👏

  3. p k biswas says:

    জানলাম পড়লাম ভালোলাগলো অজানা তথ্য
    *বটবৃক্ষের পুনঃর্জীবন*

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন